৫ বছরের কারাদণ্ড, কাঁদলেন সালমান

সালমান খানকে নিয়ে ভারতজুড়ে তোলপাড়। না, তার অভিনীত কোন ছবি নিয়ে নয়। এবার ব্যক্তি সালমান খানের দিকে চোখ পড়েছিল সারা ভারতবাসীর। মুম্বইয়ের এক আদালত গতকাল এক মামলায় তাকে যখন ৫ বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করেন তখন আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন কোটি কোটি হৃদয়ে ঝড় তোলা এই সুপার স্টার। কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। এ সময় তার কতজন ভক্ত অঝোরে কেঁদেছেন সে খবর কেউ রাখে নি। ভারতের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সালমানের আদালতে হাজিরা, রায় ঘোষণা, তার বাড়িতে অভিনেত্রী প্রীতি জিনতা, সোনাক্ষী সিনহাদের ছুটে যাওয়া- এসবই সরাসরি দেখিয়েছে। নিয়মিত সম্প্রচার বাদ দিয়ে সালমানময় ছিল দিনটি। তেরো বছর আগে মুম্বইয়ের রাস্তায় গাড়ি চাপা দিয়ে ১ জনের মৃত্যু ঘটানোর মামলায় অভিনেতা সালমান খানকে গতকাল ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে মুম্বইয়ের স্থানীয় এক আদালত। রায় শোনার পরই সালমান কান্নায় ভেঙে পড়েন। আদালতে উপস্থিত তার পরিবারের সকলে হতাশায় ভেঙে পড়েন। তবে এদিনই সালমান খানের হয়ে মুম্বই হাইকোর্টে তার পক্ষে বিশিষ্ট আইনজীবী হরিশ সালভে জামিনের আবেদন জানান। বিচারক অভয় থিপসে নিম্ন আদালতের রায়ে কপি ঠিক সময়ে জমা না দেয়ায় সালমানকে দুদিনের জন্য অন্তর্বর্তী জামিন মঞ্জুর করেন। এর ফলে এখনই সালমানকে কুখ্যাত আর্থার জেলে আপাতত যেতে হচ্ছে না। এদিন সকালে সালমান খানের বাড়িতে গিয়ে তাকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। বাড়ির সকলে প্রার্থনাতে অংশ নিয়েছিলেন। বুধবার সকালে মুম্বইয়ের  সেশন কোর্টের বিচারক  ডি ডাব্লু দেশপান্ডে সালমানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে জানিয়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করেন। অভিযোগ ছিল, ২০০২ সালের এক রাতে মদ্যপ অবস্থায় সালমান গাড়ি চালিয়ে একজন পথবাসীকে চাপা দিলে তার মৃত্যু হয়। আহত হয়েছিলেন ৪ জন পথবাসী। আদালত জানিয়েছে, দুর্ঘটনার সময় মদ্যপ অবস্থায় নিজেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন সালমান খান। দুর্ঘটনার সময় লাইসেন্স ছিল না তার। অনিচ্ছাকৃত খুনের জন্য ৩০৪ ধারায়  দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন সালমান। মামলা চলাকালীন সালমানের ড্রাইভার অশোক সিং জানিয়েছিলেন সালমান নন, তিনি সেদিন রাতে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। কিন্তু সাক্ষ্যপ্রমাণ দেখে সালমানকেই দোষী সাব্যস্ত করেছে আদালত। বলা হয়, এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় অন্তত ১০ বছর বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হতে পারে সালমানের। আদালতে উপস্থিত থাকা সালমানের এক অনুরাগী জানান, সকাল থেকে হালকা মেজাজে থাকলেও রায় ঘোষণার পরই ভেঙে পড়েন সালমান। সরকারি আইনজীবী সালমানের দশ বছরের সাজা দাবি করেছিলেন। তবে সালমানের আইনজীবী অনুরোধ করেছিলেন, সালমানের সাজা যাতে ৩ বছরের জেলের বেশি না হয়, বরং জরিমানার টাকা বাড়ানো হোক। রায় ঘোষণার পর অসুস্থ হয়ে পড়েন সালমানের মা। রায় জানাজানির পর গোটা বলিউডে নেমে এসেছে স্তব্ধতা ও চিন্তার ছায়া। কেননা, সালমানের ওপর বর্তমানে ৬শ’ কোটি রুপি বিনিয়োগ করে বসে রয়েছেন প্রযোজকরা। সালমানের ৪টি ছবির শুটিং চলছিল। শুধু এ বছরই তার দু’টি ছবিতে মোট ৪৫০ কোটি রুপির অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ‘বাজরাঙ্গি ভাইজান’ ও ‘প্রেম রতন ধান পায়ো’।
