প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় কল্যানপুর অভিযান
প্রতি রাতের মতো সোমবার রাতেও কল্যানপুরে একটি বাড়ির সামনে পাহাড়ায় ছিলেন নিরাপত্তা কর্মী আবুল কাশেম। মাঝে মধ্যেই সে এলাকায় ডিউটি পুলিশের উপস্থিতি মি: কাশেমের চেখে পড়ে। কিন্তু সোমবার রাতে একসাথে অনেক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন তিনি। বিষয়টি তার কাছে স্বাভাবিক মনে হয়নি। এক পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন, বিশেষ কোন অভিযান পরিচালনা করার জন্য পুলিশ এসেছে। তাদের লক্ষ্য ছিল খুব কাছেই ‘জাহাজ বাড়ি’। আবুল কাশেম নামের একজন নিরাপত্তা কর্মী ঘটনাটি অনেক কাছ থেকে দেখেছেন। তিনি যে বাড়িতে থাকেন সেখান থেকে কয়েকটি বাড়ি পরেই ‘জঙ্গি আস্তানা’। সে বাড়িটির নাম ‘জাহাজ বাড়ি’।ছয়তলা সে বাড়িতে অনেক ছাত্র এবং চাকুরীজীবীরা মেস ভাড়া করে সেখানে থাকেন বলে জানা গেছে। এই বাড়িটি এলাকার অনেকের কাছেই পরিচিত। কারণ বাড়িটির দেখতে অনেকটা জাহাজের মতো। রাত দশটা থেকে সাড়ে দশটার মধ্যে আবুল কাশেম হঠাৎ বিপুল সংখ্যক পুলিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করেন। তখন তিনি বুঝতে পারেন পুলিশ হয়তো কোন অভিযান পরিচালনা করছে। কিন্তু সেটি যে জঙ্গি বিরোধী অভিযান, তা বুঝতে পারেননি মি: কাশেম। এ সময় তিনি কয়েকজন ছেলেকে ব্যাগ কাঁধে নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখেন। মি: কাশেম বলেন, “ হঠাৎ দেখি ভারি একটা ব্যাগ নিয়া এক ছেলে আমার সামনে এসে উদভ্রান্তের মতো আচরণ করতে লাগল।”নিরাপত্তা কর্মী মি: কাশেম ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলেন , “ভাই, আপনি কী করেন?” ছেলেটি তখন উত্তর দিয়েছে, “কাগজ কুড়াই।” তখন সে নিরাপত্তা কর্মী বুঝতে পেরেছেন, ব্যাগের মধ্যে সন্দেহজনক কিছু আছে। কারণ সে তরুণের চেহারা এবং পোশাকের সাথে ‘কাগজ কুড়ানোর’ দাবী সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হয়নি মি: কাশেমের। তিনি বলেছেন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে কিছু তরুণ সেখান থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। বাদল নামের আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন পুলিশ আসার পরে কিছু তরুণকে তিনি সে বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে দেখেছেন। যারা পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছিলে তাদের পরনে প্যান্ট ও টি-শার্ট ছিল।মি: বাদল বলেন, “ এসময় ভিতর থেকে অনেকে সাথে আল্লাহু আকবর বলছিল। আমরা সে শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম। ” তার বর্ণনায় সারারাত ‘টুকটাক গোলাগুলি’ হলেও ভোর পাঁচটা থেকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়। ভোরের দিকে তীব্র গুলির শব্দে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। এসময় ‘জাহাজ বাড়ির’ থেকেও গুলি করে প্রতিরোধের চেষ্টা হয়েছে, বলেন মি: বাদল। কল্যানপুর এলাকার অধিকাংশ বাড়ি একটি সাথে আরেকটি প্রায় জড়ানো অবস্থায়। ঢাকা শহরের বহু এলাকার মতো কল্যানপুর এলাকাটিও বেশ ঘিঞ্জি। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনায় পুলিশি অভিযানের সময় ‘জাহাজ বাড়ি’ থেকে অনেকে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।তাদের অনেকে একটি বাড়ির ছাদ থেকে অপর আরেকটি বাড়ির ছাদে লাফিয়ে পালিয়ে গেছে বলে তাদের মনে হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কল্যাণপুরের আরেকজন বাসিন্দা জানান , সকাল ছয়টার দিকে তার এক প্রতিবেশ টেলিফোন করে তাকে পুলিশি অভিযানের কথা জানান। ঘুম থেকে উঠার কিছুক্ষণ পরে আনুমানিক ভোর ছয়টা দিকে তিনি দুই দফায় ‘বৃষ্টির মতো’ গুলির শব্দ শুনেছেন।
No comments