অলি বার বার ফিরে আসে by কাজল ঘোষ
বিশ্বকবির সার্ধশত জন্মবার্ষিকী পার হলেও তিনি কতটা প্রাসঙ্গিক- এ গানের কলিটি মনে করিয়ে দিচ্ছে। মনে করিয়ে দিচ্ছে বললে ভুল হবে, আসলে চাক্ষুষ প্রমাণ দিচ্ছে। জানি না পাঠকের গানের কলিটি মনে আছে কিনা। যদিও যে বিষয়ে লিখতে চাইছি তার জন্য পুরো গানটি এখানে উদ্ধৃত করার প্রয়োজন নেই। গত কয়েক দিনের পত্রপত্রিকা খেয়াল করলে অলি কেন বারবার ফিরে আসে তার মিল পাওয়া যাবে। ঈদে বাড়ি ফেরার নানা বিড়ম্বনা। বেহাল রাস্তাঘাট। খানাখন্দে পূর্ণ ঢাকা-চট্টগ্রামের আড়াই শ’ স্থানে। ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের অবস্থা করুণ। রাজধানীর বেশির ভাগই সড়কই দুরবস্থার শিকার। তার ওপর ট্রাফিক ব্যবস্থায় ভজঘট। আর টিকিট নিয়ে মানুষের ভোগান্তি তো অন্তহীন। রাত-দিন জেগেও টিকিট নামক সোনার হরিণের জন্য অপেক্ষা। ভাবতে অবাক হই একটি নির্ধারিত উৎসবের আগে সব সময় এ সঙ্কট নিয়ে আমাদের প্রশাসন আর সরকারের বাড়তি কথায়। গত এক দশকের পত্রপত্রিকার উপাত্ত ও রিপোর্ট যদি এক টেবিলে আনা যায় দেখা যাবে অবস্থার কোন পরিবর্তন নেই। খোলনলচে একই রকমের রয়েছে। ঈদ এলেই রাস্তায় দৃঢ় পদক্ষেপে আমাদের যোগাযোগমন্ত্রীদের হাঁটাহাঁটি বড়ই অম্লমধুর রসবোধের সূচনা করে। আমরা সাধারণ নাগরিক বা আমজনতা এ দৃশ্য উপভোগ করছি বহুকাল থেকেই। এ যেন রাষ্ট্রীয় অন্যান্য চাঞ্চল্যকর ঘটনার মতোই। যেমন ধরুন, বিনাবিচারে হত্যা বা এনকাউন্টারের ক্ষেত্রে এখানে একই রকমের গল্প চলছে। বন্দুকযুদ্ধ খেলায় মৃত্যু হয়েছে অনেকের। আর ঘটনার পরপরই গণমাধ্যমকে জানানো হয়েছে গুলি আর পাল্টা গুলির গল্প। একটু ভিন্নরকমের গল্প হলেও আমাদের ঈদকেন্দ্রিক ভোগান্তি আর বিড়ম্বনার চিত্র, রাস্তায় যানজট, টিকিট না পাওয়া, ঈদ মার্কেটে চাঁদাবাজি, ঈদ ছুটিতে নিরাপত্তা, বাজারে জাল টাকার ছড়াছড়ি- এগুলো নিয়ে একই রকমের গল্প। মন্ত্রীরা ডেডলাইন দেবেন, পুলিশ সাঁড়াশি অভিযানে নামবেন, টিকিটের অগ্রিম তারিখ ঘোষণা করে সবাইকে রাত জেগে স্টেশনে অপেক্ষার জন্য বলবেন। আর সাহারা খাতুন যখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন তিনি তো বলেছিলেন, ভাল করে তালা লাগিয়ে গ্রামে যেতে। প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, কারও বেডরুমের নিরাপত্তা দেয়া সম্ভব নয়। বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী অনেকটাই সফল, অন্তত তিনি নড়েচড়ে বসছেন এ জন্য। অন্য মন্ত্রীরা যেখানে কোন তৎপরতায় দৃশ্যমান নন, তিনি অন্তত ক্ষতিগ্রস্ত জায়গাগুলোয় যাচ্ছেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হচ্ছে কিনা নাকি কেবলই হাঁটা আর হাঁটা। এমনিতেই ব্যাপক মানুষের মধ্যে তিনি হাঁটা মন্ত্রী হিসেবে পরিচিত হয়ে যাচ্ছেন। কথা হচ্ছে, সূর্য পূর্ব দিকে ওঠে আর পশ্চিমে অস্ত যায়। একই রকমভাবে ঈদ-পূজা পার্বণসহ যাবতীয় ধর্মীয় উৎসবও আমাদের জীবনে চিরন্তন। এর কোনটিই আমাদের জীবনে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। আর কেন প্রতি বছর এই একই বিষয়ে গণমাধ্যমে এত লেখালেখি করতে হবে, মানুষকে বাড়ি ফিরতে এতটা ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হবে। এটা কি বছরজুড়েই আমাদের পরিকল্পনায় থাকবে না? সাত দিন, দশ দিন এ রকমন কোন চ্যালেঞ্জ আমরা শুনতে চাই না। বছরের উৎসব ক্যালেন্ডার দেখেই এ সঙ্কটের সমাধান চাই। অহেতুক মানুষের ধারাবাহিক ভোগান্তির অবসান চাই।
No comments