শুদ্ধাচার রমজানের ফলাফল
রমজান হচ্ছে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। তাই রমজান তওবা ও ইস্তিগফারের মাধ্যমে ক্ষমা পাওয়া ও নাজাত লাভের শ্রেষ্ঠ সময়। হাদিস শরিফে আছে, হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, মহানবী রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘যে ব্যক্তি ইমানের সহিত সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসে রোজা রাখবে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩১, হাদিস: ৩৭)। রমজান মাসের সওগাত লাভের জন্য তারাবির নামাজ। মহানবী রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘যে ব্যক্তি ইমানের সহিত সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে রাতে ইবাদত করবে ও তারাবির নামাজ পড়বে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩০, হাদিস: ৩৬)। রমজান মাসে রয়েছে প্রভুর করুণার পরম পূর্ণতার রাত্রি লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন: ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় লাইলাতুল কদরে ইবাদতে রাত্র জাগরণ করবে, তার অতীতের গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি শরিফ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩০, হাদিস: ৩৪)।
রমজান মাসে আমরা কী পেলাম আর কী পেলাম না, এর মূল্যায়ন হবে রমজান মাস শেষে আমাদের আমল, আখলাক ও আচার-আচরণ দ্বারা। রমজানের যেসব অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য রয়েছে তার সবগুলোর সারকথা হলো শুদ্ধাচার। হাদিস শরিফে রয়েছে: ‘সব জিনিসের জাকাত আছে, শরীরের জাকাত রোজা।’ (বুখারি)। অর্থাৎ জাকাত প্রদানের মাধ্যমে যেমন সম্পদ পবিত্র হয়, তেমনি রোজা পালনের দ্বারা শরীর ও মন পবিত্র হয়। এই পবিত্রতা প্রমাণ হবে শুদ্ধাচারের মাধ্যমে। শুদ্ধাচার ইসলামের মূল শিক্ষা। ইমানের কালিমার নাম হলো ‘কালিমা তাইয়্যেবা’, যার অর্থ হলো পবিত্র বাণী ও পবিত্রকারী বাক্য। যে কালিমা বিশ্বাস করলে মানুষ কুফর ও শিরক থেকে পবিত্র হয়ে যায় এবং তার দেহ ও মন শুদ্ধাচারে ব্রতী হয়।
ঈদের রাতের ইবাদত ও চাঁদরাতের করণীয় আমল
পবিত্র রমজান মাসের শেষে সূর্যাস্তের পর পশ্চিমাকাশে নতুন চাঁদ দেখা গেলে একে আমরা ‘চাঁদরাত’ বলি। এর মাধ্যমে মূলত ঈদের সূচনা হয়। আরবি হিসাবে রাত আগে আসে বিধায় এটি ঈদের রাত। ঈদের রাতের ফজিলত অতুলনীয়। রমজানে আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন আগের সব দিনের সমান লোককে ক্ষমা করেন। আর ঈদের রাতে পুরো রমজানব্যাপী যতসংখ্যক লোককে ক্ষমা করা হয়েছে, তার সমানসংখ্যক লোককে ক্ষমা করেন। তাই ঈদের রাতকে বেহুদা অযথা কাজে ব্যয় না করে, ইবাদত-বন্দেগিতে কাজে লাগানো দরকার। অনেকে দেখা যায়, পয়লা রমজান থেকে তারাবির নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করেন; কিন্তু ঈদের চাঁদ দেখা গেলে সেদিন মাগরিব থেকেই নামাজ ছেড়ে দেন। মনে হয় যেন ইবাদতের ছুটি হয়ে গেছে; ঈদের চাঁদ বুঝি ইবাদতের ছুটির ঘণ্টা? অনেকেই রমজানে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকেন; কিন্তু চাঁদরাত থেকে আবার তা শুরু করেন; মনে হয় নতুন চাঁদ যেন পাপের অনুমতি দেয়। অনেকে রমজান মাসের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত পালন করেন; কিন্তু চাঁদরাতেই সব ভুলে গিয়ে ফিরে যান পুরোনো চরিত্রে,
রমজান মাসে আমরা কী পেলাম আর কী পেলাম না, এর মূল্যায়ন হবে রমজান মাস শেষে আমাদের আমল, আখলাক ও আচার-আচরণ দ্বারা। রমজানের যেসব অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য রয়েছে তার সবগুলোর সারকথা হলো শুদ্ধাচার। হাদিস শরিফে রয়েছে: ‘সব জিনিসের জাকাত আছে, শরীরের জাকাত রোজা।’ (বুখারি)। অর্থাৎ জাকাত প্রদানের মাধ্যমে যেমন সম্পদ পবিত্র হয়, তেমনি রোজা পালনের দ্বারা শরীর ও মন পবিত্র হয়। এই পবিত্রতা প্রমাণ হবে শুদ্ধাচারের মাধ্যমে। শুদ্ধাচার ইসলামের মূল শিক্ষা। ইমানের কালিমার নাম হলো ‘কালিমা তাইয়্যেবা’, যার অর্থ হলো পবিত্র বাণী ও পবিত্রকারী বাক্য। যে কালিমা বিশ্বাস করলে মানুষ কুফর ও শিরক থেকে পবিত্র হয়ে যায় এবং তার দেহ ও মন শুদ্ধাচারে ব্রতী হয়।
ঈদের রাতের ইবাদত ও চাঁদরাতের করণীয় আমল
