৩,৬৯৩ কারখানার সেবা বন্ধ করছে বিজিএমইএ
৩
হাজার ৬৯৩ তৈরি পোশাক কারখানার সেবা বন্ধ করে দিল তৈরি
পোশাকশিল্প–মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও
বায়োমেট্রিক ডেটাবেইসে বা তথ্যভান্ডারে যুক্ত না হওয়ার কারণেই
কারখানাগুলোর সেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংগঠনটি। আগামীকাল রোববার
থেকে এটি কার্যকর হবে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিজিএমইএ কার্যালয়ে
সংগঠনের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে আজ শনিবার তথ্যভান্ডারে যুক্ত না হওয়া
কারখানার সেবা বন্ধের সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন
বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহসভাপতি
ফারুক হাসান, এস এম মান্নান, মোহাম্মদ নাছির, ফেরদৌস পারভেজ প্রমুখ। জানতে
চাইলে আজ রাতে সংগঠনের সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির প্রথম আলোকে বলেন,
‘তথ্যভান্ডারে যুক্ত না হওয়া পর্যন্ত কারখানাগুলোর সেবা বন্ধ রাখবে
বিজিএমইএ। তাই ভবিষ্যতে পোশাক রপ্তানি করতে চাইলে তথ্যভান্ডারে যুক্ত না
হওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’ জানা গেছে, ৬০৩টি পোশাক কারখানা আজ
শনিবার পর্যন্ত তথ্যভান্ডারে যুক্ত হয়েছে। বিজিএমইএর বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৪
হাজার ২৯৬। অর্থাৎ, ৩ হাজার ৬৯৩ কারখানা এখনো তথ্যভান্ডারে যুক্ত হয়নি।
বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিজিএমইএর সদস্য
কারখানা ৪ হাজার ২৯৬ হলেও ইউডি (ইউটিলাইজেশন ডিক্লারেশন) নেয় মাত্র ২
হাজার ১০০ থেকে ২ হাজার ২০০ কারখানা। তিনি আরও বলেন, তথ্যভান্ডারে যুক্ত
হওয়ার জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দিলেই সংশ্লিষ্ট কারখানার সেবা চালু করে
দেওয়া হবে। তাঁর ভাষায়, এক হাতে টাকা। অন্য হাতে সেবা। সিদ্দিকুর রহমান
বলেন, বারবার তাগাদা দেওয়ার পরও মালিকদের কাছ থেকে সাড়া না পাওয়ায় কঠিন
সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা। তবে তথ্যভান্ডারে যুক্ত হলে
কারখানাগুলোকে আর বিমার টাকা পরিশোধ করতে হবে না। কারণ, সরকার শ্রমিক
কল্যাণ তহবিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই তহবিলে প্রতিটি রপ্তানির আদেশের
বিপরীতে শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ অর্থ কেটে রাখা হবে। এখান থেকেই শ্রমিকদের
বিমার প্রিমিয়ামের টাকা এবং শ্রমিকদের অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে। সে জন্যই
তথ্যভান্ডারের প্রয়োজন হবে। যাতে কিনা কারখানা অনুযায়ী পোশাকশ্রমিকদের সব
ধরনের তথ্য থাকবে। জানা গেছে, শ্রম বিশেষজ্ঞ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের
দাবির মুখে বিজিএমইএ শ্রমিকদের তথ্যভান্ডার ও সার্ভিস বুক করার ঘোষণা দেয়
২০০৮ সালে। তবে তা বাস্তবায়ন হয়নি। তাজরীন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ড ও রানা
প্লাজা ধসের পর দাবিটি আরও জোরালো হয়। ২০১৩ সালের ১৪ মে বিজিএমইএ সদস্যদের
বলে, ১৫ জুনের মধ্যে সব কারখানার শ্রমিককে বায়োমেট্রিক ডেটাবেইসে বা
তথ্যভান্ডারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এ জন্য দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে
নিয়োগ দেওয়া হয়। বিজিএমইএর কেন্দ্রীয় তথ্যভান্ডারে যুক্ত হতে প্রতিটি
কারখানার শ্রমিক সংখ্যাভেদে ৭৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।
সংগঠনটি দফায় দফায় তাগাদা দিয়ে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি
পর্যন্ত মাত্র ৩০১টি কারখানা তথ্যভান্ডারে যুক্ত করতে পারে। এতে প্রায়
পাঁচ লাখ পোশাকশ্রমিক তথ্যভান্ডারের আওতায় আসেন। তারপর গত বছরের ডিসেম্বর
পর্যন্ত আর কোনো কারখানামালিক আগ্রহ দেখাননি। তখন বিজিএমইএ আবারও চলতি
বছরের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে তথ্যভান্ডারে যুক্ত হতে অনুরোধ করে। তারপরও
কাজের কাজ কিছু হয়নি। সবশেষ চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে আজ শনিবার ৩০ এপ্রিল
পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় সংগঠনটি। তখন বলা হয়েছিল, এই সময়ের মধ্যে
তথ্যভান্ডারে যুক্ত না হলে ব্যর্থ সদস্য কারখানাকে সেবা দেওয়া বন্ধ করে
দেবে। বিজিএমইএর বায়োমেট্রিক ডেটাবেইসে পোশাকশ্রমিকের বিভিন্ন তথ্য যেমন :
ছবি, আঙুলের ছাপ, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ, জাতীয়
পরিচয়পত্র নম্বর, বেতন-ভাতা, কাজের ধরন, দক্ষতা ইত্যাদি বিষয় থাকবে।
সুষ্ঠুভাবে তথ্য পূরণের পর প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য একটি স্বতন্ত্র নম্বর
দেওয়া কথা আছে।
No comments