মার্কিন অভিযান- আবার ভোগাবে ইরাক? by সুমন কায়সার
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা হয়তো কখনোই স্বীকার করবেন না, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক জঙ্গিবাদের জগতে নতুন সংযোজন আইসিসকে মোকাবিলায় তিনি হয়তো সত্যিই দেরি করে ফেলেছেন। যে সংগঠনটিকে ওবামা ‘জেভি টিম’ (জুনিয়র ভার্সিটি অর্থাৎ কিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের দল) বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাদের কাবু করতে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধবিমান পাঠাতে হলো। ওবামা এত দিন সিরিয়ায় (আর সম্প্রতি আইসিসকবলিত ইরাকে) সামরিক হস্তক্ষেপ করতে কেন যে গড়িমসি করেছেন, তা অবশ্য আজকাল চোখ-কান খোলা হাইস্কুলের ছেলেরাও বোঝে। ইরাক আর আফগানিস্তান সাম্প্রতিক মার্কিন প্রেসিডেন্টদের কাছে দুঃস্বপ্ন বৈ তো আর কিছু নয়। ওই তেতো স্মৃতির কারণেই ওবামা এখন বারবার মন্ত্রের মতো বলছেন, ইরাকের মাটিতে আর সেনা যাবে না, কখনো না।
ওবামা দৃশ্যত মনে করছেন, আকাশ কিংবা জাহাজ থেকে কিছু বোমা আর ক্ষেপণাস্ত্র ফেলেই কেল্লাফতে করা যাবে। বড়জোর কিছুসংখ্যক সামরিক বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে ইরাক সরকারকে মদদ দেবেন। কিন্তু পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ইরাকের এবারের মিশন ওবামা যতটা মনে করছেন, ততটা সহজ হবে না। অথবা তিনি আসলে মনে মনে ঠিকই জানেন, কিন্তু স্বীকার করতে চাইছেন না। মার্কিন বাহিনী আরেক দফা ইরাকি মরীচিকার পেছনে ছুটে দুনিয়াজোড়া নিন্দামন্দের চোরাবালিতে হাবুডুবু খেতেও পারে। তা আগে থেকে লোককে বুঝতে দিয়ে জনপ্রিয়তা কমানোর ঝুঁকি নেবেন কেন?
লিবিয়ার কথা স্মরণ করা যাক। বেশ দেরিতে হলেও ওবামা স্বীকার করেন, তাঁর ঘোষিত লক্ষ্যের চেয়ে অনেক বেশি দূর বিস্তৃত হয়েছিল গাদ্দাফিবিরোধী মার্কিন অভিযান। এবারের ইরাক ‘অভিযানের’ যুক্তি আর লক্ষ্য নিয়ে ওবামাসহ বর্তমান রাজনৈতিক নেতারা আর সেনা কর্মকর্তাদের কথাবার্তায় যাদের খটকা লাগছে, তাদের মনে তাই লিবিয়ার স্মৃতি ভেসে আসতেই পারে। সত্যি বলতে কি, প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন ৭ আগস্ট নাটকীয়ভাবে ঘোষণা দেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র (ইরাকে) সাহায্য করতে আসছে’, তখনই বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারক ও বিশ্লেষক ইরাকে মার্কিন লক্ষ্যের অস্পষ্টতার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। তাঁরা লক্ষ করেছিলেন, অভিযানের উদ্দেশ্য যেমন ঘন ঘন বদলে যাচ্ছে, তেমনি সময়সীমা সুনির্দিষ্টভাবে স্থির করা হচ্ছে না। ওবামা নিজেই এ পর্যবেক্ষণকে পোক্ত করেন, যখন তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না। এ জন্য সময় লাগবে।
মানবিক প্রয়োজনে হস্তক্ষেপের আওতা বা মেয়াদ বাড়ানোর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। অনেক সময়ই দেখা যায়, স্বল্পমেয়াদে মানবিক হস্তক্ষেপে যত মানুষ প্রাণ হারায়, তার চেয়ে বেশি মানুষকে বাঁচানো যায়। ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের ২০০৮ সালে করা ১৭টি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের পর্যালোচনায় দেখা যায়, এর মধ্যে নয়টিই অনেক মানুষের জীবন রক্ষায় সফল হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে এগুলোর অনেক ক্ষতিকর দিকও আছে, সাম্প্রতিক ইতিহাসে তার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে।
১৯৯১ সালের ৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ক-ইরাক সীমান্তে স্থাপিত কুর্দি শরণার্থী শিবিরে উড়োজাহাজ থেকে খাদ্য, পানি আর কম্বল ফেলতে শুরু করে। ইরাকি সেনারা উত্তর ইরাকে এক আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করে ওই কুর্দিদের দেশছাড়া করেছিল। ওই একই দিন তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশকে প্রশ্ন করা হয়, ইরাকের অভ্যন্তরে কত দিন মার্কিন সেনারা ভূমিকা রাখবে। বুশের জবাব ছিল, ‘এটা কয়েক দিনের বিষয়, কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাসের নয়।’
