জামায়াতের ‘সংস্কারপন্থীদের’ দৃষ্টিতে ইসলামী দলগুলোর ভবিষ্যৎ
জামায়াতের
সংস্কারপন্থীদের এক বৈঠকে ‘রাজনৈতিক সংস্কার কৌশল’ শীর্ষক একটি কী নোট
পেপার উত্থাপন করা হয়েছিল। মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক সম্পাদিত ‘
কামারুজ্জামানের চিঠি এবং জামায়াতের সংস্কার প্রসঙ্গ’ শীর্ষক গ্রন্থে ওই কী
নোট পেপারটি মুদ্রিত হয়েছে। ওই কী নোট পেপারে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশে গত
তিন-চার দশকের ইসলামী রাজনীতি প্রত্যাশিত সুফল বয়ে আনতে পারেনি। সেক্যুলার
আওয়ামী লীগ, জাতীয়তাবাদী বিএনপি ও সুবিধাবাদী জাতীয় পার্টি ঘুরেফিরে
বিভিন্ন মেয়াদে ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু এ তিনটি দলের বৈশিষ্ট কম-বেশি একই।
মূলত ক্ষমতার মোহ, বস্তুগত স্বার্থলিপ্সা, অসততা ও অদক্ষতা, প্রতিহিংসা
পরায়ণতা ইত্যাদি কারণে জাতি খুব বেশি আগাতে পারেনি। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে
জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্যান্য দলগুলোর সাংগঠনিক ও জনভিত্তি উল্লেখ করার
মতো নয়।
বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে জামায়াতের ইসলামীর কোনো বিকল্প আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সবচেয়ে পুরানো রাজনৈতিক দল হওয়া সত্বেও জামায়াত নির্বাচনী দৌঁড়ে বেশ পেছনে পড়ে আছে। বাস্তবতা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সততার সুনাম থাকা সত্বেও বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে জামায়াতের পক্ষে ভবিষ্যতে এককভাবে সরকার গঠনের মত জনপ্রিয়তা অর্জন করা আদৌ সম্ভব নয় বলে কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করেন। জামায়াতে ইসলামীর সীমাবদ্ধতা নিয়ে নিম্নের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা যেতে পারে:
(এক) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করায় জামায়াতের প্রথম সারির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রচারণা থাকায় সর্বজন গ্রহণযোগ্য জাতীয়ভিত্তিক ইমেজ বিল্ডিং তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, যে কোনো দেশে বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। ১৯৭১ সালে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং বলাই বাহুল্য ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে বিরাট সমর্থন দিয়েছিল। গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগেরই সরকার গঠনের অধিকার ছিল। কিন্তু পাকিস্তানী সামরিক জান্তা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধা সৃষ্টি করে এবং অধিকন্তু পাশবিক ও নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়। কোনো বিবেকবান মানুষ তা সমর্থন করতে পারে না। জামায়াত ভারতের আধিপত্যবাদী আচরণের আশঙ্কা থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করার বিষয়টি রাজনৈতিক মতপার্থক্য হিসেবে গণ্য করা গেলেও পাকিস্তানী সামরিক জান্তার পক্ষে যে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল তা দেশের জনগণ কর্তৃক গ্রহণযোগ্য হয়নি। পাকিস্তানী সামরিক জান্তার পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতের রাজনৈতিক কৌশলেরও পরাজয় ঘটেছে। কোনো পরাজিত শক্তির পক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের নেতৃত্ব দেয়ার নৈতিক অধিকার থাকে না। প্রায় চার দশকের ব্যবধানে বিষয়টি জাতি ভুলতে বসেছিল; কিন্তু সেক্যুলার রাজনৈতিক দল, মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটি বিষয়টিকে প্রচার-প্রপাগান্ডার মাধ্যমে আবার জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এর কারণ হলো- আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের রাজনৈতিক জোট গঠন করা। বিষয়টি সাধারণ জনগণের মধ্যে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তা পরিমাপ করা না গেলেও নতুন প্রজন্মের মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে তা বলা যেতে পারে। এর পেছনে প্রতিবেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী মহলের মদদ রয়েছে।
