ইতি ঘটতে পারে সীমান্ত চুক্তির
আসামকে
বাদ দিয়েই বাংলাদেশ-ভারত স্থল সীমান্ত চুক্তি (এলবিএ) সংক্রান্ত বিল
দেশটির সংসদে উত্থাপন করতে যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি
সরকার। আজকালের মধ্যে রাজ্যসভায় এটি পেশ করার কথা। কিন্তু এরই মধ্যে বিলটি
নিয়ে ভারতের রাজনীতিতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। চুক্তির
অন্তর্ভুক্ত কোন রাজ্য বা এর অংশবিশেষকে বাদ রেখে এলবিএ বাস্তবায়নের চিন্তা
করলে তাতে কংগ্রেস সমর্থন দেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির দল তৃণমূল কংগ্রেসও তাদের সমর্থন
প্রত্যাহারের ইঙ্গিত দিয়েছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং ২০১৬ সালে নির্বাচন
বিবেচনায় যে রাজ্যকে বাদ দেয়ার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার সেই রাজ্য অর্থাৎ
আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও এর বিরোধিতা করছেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর
পাঠানো এক চিঠিতে আসামকে রেখেই দ্রুত বিলটি সংসদে পেশ করার তাগিদ দিয়েছেন
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। ওই পরিকল্পনার কারণে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর সমালোচনাও
করেছেন তিনি। বলেছেন, এ চুক্তিতে দ্বিমুখী অবস্থান নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি।
অবস্থা যখন এই পর্যায়ে, তখন ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক টাইমস অব ইন্ডিয়া তার
সম্পাদকীয়তে চুক্তি থেকে আসামকে বাদ রাখার পরিকল্পনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ
করেছে। জানিয়েছে, এতে পশ্চিমবঙ্গও তাদের অবস্থান পাল্টাতে পারে। আর তা হলে
চিরদিনের জন্য চুক্তিটিরই সমাপ্তি ঘটবে এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করা হয়েছে।
অবশ্য বাংলাদেশ এখনও এ নিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। দিল্লির তরফে
আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে ঢাকা। খণ্ডিত কিংবা পরিবর্তিত যে
কোন প্রস্তাব পাওয়ার পর তা বিচার-বিশ্লেষণ করে ঢাকার মতামত জানানো হবে বলে
গতকালও জানিয়েছেন সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এমপি।
আংশিক চুক্তির বাস্তবায়ন বাংলাদেশ মানবে কি-না? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে
কৌশলী জবাব দিয়েছেন জুনিয়র মন্ত্রী। তার মতে, ভারতের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য
পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে ভাববে বাংলাদেশ।
সীমান্ত চুক্তিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে
পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের স্থল সীমান্ত চুক্তিও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির স্বার্থে মোদি সরকার সীমান্ত চুক্তির আওতা থেকে আসামকে বাদ দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে কংগ্রেস। আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও রাজ্যের সঙ্গে কোন রকম আলোচনা না করেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে তার আপত্তির কথা জানিয়েছেন। কংগ্রেস সূত্রে জানানো হয়েছে, মোদি সরকার আসামকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আংশিকভাবে সীমান্ত চুক্তি বিল রূপায়িত করতে চাইলে কংগ্রেস তাতে বাধা দেবে। সরকারের শীর্ষস্তরের মন্ত্রীদেরও কংগ্রেস তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে। সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গোলাম নবী আজাদ বলেছেন, আসামের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে আপাতত এই রাজ্যকে চুক্তির আওতার বাইরে রাখার চেষ্টা করছে। কংগ্রেস কোনভাবেই বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে মধ্যে সংকীর্ণ রাজনীতির অনুপ্রবেশ মেনে নেবে না বলে আজাদ জানিয়েছেন। কয়েকদিন আগেই জানাজানি হয় যে সীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিলটি আংশিকভাবে সংসদে পেশ করা হবে। আসামের ভোটের কথা মাথায় রেখে এবং সেখানকার বিজেপি নেতাদের দাবি মেনে নিয়ে আসামকে বাদ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ২৯শে এপ্রিল কেবিনেট বৈঠকে বিষয়টি অনুমোদিতও হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়ের সঙ্গে ভূখণ্ড বিনিময় অংশটি হুবুহু এক থাকবে। ৫ই মের পরে বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করার কথা জানিয়েছিলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু। তবে সংসদেও বিজনেস এডভাইসরি কমিটির বৈঠকে বিলটি কবে পেশ করা হবে তা কংগ্রেসের আপত্তির মুখে চূড়ান্ত করা যায়নি বলে জানা গেছে। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। ভারত এটি অনুমোদন দেয়নি। এরপর ২০১১ সালে ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরে গিয়ে একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করেছিলেন। সেই মতই সীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলটি রাজ্যসভায় পাস হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত হযেছিল। সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিও বিলটি দ্রুত রূপায়ণের সুপারিশ করেছিল। তবে আসাম বিজেপির নেতারা মোদি সরকারের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে চুক্তি হলে আসামের ২৬৮ একর জমি বাংলাদেশে চলে যাবে বিনিময়ে আসাম কিছুই পাবে না বলে যে প্রচার করছে তাতে আপত্তি জানিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় জানিয়েছেন যে, ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত চিহ্নিতকারী রেখা নতুন করে আঁকা হলে (২০১১ সালের বিল অনুযায়ী), করিমগঞ্জ জেলার লাঠিটিলা-দুমাবড়ি সেক্টরের লাঠিটিলা এলাকায় বাংলাদেশের দখলে থাকা ৭১৪ একর বিতর্কিত জমি অসমের হাতে আসবে। বদলে বড়ইবাড়ি কালাবাড়ি এলাকায় ১৯৩.৮৫ একর জমি ও পাল্লাঠাল এলাকার ৭৪.৫৫ একর জমি পাবে বাংলাদেশ। গগৈয়ের বক্তব্য, ওই ২৬৮.৪০ একর জমি নামেই ভারতের সীমান্তভুক্ত। তা আদতে বাংলাদেশের হাতেই রয়েছে। তাই জমি বিনিময় হওয়ার পর, অসম তথা ভারত ৪৪৫.৬ একর জমি বেশি পাবে। নতুন চুক্তি হলে আখেরে লাভবান হবে আসামই। এই তথ্য বিভ্রান্তির কথা প্রধানমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন তরুণ গগৈ। ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসামে এসে জমি হস্তান্তরে রাজ্যের মানুষের সম্মতি চেয়ে বলেছিলেন, আসামের মানুষের আবেগের কথা মাথায় রেখে বলছি, এই হস্তান্তর আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতি বলে মনে হলেও, এতে আসামের লাভ হবে। বন্ধ হবে অনুপ্রবেশ। স্থলসীমান্ত চুক্তি থেকে আসামবাসীর যাতে লাভ হয়, আমরা সেই চেষ্টা করবো। কিন্তু হঠাৎ করে রাজ্যের বিজেপি নেতারা বেঁকে বসেছেন। আসাম বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, এই চুক্তিতে আসামকে শামিল করলে বিধানসভা ভোটে দলের ভরাডুবি হবে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে আসামে ১৪টির মধ্যে ৭টিতে জিতে বিজেপি সেখানে জয়ের গন্ধ পেয়েছে। রাজ্যে পুর নির্বাচনেও ভাল ফল করেছে বিজেপি। ফলে আগামী বিধানসভা ভোটে রাজ্য দখল করাই দলের লক্ষ্য। সেদিকে তাকিয়েই দলের নেতারা এই চুক্তি নিয়ে আপত্তি তোলে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা মেনে নেয়। আর এরই ফলে সীমান্ত চুক্তি নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির মত দ্বন্দ্ব তীব্র হযেছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিলটি। কংগ্রেসের আপত্তিতে রাজ্যসভায় বিলটি কোনভাইে পাস করানো সম্ভব হবে না।
