বাজেটপূর্ব সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী- গুরুত্ব পাবে নারীর ক্ষমতায়ন স্থানীয় সরকার ও সংস্কৃতি
বাজেট পেশের প্রাক্কালে গতকাল বুধবার
প্রথম আলো মুখোমুখি হয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের। বেলা ১১টায়
তাঁর দপ্তরে গিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে তেমন ব্যস্ততা লক্ষ করা গেল না। আগের
দিন রাত ১২টা পর্যন্ত মন্ত্রী মহোদয় কাজ করেছেন, জানান এক কর্মকর্তা।
আমাদের নির্ধারিত সময় ছিল বেলা ১১টা। তিনি সময়টি ৩০ মিনিট পিছিয়ে নিলেন।
ঘরে ঢুকতেই সহাস্যমুখে নীল পাঞ্জাবি পরা আবুল মাল আবদুল মুহিত আমাদের
স্বাগত জানালেন।
আলাপচারিতায় বাজেট ছাড়াও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা, সাংসদ-স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিরোধ, বিনিয়োগ সমস্যা, বিদেশে অর্থ পাচার ইত্যাদি নিয়ে। অর্থমন্ত্রী বললেন, প্রতিটি বাজেটেই তিনি নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেন। এবারে গুরুত্ব পাবে নারীর ক্ষমতায়ন, স্থানীয় সরকার ও সংস্কৃতি। তিনি স্বীকার করলেন, বেসিক ব্যাংকে দুর্বৃত্তপনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে না।
পৌনে এক ঘণ্টার আলাপচারিতায় কখনো তাঁকে বেশ প্রত্যয়দীপ্ত, কখনো গম্ভীর, কখনো খানিকটা বিরক্ত মনে হয়েছে। তবে চলমান রাজনীতির গুমোট হাওয়া তাঁকে স্পর্শ করেছে বলে মনে হলো না। আলোচনায় আসে রাজনীতিও। সরকারের ‘অংশীদার বিরোধী দলের’ অকার্যকর ভূমিকা স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী বললেন, এ জন্য বিএনপির নির্বুদ্ধিতাই দায়ী।
আলাপচারিতায় বাজেট ছাড়াও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয় ব্যাংকিং খাতের দুরবস্থা, সাংসদ-স্থানীয় জনপ্রতিনিধি বিরোধ, বিনিয়োগ সমস্যা, বিদেশে অর্থ পাচার ইত্যাদি নিয়ে। অর্থমন্ত্রী বললেন, প্রতিটি বাজেটেই তিনি নতুন কিছু দেওয়ার চেষ্টা করেন। এবারে গুরুত্ব পাবে নারীর ক্ষমতায়ন, স্থানীয় সরকার ও সংস্কৃতি। তিনি স্বীকার করলেন, বেসিক ব্যাংকে দুর্বৃত্তপনা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে না।
পৌনে এক ঘণ্টার আলাপচারিতায় কখনো তাঁকে বেশ প্রত্যয়দীপ্ত, কখনো গম্ভীর, কখনো খানিকটা বিরক্ত মনে হয়েছে। তবে চলমান রাজনীতির গুমোট হাওয়া তাঁকে স্পর্শ করেছে বলে মনে হলো না। আলোচনায় আসে রাজনীতিও। সরকারের ‘অংশীদার বিরোধী দলের’ অকার্যকর ভূমিকা স্বীকার করে অর্থমন্ত্রী বললেন, এ জন্য বিএনপির নির্বুদ্ধিতাই দায়ী।
>>সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে আবুল মাল আবদুল মুহিত l প্রথম আলো
প্রথম আলো: আপনি এর আগে সাতটি বাজেট পেশ করেছেন। সে সব বাজেট থেকে এবারের বাজেটকে আলাদা করা যাবে কি?
