ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন- ব্যাচেলর নেতা...
ভারতের ব্যাচেলর নেতা নরেন্দ্র মোদি।
বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে কিছুটা মুশকিল হয় তার। গত বছর নির্বাচনে বিরাট জয়ের
পর মায়ের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। মাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন- সেটা দেখানোর
চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এরপর জাঁকজমকপূর্ণ অভিষেক অনুষ্ঠানে তিনি মাকে
আমন্ত্রণ জানাতে ব্যর্থ হন। নারীদের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের প্রয়োজনীয়তা
নিয়ে তিনি কথা বলেছেন। এটা প্রশংসনীয়। কিন্তু তিনি পুরুষের সম্পর্কের
ভিত্তিকে এবং সুরক্ষা করার মূল্যবান সম্পদ বা ব্যক্তি হিসেবে ‘আমাদের মা,
মেয়ে আর বোনদের’ সংজ্ঞায়িত করেন। প্রধানমন্ত্রী পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার
আগ পর্যন্ত তিনি স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানান যে, তার একজন স্ত্রী আছেন
এবং তারা আলাদা থাকেন। এটা তার সুনামের জন্য সহায়ক নয়। তরুণ বয়সে বিয়ে করতে
বাধ্য করা হয়েছিল তাকে। আর এরপর থেকে তারা একসঙ্গে ছিলেন না। মোদি দারুণ
বাকপটু। তবে মাঝে মধ্যেই বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন। ৭ই জুন সফল বাংলাদেশ
সফরকালীন স্থুল এক মন্তব্য করেন মোদি। তার আতিথ্যকর্তা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনার প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেন, নারী হওয়া সত্ত্বেও তিনি সন্ত্রাসের
বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে ভারতের সমালোচকরা পশ্চাদমুখী
দৃষ্টিভঙ্গির জন্য মোদির সমালোচনা করেছেন যে দৃষ্টিভঙ্গি ওইসব মানুষদের
জন্য স্বাভাবিক যারা দেশকে ‘ভারত মাতা’ বলে শ্রদ্ধা করে কিন্তু নারীদের
সঙ্গে জঘন্য আচরণ করে। তারপরও এমন দৃষ্টিভঙ্গির বিস্তৃতি ব্যাপক। শুধু
ভারতেই নয়, পুরো দক্ষিণ এশিয়াজুড়ে। পুরো এ অঞ্চলটি নারীদের সমমর্যাদা ও
সুযোগ দিতে ব্যর্থ। কিন্তু সেটা একটু অদ্ভুত ঠেকতে পারে। বিশেষ করে দক্ষিণ
এশিয়ার রাজনীতিতে নারীরা যে শীর্ষস্থানীয় ভূমিকা পালন করে থাকেন সে
বিবেচনায়। চীন, জাপান, রাশিয়া ও অন্যান্য অনেক দেশ এখনও কোন নারী
প্রধানমন্ত্রী বা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারে নি। কিন্তু দক্ষিণ
এশিয়ায় এ যাবৎ অনেক নারী প্রধানমন্ত্রী, প্রেসিডেন্ট ছিলেন ও আছেন। হিলারি
ক্লিনটন যদি আগামী বছর বিশ্বের সব থেকে শক্তিশালী গণতন্ত্রের নেতৃত্ব দিতে
নির্বাচিত হন তাহলে বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্রের নেতৃত্ব দানকারী ইন্দিরা
গান্ধীর পর অর্ধশতক পূর্ণ হবে। ১৯৬০ সালে শ্রীলঙ্কার শ্রীমাভো বন্দরনায়েক
বিশ্বের প্রথম নারী রাষ্ট্রপ্রধান নির্বাচিত হন। দেশটিতে মা ও তার মেয়ে
দেশের সর্বোচ্চ রাজনৈতিক কার্যালয়ে অধিষ্ঠিত হয়েছেন যা অনন্যসাধারণ এক
নজির। ৯০ দশকের শেষের দিকে চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা যখন প্রেসিডেন্ট হিসেবে
দায়িত্ব পালন করছিলেন তখন একইসময়ে তার বয়োবৃদ্ধ মা মিসেস বন্দরনায়েক
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার তৃতীয় মেয়াদ পূর্ণ করেন। দক্ষিণ এশিয়ার
গতন্ত্রগুলোর শীর্ষে নারীরা উন্নতি করেন এর পেছনে আংশিক কারণ হলো এমন বংশ
থেকে তারা এসেছেন যারা অতীতে রাজনৈতিক দলগুলো প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশের
প্রধান দু’নেত্রী রাজনীতিতে আসেন উত্তরাধিকার সূত্রে। পাকিস্তানের একমাত্র
নারী প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত বেনজির ভুট্টো তার পিতা জুলফিকার আলী ভুট্টো
নিহত হওয়ার পর রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। জুলফিকার আলী একজন জনপ্রিয়
