জঙ্গিদের পক্ষে কেউ নেই
‘তরুণদের কেউ জঙ্গিবাদী তৎপরতা সমর্থন করে না, আমি তো করিই না।’ বলছিলেন চট্টগ্রামের এক প্রাণবন্ত তরুণ। তিনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ঢাকার গুলশান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের নৃশংস হামলার পর আমরা যখন সবাই শঙ্কায় আছি, তখন চট্টগ্রামের এই তরুণের কথা আমাদের আশ্বস্ত করে। শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের তরুণদের সঙ্গে কথা বলা, তাঁদের কথা শোনা, বিশেষভাবে তাঁরা কী ভাবছেন, তা জানার জন্য প্রথম আলোর চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সভাকক্ষে কয়েকজন তরুণকে চায়ের আসরে ডেকেছিলাম। সেখানে ১৮ জন তরুণ-তরুণীর সঙ্গে খোলামেলা কথা হয়। তাঁদের সবাই বিশ্ববিদ্যালয় বা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে ছয়-সাতজন ছাত্রীও ছিলেন। কয়েকজন পড়াশোনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠন করেন। বিতর্ক ক্লাবের সদস্য। একজন গরিব শিশুদের পড়ালেখার একটি স্কুল চালান। তাঁর এই উদ্যোগের সঙ্গে আছেন আরও কয়েকজন তরুণ। স্কুল চলে সম্পূর্ণ নিজেদের চাঁদায়।
জানতে চাইলাম, এখন কেন ধনীদের সন্তানেরা জঙ্গিপনার দিকে ঝুঁকছে? এর উত্তরে এক তরুণ বললেন, বিত্তবান পরিবারের সন্তানেরা দেখেন, বাবা-মা কেবল টাকার পেছনে ছুটছেন। তিনি নিজ ঘরে একা হয়ে যান। সমাজে মেলামেশা নেই। তাই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁদের থাকে না। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা সব সময় মানুষের সংস্পর্শে থাকেন। সাধারণ ঘরের তরুণদের সমস্যা-সংকটে তাঁদের পাশে দাঁড়ান। এভাবে তাঁদের মধ্যে জন্ম নেয় একধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা। কিন্তু ধনীর ঘরের সন্তানদের সেই সুযোগ সীমিত। অবশ্য ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সাধারণভাবে ধনীদের কোনো সন্তান যখন কোনো সংকটে পড়েন, তিনি সহজেই জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট হন। সেখানে তিনি তাঁর প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণের সুযোগ খুঁজে পান। কীভাবে সবার সামনে আসা যায়, এটাই তখন তাঁর মূল চিন্তা হয়ে দাঁড়ায়। একজন তরুণ বললেন, ওরা আসলে ‘মানসিক প্রতিবন্ধী’। সংকটে পড়লে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
জানতে চাইলাম, এখন কেন ধনীদের সন্তানেরা জঙ্গিপনার দিকে ঝুঁকছে? এর উত্তরে এক তরুণ বললেন, বিত্তবান পরিবারের সন্তানেরা দেখেন, বাবা-মা কেবল টাকার পেছনে ছুটছেন। তিনি নিজ ঘরে একা হয়ে যান। সমাজে মেলামেশা নেই। তাই সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁদের থাকে না। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা সব সময় মানুষের সংস্পর্শে থাকেন। সাধারণ ঘরের তরুণদের সমস্যা-সংকটে তাঁদের পাশে দাঁড়ান। এভাবে তাঁদের মধ্যে জন্ম নেয় একধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা। কিন্তু ধনীর ঘরের সন্তানদের সেই সুযোগ সীমিত। অবশ্য ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে। কিন্তু সাধারণভাবে ধনীদের কোনো সন্তান যখন কোনো সংকটে পড়েন, তিনি সহজেই জঙ্গিবাদের দিকে আকৃষ্ট হন। সেখানে তিনি তাঁর প্রতি সবার দৃষ্টি আকর্ষণের সুযোগ খুঁজে পান। কীভাবে সবার সামনে আসা যায়, এটাই তখন তাঁর মূল চিন্তা হয়ে দাঁড়ায়। একজন তরুণ বললেন, ওরা আসলে ‘মানসিক প্রতিবন্ধী’। সংকটে পড়লে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