(দুই) শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের দুর্বলতা
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে কেউ কেউ বৃদ্ধ ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং নতুন উদ্যমে দলকে এগিয়ে নেয়ার মতো সামর্থ তাদের নেই।
(তিন) সংগঠনে রেজিমেন্টেড এনভায়রনমেন্ট
জামায়াতের বদ্ধদুয়ার পরিবেশ (রেজিমেন্টেড এনভায়রনমেন্ট) থাকায় ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন উদারনৈতিক ব্যক্তিরা ঐ দলে প্রবেশ করতে পারে না। দলটিতে সৎ মানুষের অভাব না হলেও দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেয়ার মতো উপযুক্ত ও দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। জামায়াতের বাইরে যেসব সৎ ও দক্ষ লোক রয়েছে তারা যে কোনো পর্যায়ে জামায়াতে যোগ দিতে উৎসাহবোধ করে না। এর প্রধান কারণ- প্রথমত, জামায়াতের বদ্ধদুয়ার পরিবেশ; দ্বিতীয়ত, জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা।
(চার) নেতিবাচক প্রচার-প্রপাগান্ডা
বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম ও কতিপয় বুদ্ধিজীবী জামায়াতকে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী ইত্যাদি অভিধায় আখ্যায়িত করে দলটিকে মোটামুটি বিতর্কিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। জামায়াত নেতাকর্মীরা এট সরাসরি কতটা উপলব্ধি করে, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভোটারদের মধ্যে এর বেশ প্রভাব পড়েছে।
(পাঁচ) রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আধুনিক ধ্যান-ধারণার অভাব
বিশ্বায়নের পরিবর্তনের ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আধুনিক ধ্যান-ধারণা নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াত নেতাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইন প্রণয়ন, উন্নয়ন কৌশল, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্র নীতির মতো মৌলিক বিষয়ে জামায়াতের বক্তব্য জনগণের কাছে যেমন স্পষ্ট নয়; তেমনি আকর্ষনীয়ও নয়। সমস্যা সংকুল বাংলাদশের বেশ কিছু মৌলিক সমস্যা রয়েছে। সব দলই এসব বিষয়ে কোনো না কোন বক্তব্য দিয়ে থাকে। এসব সমস্যার অগ্রাধিখার নির্ণয় করে জামায়াত উত্তম বিকল্প কোনো সমাধানের দিকনির্দেশনা জাতির সামনে পেশ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অসৎ নেতৃত্বের বিকল্প হিসেবে জামায়াত নেতারা তাদের দলকে জাতির সামনে তুলে ধরতে পারেননি।
(ছয়) ভোটের রাজনীতিতে কৌশলের অভাব
বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতিতে কিছু কৌশলের আশ্রয় না নিলে নির্বাচনে জয়লাভ করা যায় না। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের বেশ সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রথমত, জামায়াত ভোটারদের চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কথা বলার পরিবর্তে ইসলামী আদর্শের প্রতি ভোটারদের বেশি আহ্বান করে যা পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের নির্বাচনী সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। দ্বিতীয়ত, ভোটের রাজনীতিতে বিপুল অর্থ ব্যয়, অপব্যয় ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতে হয়। এসব প্রবণতা যেমন ইসলামী আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, তেমনি সেগুলো না করলে নির্বাচনী সাফল্য লাভ করাও কঠিন।
(সাত) নতুন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনার আলোকে নিজেদের উপস্থাপনে ব্যর্থতা