পবিত্র রমজান মাসের শেষে সূর্যাস্তের পর পশ্চিমাকাশে নতুন চাঁদ দেখা গেলে একে আমরা ‘চাঁদরাত’ বলি। এর মাধ্যমে মূলত ঈদের সূচনা হয়। আরবি হিসাবে রাত আগে আসে বিধায় এটি ঈদের রাত। ঈদের রাতের ফজিলত অতুলনীয়। রমজানে আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন আগের সব দিনের সমান লোককে ক্ষমা করেন। আর ঈদের রাতে পুরো রমজানব্যাপী যতসংখ্যক লোককে ক্ষমা করা হয়েছে, তার সমানসংখ্যক লোককে ক্ষমা করেন। তাই ঈদের রাতকে বেহুদা অযথা কাজে ব্যয় না করে, ইবাদত-বন্দেগিতে কাজে লাগানো দরকার। অনেকে দেখা যায়, পয়লা রমজান থেকে তারাবির নামাজসহ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ঠিকমতো আদায় করেন; কিন্তু ঈদের চাঁদ দেখা গেলে সেদিন মাগরিব থেকেই নামাজ ছেড়ে দেন। মনে হয় যেন ইবাদতের ছুটি হয়ে গেছে; ঈদের চাঁদ বুঝি ইবাদতের ছুটির ঘণ্টা? অনেকেই রমজানে ধূমপান করা থেকে বিরত থাকেন; কিন্তু চাঁদরাত থেকে আবার তা শুরু করেন; মনে হয় নতুন চাঁদ যেন পাপের অনুমতি দেয়। অনেকে রমজান মাসের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নত পালন করেন; কিন্তু চাঁদরাতেই সব ভুলে গিয়ে ফিরে যান পুরোনো চরিত্রে,
সাবেক চেহারায়; এটি আত্মপ্রবঞ্চনা ছাড়া কিছুই নয়। রমজানের প্রতিটি দিন তার আগের দিনের অপেক্ষা বেশি ফজিলতপূর্ণ। অর্থাৎ প্রথম থেকে শেষের দিকে ফজিলত ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে দেখা যায় এর বিপরীত। শুরু থেকে শেষের দিকে মুসল্লি দিন দিন কমতে থাকে। ২৭ রমজানে খতমে তারাবি শেষ হলে পরের তারাবিগুলোতে তেমন মুসল্লি দেখা যায় না। এটি আমাদের অজ্ঞানতার পরিচায়ক; কারণ পরের রাতগুলো ইবাদতের জন্য আগের রাতগুলোর চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে ২৭ রমজানের পর তারাবির নামাজ ছেড়ে দেন, এটা মোটেও উচিত নয়। কেউ কেউ ঈদের প্রস্তুতিতে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে রোজা রাখতে পারলেও ঠিকমতো জামাতে নামাজ আদায় করতে পারেন না। রমজানের শেষ দিকে এসে ঠিকমতো ইবাদত করতে পারেন না। কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যে, কেউ কেনাকাটায়, কেউ রান্নাবান্নায় মত্ত থাকেন; এটা মোটেই ঈদের প্রস্তুতি নয়। ঈদের প্রস্তুতি হলো: রমজানের ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতসমূহ পালনপূর্বক ঈদের রাতের ও দিনের আমল ও ইবাদতের জন্য নিজেকে তৈরি করা।
মাসআলা
ঈদের দিনে সামর্থ্য থাকলে নতুন পোশাক পরা সুন্নত; অথবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সাধ্যমতো সুন্দর কাপড় পরা সুন্নত। ঈদের রাতে সুরমা ব্যবহার করা সুন্নত। ঈদের রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা সুন্নত। ঈদের দিনে সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা ও সবার খোঁজখবর নেওয়া সুন্নত। কারও সঙ্গে দেখা হলে সালাম বিনিময়ের পর মুসাফাহা বা করমর্দন করা সুন্নত (পুরুষে পুরুষে ও নারীতে নারীতে)। দীর্ঘ সময় পর প্রিয় বা ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে মুআনাকা তথা কোলাকুলি করা সুন্নত (পুরুষে পুরুষে ও নারীতে নারীতে)। ঈদের দিনে ভিক্ষা করা হারাম; মসজিদে ভিক্ষা করা নাজায়েজ। (ইমদাদুল আকাম, মাজমুআ ফাতওয়া)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com
মাসআলা
ঈদের দিনে সামর্থ্য থাকলে নতুন পোশাক পরা সুন্নত; অথবা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন সাধ্যমতো সুন্দর কাপড় পরা সুন্নত। ঈদের রাতে সুরমা ব্যবহার করা সুন্নত। ঈদের রাতে ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকা সুন্নত। ঈদের দিনে সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করা ও সবার খোঁজখবর নেওয়া সুন্নত। কারও সঙ্গে দেখা হলে সালাম বিনিময়ের পর মুসাফাহা বা করমর্দন করা সুন্নত (পুরুষে পুরুষে ও নারীতে নারীতে)। দীর্ঘ সময় পর প্রিয় বা ঘনিষ্ঠ কারও সঙ্গে সাক্ষাৎ হলে মুআনাকা তথা কোলাকুলি করা সুন্নত (পুরুষে পুরুষে ও নারীতে নারীতে)। ঈদের দিনে ভিক্ষা করা হারাম; মসজিদে ভিক্ষা করা নাজায়েজ। (ইমদাদুল আকাম, মাজমুআ ফাতওয়া)।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com
No comments