একজন জানালেন, জঙ্গি নিবরাস তাঁর শেষ ১০টি টুইটে ব্যক্তিগত হতাশার কথা বলেছেন। তাঁর সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার কথা বলেছেন। লিখেছেন, তুমি সুখী থাকো, আমি আমার পথ বেছে নিলাম! মাদ্রাসায় পড়ছেন এক তরুণ, তিনি বেশ জোর দিয়ে বললেন, ধর্মের মূল কথা না বোঝার ফলেই কিছু তরুণ বিপথগামী হচ্ছেন। আরেক তরুণ বললেন, এখন সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। আমি তো মার্কেটে গেলে কোনো তরুণের পিঠে ব্যাগ দেখলে ভয় পাই! অবশ্য তখনই আরেক তরুণ বললেন, আতঙ্ক নয়, দরকার সচেতনতা। সবার সমন্বিত প্রচেষ্টা। জানতে চাইলাম, চট্টগ্রামের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যে কয়েক শ বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ছেন, তাঁরা কী ভাবছেন? উত্তরে সবাই বললেন, তাঁরা সবাই আগের মতোই আছেন। শুধু একটু সাবধানে চলাফেরা করেন। সে রকম সতর্কতা অবশ্য আমরা সবাই নিই। কোনো বিদেশি শিক্ষার্থী জঙ্গিদের ভয়ে নিজ দেশে ফিরে যাবেন, এমন কথা কেউ ভাবছেন না। তাঁদের সঙ্গে অন্য সহপাঠীদের বন্ধুত্ব,
মেলামেশা ঠিক আগের মতোই আছে। জিজ্ঞেস করলাম, উপস্থিত তরুণদের কেউ জঙ্গি তৎপরতার জন্য বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গেছে, দেশে আর থাকা যাবে না, এ রকম ভাবছেন কি? উপস্থিত ১৮ জন তরুণ-তরুণীর একজনও বললেন, না, জঙ্গিদের কারণে তিনি দেশ ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবছেন। বরং সুযোগ পেলে উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাবেন, ফিরে এসে দেশেই কাজ করবেন, এটাই তাঁদের সাধারণ চিন্তা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র বললেন, আসলে আমাদের তরুণদের সামনে তেমন কোনো ‘আইডল’ নেই। প্রায় দেড় দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ছাত্র সংসদ নেই। ‘বদ্ধ জলাশয়ে মশা–মাছি জন্মে।’ না হলে পদার্থবিজ্ঞানের সেরা ছাত্র কেন জঙ্গি হয়ে যান? এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তো ছিলেন জামাল নজরুল ইসলামের মতো বিশ্ববিখ্যাত বিজ্ঞানী! একজন তরুণ বললেন, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিষয় থাকবে। বাগান করা, বিতর্ক ক্লাব, সংস্কৃতিচর্চা, পাঠাগারে পড়াশোনা বা অন্য কোনো সামাজিক কাজে অবদান রাখা। এ জন্য পরীক্ষায় থাকবে অতিরিক্ত ১০ নম্বর।
তরুণেরা ভালো উদ্যোগে সময় দেওয়ায় উৎসাহিত হবেন। শনিবার চট্টগ্রামে আসার পথে বিমানবন্দরে যখন অপেক্ষা করছিলাম, তখন একজন বিদেশির সঙ্গে কথা হলো। তিনি স্পেন থেকে এসেছেন। যাবেন সিলেটে। স্পেনের একটি কোম্পানি ইটভাটায় ব্যবহারের উচ্চমানের চুল্লি উৎপাদন করে। সিলেটে তাঁদের কাজ হয়। তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, গুলশান-শোলাকিয়ার ঘটনায় তাঁদের কোম্পানি কতটা উদ্বিগ্ন? ব্যবসা কি আগের মতোই চলবে? তিনি আমাকে বললেন, শুনেছ তো কাল জার্মানিতে একজন সন্ত্রাসী মার্কেটে গুলি চালিয়ে আটজনকে মেরে ফেলেছে? বিশ্বের কোন দেশে এসব হচ্ছে না? দেখলাম, সেই বিদেশি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে মোটেও চিন্তিত নন। ১ জুলাইয়ের পর থেকে ঢাকার আকাশ কালো মেঘে ছেয়ে আছে। কিন্তু চট্টগ্রামে এসে দেখলাম উজ্জ্বল রোদ। আকাশ পরিষ্কার। মেঘ কেটে গেছে। চট্টগ্রামের তরুণদের চোখেমুখে দেখলাম উদ্দীপনা। অফুরন্ত প্রাণশক্তি।
আব্দুল কাইয়ুম: সাংবাদিক।
quayum@gmail.com
আব্দুল কাইয়ুম: সাংবাদিক।
quayum@gmail.com
No comments