বাজরাঙ্গি ভাইজান:‘এক থা টাইগার’ ছবিটির মাধ্যমে পরিচালক কবির খান ও সালমান খান জুটিবদ্ধ হন। বলিউডের পূর্বের অনেক রেকর্ড ভেঙে দেয় ছবিটি। সবচেয়ে কম সময়ে ১০০ কোটি রুপি, মুক্তির প্রথম দিন ও প্রথম সপ্তাহান্তে সর্বোচ্চ আয় করা মুভির তালিকায় শীর্ষে উঠে যায় ছবিটি। সে ছবির সফলতাই হয়তো এই জুটিকে আরেকটি ছবি নির্মাণে অগ্রসর হতে আগ্রহী করে তোলে। এরপর কবির খানের ‘বাজরাঙ্গি ভাইজান’ ছবিতে কাজ করতে চুক্তিবদ্ধ হন সালমান। এ বছরের ঈদে ছবিটি মুক্তির কথা ছিল। কিন্তু সালমানের বিরুদ্ধে সাজার আদেশে সব ঝুলে যেতে পারে।
প্রেম রতন ধান পায়ো: সালমান খান ও সুরজ বারজাটিয়ার এ ছবিটি মুক্তি পাবার কথা ছিল এ বছরের দিওয়ালিতে। এর আগেও এ দুজন মিলে উপহার দিয়েছিলেন ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ‘হাম আপকে হ্যাঁয় কৌন’ ‘হাম সাথ সাথ হ্যাঁয়’-এর মতো ব্যবসাসফল ছবি। ‘প্রেম রতন ধান পায়ো’ ছবিটি নিয়ে বলিউডি ছবির ভক্তদের আগ্রহের কোন কমতি ছিল না। সালমানের বিপরীতে ছবিটিতে অভিনয়ের কথা ছিল অনিল কাপুর তনয়া সোনম কাপুরের। কিন্তু এ ছবির ভাগ্যও হুমকির মুখে পড়ে যেতে পারে।
শুদ্ধি: হবে হবে করেও বলিউডের বিখ্যাত প্রযোজক-পরিচালক করণ জোহরের সঙ্গে কাজ করা হয়নি সালমান খানের। অবশেষে উচ্চাবিলাসী ছবি ‘শুদ্ধি’তে কাজ করার ব্যাপারে চুক্তিবদ্ধ হন সালমান। ছবিটিতে প্রথমে হৃতিক রোশনের অভিনয়ের কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত এটির ভবিষ্যৎ নিয়ে কপালে করণ জোহরের ভাঁজ পড়ছে, এ কথা হলফ করে বলা যায়।
নো এন্ট্রি ম্যায় এন্ট্রি: ব্যবসাসফল কমেডি মুভি ‘নো এন্ট্রি’র সিক্যুয়েল এ ছবিটি নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ ছিল অনেক বেশি। ছবিটিতে কেবল অতিথি চরিত্রে কাজ করার কথা ছিল সালমানের। পরে অবশ্য মূল অভিনেতা হিসেবেই চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। কিন্তু সালমান খানের সাজা ছবিটির প্রযোজকদের জন্য ভালো খবর বয়ে আনেনি।
সুলতান: আশ্চর্য্যজনক হলেও সত্য, বলিউডের অন্যতম সফল প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান যশরাজ ফিল্মসের সঙ্গে ‘এক থা টাইগার’-এর আগে আর কাজ করেন নি সালমান। মুভি বাজারজাতকরণের শীর্ষ এ প্রতিষ্ঠান ও বলিউডের অন্যতম সফল এ অভিনেতার যৌথ প্রচেষ্টা বক্সঅফিসের বহু রেকর্ড তছনছ করে দেয়। অল্পের জন্য রেহাই পায় তখনকার সবচেয়ে বেশি আয় করা মুভি ‘থ্রি ইডিয়টস’। ওই ছবির সাফল্যের পর যশরাজ ফিল্মস ও সালমান খান ‘সুলতান’ ছবির ব্যাপারে একমত হন। ছবিটিতে সালমান খানের একজন বক্সারের চরিত্রে অভিনয় করার কথা ছিল। যাই হোক, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এ ছবিটিও আটকে যাবে।
বিজ্ঞাপন: ছবির বাইরে সালমানের পেছনে কোটি কোটি রুপি লগ্নি করেছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিটি বিজ্ঞাপনচিত্রের জন্য ১ থেকে ২ কোটি রুপি নিয়ে থাকেন তিনি। সালমান জেলে গেলে এসব বিজ্ঞাপন চলবে না টিভিতে। এর আগের বারও সালমান কারাগারে যাবার পর তার বিজ্ঞাপনগুলো সরিয়ে নেয় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এর বাইরে পণ্যের দূত হিসেবেও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মোটা অঙ্কের চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন তিনি। সেসবের ভবিষ্যৎ-ই বা কী হবে?