অবশ্যই সীমান্ত চুক্তি নিয়ে রাজনীতির খেলা বন্ধ করতে হবে: টাইমস অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ভারত সরকারকে অবশ্যই সীমান্ত চুক্তি ইস্যু নিয়ে রাজনীতির খেলা বন্ধ করতে হবে। এ চুক্তি শুধু ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে তাই নয়, একইসঙ্গে নয়াদিল্লি চীনকে দেখাতে সমর্থ হবে যে, তারা দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে থাকা সীমান্ত ইস্যু সমাধা করতে পারে। গতকাল প্রকাশিত ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, সংসদের বাজেট সেশন সমাপ্ত হতে সপ্তাহখানেক বাকি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যে আইনি কাজ অসমাপ্ত রয়েছে তাহলো ভারতের পার্লামেন্টে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তির অনুমোদন। ১৬২টি ভারতীয় ও বাংলাদেশী ছিটমহল বিনিময় এবং সীমান্ত পূর্ণাঙ্গ চিহ্নিতকরণ নিয়ে সাংবিধানিক সংশোধন বিলটি ইউপিএ’র আমল থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে ঝুলে আছে। সে সময় বিজেপি বিলটির বিরোধিতা করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল এতে সংবিধানের মৌলিক বিষয়বস্তুর লঙ্ঘন হয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর তারা বিপরীত অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই জোর দিয়ে বলেছেন, সীমান্ত চুক্তি দেশের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার স্বার্থে। তবে, সীমান্ত চুক্তিতে আসামকে বাদ রেখে সংবিধান সংশোধনী বিল প্রস্তাব করার সরকারি পরিকল্পনার সাম্প্রতিক যেসব রিপোর্ট এসেছে তা উদ্বেগজনক। আসামের অংশে রয়েছে ২৬৮ একর ভূখণ্ড। বিড়ম্বনার বিষয় হলো আসাম সরকার সীমান্ত চুক্তিতে তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছে। তবে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের একটি অংশের ইচ্ছার বশীভূত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। দলের ওই অংশটি ২০১৬ সালের আসাম বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় থেকে সীমান্ত চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। কিন্তু আসামকে বাদ দেয়া হলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুক্তির প্রতি সমর্থন পুনর্বিবেচনা করতে চাপের মুখে পড়বেন। তিনি প্রথমদিকে সীমান্ত চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন। পরে তার মত পরিবর্তন করেন। আর পশ্চিমবঙ্গ যদি অবস্থান পরিবর্তন করে তাহলে তা চিরতরে সীমান্তচুক্তির সমাপ্তি টানবে। পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যেহেতু সীমান্ত চুক্তিতে সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন দিয়েছে, সরকার তাই সহজেই বিরোধী কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাস করতে পারে। তারপরও, তারা আসামের নির্বাচনে স্বল্পমেয়াদি এবং ধারণামূলক অর্জনের জন্য ইস্যুটিকে রাজনীতিকরণ করার পথ বেছে নিয়েছে। সীমান্ত চুক্তিতে অনুসমর্থন শুধু ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে তাই নয়, এর মধ্য দিয়ে চীনকে দেখানো যাবে যে নয়াদিল্লি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সীমান্ত ইস্যু সমাধা করতে সক্ষম। সরকারকে অবশ্যই এ নিয়ে রাজনীতি করা বন্ধ করতে হবে। আর কোন প্রকার বাদ না দিয়েই সীমান্ত চুক্তিতে সমর্থন দিতে হবে।
মোদি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন -তরুণ গগৈ: এদিকে সীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন এমন অভিযোগ করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেছেন, এ কারণেই চুক্তিটি নিয়ে দ্বিমুখী অবস্থান নিয়েছেন তিনি। গতকাল গুয়াহাটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, আসামে আগামী বছর নির্বাচন। সেই নির্বাচনে যাতে বিজেপি তার জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারে সে কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে বিজেপি সরকার। সীমান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে আসামের বিজেপি নেতারাও। ফলে আসামকে এ চুক্তির অধীনে আনা হলে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য। তাই তারা যাতে নির্বাচনে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে সে জন্য আসামকে চুক্তি থেকে বাদ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এ খবরও প্রকাশিত হয়েছে মিডিয়ায়। সংশোধিত ওই চুক্তির বিলটি ভারতের পার্লামেন্টের চলতি অধিবেশনে তোলার কথা রয়েছে। এ অধিবেশন চলবে আরও প্রায় এক সপ্তাহ। এ সময়ের মধ্যেই বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করার কথা। তবে সীমান্ত চুক্তি থেকে আসামকে বাদ রাখা হলে রাজ্যসভায় এ বিলের বিরোধিতা করবে কংগ্রেস। তাদের মতে, এই চুক্তি একটি প্যাকেজ চুক্তি। এ থেকে কোন অংশ (আসাম) বাদ রাখা হলে তাতে জটিলতা সৃষ্টি হবে। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার তারিক করিমও একই কথা বলেছেন। ভারতের মিডিয়ায়ই আভাস দেয়া হচ্ছে, এ চুক্তি নিয়ে সৃষ্টি হতে পারে জটিলতা। এমনই এক প্রেক্ষাপটে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সংবাদ সম্মেলনে বললেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন যে, এই চুক্তি আসামের স্বার্থের জন্য অনুকূলে। তরুণ গগৈ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখেন- এ চুক্তি যদি আসামের জন্য শুভ হয় তাহলে এখন কেন আসামকে বাদ রাখা হচ্ছে? লোকসভা নির্বাচনের আগে আপনি এক অবস্থান নিয়েছিলেন। নির্বাচনের পরে কেন অন্য অবস্থান নিচ্ছেন? রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য এটা হলো দ্বিমুখী নীতি। কংগ্রেস নেতারা মনে করেন, সীমান্ত চুক্তিতে কোন সংশোধন আনার আগে আসাম রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। তরুণ গগৈ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রে সহযোগিতার কথা বলেন। তবে যখন এমন একটি ইস্যুতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মোটেও পরামর্শ করা হয় নি সেখানে এটা কেমন ধরনের কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা? তবে এ চুক্তির বিষয়ে আমাদের অবস্থান আগে যা ছিল এখনও তাই। এখনও আমরা মনে করি এ চুক্তিটি আসামের অনুকূলে। আসামকে এ চুক্তিতে অঙ্গীভূত করা হলে এ রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। এর প্রেক্ষিতে তরুণ গগৈ গত বছর ৩০শে নভেম্বরে নরেন্দ্র মোদির সমাবেশের কথা তুলে ধরেন। সেখানে মোদি বলেছিলেন- আমি জানি আসামের সমস্যা সম্পর্কে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, আসামের নিরাপত্তা নিয়ে কোন আপোষ হবে না। সীমান্ত চুক্তি হবে স্থায়ী সমাধান। আমি আসামের মানুষের আবেগ সম্পর্কে জানি। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, আমরা আসাম ও ভারতের কল্যাণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাব।
দিল্লি যোগাযোগ করেনি: স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে দিল্লির তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও বাংলাদেশের সঙ্গে কোন যোগাযোগ হয়নি জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ভারতের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন মতামত নেই। চুক্তির বিষয়ে কিছু অংশের খণ্ডিত বাস্তবায়নে ভারতের পক্ষ থেকে যদি কোন প্রস্তাবনা আসে বাংলাদেশ তা বিবেচনা করে দেখতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বিকালে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। সেখানে অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এতদিন পরে হলেও স্থল সীমান্ত চুক্তি ভারতীয় সংসদে উঠতে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত আশার ও খুশির খবর। বাংলাদেশ এতে আনন্দিত। যে কোন চুক্তি বাস্তবায়নে কিছু সময় লাগে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লক্ষ্য করবেন বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর তার গেজেট প্রকাশে ৭/৮ মাস লেগে গেছে। তবে চুক্তিটি যে অচিরেই বাস্তবায়ন হবে এ নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে বিদেশী উদ্বেগের বিষয়েও কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। জানান, এখনও কোন বিদেশী এ নিয়ে সরকারের কাছে জানতে চায়নি। তবে আন্তর্জাতিক মহলের যে কোন প্রশ্নের জবাব দিতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে আল কায়েদার দায় স্বীকারের বিষয়ে যে খবর প্রকাশ হয়েছে এ নিয়ে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ভীতি সঞ্চারের জন্য এটি করা হতে পারে। এছাড়া, কিছু দিন আগে আল কায়েদা প্রধান জাওয়াহিরির যে ভিডিও প্রকাশ হয়েছিল এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। থাইল্যান্ডের উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীকে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস যোগাযোগ রাখছে। মন্ত্রণালয় সার্বিক বিষয় তদারকি করছে।
সোনিয়াকে ছিটমহলবাসীর চিঠি: স্থল সীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিলে সমর্থন দিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে ছিটমহলবাসী। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির শীর্ষনেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত সোমবার ওই চিঠি লিখেন। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রের খবর প্রেরক নিজেই চিঠি দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, বিলে সমর্থন চেয়ে আমরা সোনিয়া গান্ধীর কাছে ফ্যাক্সবার্তা পাঠিয়েছি। আশা করি তিনি আমাদের অনুরোধ রাখবেন।
সীমান্ত চুক্তিও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে
পরিতোষ পাল, কলকাতা থেকে জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের স্থল সীমান্ত চুক্তিও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে। অভ্যন্তরীণ রাজনীতির স্বার্থে মোদি সরকার সীমান্ত চুক্তির আওতা থেকে আসামকে বাদ দেয়ার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে কংগ্রেস। আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈও রাজ্যের সঙ্গে কোন রকম আলোচনা না করেই এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়ায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি লিখে তার আপত্তির কথা জানিয়েছেন। কংগ্রেস সূত্রে জানানো হয়েছে, মোদি সরকার আসামকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে আংশিকভাবে সীমান্ত চুক্তি বিল রূপায়িত করতে চাইলে কংগ্রেস তাতে বাধা দেবে। সরকারের শীর্ষস্তরের মন্ত্রীদেরও কংগ্রেস তাদের আপত্তির কথা জানিয়ে দিয়েছে। সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গোলাম নবী আজাদ বলেছেন, আসামের আগামী বিধানসভা নির্বাচনে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে আপাতত এই রাজ্যকে চুক্তির আওতার বাইরে রাখার চেষ্টা করছে। কংগ্রেস কোনভাবেই বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে মধ্যে সংকীর্ণ রাজনীতির অনুপ্রবেশ মেনে নেবে না বলে আজাদ জানিয়েছেন। কয়েকদিন আগেই জানাজানি হয় যে সীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিলটি আংশিকভাবে সংসদে পেশ করা হবে। আসামের ভোটের কথা মাথায় রেখে এবং সেখানকার বিজেপি নেতাদের দাবি মেনে নিয়ে আসামকে বাদ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। গত ২৯শে এপ্রিল কেবিনেট বৈঠকে বিষয়টি অনুমোদিতও হয়েছে। তবে পশ্চিমবঙ্গ ও মেঘালয়ের সঙ্গে ভূখণ্ড বিনিময় অংশটি হুবুহু এক থাকবে। ৫ই মের পরে বিলটি রাজ্যসভায় পেশ করার কথা জানিয়েছিলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু। তবে সংসদেও বিজনেস এডভাইসরি কমিটির বৈঠকে বিলটি কবে পেশ করা হবে তা কংগ্রেসের আপত্তির মুখে চূড়ান্ত করা যায়নি বলে জানা গেছে। দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। ভারত এটি অনুমোদন দেয়নি। এরপর ২০১১ সালে ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরে গিয়ে একটি প্রটোকল স্বাক্ষর করেছিলেন। সেই মতই সীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনী বিলটি রাজ্যসভায় পাস হওয়ার সম্ভাবনা নিশ্চিত হযেছিল। সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটিও বিলটি দ্রুত রূপায়ণের সুপারিশ করেছিল। তবে আসাম বিজেপির নেতারা মোদি সরকারের পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে চুক্তি হলে আসামের ২৬৮ একর জমি বাংলাদেশে চলে যাবে বিনিময়ে আসাম কিছুই পাবে না বলে যে প্রচার করছে তাতে আপত্তি জানিয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় জানিয়েছেন যে, ভারত-বাংলাদেশের সীমান্ত চিহ্নিতকারী রেখা নতুন করে আঁকা হলে (২০১১ সালের বিল অনুযায়ী), করিমগঞ্জ জেলার লাঠিটিলা-দুমাবড়ি সেক্টরের লাঠিটিলা এলাকায় বাংলাদেশের দখলে থাকা ৭১৪ একর বিতর্কিত জমি অসমের হাতে আসবে। বদলে বড়ইবাড়ি কালাবাড়ি এলাকায় ১৯৩.