প্রশাসন নিষ্ক্রিয়, ছাত্রনেতারাই হর্তাকর্তা -ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ব্যবস্থাপনা by আসিফুর রহমান
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশ অনুযায়ী হলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধানসহ সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, হলগুলোর ওপর প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রণই নেই। ফলে হলগুলোতে শিক্ষার্থী ওঠানো, কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া, হলে কে থাকবেন আর কে থাকবেন না—সবই নির্ভর করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাদের মর্জির ওপর। আর তাঁদের কাছে জিম্মি হাজারও শিক্ষার্থী।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হলগুলোতে প্রাধ্যক্ষরা কার্যত নিষ্ক্রিয়, আবাসিক শিক্ষকেরা খোঁজ নেন না সাধারণ শিক্ষার্থীদের। হল প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার কথা থাকলেও কাজটি করেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতারা। আর এই সুযোগে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের হলে তুলে জোর করে মিছিলে নেওয়া হয়।
হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে এবং ছাত্রলীগের হল শাখার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থী হলে উঠেছেন। এঁদের ওঠানোর পেছনে সবচেয়ে বড় পরিচয় হিসেবে দেখাতে হয়েছে, তাঁরা সবাই ছাত্রলীগ করেন।
এর মধ্যে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ২৫০ জন, জহুরুল হক হলে দেড় শ’র বেশি, সূর্যসেন হলে ১৮৫, জিয়া হলে ৬০, বঙ্গবন্ধু হলে ৫৫, জসীমউদ্দীন হলে ৩৫, এফ রহমান হলে ২২, জগন্নাথ হলে ৯৫, ফজলুল হক হলে ৬৫, শহীদুল্লাহ হলে ৪৩ ও অমর একুশে হলে ৪০ জন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের মাধ্যমে উঠেছেন।
এ ছাড়া সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ৯৭ জন শিক্ষার্থী উঠেছিলেন। তাঁদের গত ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ছাত্রলীগ বের করে দেয়। তাঁদের নিজ নিজ এলাকার আওয়ামী লীগ নেতার সুপারিশ নিয়ে আসতে বলা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থীদের অনেকে নিজ এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাদের সুপারিশপত্র এনে হলে উঠেছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, হলে থাকতে হলে ছাত্রলীগের মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহণ অনেকটা বাধ্যতামূলক। চলতি বছর বিভিন্ন হলে ওঠা প্রথম বর্ষের ১২ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, হলে ওঠার পর বিভিন্ন সময়ে রাতে মিছিলের নামে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের দিয়ে মহড়া দেওয়ান ছাত্রনেতারা। অনেক সময় তাঁদের দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আকস্মিক অভিযানের নামে বেড়াতে আসা বাইরের লোকজনকে অপদস্ত বা মারধর করা হয়। এর মাধ্যমে মফস্বল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ‘সাহসী’ করার নামে মূলত মারামারির প্রাথমিক পাঠ দেওয়া হয়।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান। তিনি দাবি করেন, ‘আমরা সবাইকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই। জোর করে কাউকে রাজনীতি করানোর নজির আমাদের নেই।’
মেহেদী হাসান অস্বীকার করলেও ছাত্রনেতাদের নির্দেশ না শুনলে যখন-তখন হল থেকে পিটিয়ে বের করে দেওয়ার অনেক নজির রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে অন্তত ৯৪ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হাসান অভিযোগ করেন, শুধু ছাত্রদল করার কারণে গত পাঁচ বছরে ১৪৩ জনকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন ছাত্রদলও একইভাবে শিক্ষার্থীদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছিল। হল থেকে ছাত্রলীগের অনেক কর্মীকে বের করে দিয়েছিল।
এ নিয়ে চারটি হলের প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, দল ভারী করার জন্য ছাত্রনেতারা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলেন। নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি না থাকায় যখন যে সরকার থাকে, তাদের ছাত্রসংগঠনের একচেটিয়া আধিপত্য থাকায় তাদের কছে প্রশাসনও জিম্মি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বায়তুল্লাহ কাদেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে হলে উঠছে এবং যারা ওঠাচ্ছে, দুই পক্ষই সুযোগ নিচ্ছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে এমন দুর্বৃত্তায়ন চলতেই থাকবে।’
