ইছামতী এখন মৃতপ্রায় by সরোয়ার মোর্শেদ
ইছামতী নদীর ছবিটি ৬ মে, ২০১৫ পাবনা মধ্যশহরের বড় ব্রিজ এলাকা থেকে তোলা l প্রথম আলো |
পাবনা
শহরের মাঝ দিয়ে প্রবাহিত নদীটির নাম ইছামতী। জেলার ব্যবসা-বাণিজ্য
প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে নদীটির। কিন্তু দখল ও দূষণে ইছামতী এখন
মৃতপ্রায়। ফলে জেলার ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়েছে। হারিয়ে
যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য। বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে
শহরবাসীর।
দীর্ঘদিন ধরে নদীটি দখলমুক্ত ও খননের জন্য রাজনৈতিক বহু প্রতিশ্রুতি এলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে একসময়ের স্রোতস্বিনী নদীটি এখন জেলাবাসীর দুঃখ-কষ্টে পরিণত হয়েছে।
জেলার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক দিকে পদ্মা, অপর দিকে যমুনার সঙ্গে মিশেছে ইছামতী। এই নদীর জন্যই পাবনা প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছিল ঐতিহ্যবাহী হোসিয়ারিশিল্পে। একসময় নদীপথে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা মালামাল আনা-নেওয়া করতেন। স্বাধীনতার পর ১০-১৫ বছর নদীটি সচল ছিল। কিন্তু দিনে দিনে শহরে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দখল হতে থাকে দুই পাড়। প্রশস্ততা কমে পরিণত হয় মরা খালে।
পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে জেলা প্রশাসন নদীর উৎসমুখ পাবনা সদর উপজেলার চর শিবরামপুর থেকে পাবনা পৌর এলাকার শালগাড়িয়া শ্মশানঘাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট বেদখল হয়েছে বলে শনাক্ত করে। এ সময় ২৮৪ জন দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কিছু জায়গা দখলমুক্ত করা হলেও পরে তা আবার বেদখল হয়ে যায়।
পাবনা জেলা হোসিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রুপের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, বর্তমানে ইছামতীর সঙ্গে সঙ্গে জেলার হোসিয়ারিশিল্প মৃতপ্রায়। স্থলপথে মালামাল বহনে ব্যয় বেশি হওয়ায় এখন আর পাইকারেরা এখান থেকে পণ্য নেন না। পাবনা শিল্প ও বণিক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ইছামতী শুকিয়ে যাওয়ায় জেলার সব ব্যবসা-বাণিজ্যই থমকে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খননের দাবি করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরবাসীকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে ইছামতী। কয়েকটি ছোট ছোট ব্রিজ দুই পারের বাসিন্দাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। তবে নদীর কোনো অংশেই পানির প্রবাহ নেই। শহরের বর্জ্য নিষ্কাশনের নর্দমাগুলো এসে মিশেছে নদীতে। ফলে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নদীর অনেক অংশ। দখল ও বর্জ্যের স্তূপে প্রশস্ততা কমে গেছে।
নদীপারের বাসিন্দারা জানান, দিনে দিনে নদীর দুই পাড়ে দখল বাড়ছে। শহরের বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, হোটেল-রেস্তোরাঁর আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। ময়লা-আবর্জনার গন্ধে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
পাবনার প্রবীণ শিক্ষক ও পরিবেশবিদ শাহনেওয়াজ সালাম জানান, বর্জ্যের কারণে পুরো শহরের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। মশার উপদ্রব বাড়ছে। দিনে দিনে নিঃশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে শহরবাসীর। শহরের রাধানগর মহল্লার বাসিন্দা ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, নদীটি দখলমুক্ত করে খননের জন্য এ পর্যন্ত বহু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এসেছে। কিন্তু তা কখনোই বাস্তব রূপ নেয়নি।
পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা সদিচ্ছা থেকেই বারবার নদীটি খননের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কিন্তু পর্যাপ্ত বাজেট না পাওয়ায় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।’
পাবনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তাবিবুর রহমান বলেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নদীটি খননের জন্য সামান্য বরাদ্দ দিয়েছিল। এই বরাদ্দে নদী পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম সরকার বলেন, নদীটি খননের জন্য ২০০১ সালে ১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়নি। বরাদ্দ পেলেই নদীটি পুনঃখননের কাজ শুরু করা হবে।
জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে নদীর দখলদার উচ্ছেদের নির্দেশনা আছে। পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
দীর্ঘদিন ধরে নদীটি দখলমুক্ত ও খননের জন্য রাজনৈতিক বহু প্রতিশ্রুতি এলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ফলে একসময়ের স্রোতস্বিনী নদীটি এখন জেলাবাসীর দুঃখ-কষ্টে পরিণত হয়েছে।
জেলার প্রবীণ ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক দিকে পদ্মা, অপর দিকে যমুনার সঙ্গে মিশেছে ইছামতী। এই নদীর জন্যই পাবনা প্রসিদ্ধ হয়ে উঠেছিল ঐতিহ্যবাহী হোসিয়ারিশিল্পে। একসময় নদীপথে দেশ-বিদেশের ব্যবসায়ীরা মালামাল আনা-নেওয়া করতেন। স্বাধীনতার পর ১০-১৫ বছর নদীটি সচল ছিল। কিন্তু দিনে দিনে শহরে লোকসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দখল হতে থাকে দুই পাড়। প্রশস্ততা কমে পরিণত হয় মরা খালে।
পাবনা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৫ সালে জেলা প্রশাসন নদীর উৎসমুখ পাবনা সদর উপজেলার চর শিবরামপুর থেকে পাবনা পৌর এলাকার শালগাড়িয়া শ্মশানঘাট পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকার প্রায় পাঁচ হাজার বর্গফুট বেদখল হয়েছে বলে শনাক্ত করে। এ সময় ২৮৪ জন দখলদারকে চিহ্নিত করা হয়। ২০০১ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কিছু জায়গা দখলমুক্ত করা হলেও পরে তা আবার বেদখল হয়ে যায়।
পাবনা জেলা হোসিয়ারি ম্যানুফ্যাকচারিং গ্রুপের সভাপতি আনোয়ার হোসেন জানান, বর্তমানে ইছামতীর সঙ্গে সঙ্গে জেলার হোসিয়ারিশিল্প মৃতপ্রায়। স্থলপথে মালামাল বহনে ব্যয় বেশি হওয়ায় এখন আর পাইকারেরা এখান থেকে পণ্য নেন না। পাবনা শিল্প ও বণিক সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ইছামতী শুকিয়ে যাওয়ায় জেলার সব ব্যবসা-বাণিজ্যই থমকে গেছে। দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খননের দাবি করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরবাসীকে দুই ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে ইছামতী। কয়েকটি ছোট ছোট ব্রিজ দুই পারের বাসিন্দাদের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। তবে নদীর কোনো অংশেই পানির প্রবাহ নেই। শহরের বর্জ্য নিষ্কাশনের নর্দমাগুলো এসে মিশেছে নদীতে। ফলে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে নদীর অনেক অংশ। দখল ও বর্জ্যের স্তূপে প্রশস্ততা কমে গেছে।
নদীপারের বাসিন্দারা জানান, দিনে দিনে নদীর দুই পাড়ে দখল বাড়ছে। শহরের বিভিন্ন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, ক্লিনিক, হোটেল-রেস্তোরাঁর আবর্জনা ফেলা হচ্ছে নদীতে। ময়লা-আবর্জনার গন্ধে দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। হারিয়ে যাচ্ছে জীববৈচিত্র্য।
পাবনার প্রবীণ শিক্ষক ও পরিবেশবিদ শাহনেওয়াজ সালাম জানান, বর্জ্যের কারণে পুরো শহরের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। মশার উপদ্রব বাড়ছে। দিনে দিনে নিঃশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে শহরবাসীর। শহরের রাধানগর মহল্লার বাসিন্দা ফারুক হোসেন চৌধুরী বলেন, নদীটি দখলমুক্ত করে খননের জন্য এ পর্যন্ত বহু রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এসেছে। কিন্তু তা কখনোই বাস্তব রূপ নেয়নি।
পাবনা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা সদিচ্ছা থেকেই বারবার নদীটি খননের প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। কিন্তু পর্যাপ্ত বাজেট না পাওয়ায় প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন সম্ভব হয়নি।’
পাবনা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী তাবিবুর রহমান বলেন, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় নদীটি খননের জন্য সামান্য বরাদ্দ দিয়েছিল। এই বরাদ্দে নদী পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব নয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) পাবনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী নূরুল ইসলাম সরকার বলেন, নদীটি খননের জন্য ২০০১ সালে ১০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়নি। বরাদ্দ পেলেই নদীটি পুনঃখননের কাজ শুরু করা হবে।
জেলা প্রশাসক কাজী আশরাফ উদ্দিন বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে নদীর দখলদার উচ্ছেদের নির্দেশনা আছে। পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। শিগগিরই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে বলে জানান তিনি।
No comments