আবুল মাল আবদুল মুহিত: নতুন একটি সরকারের আমলে এই বাজেটটি পেশ হতে যাচ্ছে। আগের সরকারেরও প্রধান ছিলেন শেখ হাসিনা। ফলে ধারাবাহিকতা তো থাকবেই। কিন্তু আগের বাজেটগুলো থেকে কিছুটা ভিন্নতাও থাকবে। আগের পাঁচ বছর আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে একধরনের স্থবিরতা লক্ষ করা যাচ্ছে। সে কারণেই আমাদের লক্ষ্য থাকবে ২০২১ সালের মধ্যে কীভাবে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা যায়।
প্রতিবছরই আমি বাজেটে কিছু কিছু বিষয়ের ওপর বিশেষ জোর দিই। এবার নারীর ক্ষমতায়ন ও সংস্কৃতির ওপর আলাদা দৃষ্টি থাকবে। নতুন সংস্কৃতিমন্ত্রীর (আসাদুজ্জামান নূর) হাতে দেশের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড গতিশীল হবে আশা করি।
বার্ষিক বাজেটে মোটামুটি ধারাবাহিকতা থাকবে। ভবিষ্যতে আরও পরিবর্তন আসবে।
আর যে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিতে চাই সেটি হলো নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও ভুক্ত হবে না। এমপিওভুক্তির মাধ্যমে শিক্ষক ও প্রশাসকদের সহায়তায় অর্থ ব্যয় হয়। শিক্ষার উন্নয়ন হয় না। এ ব্যাপারে শিক্ষামন্ত্রীও একমত হয়েছেন। বাজেট পাসের পর আমরা বসব কীভাবে এটি পুনর্বিন্যাস (রিকাস্ট) করা যায়। আমাদের আরেকটি বড় অঙ্গীকার স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করা। বাজেটে এরও প্রতিফলন থাকবে। শেষ পর্যন্ত আমাদের জেলা সরকারেই যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জেলা সরকারের ধারণা গ্রহণ করেননি, তবে এর অন্তর্নিিহত ভাবটি অনুমোদন করেছেন৷
প্রথম আলো: গত পাঁচ বছরে তো স্থানীয় সরকার শক্তিশালী হয়নি।
মুহিত: স্থানীয় সরকার ক্ষমতাশালী না হলেও এটি কাজ করছে। তাদের হাতে যেসব বিষয় ছেড়ে দেওয়ার কথা সেগুলো দেওয়া হয়েছে। যেটি হয়নি সেটি হলো জেলা পরিষদ নির্বাচন। আগামী এক বছরের মধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে। এর পরই সংস্থার সংস্করণের প্রক্রিয়া শুরু হবে।
প্রথম আলো: স্থানীয় সরকার তথা উপজেলা পরিষদ ও জেলা পরিষদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে সাংসদেরাই কি প্রধান বাধা নন?
মুহিত: হ্যাঁ, বলতে পারেন সাংসদেরা তাঁদের ক্ষমতা ছাড়তে চান না। কিন্তু এই মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়েছেও। অনেক জায়গায়ই সাংসদদেরই সঙ্গে উপজেলা চেয়ারম্যানের ভালো বোঝাপড়াও তৈরি হয়েছে।
প্রথম আলো: রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকে হল-মার্ক কেলেঙ্কারির কথা বলা যায়। এ থেকে উত্তরণের পথ কী?
মুহিত: বেসিক ব্যাংকই একমাত্র সমস্যা। এখানে দুর্বৃত্তপনা হয়েছে। সোনালী ব্যাংকের ঘটনায় পরিচালনা পর্ষদের কোনো ভূমিকা ছিল না। সেখানে ব্যবস্থাপনার সমস্যা ছিল। আর বেসিক ব্যাংকে তো সম্পূর্ণ ভুয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঋণ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি তদারক করার কথা বাংলাদেশ ব্যাংকের। কিন্তু তাদের তদারকি ছিল দুর্বল। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকি উন্নত হয়েছে। এখন এই অবস্থা থেকে বেসিক ব্যাংককে রক্ষা করতে হবে আর্থিক ক্ষতির বিনিময়েই।
প্রথম আলো: কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক কি স্বাধীন মতো কাজ করতে পারছে?
মুহিত: তারা পুরোপুরি স্বাধীনভাবে কাজ করছে। যদিও তারা কাজ করতে পারছে না অভিযোগ করছে। গত পাঁচ বছরে আমি এক বা দুবার মাত্র নির্দেশ দিয়েছি, কারণ তাঁরা কাজটি ঠিকমতো করছিল না।
প্রথম আলো: বাংলাদেশ ব্যাংক কি তার মূল কাজ তদারকি রেখে অন্যান্য বিষয় বেশি মনোযোগ দিচ্ছে বলে মনে করেন?