তবে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলে কে থাকছে আর কে থাকছে না, তা দেখার দায়িত্ব প্রাধ্যক্ষের। যদি তাঁকে ফাঁকি দিয়ে কেউ হলে কাউকে রাখে, তার বিরুদ্ধে প্রাধ্যক্ষ শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন।’
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা গেছে, হলগুলোতে প্রাধ্যক্ষরা কার্যত নিষ্ক্রিয়, আবাসিক শিক্ষকেরা খোঁজ নেন না সাধারণ শিক্ষার্থীদের। হল প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার কথা থাকলেও কাজটি করেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রনেতারা। আর এই সুযোগে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের হলে তুলে জোর করে মিছিলে নেওয়া হয়।
হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে এবং ছাত্রলীগের হল শাখার নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের অন্তত এক হাজার শিক্ষার্থী হলে উঠেছেন। এঁদের ওঠানোর পেছনে সবচেয়ে বড় পরিচয় হিসেবে দেখাতে হয়েছে, তাঁরা সবাই ছাত্রলীগ করেন।
এর মধ্যে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে ২৫০ জন, জহুরুল হক হলে দেড় শ’র বেশি, সূর্যসেন হলে ১৮৫, জিয়া হলে ৬০, বঙ্গবন্ধু হলে ৫৫, জসীমউদ্দীন হলে ৩৫, এফ রহমান হলে ২২, জগন্নাথ হলে ৯৫, ফজলুল হক হলে ৬৫, শহীদুল্লাহ হলে ৪৩ ও অমর একুশে হলে ৪০ জন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের মাধ্যমে উঠেছেন।
এ ছাড়া সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলে ৯৭ জন শিক্ষার্থী উঠেছিলেন। তাঁদের গত ১০ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ছাত্রলীগ বের করে দেয়। তাঁদের নিজ নিজ এলাকার আওয়ামী লীগ নেতার সুপারিশ নিয়ে আসতে বলা হয়। পরে ওই শিক্ষার্থীদের অনেকে নিজ এলাকার আওয়ামী লীগের নেতাদের সুপারিশপত্র এনে হলে উঠেছেন বলে জানা গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, হলে থাকতে হলে ছাত্রলীগের মিছিল-সমাবেশে অংশগ্রহণ অনেকটা বাধ্যতামূলক। চলতি বছর বিভিন্ন হলে ওঠা প্রথম বর্ষের ১২ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, হলে ওঠার পর বিভিন্ন সময়ে রাতে মিছিলের নামে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের দিয়ে মহড়া দেওয়ান ছাত্রনেতারা। অনেক সময় তাঁদের দিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আকস্মিক অভিযানের নামে বেড়াতে আসা বাইরের লোকজনকে অপদস্ত বা মারধর করা হয়। এর মাধ্যমে মফস্বল থেকে আসা শিক্ষার্থীদের ‘সাহসী’ করার নামে মূলত মারামারির প্রাথমিক পাঠ দেওয়া হয়।
অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মেহেদী হাসান। তিনি দাবি করেন, ‘আমরা সবাইকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সংগঠনে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই। জোর করে কাউকে রাজনীতি করানোর নজির আমাদের নেই।’
মেহেদী হাসান অস্বীকার করলেও ছাত্রনেতাদের নির্দেশ না শুনলে যখন-তখন হল থেকে পিটিয়ে বের করে দেওয়ার অনেক নজির রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিস ও সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে অন্তত ৯৪ জন শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক নাজমুল হাসান অভিযোগ করেন, শুধু ছাত্রদল করার কারণে গত পাঁচ বছরে ১৪৩ জনকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন ছাত্রদলও একইভাবে শিক্ষার্থীদের নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেছিল। হল থেকে ছাত্রলীগের অনেক কর্মীকে বের করে দিয়েছিল।
এ নিয়ে চারটি হলের প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, দল ভারী করার জন্য ছাত্রনেতারা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলেন। নির্বাচিত ছাত্র প্রতিনিধি না থাকায় যখন যে সরকার থাকে, তাদের ছাত্রসংগঠনের একচেটিয়া আধিপত্য থাকায় তাদের কছে প্রশাসনও জিম্মি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বায়তুল্লাহ কাদেরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে হলে উঠছে এবং যারা ওঠাচ্ছে, দুই পক্ষই সুযোগ নিচ্ছে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন না হলে এমন দুর্বৃত্তায়ন চলতেই থাকবে।’
তবে উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলে কে থাকছে আর কে থাকছে না, তা দেখার দায়িত্ব প্রাধ্যক্ষের। যদি তাঁকে ফাঁকি দিয়ে কেউ হলে কাউকে রাখে, তার বিরুদ্ধে প্রাধ্যক্ষ শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন।’
No comments