সালমানের বাড়িতে তারকারা: সালমান খানের সাজার খবর শোনার পর সঙ্গে সঙ্গে তার বাড়ি গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টে ছুটে যান অভিনেত্রী জিনতা ও সোনাক্ষি সিনহা। এ দুই অভিনেত্রীর সঙ্গেই উষ্ণ সমপর্ক রয়েছে সালমানের। তারা দুজনই সালমানের মাকে সঙ্গ দেন ও সহমর্মিতা জানান। এছাড়া, তার বাড়িতে মায়ের সঙ্গে দেখা যায় ভাই সোহেল খান ও তার স্ত্রীকেও। এর আগে ‘বাজরাঙ্গি ভাইজান’ ছবির কাজে কাশ্মীরে ছিলেন সালমান খান। ৫ই মে তিনি মুম্বইয়ে ফিরে যান। সেদিন সন্ধ্যায় তার বাড়িতে ছুটে যান আরেক বিখ্যাত বলিউড অভিনেতা শাহরুখ খান ও পরিচালক ডেভিড ধাওয়ান। এদিকে সাজার খবরে মুম্বইয়ে সালমানের গ্যালাক্সি অ্যাপার্টমেন্টের বাইরে জড়ো হতে শুরু করেন ভক্তরা। সেখানে সালমান খানের প্রতি সমর্থনসূচক বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ও ব্যানার তুলে ধরেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে টুইট ও স্ট্যাটাস শুরু করেছেন ভক্তরা।
তারকাদের প্রতিক্রিয়া: এদিকে সালমানের রায়ে টুইটারে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বহু বলিউড তারকা। সেসবের বেশির ভাগই সালমান ও তার পরিবারের প্রতি সহমর্মিতামূলক। পরিচালক ফারাহ খান লিখেছেন, ‘আমি এখন দুবাইয়ে। কিন্তু মুম্বইয়ে সালমান ও তার পরিবারের জন্য প্রার্থনা রইলো।’ অভিনেতা বরুণ দেওয়ান লিখেছেন, সালমান খান ও তার পরিবারের জন্য প্রার্থনা। আমি জানি, তারা এদেশকে ভালোবাসেন। এ দেশের বিচারিক ব্যবস্থার প্রতিও শ্রদ্ধা পোষণ করেন। তিনি আরও বলেন, আদালতের রায় নিয়ে আমি কিছু বলবো না। কিন্তু আমি মনে করি, বলিউডে সালমান ভাই-ই সবচেয়ে বড় হৃদয়ের অধিকারী। তিনিই সবচেয়ে বেশি সাহায্যপরায়ণ। অভিনেত্রী সোনাক্ষি সিনহা লিখেছেন, ভয়াবহ দুঃসংবাদ। জানি না, কিভাবে সালমান খানের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো যায়। সে একজন ভালো মানুষ। কেউই তার কাছ থেকে তা ছিনিয়ে নিতে পারবে না। এর আগে শিল্পপতি বিজয় মাল্য মন্তব্য করেন, আশা করবো, বিচারিক বিভাগ মানুষের জীবনের অবস্থা ও গণমাধ্যম যা বলে, তার ওপর ভিত্তি করে রায় দেবে না। অভিনেত্রী পরিণীতা চোপড়া লিখেছেন, আমরা সব সময়ই তোমার পাশে থাকবো। আশা করবো, সালমান খানের ভেতর মানুষ হিসেবে যে সৌন্দর্য্যটা রয়েছে, তা বিচারকরা বিবেচনায় নেবেন। আলিয়া ভাট সালমানকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন, আপনার নিজের কাউকে সাজা পেতে দেখলে কষ্ট লাগে, যদি সে ভুলও করে। আমরা তোমাকে ভালোবাসি, তোমার পাশে থাকবো। এর বাইরেও প্রায় একই ধরনের মন্তব্য করেছেন অভিনেতা রিতেশ দেশমুখ, সুরকার প্রীতম, গায়ক মাইকা সিং, অভিনেতা অর্জুন কাপুর, অভিনেত্রী দিয়া মির্জা, বিপাশা বসু, অভিনেতা রিতেশ কাপুর, কুনাল কোহলি, টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা সহ আরও অনেকে। এছাড়া, বহু টিভি অভিনেতা-অভিনেত্রীরাও সালমান ও তার পরিবারের প্রতি সমর্থনসূচক টুইট করেছেন।

No comments

Powered by Blogger.