মুহিত: হ্যাঁ। বাংলাদেশ ব্যাংক জনসংযোগে বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল দায়িত্ব হলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকগুলোর তদারকি নিয়ন্ত্রণ করা। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ক্ষেত্রে তার কর্তৃত্ব সীমিত হলেও আমরা তাদের কথা শুনি। বিভিন্ন ব্যাংক সম্পর্কে তারা কিছু কিছু সুপারিশ করেছে। আমরা তা বাস্তবায়নও করছি। তাদের নিজেদের সিস্টেম ছিল দুর্বল। আমি বলেছি, তাদের তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ কাজে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে হবে। এখন অডিট ব্যবস্থার উন্নয়নে নতুন আইনকানুন করেছে।
প্রথম আলো: অন্যান্য দেশে তো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত। কিন্তু এখানে কি সেভাবে চলছে?
মুহিত: তারা সম্পূর্ণ স্বাধীন। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ আছে বলে তারা দািব করে। তারা জানে না কীভাবে কাজ করবে। বাংলাদেশ ব্যাংক যদি তাদের সনদ অনুযায়ী চলত তাহলে স্বাধীনভাবেই চলতে পারত। কিন্তু সেভাবে চলতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রথম গভর্নর এসেছিলেন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে। নূরুল ইসলাম সাহেব সাত বছর ছিলেন। এরপর সরকারি কর্মকর্তারা এসেছেন। তাঁরা সেভাবে কাজ করেননি।
প্রথম আলো: বাজেটে রাজস্ব খাতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার কথা বলা হচ্ছে। আয়করই এই খাতের প্রধান উৎস হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে?
মুহিত: আমি মনে করি আয়করই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ। আয়কর ও মূসকই এটি হলো বাজেটের অর্থের সবচেয়ে বড় উৎস। শুল্ক আয় কমে যাচ্ছে। আয় বাড়ানোর উপায় হিসেবে সব দেশে দেশে আয়কর ও ব্যবহারকারী করকে প্রধান উৎস ভাবা হয়। আমাদের এখানে ব্যবহারকারী কর সেভাবে আরোপ করা হয় না।
প্রথম আলো: আয়কর আদায়ের ক্ষেত্রে সরকার তো তেমন সাফল্য দেখাতে পারেনি।
মুহিত: এটি ঠিক নয়। আমরা বহু লোককে এই আয়করের আওতায় নিয়ে এসেছি। গত পাঁচ বছরে আয়কর ও করপোরেট কর আদায়ের হারও সন্তোষজনক। আগামী দুই বছরের মধ্যে নাটকীয় পরিবর্তন আসবে আশা করি।
প্রথম আলো: ব্যাংকের মাধ্যমে বাড়ি ভাড়া প্রদানের বিধান বাজেটে থাকছে কি?
মুহিত: হ্যাঁ, থাকছে।
প্রথম আলো: বাজেট এলেই কালোটাকা সাদা করার বিষয়টি সামনে চলে আসে। এবার বাজেটে সেই সুযোগ থাকবে কি না?
মুহিত: আমি পরিষ্কার বলেছি, আয়কর আইন অনুযায়ী যে কেউ জরিমানা দিয়ে প্রদর্শিত অর্থ সাদা করতে পারবেন। সেটি আইনেই আছে। আর কালোটাকা সাদা করার সুযোগ আমার আমলেই চালু হয়নি। এটি আগে থেকেই হয়ে আসছিল।
প্রথম আলো: কালোটাকা সাদা করায় খুব কি লাভ হয়?
মুহিত: খুবই সীমিত। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সব চেয়ে বেশি অর্থ আদায় হয়েছে।
প্রথম আলো: প্রতিবারই বাজেট বাস্তবায়ন নিয়ে সমস্যা হয়। বিরোধী দলের আন্দোলন কর্মসূচি থাকে। গত অর্থবছরেও যা আরও ভয়ানক রূপ নিয়েছিল। এবারে কী হবে?
মুহিত: আমার আমলে বাজেট বাস্তবায়নের রেকর্ড ভালো। সমস্যা হয়নি। এমনকি গত বছরও তেমন সমস্যা হয়েছে বলে মনে হয় না।
প্রথম আলো: বাজেট বাস্তবায়নে এ ছাড়া আপনাকে কী কী সমস্যায় পড়তে হয়?
