তদন্তের ক্ষমতা নিজেদের হাতেই রাখতে চায় পুলিশ by রোজিনা ইসলাম
পুলিশের কাছেই সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ নারী! |
পুলিশের কাছেই সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ নারী! |
নিজেদের
বিরুদ্ধে ওঠা অনিয়ম-দুর্নীতিসহ স্পর্শকাতর অভিযোগের তদন্তের ক্ষমতা
নিজেদের কাছেই রাখতে চায় পুলিশ। এগুলোর তদন্তের ক্ষমতা স্বরাষ্ট্র
মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটিকে দিতে চায় না।
পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসা অনিয়ম-দুর্নীতি ও নানা স্পর্শকাতর অভিযোগ তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয় দুটি কমিটি গঠন করায় এর প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়কে এ কথা জানিয়েছে। পুলিশ অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে ওই কমিটি পুলিশ বাহিনীর অধিকার খর্ব করবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেও পুলিশের কর্মকর্তারা একই দাবি জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী চায়ের নিমন্ত্রণে পুলিশ সদর দপ্তরে গেলেও এ দাবি জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে অনেক অভিযোগ স্বরাষ্ট্রে আসে। আগে পুলিশকে এসব তদন্ত করতে দেওয়া হতো। এতে দেখা যায়, বাহিনীর একক তদন্তে দুর্বলতা থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ে আসা অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য গত মার্চে মন্ত্রণালয় ও জেলা পর্যায়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে। আর কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদমর্যাদার সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক বা তাঁর প্রতিনিধি। দুই কমিটিরই সদস্যসচিব করা হয়েছে পুলিশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিকে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের অনুমোদনে এই কমিটি করা হয়। বিষয়টি মন্ত্রণালয় ১৯ মার্চ চিঠি দিয়ে পুলিশ অধিদপ্তরকে জানায়।
পুলিশ অধিদপ্তর এই কমিটি গঠনের তীব্র বিরোধিতা করে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৮৬১ সালের পুলিশ অ্যাক্ট অনুযায়ী, পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠার পর থেকে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় নিজস্ব বিধিবিধানের আলোকে বিভিন্ন অভিযোগ বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধানে সুস্পষ্টভাবে পুলিশের শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে করণীয় পদ্ধতি বলা আছে। গত পাঁচ বছরে পুলিশের সব স্তরের ৬৭ হাজার ৮২০ জন সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা প্রতি বছর গড়ে ১৩ হাজার ৫৬৪ জন। এএসপি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যাপারেও পুলিশ কর্মকর্তা নিযুক্ত করে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার রীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। কিন্তু হঠাৎ পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভাগ-বহির্ভূত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করার বিষয়টি বোধগম্য নয়। পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত এ আদেশ প্রতিষ্ঠিত বিধিবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এটি অপ্রয়োজনীয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ তদন্তের জন্য বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তার সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে তদন্ত করা প্রচলিত নিয়ম। এ ছাড়া পুলিশ আইন, ১৮৬১ অনুসারে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের ক্ষমতা সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাখে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ অধিদপ্তর পাঁচ বছরের যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, সেখানে বলা নেই কতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল বা কতজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা পর্যালোচনা করে দেখেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া ২৬টি অভিযোগ পুলিশ অধিদপ্তরে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে ১৮টি প্রমাণিত হয়নি এবং দুটি আংশিক প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তদন্ত করেছে তা প্রমাণিত হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট বাহিনীর এককভাবে তদন্তে সত্য উদ্ঘাটন না হয়ে তদন্তে দুর্বলতা রয়ে যায়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি বিভাগীয় মামলা-সংশ্লিষ্ট তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে না। তারা শুধু মন্ত্রণালয়ে আসা অভিযোগ তদন্ত করবে। তাই পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োগ করা বিধিবিধানের সঙ্গে এ কমিটির কার্যপরিধি সাংঘর্ষিক নয়। নালিশ, এজাহার বা আদালতের মন্তব্য ছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের বিরুদ্ধে পিআরবি প্রবিধান অনুযায়ী যেখানে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করার বা নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, সেখানে সরকার তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিকে পুলিশ অধিদপ্তরের চিঠিতে কেন ‘বিভাগ-বহির্ভূত কমিটি’ বলা হলো তা মন্ত্রণালয়ের বোধগম্য নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। কারণ, মন্ত্রণালয় মনে করে, পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী কোনো আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, সাংঘর্ষিক বা সরকারের এখতিয়ার নেই, এমন কোনো আদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ অধিদপ্তর বিষয়টি অনুধাবন না করেই মন্ত্রণালয়ের চিঠি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে।
জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেকোনো কমিটি করতেই পারে। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেকোনো বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রাখে। মন্ত্রণালয়ের সেই নির্বাহী ও রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে। কিন্তু মাত্রাটা যেন বেশি না হয়ে যায়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পুলিশের প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। পুলিশের কর্মকর্তারা আমার কাছে এসেছিলেন, তাঁরা এ কমিটির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দেখি এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কী করা যায়।’
আরেকটি চিঠির বিরোধিতা: সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ অধিদপ্তরে ‘জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপার দ্বন্দ্বে মাঠ প্রশাসনের চেইন অব কমান্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা’ শিরোনামে এক চিঠিতে জানানো হয়, হাতে অস্ত্র থাকায় এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হওয়ায় পুলিশের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সখ্য বেশি। রাজনৈতিক ও অবৈধ অর্থের জোরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পদোন্নতি পেয়ে জেলার এসপি হন অনেকেই। এঁদের অনেকের মূল লক্ষ্য থাকে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে অর্থ উপার্জন।
মন্ত্রণালয়ের এমন বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ ও রাজনীতিবিদদের সন্ধির ন্যূনতম কোনো অবকাশ নেই। প্রতিবেদনের এ বক্তব্য রাজনীতিবিদসহ পুলিশের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী ও সুশৃঙ্খল বাহিনীকে হেয় করা এবং গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে ভূমিকা পালনকারী একটি সংস্থার মনোবল ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস মাত্র ও সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক কাঠামোতে আঘাত হানার শামিল। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রতিবেদন অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত।
পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আসা অনিয়ম-দুর্নীতি ও নানা স্পর্শকাতর অভিযোগ তদন্তের জন্য মন্ত্রণালয় দুটি কমিটি গঠন করায় এর প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ অধিদপ্তর মন্ত্রণালয়কে এ কথা জানিয়েছে। পুলিশ অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে ওই কমিটি পুলিশ বাহিনীর অধিকার খর্ব করবে উল্লেখ করে তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেও পুলিশের কর্মকর্তারা একই দাবি জানিয়েছেন। প্রতিমন্ত্রী চায়ের নিমন্ত্রণে পুলিশ সদর দপ্তরে গেলেও এ দাবি জানানো হয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দপ্তর, অধিদপ্তর, সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে অনেক অভিযোগ স্বরাষ্ট্রে আসে। আগে পুলিশকে এসব তদন্ত করতে দেওয়া হতো। এতে দেখা যায়, বাহিনীর একক তদন্তে দুর্বলতা থাকে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ে আসা অভিযোগগুলো তদন্তের জন্য গত মার্চে মন্ত্রণালয় ও জেলা পর্যায়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির সভাপতি করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিকে। আর কনস্টেবল থেকে পরিদর্শক পদমর্যাদার সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক বা তাঁর প্রতিনিধি। দুই কমিটিরই সদস্যসচিব করা হয়েছে পুলিশ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিকে। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও সচিবের অনুমোদনে এই কমিটি করা হয়। বিষয়টি মন্ত্রণালয় ১৯ মার্চ চিঠি দিয়ে পুলিশ অধিদপ্তরকে জানায়।
পুলিশ অধিদপ্তর এই কমিটি গঠনের তীব্র বিরোধিতা করে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ১৮৬১ সালের পুলিশ অ্যাক্ট অনুযায়ী, পুলিশ বাহিনী প্রতিষ্ঠার পর থেকে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় নিজস্ব বিধিবিধানের আলোকে বিভিন্ন অভিযোগ বিষয়ে পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ-সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন ও বিধিবিধানে সুস্পষ্টভাবে পুলিশের শৃঙ্খলা ভঙ্গের বিষয়ে করণীয় পদ্ধতি বলা আছে। গত পাঁচ বছরে পুলিশের সব স্তরের ৬৭ হাজার ৮২০ জন সদস্যের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, যা প্রতি বছর গড়ে ১৩ হাজার ৫৬৪ জন। এএসপি ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ব্যাপারেও পুলিশ কর্মকর্তা নিযুক্ত করে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার রীতি দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। কিন্তু হঠাৎ পুলিশ বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভাগ-বহির্ভূত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করার বিষয়টি বোধগম্য নয়। পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা-সংক্রান্ত এ আদেশ প্রতিষ্ঠিত বিধিবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় এবং এটি অপ্রয়োজনীয়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ তদন্তের জন্য বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তার সমন্বয়ে কমিটি গঠন করে তদন্ত করা প্রচলিত নিয়ম। এ ছাড়া পুলিশ আইন, ১৮৬১ অনুসারে এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠনের ক্ষমতা সরকার বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রাখে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পুলিশ অধিদপ্তর পাঁচ বছরের যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, সেখানে বলা নেই কতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল বা কতজনকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তাঁরা পর্যালোচনা করে দেখেছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া ২৬টি অভিযোগ পুলিশ অধিদপ্তরে তদন্তের জন্য পাঠিয়েছিল। এর মধ্যে ১৮টি প্রমাণিত হয়নি এবং দুটি আংশিক প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুলিশের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তদন্ত করেছে তা প্রমাণিত হয়েছে। ফলে দেখা গেছে, সংশ্লিষ্ট বাহিনীর এককভাবে তদন্তে সত্য উদ্ঘাটন না হয়ে তদন্তে দুর্বলতা রয়ে যায়।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি বিভাগীয় মামলা-সংশ্লিষ্ট তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবে না। তারা শুধু মন্ত্রণালয়ে আসা অভিযোগ তদন্ত করবে। তাই পুলিশের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োগ করা বিধিবিধানের সঙ্গে এ কমিটির কার্যপরিধি সাংঘর্ষিক নয়। নালিশ, এজাহার বা আদালতের মন্তব্য ছাড়া পুলিশের বিরুদ্ধে যেকোনো অভিযোগের বিরুদ্ধে পিআরবি প্রবিধান অনুযায়ী যেখানে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তদন্ত করার বা নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন, সেখানে সরকার তথা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিকে পুলিশ অধিদপ্তরের চিঠিতে কেন ‘বিভাগ-বহির্ভূত কমিটি’ বলা হলো তা মন্ত্রণালয়ের বোধগম্য নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এসব বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়ে মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। কারণ, মন্ত্রণালয় মনে করে, পুলিশ বাহিনীর শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণকারী কোনো আইনের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ, সাংঘর্ষিক বা সরকারের এখতিয়ার নেই, এমন কোনো আদেশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা চিঠিতে উল্লেখ করা হয়নি। পুলিশ অধিদপ্তর বিষয়টি অনুধাবন না করেই মন্ত্রণালয়ের চিঠি প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে।
জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেকোনো কমিটি করতেই পারে। রুলস অব বিজনেস অনুযায়ী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যেকোনো বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার রাখে। মন্ত্রণালয়ের সেই নির্বাহী ও রাজনৈতিক ক্ষমতা আছে। কিন্তু মাত্রাটা যেন বেশি না হয়ে যায়, সে বিষয়ে লক্ষ রাখতে হবে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পুলিশের প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। পুলিশের কর্মকর্তারা আমার কাছে এসেছিলেন, তাঁরা এ কমিটির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দেখি এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে কী করা যায়।’
আরেকটি চিঠির বিরোধিতা: সম্প্রতি মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশ অধিদপ্তরে ‘জেলা প্রশাসক-পুলিশ সুপার দ্বন্দ্বে মাঠ প্রশাসনের চেইন অব কমান্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা’ শিরোনামে এক চিঠিতে জানানো হয়, হাতে অস্ত্র থাকায় এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থা হওয়ায় পুলিশের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের সখ্য বেশি। রাজনৈতিক ও অবৈধ অর্থের জোরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে পদোন্নতি পেয়ে জেলার এসপি হন অনেকেই। এঁদের অনেকের মূল লক্ষ্য থাকে রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে অর্থ উপার্জন।
মন্ত্রণালয়ের এমন বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ ও রাজনীতিবিদদের সন্ধির ন্যূনতম কোনো অবকাশ নেই। প্রতিবেদনের এ বক্তব্য রাজনীতিবিদসহ পুলিশের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী ও সুশৃঙ্খল বাহিনীকে হেয় করা এবং গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে ভূমিকা পালনকারী একটি সংস্থার মনোবল ক্ষুণ্ন করার অপপ্রয়াস মাত্র ও সুশৃঙ্খল গণতান্ত্রিক কাঠামোতে আঘাত হানার শামিল। রাষ্ট্রীয় প্রশাসন যন্ত্রের বিরুদ্ধে এ ধরনের প্রতিবেদন অপ্রত্যাশিত ও অনভিপ্রেত।
No comments