উত্তর ইরাকে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের সুবিধার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে দেশটির আকাশসীমার নির্দিষ্ট অংশে উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, ইরাকি বাহিনীকে প্রতিপক্ষের ওপর বিমান হামলা চালাতে না দেওয়া। পরে উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা সম্প্রসারিত করা হয়। বুশ এক হিসাবে ঠিকই বলেছিলেন, ইরাকে মার্কিন হস্তক্ষেপ বেশ কয়েক সপ্তাহ বা মাস লাগেনি; ইরাকের উত্তর ও দক্ষিণের উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা জারি ছিল সাড়ে ১০ বছর।
আবার ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে বুশ যখন প্রথম ঘোষণা করেন জাতিসংঘ বাহিনীর অংশ হিসেবে ২৮ হাজার মার্কিন সেনা সোমালিয়ায় মোতায়েন করা হবে, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের মিশনের লক্ষ্য সীমিত: পণ্য সরবরাহের পথ খুলে দেওয়া, খাদ্য পরিবহন চালু করা এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী যেন তা চালু রাখতে পারে, সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন উত্তরাধিকার সূূত্রে পাওয়া এ অঙ্গীকার বহাল রাখেন। তবে ১৯৯৩ সালের জুন মাসে তিনিই ২৪ জন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আটক কিংবা হত্যার জন্য জাতিসংঘের ম্যান্ডেট বাড়ানো অনুমোদন করেন। এর দুই মাস পরেই কয়েক শ এলিট স্পেশাল ফোর্স সেনা সোমালিয়ায় মোতায়েন করা হয়। এর পরই ঘটে বহুল আলোচিত ‘ব্ল্যাক হক ডাউন’ ঘটনা। সোমালীয় যোদ্ধাদের হাতে প্রাণ যায় ১৮ মার্কিন সেনার। সেদিনের লড়াইয়ে কয়েক শ সোমালীয়ও নিহত হয়। এত সেনার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে এমনই নিন্দার ঝড় ওঠে যে ছয় মাসের মধ্যে সব সেনাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হন ক্লিনটন।
সংক্ষিপ্ত সময়ে মিশন গোটানোর এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার গৃহযুদ্ধের সময়ও। সেখানেও তথ্য গোপনের অভিযোগের পাশাপাশি মার্কিন সেনানায়কদের হিসাবে ভুল হওয়ার কথা বলা হয়। ইরাক যুদ্ধে যে ব্যয় ও সময়সীমার কথা তখনকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ডসহ অন্যরা বলেছেন, তার চেয়ে সময় ও অর্থ ব্যয় হয়েছে শতগুণ বেশি। সেই বারবার ঘরপোড়া গরু হয়েও ভয় না পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র আবার মানবিক সহায়তা আর নিজের নাগরিকদের রক্ষার কথা বলে ইরাক সংঘাতে জড়াচ্ছে। কিন্তু তার সামনে কোনো কার্যকর রণকৌশল আছে বলে মনে হচ্ছে না।
ওবামা স্বাগত জানিয়েছেন, শিয়া গোষ্ঠীগুলোর মনোনীত এবং প্রেসিডেন্টের নিয়োগ দেওয়া প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদিকে। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নূরি আল-মালিকির কোনো উল্লেখই ওবামা করেননি। মালিকির ওপর এখন অনেকেই নাখোশ। কিন্তু তিনি তো ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন। ঘোষণা দিয়েছেন, আবাদিকে প্রধানমন্ত্রী করা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। দরকার হলে তিনি আদালতে যাবেন। অন্তত বাগদাদভিত্তিক সেনাবাহিনী মালিকির প্রতি অনুগত। তারা যে বিনা যুদ্ধে হার মানবে, তা মনে হয় না। যদিও মালিকি গতকালই সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক বিষয়ে নাক না গলাতে বলে দিয়েছেন। কিন্তু তা কতখানি লোক দেখানো আর কতটা মনের কথা, সে শুধু মালিকিই জানেন। আইসিস যোদ্ধারা তো লড়াই করতে মুখিয়েই আছে। সব মিলিয়ে সামনের ছবিটা ঝাপসা হলেও তা যে খুব সুন্দর কিছু নয়, সেটা পরিষ্কার।
ওবামা দৃশ্যত মনে করছেন, আকাশ কিংবা জাহাজ থেকে কিছু বোমা আর ক্ষেপণাস্ত্র ফেলেই কেল্লাফতে করা যাবে। বড়জোর কিছুসংখ্যক সামরিক বিশেষজ্ঞ পাঠিয়ে ইরাক সরকারকে মদদ দেবেন। কিন্তু পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, ইরাকের এবারের মিশন ওবামা যতটা মনে করছেন, ততটা সহজ হবে না। অথবা তিনি আসলে মনে মনে ঠিকই জানেন, কিন্তু স্বীকার করতে চাইছেন না। মার্কিন বাহিনী আরেক দফা ইরাকি মরীচিকার পেছনে ছুটে দুনিয়াজোড়া নিন্দামন্দের চোরাবালিতে হাবুডুবু খেতেও পারে। তা আগে থেকে লোককে বুঝতে দিয়ে জনপ্রিয়তা কমানোর ঝুঁকি নেবেন কেন?