মুহিত: সংসদে উপস্থাপিত বাজেট ও সংশোধিত বাজেটের মধ্যে ফারাক সব দেশেই থাকে। বাংলাদেশে হয়তো খানিকটা বেশি। গত পাঁচ বছরে সংশোধিত বাজেটের ৯৫ শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে। আগে কখনো এটি ৯০ শতাংশের ওপরে ওঠেনি।
প্রথম আলো: গত কয়েক বছরেই পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপিতে অর্থ বরাদ্দ থাকা সত্ত্বেও বাস্তবায়ন হয়নি কেন? এর জন্য কি সরকার দায়ী না বেসরকারি খাত?
মুহিত: পারস্পরিক অবস্থা একটি বিষয় আছে। তবে পিপিপি কিছুই হয়নি তা ঠিক নয়। খুব কম হলেও বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। বিশেষভাবে রেলওয়ের জমিতে কিছু হাসপাতাল ও ডায়াগনসিস সেন্টার করা হচ্ছে। বড় প্রকল্পের মধ্যে উড়াল সেতু হচ্ছে।
প্রথম আলো: একসময় আপনি পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এখন এই যে যত্রতত্র উড়ালসেতু নির্মাণ থেকে শুরু করে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে, তাতে কি পরিবেশের বিপর্যয় ঘটছে না?
মুহিত: উড়াল সেতুতে সেভাবে হচ্ছে না। আমাদের কৌশলগত ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানের অধীনেই এগুলো হচ্ছে। যদিও এর ওপর দিয়ে চলা যানবাহনে কার্বন নির্গত হচ্ছে। কিন্তু আমাদের তো বিকল্প নেই। তবে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে পরিবেশ দূষণ হবে, স্বীকার করি। সে ক্ষেত্রে আমাদের চেষ্টা থাকবে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে যথাসম্ভব দূষণ নিয়ন্ত্রণের।
প্রথম আলো: কয়লা উত্তোলনের পদ্ধতি নিয়ে বিতর্ক চলছে বহু বছর ধরে। কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি সরকার।
মুহিত: এবার পারবে। তবে সমস্যা হলো আমাদের দেশটি অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। যেখানে প্রকল্প নেওয়া হোক না কেন স্থানীয়রা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বড় সমস্যা আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সম্পর্কে খুব বেশি সতর্ক থাকতে হবে। এ জন্যই সময় লাগছে।
প্রথম আলো: রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ প্রকল্পে আপাতত চাহিদা মেটালেও বিদু্৵ৎ সমস্যার স্থায়ী সমাধানে যে বড় বড় প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কেন এগোচ্ছে না?
মুহিত: এগোচ্ছে না, এটা ঠিক নয়। কতটা প্রকল্পের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে, কতটা প্রকল্পের চুক্তি হয়েছে তার সব বিবরণ আছে। আমরা আশা করি ২০১৭ সালের মধ্যে ১৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারব। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পের কার্যাদেশ ও চুক্তি সইয়ে দেরি হয়। আবার চুক্তি সইয়ের পর অতিরিক্ত সময় নেওয়া হয়।
প্রথম আলো: সরকারি বিনিেয়াগ বাড়ালেও বেসরকারি বিনিযোগ বাড়ছে না। এবারের বাজেটে এ সম্পর্কে কোনো আহ্বান থাকবে কি?
মুহিত: দেশে বিনিয়োগের যে পরিবেশ ছিল সেটি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমার ধারণা যে সেই পরিস্থিতি থেকে আমরা উদ্ধার পেয়েছি। এই উদ্ধার স্থায়ী হবে বলেই আমার বিশ্বাস। কোথাও তার গ্রহণযোগ্যতা নেই।
প্রথম আলো: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল তো তা বলে না।
মুহিত: উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ফলাফল প্রায় সমান সমান। তিনি (খালেদা জিয়া) জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিলে হয়তো জিততেন। কী ধরনের নির্বুদ্ধিতা করেছেন তারা।
প্রথম আলো: এখন যে বিরোধী দল আছে, সেটি তো সরকারেরও অংশ। তাদের ভূমিকা কী হবে?
