কোটিপতি গাড়িচালক বাতেনের স্ত্রীর যত অভিযোগ by শর্মী চক্রবর্তী
শুধু টাকার নেশাই নয় নারীর নেশাতে আসক্ত
কোটিপতি গাড়িচালক আবদুল বাতেন। বিবাহিত স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও অন্য নারীদের
সঙ্গে তার রয়েছে অবৈধ সম্পর্ক। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে স্বামীর পরকীয়া
ও যৌতুকের জন্য অত্যাচারের কারণে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী নার্গিস
আক্তার। ১৯৯৬ সালে তাদের বিয়ে হয়েছিল। তখন তাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়
অবস্থা। একবেলা খেতে পারলে আর একবেলা পারতেন না। নার্গিস জানান, আমাদের যখন
টাকা তেমন ছিল না তখন ভালই ছিল। সংসারে কোন অশান্তি ছিল না। আমি আমার
বাবারবাড়ি থেকে টাকা এনেও সংসার চালিয়েছি। বাবারবাড়ি থেকে সম্পত্তি পেয়েছি।
কিন্তু যখনই সে টাকার কাঙাল হয়ে গেল তখনই শুরু হয় অশান্তি। বিভিন্ন সময়
আমার ওপর নির্যাতন করতো। একাধিক মেয়ের সঙ্গে তার অবৈধ সম্পর্কও রয়েছে। তাকে
আমি হাতেনাতে কয়েকবার ধরেছি। কিন্তু এসব কথা বলতে গেলেই সে আমাকে ধরে
মারধর করে। হাজারীবাগের হেমায়েতগঞ্জের বাসায় সে কয়েকবার মেয়ে নিয়ে এসেছে।
এমনকি সে বিয়ে করেছে বলেও আমি জানতে পেরেছি। কিন্তু আমার কাছে এ কথা সে
স্বীকার করে না। বিয়ের পর থেকে আমাদের ভালই চলছিল। ১৮ বছরের সংসারে আমার
দু’টি ছেলে আছে। কোন বিষয়ে ঝগড়া হলেই সে আমাকে মারধর করে বাসা থেকে বের করে
দেয়। আমি প্রতিবাদ করলে সে বলে আমি যেভাবে বলবো সেভাবে থাকো। কোন কথা বলতে
পারবি না। চাকরিতে যোগ দেয়ার পর থেকে সে ঘুষবাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত হয়ে যায়।
আমি যদি বলতাম এত টাকা দিয়ে কি করবা। আমার কথা একবারের জন্যও শুনতো না।
আমাকে বলে তোর না পোষালে আমার বাসা থেকে চলে যা। নার্গিস বলেন, প্রায় দিনই
রাতে দেরি করে বাসায় আসে সে। অনেক রাতে সে বাসায় আসে না। সকালে এলে যথন
জিজ্ঞেস করি কোথায় ছিলে তখন আমাকে বলে অফিসের কাজে ব্যস্ত ছিল। ২০১১ সালে
বাতেন আমাকে বলে তুমি বাবারবাড়ি থেকে টাকা নিয়ে এসো আমরা কেরানীগঞ্জে জায়গা
কিনি। সে জায়গাটা তোমার নামে থাকবে। তার এ কথা শুনে ভাবলাম নিজের নামে
জায়গা থাকাটা তো ভাল। তাই সৌদি প্রবাসী বড় ভাই মকবুলের কাছ থেকে ১১ লাখ
টাকা এনে আমি বাতেনকে দিই। সেই টাকা দিয়ে জায়গা কেনা হয় ঠিকই কিন্তু তা
রেজিস্ট্রি করে সে নিজের নামে। প্রথম দিকে তা আমি বুঝতে পারিনি। পরে যখন
জানলাম তখন প্রতিবাদ করলে সে আমাকে তালাক দেয়ার হুমকি দেয়। এ জন্য কাগজে
আমার স্বাক্ষর নিতে চেয়েছিল, আমি দিইনি। এরপর আমাকে সে মারধর করে। সে আমার
সঙ্গে সংসার করবে না বলে অনেক দিন আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। তখন আমি বাবার
বাড়িতে চলে যাই। পরে পরিবারের সবাই মিলে কথা বলে আবার সমাধান করে দেয়। তবে
এতেও তার অত্যাচার বন্ধ হয়নি। এ বছরের জানুয়ারি মাসে ৩ লাখ টাকার জন্য সে
আমার ওপর অমানুষিক নির্যাতন করে। এমনকি আমাকে পুড়িয়ে মারার জন্য গায়ে অকটেন
ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিতে চায়। আমি তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে নিজের জীবন রক্ষা
করি। এত সব কিছুর পরও আমি তার সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু বাতেন
আমার সঙ্গে সংসার করতে চায় না। তার এ ইচ্ছার সঙ্গে পরিবারের সবাই একমত ছিল।
এ কারণেই ৩০শে জানুয়ারি বাতেন ও তার ৪ ভাই মিলে আমাকে মারধর করে এক কাপড়ে
বাড়ি থেকে বের করে দেয়। আমার ছেলে দুটিকেও আমার কাছে আসতে দেয়নি। আর কোন
উপায় না পেয়ে আমি নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেলে অভিযোগ করেছি। এ অভিযোগ করার
পর সে আমাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। এমনকি আমি ও আমার বড়বোনের বিরুদ্ধে
সে হাজারীবাগ থানায় মামলা করেছে অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য। তার টাকার ক্ষমতা
আছে বলে এসব কিছু করছে। নার্গিস জানান, আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেয়ার পর
সবাইকে সে বলছে সে আমাকে তালাক দিয়েছে। আবার নাকি বিয়ে করবে, আমার সঙ্গে
সংসার করবে না। কিন্তু আমি কোন তালাকনামা এখনও পাইনি। আমি চাই তার শাস্তি
হোক, এ কারণে এখানে এসেছি ন্যায্য বিচার পেতে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল
সূত্র জানায়, অভিযোগ দেয়ার পর বাতেন নিয়মিত হাজিরা দেন না। পুলিশসহ সেলে
হাজির হয়ে উল্টো তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।
No comments