টেলিফোনে বিয়ে, অতঃপর... by ওয়েছ খছরু
প্রেম
ছিল খসরু ও সাদিয়ার। দুজন দুজনকে মনেপ্রাণে ভালবাসতেন। খসরু চলে গেলেন
লন্ডনে। এরপরও তাদের প্রেমের ইতি ঘটেনি। ওখান থেকে দুজন টেলিফোনে বিয়ে
করলেন। বিয়ের পর খসরু দেশে এসে সাদিয়াকে নিয়ে হোটেলে দিনের পর দিন কাটালেন।
স্বামী-স্ত্রী হিসেবে একসঙ্গে বসবাসের পর খসরু চলে গেলেন প্রবাসে। সেখান
থেকে তিনি স্ত্রী সাদিয়ার সঙ্গে তোলা একটি ছবি ফেসবুকে আপলোড করে বেকায়দায়
পড়েছেন। সাদিয়া এখন তাকে ভুলে গেছেন। বিয়ে হয়নি বলে জানিয়ে দিয়েছেন। আর এ
ঘটনায় সাদিয়া থানায় জিডিও করেছেন। পুলিশ জিডির তদন্ত করছে। জগন্নাথপুর
উপজেলার কেশবপুর গ্রামের সিরাজ মিয়ার ছেলে খসরু মিয়া। আর সাদিয়ার বাড়ি
বিয়ানীবাজার উপজেলার দেওলগ্রামে। ২০০৬ সালে সিলেট মহিলা কলেজে পড়ালেখার
সময়ই খসরুর সঙ্গে পরিচয় হয় সাদিয়ার। এক বান্ধবীর মাধ্যমে প্রথমে তাদের
পরিচয় হলেও পরে সেটি প্রেমের সম্পর্কে পরিণত হয়। এরই মধ্যে ২০১০ সালে
স্টুডেন্ট ভিসায় লন্ডন চলে যান খসরু মিয়া। আর সাদিয়া রয়ে যান দেশে। খসরু
লন্ডনে গেলেও তাদের মধ্যে সম্পর্কের ঘাটতি হয়নি। বরং লন্ডন থেকে খসরু মিয়া
প্রেমিকা সাদিয়ার পড়ালেখার জন্য খরচ পাঠাতেন। ওদিকে, লন্ডনে খসরুর স্বজনরা
বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তখন খসরু প্রেমিকা সাদিয়ার পরামর্শ মতো বিয়ে
এড়াতে ২০১১ সালে লন্ডন থেকে স্পেনে চলে যান। সেখানে গিয়ে একটি দোকান খুলেন।
এবং ওই দোকানের আয়ের টাকা তিনি সাদিয়ার কাছে পাঠিয়ে দিতেন। ২০১১ সালের
শেষের দিকে সাদিয়া অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য স্টুডেন্ট ভিসায় আবেদন করেন। এ
সময় খসরু তাকে দুই লাখ টাকা দেন। কিন্তু সাদিয়া অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ভিসা
পাননি। পরবর্তীকালে ২০১২ সালে সাদিয়া ফের অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার জন্য
স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন করেন। সেটিও হয়নি। এরপর সাদিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে
বিয়ের জন্য চাপ দেয়া শুরু হয়। সাদিয়া বিষয়টি খসরুকে জানান। কিন্তু খসরু
স্পেনে অবস্থান করার কারণে বিয়ে হওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়ে দেন। একপর্যায়ে
সাদিয়া খসরুকে প্রস্তাব দেন তারা টেলিফোনে বিয়ে করে ফেলবেন। এত দিনের
প্রেমের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে খসরুও সে প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান। উভয়পক্ষ
রাজি হওয়ায় ২০১২ সালের ১৪ই অক্টোবর টেলিফোনে তাদের বিয়ে সম্পন্ন হয়। বিয়ে
পড়ান সিলেটের লাক্কাতোড়া কাজী অফিসের কাজী আবুল হোসেন। আর বিয়েতে সাদিয়ার
মা রাহেনা বেগমসহ আত্মীয়স্বজনরা উপস্থিত ছিলেন। টেলিফোনে তাদের বিয়ে
সম্পন্ন হওয়ার পর খসরু সাদিয়াকে আরও দুই লাখ টাকা পাঠান। এর কয়েক মাস পর
২০১৩ সালের ২৭শে জুলাই মাসে ছুটি কাটাতে দেশে আসেন খসরু। ওই সময় সাদিয়া
সিলেটের একটি বেসরকারি স্কুলে শিক্ষকতা করতেন। খসরু দেশে আসার পর সাদিয়াকে