লিবিয়ার কথা স্মরণ করা যাক। বেশ দেরিতে হলেও ওবামা স্বীকার করেন, তাঁর ঘোষিত লক্ষ্যের চেয়ে অনেক বেশি দূর বিস্তৃত হয়েছিল গাদ্দাফিবিরোধী মার্কিন অভিযান। এবারের ইরাক ‘অভিযানের’ যুক্তি আর লক্ষ্য নিয়ে ওবামাসহ বর্তমান রাজনৈতিক নেতারা আর সেনা কর্মকর্তাদের কথাবার্তায় যাদের খটকা লাগছে, তাদের মনে তাই লিবিয়ার স্মৃতি ভেসে আসতেই পারে। সত্যি বলতে কি, প্রেসিডেন্ট ওবামা যখন ৭ আগস্ট নাটকীয়ভাবে ঘোষণা দেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র (ইরাকে) সাহায্য করতে আসছে’, তখনই বেশ কয়েকজন নীতিনির্ধারক ও বিশ্লেষক ইরাকে মার্কিন লক্ষ্যের অস্পষ্টতার বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। তাঁরা লক্ষ করেছিলেন, অভিযানের উদ্দেশ্য যেমন ঘন ঘন বদলে যাচ্ছে, তেমনি সময়সীমা সুনির্দিষ্টভাবে স্থির করা হচ্ছে না। ওবামা নিজেই এ পর্যবেক্ষণকে পোক্ত করেন, যখন তিনি বলেন, কয়েক সপ্তাহে এ সমস্যার সমাধান হবে বলে মনে হয় না। এ জন্য সময় লাগবে।
মানবিক প্রয়োজনে হস্তক্ষেপের আওতা বা মেয়াদ বাড়ানোর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু নেই। এ নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলবে না। অনেক সময়ই দেখা যায়, স্বল্পমেয়াদে মানবিক হস্তক্ষেপে যত মানুষ প্রাণ হারায়, তার চেয়ে বেশি মানুষকে বাঁচানো যায়। ইউনিভার্সিটি অব পিটসবার্গের ২০০৮ সালে করা ১৭টি মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের পর্যালোচনায় দেখা যায়, এর মধ্যে নয়টিই অনেক মানুষের জীবন রক্ষায় সফল হয়েছে। তবে দুঃখজনকভাবে এগুলোর অনেক ক্ষতিকর দিকও আছে, সাম্প্রতিক ইতিহাসে তার ভূরি ভূরি উদাহরণ আছে।
১৯৯১ সালের ৭ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ক-ইরাক সীমান্তে স্থাপিত কুর্দি শরণার্থী শিবিরে উড়োজাহাজ থেকে খাদ্য, পানি আর কম্বল ফেলতে শুরু করে। ইরাকি সেনারা উত্তর ইরাকে এক আন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করে ওই কুর্দিদের দেশছাড়া করেছিল। ওই একই দিন তখনকার প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশকে প্রশ্ন করা হয়, ইরাকের অভ্যন্তরে কত দিন মার্কিন সেনারা ভূমিকা রাখবে। বুশের জবাব ছিল, ‘এটা কয়েক দিনের বিষয়, কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাসের নয়।’
উত্তর ইরাকে মানবিক সহায়তা কার্যক্রমের সুবিধার জন্য যুক্তরাষ্ট্র একই সঙ্গে দেশটির আকাশসীমার নির্দিষ্ট অংশে উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা প্রতিষ্ঠিত করেছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, ইরাকি বাহিনীকে প্রতিপক্ষের ওপর বিমান হামলা চালাতে না দেওয়া। পরে উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা সম্প্রসারিত করা হয়। বুশ এক হিসাবে ঠিকই বলেছিলেন, ইরাকে মার্কিন হস্তক্ষেপ বেশ কয়েক সপ্তাহ বা মাস লাগেনি; ইরাকের উত্তর ও দক্ষিণের উড্ডয়ন নিষিদ্ধ এলাকা জারি ছিল সাড়ে ১০ বছর।
