রাহুলের শেষ সুযোগ by সেলিম খান
২০০৩ সালের সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকের
কথা। ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে হঠাৎ রটে গেল প্রিয়াঙ্কা গান্ধী আজ
আনুষ্ঠানিকভাবে কংগ্রেসে যোগ দেবেন। এই খবর পাওয়া মাত্র সাংবাদিকেরা হাজির
হলেন কংগ্রেস নেতা সতীশ শর্মার সরকারি বাসভবনে। তিনি গান্ধী পরিবারের
ঘনিষ্ঠ। ফলে কাঙ্ক্ষিত খবরটি তিনি জানাতে পারেন। আর গুরুত্বপূর্ণ এই
মুহূর্তটি দর্শকদের কাছে পৌঁছে দিতে বড় বড় ওবি ভ্যান নিয়ে সরাসরি হাজির
টেলিভিশনের সাংবাদিকেরা। তাঁদের সঙ্গে এই প্রতিবেদকও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
মিনিট যায়, ঘণ্টা যায় অপেক্ষার আর শেষ হয় না। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর বিফল মনোরথে ফিরে গেলেন সবাই। আসলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে গান্ধী পরিবারের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ছিলেন প্রিয়াঙ্কা, এখনো আছেন। তাঁর মধ্যে দাদি ইন্দিরার ছায়া খুঁজে বেড়িয়েছে সংবাদমাধ্যম। কিন্তু রাহুল গান্ধীর মধ্যে কারও কোনো ছায়া খুঁজে পাওয়া গেছে এমন কোনো দাবি তাঁর অতি বড় শুভানুধ্যায়ীও করেননি।
সংবাদমাধ্যমের এই অতিপ্রিয়তাকে কখনোই পাত্তা দেননি সোনিয়া গান্ধী। তিনি মেয়েকে সামনে আনার পরিবর্তে ছেলেকে এগিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পুরোটা দেননি। রাহুলকে মন্ত্রী করার, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধেও সাড়া দিতে দেননি সোনিয়া। (সাবেক কংগ্রেস নেতা নটবর সিং তাঁর প্রকাশিত বইয়ে দাবি করেছেন, অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে নয় রাহুলের নিষেধের কারণে ২০০৪ সালে সুযোগ এলেও প্রধানমন্ত্রী হননি সোনিয়া গান্ধী। ওই সময় অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দেওয়ার দাবি করেছিলেন সোনিয়া।) এদিকে আবার দলের ক্ষেত্রে করেছেন উল্টোটা। কংগ্রেসের মতো শতবর্ষী দলের সভানেত্রী মা, সহ-সভাপতি ছেলে। এমন পারিবারিক সুরক্ষার বন্দোবস্তের নজির মেলা কঠিন।
গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নজিরবিহীন পরাজয়ের পর থেকে বেশ তোপের মুখেই আছেন রাহুল গান্ধী। তাঁর মধ্যে জনমোহিনী ক্ষমতার লেশমাত্র খুঁজে না পেয়ে হতাশ কংগ্রেস নেতাদের কেউ কেউ মুখ খুলে দল থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। কংগ্রেস নেতা জগমিত সিং ব্রার তো সোনিয়া-রাহুলকে দুই বছরের জন্য রাজনীতি থেকে নির্বাসনে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। এসব ক্ষেত্রে শাস্তি দিয়ে দলীয় নেতাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করলেও কোনো আশার আলো তাঁদের দেখাতে পারেনি কংগ্রেস।
বর্তমান লোকসভায় ১০% কম আসন পাওয়ায় বিরোধী দলের মর্যাদা জোটেনি কংগ্রেসের। এ জন্য দেনদরবার, এমনকি মামলার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু টলেনি বিজেপি। এর ওপর লোকসভার অধিবেশনে বসে রাহুল গান্ধীর নাক ডাকিয়ে ঘুম এবং সংবাদমাধ্যমে এর ফলাও প্রচার শুধু তাঁকে নয়, গোটা কংগ্রেস দলকে চরম বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। এ থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দিতে খুব বেশি যে পরামর্শ এসেছে তা নয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ জর্নাদন দ্বিবেদী নাকি রাহুলকে পরামর্শ দিয়েছেন লোকসভায় আরও সক্রিয় হতে, দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে।
সেই পরামর্শেই হোক বা অন্য কোনো কারণে অন্য রকম রাহুলকে দেখল ভারতের জনতা। স্পিকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে স্লোগান দিতে দিতে ওয়েলের দিকে এগিয়ে গেলেন রাহুল, যা তাঁর চরিত্রের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। ‘মিকি মাউস’ রাহুলের হঠাৎ ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যানে’ রূপান্তর সবার কাছে বিস্ময়ের। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এমনও লেখা হয়েছে ‘শোয়ে হুয়ে শের জাগ রাহা হ্যায়’ (ঘুমিয়ে থাকা বাঘ জেগে উঠছে)। রাহুলের মতো জনমোহিনী ক্ষমতাহীন একজন নেতার পক্ষে ‘শের’ হওয়া কতটা সম্ভব তা ভবিষ্যতই বলবে।