নিয়ে সিলেট নগরীর মীরের ময়দানের একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। সেখানে তারা
স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করেন। ওদিকে দেশে আসার ১০ দিন পর খসরু ও সাদিয়া
একে অপরের পরিবারের কাছে বিয়ের খবর জানান। কিন্তু পারিবারিকভাবে উভয়পক্ষ
তাদের গোপন বিয়ের বিষয়টি মেনে নিতে পারেনি। দুজনের পিতা বিয়েতে অসম্মতি
প্রকাশ করেন। এর ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে সাদিয়াকে ঘরে তুলতে পারেননি খসরু। এই
অবস্থায় খসরুর ছুটির মেয়াদ শেষ হলে তিনি স্পেনে চলে যান। যাওয়ার আগে
সাদিয়াকে জানান, তিনি পুরোপুরি বসবাসের বৈধতা পাওয়ার জন্য তাকেও স্পেনে
নেয়ার আবেদন জানাবেন। ওই সময়ও খসরু সাদিয়াকে তার হাত খরচ বাবদ দুই লাখ টাকা
প্রদান করেন। খসরু প্রবাসে চলে যাওয়ার পর সাদিয়া পুনরায় অস্ট্রেলিয়া
যাওয়ার জন্য আবেদন করেন। আর এই বিষয়টি জেনে যান খসরু। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে
দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে সাদিয়া খসরুর ফোন ধরাও বন্ধ করে
দেন। ওদিকে দেশে যখন খসরু অবস্থান করছিলেন তখন তারা দুজন একসঙ্গে অনেক ছবি
তুলেছিলেন। এই ছবিগুলোর মধ্যে একটি ছবি খসরু তার নিজের ফেসবুকে আপলোড করলে
রেগে যান সাদিয়া। তিনি এ ঘটনায় সিলেটের কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন। ওই
জিডিতে সাদিয়া খসরুকে পরপুরুষ দাবি করে বিচার প্রার্থনা করেন। স্পেনে
বসবাসরত খসরু জানিয়েছেন, সাদিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ২০০৬ সাল থেকে। আর বিয়ে
হয়েছে ২০১২ সালে। বিয়ের পরও তাদের সম্পর্ক ভাল ছিল। ওই সময় তিনি তার প্রবাস
জীবনে উপার্জিত সব টাকা সাদিয়ার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখন ওই সাদিয়া তার
বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়েছেন। আর বিয়ে অস্বীকার করছেন। তিনি বলেন, তিনি দেশে
এসে এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ দায়ের করবেন। এ ব্যাপারে সিলেটের লাক্কাতোড়া
কাজী অফিসের কাজী আবুল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, সাদিয়া তার মা ও স্বজনদের
নিয়ে কাজী অফিসে গিয়ে টেলিফোনে বিয়ে সম্পন্ন করেন। ওই সময় কাবিনে সাদিয়াসহ
সাক্ষীদের স্বাক্ষর ছিল। কিন্তু খসরু মিয়া দেশে এলেও কাবিনে দস্তখত করেননি।
নিয়ম অনুযায়ী কোন পক্ষের স্বাক্ষর না থাকলে কাবির পরিপূর্ণ হয় না কিংবা
রেজিস্ট্রি করা যায় না। তবে, টেলিফোনে বিয়ে হয়েছে যে সেটি সত্য বলে দাবি
করেন। মেয়ের মামা শামীম আহমদ জানিয়েছেন, সাদিয়ার সঙ্গে খসরুর বিয়ে হওয়া
ডাহা মিথ্যা খবর। বরং খসরু ফেসবুকের মাধ্যমে সাদিয়ার ইজ্জতহানি ঘটিয়েছে। এ
ঘটনায় সিলেটের কোতোয়ালি, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার থানায় জিডি করা হয়েছে। আর
সাদিয়ার সঙ্গে খসরুর পরিচয় আছে কি না সে ব্যাপারে তারা অবগত নয় বলেও
জানান। খসরুর কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।
No comments