৮৫ একর জমি ও পাল্লাঠাল এলাকার ৭৪.৫৫ একর জমি পাবে বাংলাদেশ। গগৈয়ের বক্তব্য, ওই ২৬৮.৪০ একর জমি নামেই ভারতের সীমান্তভুক্ত। তা আদতে বাংলাদেশের হাতেই রয়েছে। তাই জমি বিনিময় হওয়ার পর, অসম তথা ভারত ৪৪৫.৬ একর জমি বেশি পাবে। নতুন চুক্তি হলে আখেরে লাভবান হবে আসামই। এই তথ্য বিভ্রান্তির কথা প্রধানমন্ত্রীকেও জানিয়েছেন তরুণ গগৈ। ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসামে এসে জমি হস্তান্তরে রাজ্যের মানুষের সম্মতি চেয়ে বলেছিলেন, আসামের মানুষের আবেগের কথা মাথায় রেখে বলছি, এই হস্তান্তর আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতি বলে মনে হলেও, এতে আসামের লাভ হবে। বন্ধ হবে অনুপ্রবেশ। স্থলসীমান্ত চুক্তি থেকে আসামবাসীর যাতে লাভ হয়, আমরা সেই চেষ্টা করবো। কিন্তু হঠাৎ করে রাজ্যের বিজেপি নেতারা বেঁকে বসেছেন। আসাম বিজেপি নেতৃত্বের বক্তব্য, এই চুক্তিতে আসামকে শামিল করলে বিধানসভা ভোটে দলের ভরাডুবি হবে। ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে আসামে ১৪টির মধ্যে ৭টিতে জিতে বিজেপি সেখানে জয়ের গন্ধ পেয়েছে। রাজ্যে পুর নির্বাচনেও ভাল ফল করেছে বিজেপি। ফলে আগামী বিধানসভা ভোটে রাজ্য দখল করাই দলের লক্ষ্য। সেদিকে তাকিয়েই দলের নেতারা এই চুক্তি নিয়ে আপত্তি তোলে এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা মেনে নেয়। আর এরই ফলে সীমান্ত চুক্তি নিয়ে কংগ্রেস ও বিজেপির মত দ্বন্দ্ব তীব্র হযেছে। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বিলটি। কংগ্রেসের আপত্তিতে রাজ্যসভায় বিলটি কোনভাইে পাস করানো সম্ভব হবে না।
অবশ্যই সীমান্ত চুক্তি নিয়ে রাজনীতির খেলা বন্ধ করতে হবে: টাইমস অব ইন্ডিয়ার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ভারত সরকারকে অবশ্যই সীমান্ত চুক্তি ইস্যু নিয়ে রাজনীতির খেলা বন্ধ করতে হবে। এ চুক্তি শুধু ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে তাই নয়, একইসঙ্গে নয়াদিল্লি চীনকে দেখাতে সমর্থ হবে যে, তারা দীর্ঘ দিন ধরে ঝুলে থাকা সীমান্ত ইস্যু সমাধা করতে পারে। গতকাল প্রকাশিত ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, সংসদের বাজেট সেশন সমাপ্ত হতে সপ্তাহখানেক বাকি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ যে আইনি কাজ অসমাপ্ত রয়েছে তাহলো ভারতের পার্লামেন্টে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত চুক্তির অনুমোদন। ১৬২টি ভারতীয় ও বাংলাদেশী ছিটমহল বিনিময় এবং সীমান্ত পূর্ণাঙ্গ চিহ্নিতকরণ নিয়ে সাংবিধানিক সংশোধন বিলটি ইউপিএ’র আমল থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে ঝুলে আছে। সে সময় বিজেপি বিলটির বিরোধিতা করেছিল। তাদের যুক্তি ছিল এতে সংবিধানের মৌলিক বিষয়বস্তুর লঙ্ঘন হয়েছে। ক্ষমতায় আসার পর তারা বিপরীত অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই জোর দিয়ে বলেছেন, সীমান্ত চুক্তি দেশের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তার স্বার্থে। তবে, সীমান্ত চুক্তিতে আসামকে বাদ রেখে সংবিধান সংশোধনী বিল প্রস্তাব করার সরকারি পরিকল্পনার সাম্প্রতিক যেসব রিপোর্ট এসেছে তা উদ্বেগজনক। আসামের অংশে রয়েছে ২৬৮ একর ভূখণ্ড। বিড়ম্বনার বিষয় হলো আসাম সরকার সীমান্ত চুক্তিতে তাদের সমর্থনের কথা জানিয়েছে। তবে, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের একটি অংশের ইচ্ছার বশীভূত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। দলের