তবে এটাই বোধ হয় রাহুলের যোগ্য নেতা হওয়ার শেষ সুযোগ। ক্ষমতায় থেকে কিছু করতে পারেননি। এখন বিরোধী দলে থেকেও যদি জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে বিপাকে ফেলতে কংগ্রেস তথা রাহুল গান্ধী ব্যর্থ হন, তাহলে ২০১৯-এ পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ ভরসা প্রিয়াঙ্কাকে টেনে আনা ছাড়া সোনিয়ার সামনেও আর কোনো গতি থাকবে না।
মিনিট যায়, ঘণ্টা যায় অপেক্ষার আর শেষ হয় না। কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষার পর বিফল মনোরথে ফিরে গেলেন সবাই। আসলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কাছে গান্ধী পরিবারের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ছিলেন প্রিয়াঙ্কা, এখনো আছেন। তাঁর মধ্যে দাদি ইন্দিরার ছায়া খুঁজে বেড়িয়েছে সংবাদমাধ্যম। কিন্তু রাহুল গান্ধীর মধ্যে কারও কোনো ছায়া খুঁজে পাওয়া গেছে এমন কোনো দাবি তাঁর অতি বড় শুভানুধ্যায়ীও করেননি।
সংবাদমাধ্যমের এই অতিপ্রিয়তাকে কখনোই পাত্তা দেননি সোনিয়া গান্ধী। তিনি মেয়েকে সামনে আনার পরিবর্তে ছেলেকে এগিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু পুরোটা দেননি। রাহুলকে মন্ত্রী করার, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধেও সাড়া দিতে দেননি সোনিয়া। (সাবেক কংগ্রেস নেতা নটবর সিং তাঁর প্রকাশিত বইয়ে দাবি করেছেন, অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দিয়ে নয় রাহুলের নিষেধের কারণে ২০০৪ সালে সুযোগ এলেও প্রধানমন্ত্রী হননি সোনিয়া গান্ধী। ওই সময় অন্তরাত্মার ডাকে সাড়া দেওয়ার দাবি করেছিলেন সোনিয়া।) এদিকে আবার দলের ক্ষেত্রে করেছেন উল্টোটা। কংগ্রেসের মতো শতবর্ষী দলের সভানেত্রী মা, সহ-সভাপতি ছেলে। এমন পারিবারিক সুরক্ষার বন্দোবস্তের নজির মেলা কঠিন।
গত লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের নজিরবিহীন পরাজয়ের পর থেকে বেশ তোপের মুখেই আছেন রাহুল গান্ধী। তাঁর মধ্যে জনমোহিনী ক্ষমতার লেশমাত্র খুঁজে না পেয়ে হতাশ কংগ্রেস নেতাদের কেউ কেউ মুখ খুলে দল থেকে বিতাড়িত হয়েছেন। কংগ্রেস নেতা জগমিত সিং ব্রার তো সোনিয়া-রাহুলকে দুই বছরের জন্য রাজনীতি থেকে নির্বাসনে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন। এসব ক্ষেত্রে শাস্তি দিয়ে দলীয় নেতাদের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করলেও কোনো আশার আলো তাঁদের দেখাতে পারেনি কংগ্রেস।
বর্তমান লোকসভায় ১০% কম আসন পাওয়ায় বিরোধী দলের মর্যাদা জোটেনি কংগ্রেসের। এ জন্য দেনদরবার, এমনকি মামলার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু টলেনি বিজেপি। এর ওপর লোকসভার অধিবেশনে বসে রাহুল গান্ধীর নাক ডাকিয়ে ঘুম এবং সংবাদমাধ্যমে এর ফলাও প্রচার শুধু তাঁকে নয়, গোটা কংগ্রেস দলকে চরম বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দিয়েছিল। এ থেকে উত্তরণের পথ বাতলে দিতে খুব বেশি যে পরামর্শ এসেছে তা নয়। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ জর্নাদন দ্বিবেদী নাকি রাহুলকে পরামর্শ দিয়েছেন লোকসভায় আরও সক্রিয় হতে, দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে।
সেই পরামর্শেই হোক বা অন্য কোনো কারণে অন্য রকম রাহুলকে দেখল ভারতের জনতা। স্পিকারের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে স্লোগান দিতে দিতে ওয়েলের দিকে এগিয়ে গেলেন রাহুল, যা তাঁর চরিত্রের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। ‘মিকি মাউস’ রাহুলের হঠাৎ ‘অ্যাংরি ইয়ং ম্যানে’ রূপান্তর সবার কাছে বিস্ময়ের। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে এমনও লেখা হয়েছে ‘শোয়ে হুয়ে শের জাগ রাহা হ্যায়’ (ঘুমিয়ে থাকা বাঘ জেগে উঠছে)। রাহুলের মতো জনমোহিনী ক্ষমতাহীন একজন নেতার পক্ষে ‘শের’ হওয়া কতটা সম্ভব তা ভবিষ্যতই বলবে।
তবে এটাই বোধ হয় রাহুলের যোগ্য নেতা হওয়ার শেষ সুযোগ। ক্ষমতায় থেকে কিছু করতে পারেননি। এখন বিরোধী দলে থেকেও যদি জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদি সরকারকে বিপাকে ফেলতে কংগ্রেস তথা রাহুল গান্ধী ব্যর্থ হন, তাহলে ২০১৯-এ পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ ভরসা প্রিয়াঙ্কাকে টেনে আনা ছাড়া সোনিয়ার সামনেও আর কোনো গতি থাকবে না।
No comments