মুহিত: একটা বিরোধী দল আছে, যারা কোয়ালিশন সরকারেরও অংশ। অনেক দেশেই জাতীয় সমঝোতার ভিত্তিতে এভাবে সরকার ও বিরোধী দল ভূমিকা পালন করে থাকে। কিন্তু দুঃখজনক যে বাংলাদেশে সেটি কাজ করে না। তবে এখন বিরোধী দলকে সরকারের অংশ করার অবস্থাটি হয়েছে বিএনপির নির্বুদ্ধিতার কারণে। আমার ধারণা, এতে বিএনপি আরও মারজিনালাইজড (প্রান্তিক) অবস্থায় চলে যাবে। সে জন্য আমাদের অন্য কোনো বিরোধী দলের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। আর বিএনপির মূল সমস্যা এটি কোনো রাজনৈতিক দলই নয়। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব প্রতিদিনই উল্টাপাল্টা কথা বলছেন।
প্রথম আলো: সরকারি দলের নেতারাও কম বলছেন না।
মুহিত : তাঁর মতো কেউ বলছেন না। আজকের পত্রিকায় দেখলাম, তিনি বলেছেন, ১৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে শেখ হাসিনাও জড়িত থাকতে পারেন। কী আহাম্মকি কথা।
প্রথম আলো: বিএনপির এই প্রান্তিক অবস্থা জাতীয় রাজনীতিতে সুস্থতা আনবে কি?
মুহিত: আনবে। হয়তো সময় লাগবে।
প্রথম আলো: বিএনপি না হয় প্রান্তিক অবস্থায় চলে গেল। কিন্তু ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নারায়ণগঞ্জে, ফেনীতে ও লক্ষ্মীপুরে যা করছে তা কি সুস্থতার লক্ষণ?
মুহিত: দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী দলের হাইকমান্ড ও সংসদদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। তিনি সেখানে বলেছেন ‘আমরা সমস্যা সম্পর্কে সজাগ আছি।’
প্রথম আলো: বাজেটে সাংসদদের জন্য থোক বরাদ্দের ব্যবস্থা থাকে, যার বেশির ভাগই অপচয় হয় বলে অভিযোগ আছে।
মুহিত: অপচয় হয়। কিন্তু সেই অপচয়কে অন্যায় বলা যাবে না। তাদের যে বরাদ্দ দেওয়া হয় সেই বরাদ্দ ব্যয়ের ব্যাপারে একটি শৃঙ্খলা আনা প্রয়োজন। তদারকি প্রয়োজন। কামরুল ইসলাম সিদ্দিকী যেভাবে এলজিইডি শুরু করেছিলেন, সেভাবে এখন নেই। সে সময় তদারকিটা ছিল। সাংসদদের প্রকল্পের অগ্রাধিকার পরিবর্তন করা দরকার।
প্রথম আলো: এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। কিন্তু গত পাঁচ বছরে এই মন্ত্রণালয় চলেছে দিকনির্দেশনাহীনভাবে।
মুহিত: মন্ত্রণালয় ঠিকই চলেছে। হয়তো আগের সচিব অনেক বেশি ক্ষমতাবান ছিলেন।
প্রথম আলো: এবারের বাজেটে শেয়ারবাজারের স্থিতি আনতে কোনো প্রণোদনা থাকছে িক?
মুহিত: আমি তো মনে করি শেয়ারবাজার স্থিতিশীলই আছে। এটাকে ধরে রাখতে হবে।
প্রথম আলো: কিন্তু ১৯৯৬ সালেও এবারের শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির দায়ে যেসব মামলা হলো, তার কিছুই হলো না? কেউ শাস্তি পেলেন না?
মুহিত: এ ব্যাপারে আমার কোনো মন্তব্য নেই। এটাই হলো আমাদের বিচারিক ব্যবস্থা।
প্রথম আলো: বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের বিষয়টি সম্পর্কে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মালয়েশিয়ার সেকেন্ড হোমে বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ শীর্ষ তালিকায়। কানাডায়ও প্রচুর বাঙালি যাচ্ছে, নাগরিকত্ব নিচ্ছেন। এটাকে কীভাবে দেখছেন?
মুহিত: টাকা পাচার বন্ধের উপায় হলো দেশে বিনিয়োগ করা। কিন্তু মুখে বললেই তো বিনিয়োগ হবে না, এ জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ দিতে হবে।
প্রথম আলো: এর অর্থ কি আপনারা বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ দিতে পারছেন না?
মুহিত: যখন সবাই মনে করবে এখানে বিনিয়োগ নিরাপদ, তখন বিনিয়োগ করবেন। আমরা সেই পরিবেশ আনার চেষ্টা করছি।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, হেড অব রিপোর্টিং শওকত হোসেন ও জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ফখরুল ইসলাম|
No comments