ওই অংশটি ২০১৬ সালের আসাম বিধানসভা নির্বাচনকে মাথায় থেকে সীমান্ত চুক্তির বিরোধিতা করে আসছে। কিন্তু আসামকে বাদ দেয়া হলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুক্তির প্রতি সমর্থন পুনর্বিবেচনা করতে চাপের মুখে পড়বেন। তিনি প্রথমদিকে সীমান্ত চুক্তির বিরোধিতা করেছিলেন। পরে তার মত পরিবর্তন করেন। আর পশ্চিমবঙ্গ যদি অবস্থান পরিবর্তন করে তাহলে তা চিরতরে সীমান্তচুক্তির সমাপ্তি টানবে। পররাষ্ট্রবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি যেহেতু সীমান্ত চুক্তিতে সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন দিয়েছে, সরকার তাই সহজেই বিরোধী কংগ্রেসের সমর্থন নিয়ে সংবিধান সংশোধনী বিলটি পাস করতে পারে। তারপরও, তারা আসামের নির্বাচনে স্বল্পমেয়াদি এবং ধারণামূলক অর্জনের জন্য ইস্যুটিকে রাজনীতিকরণ করার পথ বেছে নিয়েছে। সীমান্ত চুক্তিতে অনুসমর্থন শুধু ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ককে শক্তিশালী করবে তাই নয়, এর মধ্য দিয়ে চীনকে দেখানো যাবে যে নয়াদিল্লি দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সীমান্ত ইস্যু সমাধা করতে সক্ষম। সরকারকে অবশ্যই এ নিয়ে রাজনীতি করা বন্ধ করতে হবে। আর কোন প্রকার বাদ না দিয়েই সীমান্ত চুক্তিতে সমর্থন দিতে হবে।
মোদি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন -তরুণ গগৈ: এদিকে সীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে নরেন্দ্র মোদি রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন এমন অভিযোগ করে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ বলেছেন, এ কারণেই চুক্তিটি নিয়ে দ্বিমুখী অবস্থান নিয়েছেন তিনি। গতকাল গুয়াহাটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। উল্লেখ্য, আসামে আগামী বছর নির্বাচন। সেই নির্বাচনে যাতে বিজেপি তার জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে পারে সে কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে বিজেপি সরকার। সীমান্ত চুক্তির বিরুদ্ধে আসামের বিজেপি নেতারাও। ফলে আসামকে এ চুক্তির অধীনে আনা হলে তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে কেন্দ্রীয় সরকারের জন্য। তাই তারা যাতে নির্বাচনে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারে সে জন্য আসামকে চুক্তি থেকে বাদ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এ খবরও প্রকাশিত হয়েছে মিডিয়ায়। সংশোধিত ওই চুক্তির বিলটি ভারতের পার্লামেন্টের চলতি অধিবেশনে তোলার কথা রয়েছে। এ অধিবেশন চলবে আরও প্রায় এক সপ্তাহ। এ সময়ের মধ্যেই বিলটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করার কথা। তবে সীমান্ত চুক্তি থেকে আসামকে বাদ রাখা হলে রাজ্যসভায় এ বিলের বিরোধিতা করবে কংগ্রেস। তাদের মতে, এই চুক্তি একটি প্যাকেজ চুক্তি। এ থেকে কোন অংশ (আসাম) বাদ রাখা হলে তাতে জটিলতা সৃষ্টি হবে। ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার তারিক করিমও একই কথা বলেছেন। ভারতের মিডিয়ায়ই আভাস দেয়া হচ্ছে, এ চুক্তি নিয়ে সৃষ্টি হতে পারে জটিলতা। এমনই এক প্রেক্ষাপটে আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ সংবাদ সম্মেলনে বললেন, গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন যে, এই চুক্তি আসামের স্বার্থের জন্য অনুকূলে। তরুণ গগৈ প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখেন- এ চুক্তি যদি আসামের জন্য শুভ হয় তাহলে এখন কেন আসামকে বাদ রাখা হচ্ছে? লোকসভা নির্বাচনের আগে আপনি এক অবস্থান নিয়েছিলেন। নির্বাচনের পরে কেন অন্য অবস্থান নিচ্ছেন? রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য এটা হলো দ্বিমুখী নীতি। কংগ্রেস নেতারা মনে করেন, সীমান্ত চুক্তিতে কোন সংশোধন আনার আগে আসাম রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। তরুণ গগৈ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কেন্দ্রে সহযোগিতার কথা বলেন। তবে