নতুন প্রজন্মের ভোটারদের চিন্তা-চেতনা ও আশা-আকাঙ্খা বতৃমান মিডিয়া প্রচারণার দ্বারা বহুলভাবে প্রভাবিত। গতানুগতিক ধারায় ইসলামী আদর্শের প্রতি আহ্বান জানানোর কৌশল কার্যকর হচ্ছে না। এ জন্য প্রয়োজন আধুনিক পরিভাষার ব্যবহার ও উপস্থাপনার নতুন আংগিক। বিষয়টি অনুধাবনে জামায়াত নেতারা খুব একটা সফল হননি।
(আট) ভূম-লীয় রাজনীতি ও বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন নতুন কৌশল
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বন্ধুহীন হয়ে কোনঠাসা ও একলা চলো নীতি গ্রহণ করে টেকসই রাজনীতি করা বাস্তবসম্মত নয়। নীতি ও আদর্শের সাথে আপস না করেও কৌশলগত কারণে উদারনীতি অনুসরন করে সমর্থনের পরিধি বৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি জামায়াতের নেই।
বাংলাদেশের ইসলামী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে জামায়াতের ইসলামীর কোনো বিকল্প আপাতত দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সবচেয়ে পুরানো রাজনৈতিক দল হওয়া সত্বেও জামায়াত নির্বাচনী দৌঁড়ে বেশ পেছনে পড়ে আছে। বাস্তবতা এমন দাঁড়িয়েছে যে, সততার সুনাম থাকা সত্বেও বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে জামায়াতের পক্ষে ভবিষ্যতে এককভাবে সরকার গঠনের মত জনপ্রিয়তা অর্জন করা আদৌ সম্ভব নয় বলে কেউ কেউ অভিমত প্রকাশ করেন। জামায়াতে ইসলামীর সীমাবদ্ধতা নিয়ে নিম্নের বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা যেতে পারে:
(এক) ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করায় জামায়াতের প্রথম সারির বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিরূপ প্রচারণা থাকায় সর্বজন গ্রহণযোগ্য জাতীয়ভিত্তিক ইমেজ বিল্ডিং তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, যে কোনো দেশে বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকাটা অস্বাভাবিক নয়। ১৯৭১ সালে দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং বলাই বাহুল্য ১৯৭০ সালের নির্বাচনেও দেশের জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে বিরাট সমর্থন দিয়েছিল। গণতান্ত্রিক রীতি অনুযায়ী আওয়ামী লীগেরই সরকার গঠনের অধিকার ছিল। কিন্তু পাকিস্তানী সামরিক জান্তা সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধা সৃষ্টি করে এবং অধিকন্তু পাশবিক ও নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালায়। কোনো বিবেকবান মানুষ তা সমর্থন করতে পারে না। জামায়াত ভারতের আধিপত্যবাদী আচরণের আশঙ্কা থেকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করার বিষয়টি রাজনৈতিক মতপার্থক্য হিসেবে গণ্য করা গেলেও পাকিস্তানী সামরিক জান্তার পক্ষে যে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল তা দেশের জনগণ কর্তৃক গ্রহণযোগ্য হয়নি। পাকিস্তানী সামরিক জান্তার পরাজয়ের সঙ্গে সঙ্গে জামায়াতের রাজনৈতিক কৌশলেরও পরাজয় ঘটেছে। কোনো পরাজিত শক্তির পক্ষে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের নেতৃত্ব দেয়ার নৈতিক অধিকার থাকে না। প্রায় চার দশকের ব্যবধানে বিষয়টি জাতি ভুলতে বসেছিল; কিন্তু সেক্যুলার রাজনৈতিক দল, মিডিয়া ও সিভিল সোসাইটি বিষয়টিকে প্রচার-প্রপাগান্ডার মাধ্যমে আবার জাগিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। এর কারণ হলো- আওয়ামী লীগের পরিবর্তে বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের রাজনৈতিক জোট গঠন করা। বিষয়টি সাধারণ জনগণের মধ্যে কতটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে তা পরিমাপ করা না গেলেও নতুন প্রজন্মের মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে তা বলা যেতে পারে। এর পেছনে প্রতিবেশি দেশ ও আন্তর্জাতিক স্বার্থান্বেষী মহলের মদদ রয়েছে।
(দুই) শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বের দুর্বলতা
দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতৃত্বে কেউ কেউ বৃদ্ধ ও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন এবং নতুন উদ্যমে দলকে এগিয়ে নেয়ার মতো সামর্থ তাদের নেই।
(তিন) সংগঠনে রেজিমেন্টেড এনভায়রনমেন্ট
জামায়াতের বদ্ধদুয়ার পরিবেশ (রেজিমেন্টেড এনভায়রনমেন্ট) থাকায় ইসলামী মূল্যবোধ সম্পন্ন উদারনৈতিক ব্যক্তিরা ঐ দলে প্রবেশ করতে পারে না। দলটিতে সৎ মানুষের অভাব না হলেও দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দেয়ার মতো উপযুক্ত ও দক্ষ লোকের অভাব রয়েছে। জামায়াতের বাইরে যেসব সৎ ও দক্ষ লোক রয়েছে তারা যে কোনো পর্যায়ে জামায়াতে যোগ দিতে উৎসাহবোধ করে না। এর প্রধান কারণ- প্রথমত, জামায়াতের বদ্ধদুয়ার পরিবেশ; দ্বিতীয়ত, জামায়াতের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা।
(চার) নেতিবাচক প্রচার-প্রপাগান্ডা
বেশ কিছুদিন ধরে বিভিন্ন প্রচারমাধ্যম ও কতিপয় বুদ্ধিজীবী জামায়াতকে মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক, স্বাধীনতাবিরোধী ইত্যাদি অভিধায় আখ্যায়িত করে দলটিকে মোটামুটি বিতর্কিত করে তুলতে সক্ষম হয়েছে। জামায়াত নেতাকর্মীরা এট সরাসরি কতটা উপলব্ধি করে, তারচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ভোটারদের মধ্যে এর বেশ প্রভাব পড়েছে।
(পাঁচ) রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আধুনিক ধ্যান-ধারণার অভাব
বিশ্বায়নের পরিবর্তনের ধারায় রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে আধুনিক ধ্যান-ধারণা নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়ার ক্ষেত্রে জামায়াত নেতাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। আইন প্রণয়ন, উন্নয়ন কৌশল, অর্থনীতি ও পররাষ্ট্র নীতির মতো মৌলিক বিষয়ে জামায়াতের বক্তব্য জনগণের কাছে যেমন স্পষ্ট নয়; তেমনি আকর্ষনীয়ও নয়। সমস্যা সংকুল বাংলাদশের বেশ কিছু মৌলিক সমস্যা রয়েছে। সব দলই এসব বিষয়ে কোনো না কোন বক্তব্য দিয়ে থাকে। এসব সমস্যার অগ্রাধিখার নির্ণয় করে জামায়াত উত্তম বিকল্প কোনো সমাধানের দিকনির্দেশনা জাতির সামনে পেশ করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির অসৎ নেতৃত্বের বিকল্প হিসেবে জামায়াত নেতারা তাদের দলকে জাতির সামনে তুলে ধরতে পারেননি।
(ছয়) ভোটের রাজনীতিতে কৌশলের অভাব
বাংলাদেশে ভোটের রাজনীতিতে কিছু কৌশলের আশ্রয় না নিলে নির্বাচনে জয়লাভ করা যায় না। এ ক্ষেত্রে জামায়াতের বেশ সীমাবদ্ধতা রয়েছে। প্রথমত, জামায়াত ভোটারদের চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে কথা বলার পরিবর্তে ইসলামী আদর্শের প্রতি ভোটারদের বেশি আহ্বান করে যা পার্লামেন্টারি গণতন্ত্রের নির্বাচনী সংস্কৃতির সঙ্গে খাপ খায় না। দ্বিতীয়ত, ভোটের রাজনীতিতে বিপুল অর্থ ব্যয়, অপব্যয় ও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছলচাতুরীর আশ্রয় নিতে হয়। এসব প্রবণতা যেমন ইসলামী আদর্শের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, তেমনি সেগুলো না করলে নির্বাচনী সাফল্য লাভ করাও কঠিন।
(সাত) নতুন প্রজন্মের চিন্তা-চেতনার আলোকে নিজেদের উপস্থাপনে ব্যর্থতা
নতুন প্রজন্মের ভোটারদের চিন্তা-চেতনা ও আশা-আকাঙ্খা বতৃমান মিডিয়া প্রচারণার দ্বারা বহুলভাবে প্রভাবিত। গতানুগতিক ধারায় ইসলামী আদর্শের প্রতি আহ্বান জানানোর কৌশল কার্যকর হচ্ছে না। এ জন্য প্রয়োজন আধুনিক পরিভাষার ব্যবহার ও উপস্থাপনার নতুন আংগিক। বিষয়টি অনুধাবনে জামায়াত নেতারা খুব একটা সফল হননি।
(আট) ভূম-লীয় রাজনীতি ও বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন নতুন কৌশল
আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বন্ধুহীন হয়ে কোনঠাসা ও একলা চলো নীতি গ্রহণ করে টেকসই রাজনীতি করা বাস্তবসম্মত নয়। নীতি ও আদর্শের সাথে আপস না করেও কৌশলগত কারণে উদারনীতি অনুসরন করে সমর্থনের পরিধি বৃদ্ধির দৃষ্টিভঙ্গি জামায়াতের নেই।
No comments