প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ভারতে কংগ্রেস দলের ভবিষ্যৎ নেত্রী হিসেবে প্রিয়াঙ্কা
গান্ধীকে অনেকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকেন। এর অন্যতম কারণ হলো
তার মা সোনিয়া গান্ধী ও তার দাদি ইন্দিরা গান্ধী এ দায়িত্ব পালন করেছেন।
দাদির সঙ্গে প্রিয়াঙ্কার চেহারার দারুণ সাদৃশ্যও রয়েছে। কিন্তু দক্ষিণ
এশিয়া যদি সম্ভ্রান্ত নারীদের জন্য অন্যতম সেরা স্থান হয় যেখানে তারা
রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের উচ্চাকাঙ্ক্ষা করতে পারেন; একইসঙ্গে এটা একজন সাধারণ
নারীর জন্য সব থেকে খারাপ স্থানগুলোর একটি। শীর্ষস্থানীয় নারীরা মাঝে মধ্যে
যে অন্ধ দেশপ্রেমের মুখোমুখি হন তা নিম্নস্থানীয়দের ওপর থাকা বোঝার
স্তূপের পাশে মলিন হয়ে যায়। ‘মা সূচকে’ দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের অবস্থান
অত্যন্ত বাজে। বৃটিশ দাতব্য প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য চিলড্রেন মে মাসে সূচকটি
প্রকাশ করে। এতে নারীদের ভালো থাকার ওপর ভিত্তি করে ১৭৯টি দেশের অবস্থান
নির্ণয় করা হয়েছে। যে বিষয়গুলো নির্দেশক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে তার
মধ্যে মায়েদের আয়ু, নারীদের রাজনীতিতে সম্পৃক্ততার বিষয়গুলো ছিল। এশিয়ার
মধ্যে সূচকে উপমহাদেশের রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান ছিল সব থেকে খারাপ। ভারত ও
পাকিস্তানে (সূচকে অবস্থান যথাক্রমে ১৪০তম ও ১৪৯তম) নারীদের জীবনযাত্রার
মান আফগানিস্তানের (১৫২তম) তুলনায় সামান্য উন্নত। আর চীনের থেকে তো অনেক
পিছিয়ে (৬১তম)।
তবে সবকিছু হতাশাব্যঞ্জক নয়। গত ২৫ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর আনুষ্ঠানিক স্বাস্থ্যবিষয়ক স্কিমের বদৌলতে দক্ষিণ এশিয়ানদের জন্য কিছু কিছু বিষয় নাটকীয়ভাবে উন্নতি হয়েছে। বাল্য বিবাহের বিষয়টি বিবেচনা করুন। ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ের দিকে গড়ে ভারতীয় নারীদের বিয়ে হতো ১৫ বছর বয়সে। তারা সন্তানও গ্রহণ করতেন অনেক আগে এবং ঘন ঘন। এখন ভারতীয় নারীদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পর। গড়ে ২১ বছর বয়সে। আরেকটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৩ সালে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার নারীর। এর এক চতুর্থাংশ দক্ষিণ এশিয়ায়। কিন্তু এখানেও অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। এ অঞ্চলে এমন মৃত্যুর হার ১৯৯০ সালে প্রতি ১ লাখে ৫৫০ জন থেকে কমে এখন ১৯০ হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলো- নেপাল, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ বিনামূল্যে মা ও শিশু সেবা দিয়ে এবং আরও নারী স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তারপরও আরও অগ্রগতি দেখতে হলে নারীদের জন্য দক্ষিণ এশিয়াকে অনেক বেশি ব্যয় করা প্রয়োজন। এ অঞ্চল জনস্বাস্থ্য খাতে জাতীয় প্রবৃদ্ধির ১ শতাংশও ব্যয় করে না। চীন ব্যয় করে ৩.১ শতাংশ। এতে করে যারা সন্তান প্রসব করান এবং শিশু সেবার জন্য যাদের সব থেকে বেশি দায়িত্ব থাকে তাদের ওপর বড় বোঝা এসে পড়ে। এর আংশিক কারণ হলো বিদ্যমান দরিদ্রতা। ২০১২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা যায় দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবছর জনপ্রতি স্বাস্থ্য সেবার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বরাদ্দ মিলিয়ে ৫০ ডলারের কিছু বেশি হবে। আফ্রিকা প্রায় এর দ্বিগুণ ব্যয় করে। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এটা দশগুণ বেশি। উত্তর আমেরিকায় প্রতিবছর স্বাস্থ্যখাতে জনপ্রতি ব্যয় ছিল ৮৫০০ ডলার। দক্ষিণ এশিয়ায় নারীদের জন্য সম্পদের ব্যয় অন্য যে কোন স্থানের তুলনায় অনেক বেশি অসম। দিল্লির ধনী এলাকাগুলোতে (ঢাকা ও অন্যত্রও চিত্র একই) নারীরা উন্নত বিশ্বের মানদণ্ডের কাছাকাছি মাতৃত্বসেবাসহ অন্যান্য সেবা উপভোগ করতে পারে। কিন্তু একই শহরের দরিদ্র অংশের নারীরা বিশেষ করে যারা বস্তি এলাকায় থাকে তারা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র গ্রামগুলোর থেকেও খারাপ পরিস্থিতির শিকার। দিল্লিতে এমন নারীদের মাত্র ১৯ ভাগ সন্তান প্রসবের সময় দক্ষ কাউকে কাছে পায়। দক্ষিণ এশিয়ায় বিদ্যমান সম্পদকে আরও সম্প্রসারণ করার একটি উপায় হলো এমন বৈষম্য কমিয়ে আনা। কিন্তু সেটা নারীদের প্রতি পুরোনো ধাঁচের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে যে সময় লাগে তার থেকে দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তবে সবকিছু হতাশাব্যঞ্জক নয়। গত ২৫ বছরে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আর আনুষ্ঠানিক স্বাস্থ্যবিষয়ক স্কিমের বদৌলতে দক্ষিণ এশিয়ানদের জন্য কিছু কিছু বিষয় নাটকীয়ভাবে উন্নতি হয়েছে। বাল্য বিবাহের বিষয়টি বিবেচনা করুন। ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ের দিকে গড়ে ভারতীয় নারীদের বিয়ে হতো ১৫ বছর বয়সে। তারা সন্তানও গ্রহণ করতেন অনেক আগে এবং ঘন ঘন। এখন ভারতীয় নারীদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা শিক্ষা সমাপ্ত হওয়ার পর। গড়ে ২১ বছর বয়সে। আরেকটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৩ সালে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে বিশ্বে মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৮৯ হাজার নারীর। এর এক চতুর্থাংশ দক্ষিণ এশিয়ায়। কিন্তু এখানেও অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। এ অঞ্চলে এমন মৃত্যুর হার ১৯৯০ সালে প্রতি ১ লাখে ৫৫০ জন থেকে কমে এখন ১৯০ হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলো- নেপাল, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশ বিনামূল্যে মা ও শিশু সেবা দিয়ে এবং আরও নারী স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিয়ে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে। তারপরও আরও অগ্রগতি দেখতে হলে নারীদের জন্য দক্ষিণ এশিয়াকে অনেক বেশি ব্যয় করা প্রয়োজন। এ অঞ্চল জনস্বাস্থ্য খাতে জাতীয় প্রবৃদ্ধির ১ শতাংশও ব্যয় করে না। চীন ব্যয় করে ৩.১ শতাংশ। এতে করে যারা সন্তান প্রসব করান এবং শিশু সেবার জন্য যাদের সব থেকে বেশি দায়িত্ব থাকে তাদের ওপর বড় বোঝা এসে পড়ে। এর আংশিক কারণ হলো বিদ্যমান দরিদ্রতা। ২০১২ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যানে দেখা যায় দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবছর জনপ্রতি স্বাস্থ্য সেবার জন্য সরকারি ও বেসরকারি বরাদ্দ মিলিয়ে ৫০ ডলারের কিছু বেশি হবে। আফ্রিকা প্রায় এর দ্বিগুণ ব্যয় করে। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এটা দশগুণ বেশি। উত্তর আমেরিকায় প্রতিবছর স্বাস্থ্যখাতে জনপ্রতি ব্যয় ছিল ৮৫০০ ডলার। দক্ষিণ এশিয়ায় নারীদের জন্য সম্পদের ব্যয় অন্য যে কোন স্থানের তুলনায় অনেক বেশি অসম। দিল্লির ধনী এলাকাগুলোতে (ঢাকা ও অন্যত্রও চিত্র একই) নারীরা উন্নত বিশ্বের মানদণ্ডের কাছাকাছি মাতৃত্বসেবাসহ অন্যান্য সেবা উপভোগ করতে পারে। কিন্তু একই শহরের দরিদ্র অংশের নারীরা বিশেষ করে যারা বস্তি এলাকায় থাকে তারা অপেক্ষাকৃত দরিদ্র গ্রামগুলোর থেকেও খারাপ পরিস্থিতির শিকার। দিল্লিতে এমন নারীদের মাত্র ১৯ ভাগ সন্তান প্রসবের সময় দক্ষ কাউকে কাছে পায়। দক্ষিণ এশিয়ায় বিদ্যমান সম্পদকে আরও সম্প্রসারণ করার একটি উপায় হলো এমন বৈষম্য কমিয়ে আনা। কিন্তু সেটা নারীদের প্রতি পুরোনো ধাঁচের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হতে যে সময় লাগে তার থেকে দ্রুত হওয়ার সম্ভাবনা কম।
No comments