যখন এমন একটি ইস্যুতে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মোটেও পরামর্শ করা হয় নি সেখানে এটা কেমন ধরনের কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা? তবে এ চুক্তির বিষয়ে আমাদের অবস্থান আগে যা ছিল এখনও তাই। এখনও আমরা মনে করি এ চুক্তিটি আসামের অনুকূলে। আসামকে এ চুক্তিতে অঙ্গীভূত করা হলে এ রাজ্যের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশ বন্ধ হবে। এর প্রেক্ষিতে তরুণ গগৈ গত বছর ৩০শে নভেম্বরে নরেন্দ্র মোদির সমাবেশের কথা তুলে ধরেন। সেখানে মোদি বলেছিলেন- আমি জানি আসামের সমস্যা সম্পর্কে। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, আসামের নিরাপত্তা নিয়ে কোন আপোষ হবে না। সীমান্ত চুক্তি হবে স্থায়ী সমাধান। আমি আসামের মানুষের আবেগ সম্পর্কে জানি। আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, আমরা আসাম ও ভারতের কল্যাণের লক্ষ্যে এগিয়ে যাব।
দিল্লি যোগাযোগ করেনি: স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে দিল্লির তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও বাংলাদেশের সঙ্গে কোন যোগাযোগ হয়নি জানিয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেছেন, ভারতের স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবরে স্থল সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে যেসব কথা বলা হচ্ছে এটা সম্পূর্ণ তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের কোন মতামত নেই। চুক্তির বিষয়ে কিছু অংশের খণ্ডিত বাস্তবায়নে ভারতের পক্ষ থেকে যদি কোন প্রস্তাবনা আসে বাংলাদেশ তা বিবেচনা করে দেখতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল বিকালে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। সেখানে অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, এতদিন পরে হলেও স্থল সীমান্ত চুক্তি ভারতীয় সংসদে উঠতে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত আশার ও খুশির খবর। বাংলাদেশ এতে আনন্দিত। যে কোন চুক্তি বাস্তবায়নে কিছু সময় লাগে উল্লেখ করে তিনি বলেন, লক্ষ্য করবেন বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা বিজয়ের পর তার গেজেট প্রকাশে ৭/৮ মাস লেগে গেছে। তবে চুক্তিটি যে অচিরেই বাস্তবায়ন হবে এ নিয়ে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এ সময় তিন সিটি নির্বাচন নিয়ে বিদেশী উদ্বেগের বিষয়েও কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। জানান, এখনও কোন বিদেশী এ নিয়ে সরকারের কাছে জানতে চায়নি। তবে আন্তর্জাতিক মহলের যে কোন প্রশ্নের জবাব দিতে সরকার প্রস্তুত রয়েছে বলে জানান তিনি। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডে আল কায়েদার দায় স্বীকারের বিষয়ে যে খবর প্রকাশ হয়েছে এ নিয়ে জানতে চাইলে শাহরিয়ার আলম বলেন, ভীতি সঞ্চারের জন্য এটি করা হতে পারে। এছাড়া, কিছু দিন আগে আল কায়েদা প্রধান জাওয়াহিরির যে ভিডিও প্রকাশ হয়েছিল এর কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। থাইল্যান্ডের উদ্ধার হওয়া বাংলাদেশীকে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখার অনুরোধ করা হয়েছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ দূতাবাস যোগাযোগ রাখছে। মন্ত্রণালয় সার্বিক বিষয় তদারকি করছে।
সোনিয়াকে ছিটমহলবাসীর চিঠি: স্থল সীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত বিলে সমর্থন দিতে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছে ছিটমহলবাসী। ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় কমিটির শীর্ষনেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত সোমবার ওই চিঠি লিখেন। স্থানীয় গণমাধ্যম সূত্রের খবর প্রেরক নিজেই চিঠি দেয়ার বিষয়টি প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, বিলে সমর্থন চেয়ে আমরা সোনিয়া গান্ধীর কাছে ফ্যাক্সবার্তা পাঠিয়েছি। আশা করি তিনি আমাদের অনুরোধ রাখবেন।
No comments