আবার ১৯৯২ সালের ডিসেম্বরে বুশ যখন প্রথম ঘোষণা করেন জাতিসংঘ বাহিনীর অংশ হিসেবে ২৮ হাজার মার্কিন সেনা সোমালিয়ায় মোতায়েন করা হবে, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের মিশনের লক্ষ্য সীমিত: পণ্য সরবরাহের পথ খুলে দেওয়া, খাদ্য পরিবহন চালু করা এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনী যেন তা চালু রাখতে পারে, সে লক্ষ্যে ব্যবস্থা নেওয়া। প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন উত্তরাধিকার সূূত্রে পাওয়া এ অঙ্গীকার বহাল রাখেন। তবে ১৯৯৩ সালের জুন মাসে তিনিই ২৪ জন পাকিস্তানি সেনার মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আটক কিংবা হত্যার জন্য জাতিসংঘের ম্যান্ডেট বাড়ানো অনুমোদন করেন। এর দুই মাস পরেই কয়েক শ এলিট স্পেশাল ফোর্স সেনা সোমালিয়ায় মোতায়েন করা হয়। এর পরই ঘটে বহুল আলোচিত ‘ব্ল্যাক হক ডাউন’ ঘটনা। সোমালীয় যোদ্ধাদের হাতে প্রাণ যায় ১৮ মার্কিন সেনার। সেদিনের লড়াইয়ে কয়েক শ সোমালীয়ও নিহত হয়। এত সেনার মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে এমনই নিন্দার ঝড় ওঠে যে ছয় মাসের মধ্যে সব সেনাকে দেশে ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হন ক্লিনটন।
সংক্ষিপ্ত সময়ে মিশন গোটানোর এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গের ঘটনা ঘটেছে সাবেক যুগোস্লাভিয়ার গৃহযুদ্ধের সময়ও। সেখানেও তথ্য গোপনের অভিযোগের পাশাপাশি মার্কিন সেনানায়কদের হিসাবে ভুল হওয়ার কথা বলা হয়। ইরাক যুদ্ধে যে ব্যয় ও সময়সীমার কথা তখনকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডোনাল্ড রামসফেল্ডসহ অন্যরা বলেছেন, তার চেয়ে সময় ও অর্থ ব্যয় হয়েছে শতগুণ বেশি। সেই বারবার ঘরপোড়া গরু হয়েও ভয় না পাওয়া যুক্তরাষ্ট্র আবার মানবিক সহায়তা আর নিজের নাগরিকদের রক্ষার কথা বলে ইরাক সংঘাতে জড়াচ্ছে। কিন্তু তার সামনে কোনো কার্যকর রণকৌশল আছে বলে মনে হচ্ছে না।
ওবামা স্বাগত জানিয়েছেন, শিয়া গোষ্ঠীগুলোর মনোনীত এবং প্রেসিডেন্টের নিয়োগ দেওয়া প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদিকে। অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নূরি আল-মালিকির কোনো উল্লেখই ওবামা করেননি। মালিকির ওপর এখন অনেকেই নাখোশ। কিন্তু তিনি তো ক্ষমতা ছাড়তে রাজি নন। ঘোষণা দিয়েছেন, আবাদিকে প্রধানমন্ত্রী করা সংবিধান লঙ্ঘনের শামিল। দরকার হলে তিনি আদালতে যাবেন। অন্তত বাগদাদভিত্তিক সেনাবাহিনী মালিকির প্রতি অনুগত। তারা যে বিনা যুদ্ধে হার মানবে, তা মনে হয় না। যদিও মালিকি গতকালই সেনাবাহিনীকে রাজনৈতিক বিষয়ে নাক না গলাতে বলে দিয়েছেন। কিন্তু তা কতখানি লোক দেখানো আর কতটা মনের কথা, সে শুধু মালিকিই জানেন। আইসিস যোদ্ধারা তো লড়াই করতে মুখিয়েই আছে। সব মিলিয়ে সামনের ছবিটা ঝাপসা হলেও তা যে খুব সুন্দর কিছু নয়, সেটা পরিষ্কার।
No comments