সর্বাত্মক যুদ্ধের প্রমাণ এই পাসপোর্ট: আলফঁনসি
‘এটা যে একটা সর্বাত্মক যুদ্ধ ছিল, তার
প্রমাণ এই পাসপোর্ট। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ছিল মুক্তিকামী—মুক্তির
আকাঙ্ক্ষা গোটা দেশকে সংঘবদ্ধ করেছিল।’
আজ শনিবার মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন ফ্রান্সের ফিলিপ আলফঁনসি। ৪৩ বছর ধরে সযত্নে আগলে রাখা মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকারের ইস্যু করা একটি পাসপোর্ট জমা দিতে আকাশপথে আট হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশে এসেছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের মহাপরিচালক মাহবুব আলমের হাতে আলফঁনসি পাসপোর্টটি তুলে দেন।
এত দূর থেকে আসা ৭৫ বছর বয়সী এ মানুষটির চোখে-মুখে কোনো ক্লান্তি নেই, আছে অদ্ভুত এক প্রশান্তি। আনুষ্ঠানিকতা শেষে তিনি বলেন, ‘আমিও আছি তোমাদের সঙ্গে।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অনুষ্ঠানে ফিলিপ আলফঁনসি বলেন, ‘বাঙালি বুঝতে পেরেছিল সব কাজ তাদেরই করতে হবে। একজন বিদেশি নাগরিকের প্রতি তাদের কিছু অবলিগেশন আছে। সে কারণেই আমার পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে কাজ করার অনুমতি দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ সরকার।’
আলফঁনসি উপস্থিত দর্শকদের তাঁর কাছে থাকা বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ফুটেজের কথা বলেন। তিনি যখন চুয়াডাঙ্গায় ঢোকেন, এ সময় পাকিস্তানি বাহিনী বোমা বিস্ফোরণ শুরু করে সাধারণ মানুষের ওপর। তিনি বলেন, আনন্দ আর আবেগের সঙ্গে পাসপোর্টটি তিনি তুলে দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে। তিনি বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের একজন সাক্ষী। তাঁর পাসপোর্টটি সেই সাক্ষ্য বহন করে যাবে আজীবন।
আলফঁনসি বলেন, ‘আমি স্মরণ করব। আপনারাও স্মরণ করবেন, আমিও আছি আপনাদের সঙ্গে।’
আলফঁনসির কাছে থাকা ভিডিও ফুটেজ, ছবি ও তাঁর স্মতিচারণা নিয়ে ‘বাংলাদেশ একটি পতাকার জন্ম’ শীর্ষক একটি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। চলচ্চিত্রটির পরিচালক প্রকাশ রায়। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের সভাপতি কাজী এনায়েতউল্লাহ।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি জিয়াউদ্দিন তারেক আলী বলেন, ফ্রান্সের সরকার একটা অবস্থান নিয়েছিল। স্বাধীনতাযুদ্ধকে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিষয় ভেবেছিল। আলফঁনসির প্রতিবেদন, ছবি, ভিডিও ফ্রান্সের মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে বাংলাদেশে স্বাধীনতাযুদ্ধ চলছে। তিনি বলেন, ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেরাঁ তাঁর দেশের অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিতে পারেননি, কিন্তু তিনি ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশের একজন সবল সমর্থক।
অনুষ্ঠানে ফ্রান্স-বাংলাদেশ ইকোনমিক চেম্বারের সভাপতি কাজী এনায়েতউল্লাহ বলেন, দেশের প্রতি দায়িত্ব এখনো শেষ হয়ে যায়নি। আলফঁনসিও তাঁকে বাংলাদেশের জন্য কিছু করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
No comments