‘নির্বাচন বৈধ হলেও অসম্পূর্ণ’ : ফারুক চৌধুরী by জাকারিয়া পলাশ
আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ফারুক চৌধুরী
বলেছেন, বাংলাদেশের সামনে এখন সময় এসেছে একথা প্রমাণ করার যে, আমরা
গণতন্ত্র বলতে শুধু নির্বাচনই মনে করি না। গণতন্ত্র বলতে আমরা মানুষের
মতামতের সার্বিক গুরুত্বকেও বুঝি।
বাংলাদেশের মনে রাখা
উচিত যে, আমরা একটি ক্রমাগত ছোট হয়ে আসা পৃথিবীতে বাস করছি এবং আমরা এই
পৃথিবীতে একা দাঁড়িয়ে নেই। আমরা জাতিসংঘের একটি গুরুত্বপূর্ণ সদস্য
রাষ্ট্র। আমাদের দেশে যাতে এমন কিছু না ঘটে যা বিদেশীদের সমালোচনায় উৎসাহিত
করে। তিনি বলেছেন, ৫ই জানুয়ারির নির্বাচন সাংবিধানিকভাবে বৈধ হলেও তা
অসম্পূর্ণ। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, সরকার সাংবিধানিক
ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। কিন্তু, এটা একটা বড়
‘কিন্তু’, বৃহত্তম বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। অতএব, নির্বাচন বৈধ হলেও
‘অসম্পূর্ণ’ রয়ে গেছে। বাংলাদেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যতের জন্য এটা কাম্য
নয়। এ জন্য আমি মনে করি যে, সরকার পক্ষ ও বিরোধী দলের (বিএনপি) সংলাপে বসা
উচিত। একটি জাতির ইতিহাসে দুই-চার-পাঁচ বছর বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে, দেশে
একটি নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকার গঠন করা। নির্বাচন কিন্তু
গণতন্ত্রের শেষ নয়, শুরু। গণতন্ত্র হচ্ছে দেশের মানুষের চিন্তাধারায়
অবগাহনের নিমন্ত্রণ ও প্রতিফলন। ফারুক চৌধুরী বলেন, আমি খুবই আশাবাদী, দুই
দলের মধ্যে সংলাপের সুষ্ঠু একটি পরিবেশ সৃষ্টি হবে। বস্তুনিষ্ঠ আলোচনার
মাধ্যমে প্রয়োজন হলে দুই দলকেই ছাড় দিয়ে প্রত্যেকের অংশগ্রহণের মাধ্যমে
দেশে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এই পরিবেশ সৃষ্টির জন্য দুই দলের
রাজনীতিবিদদেরই এগোতে হবে। হারি জিতি নাহি ভয়- এমন চিন্তা রাখতে হবে। যে দল
হেরে গেল সে দল যে সবকিছু হারিয়ে ফেললো তা তো নয়। রাষ্ট্র পরিচালনায়
বিরোধী দলের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে
এক অর্থে বিরোধী দল নেই। যা গণতন্ত্রের জন্য খুবই হানিকর। কারণ বিরোধী দলের
যদি লক্ষ্য হয় সরকারে প্রবেশ করা তাহলে তো আর বিরোধী দলে থাকা হলো না।
তারা বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হবে। বিরোধী দলের ভূমিকা কি- তা
মনে রাখতে হবে। তারা যদি মনে করে, সরকার ভুল পথে রয়েছে তাহলে চোখে আঙুল
দিয়ে দেখিয়ে দেয়া তাদের কাজ। কখনও বা জাতীয় স্বার্থে সরকারকে সহায়তা করবে
তারা। যেমন ভারত বা অন্য কোন দেশের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে দেশের স্বার্থের
প্রশ্ন রয়েছে। সেখানে সরকার ও বিরোধী দল একজোট হয়ে কাজ করবে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে বললেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এখানে ১৬ কোটি মানুষের বাস। এর ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে পৃথিবীর বড় রাষ্ট্রগুলো যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ভারতসহ প্রতিবেশী এবং বিভিন্ন দেশের ব্যাপক ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অতএব এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, অন্যান্য দেশ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করবে। তারা আমাদের দেশে স্থিতিশীলতা চায়, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ চায়। কিন্তু আগ্রহ প্রদর্শন আর হস্তক্ষেপ এই দুয়ের মধ্যে ফারাক আছে। আমরা নিশ্চয়ই চাইবো না যে কেউ আমাদের ওপর হস্তক্ষেপ করুন। প্রতিবেশী দেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আজকে এখানে একটি সরকার আছে। কাল একটি সরকার হবে। আমি আশা করবো, ভারত তার দেশের স্বার্থেই সবার সঙ্গে, রাজনৈতিক সব গোষ্ঠীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা ভারতের স্বার্থ হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি দেশে সমঝোতার একটি আবহ সৃষ্টি হয়, তাহলে আমাদের রাজনীতিতে বহির্বিশ্বের কোন প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের কারণ থাকবে না।
তিনি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা প্রসঙ্গে বলেন, যারা সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে, তারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী না। কারণ, অসাম্প্রদায়িকতা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের একটি স্তম্ভ; গণতন্ত্র যেমন, ন্যায়বিচার যেমন। দেশে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হওয়া উচিত যাতে রাজনীতির নিরিখে বা অন্য কোন মাপকাঠিতে কোন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু বলে বিবেচনা করা হবে না। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সমতা রইবে। কোন একটি গোষ্ঠী নিজেকে সংখ্যাগুরু বলে বিবেচনা করবে না। তা ভাষাভিত্তিক হোক, ধর্মভিত্তিক হোক, সমাজভিত্তিক হোক। কারণ যখনই সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে আমরা বাংলাদেশকে দেখি তখনই আমরা বাংলাদেশকে দুর্বল করে ফেলি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিদেশীদের ভূমিকা প্রসঙ্গে বললেন, বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ। এখানে ১৬ কোটি মানুষের বাস। এর ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর সঙ্গে পৃথিবীর বড় রাষ্ট্রগুলো যেমন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, ভারতসহ প্রতিবেশী এবং বিভিন্ন দেশের ব্যাপক ও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। অতএব এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই যে, অন্যান্য দেশ অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ করবে। তারা আমাদের দেশে স্থিতিশীলতা চায়, সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ চায়। কিন্তু আগ্রহ প্রদর্শন আর হস্তক্ষেপ এই দুয়ের মধ্যে ফারাক আছে। আমরা নিশ্চয়ই চাইবো না যে কেউ আমাদের ওপর হস্তক্ষেপ করুন। প্রতিবেশী দেশের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র। আজকে এখানে একটি সরকার আছে। কাল একটি সরকার হবে। আমি আশা করবো, ভারত তার দেশের স্বার্থেই সবার সঙ্গে, রাজনৈতিক সব গোষ্ঠীর সঙ্গে সদ্ভাব বজায় রাখবে। অভ্যন্তরীণ বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করা ভারতের স্বার্থ হতে পারে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, যদি দেশে সমঝোতার একটি আবহ সৃষ্টি হয়, তাহলে আমাদের রাজনীতিতে বহির্বিশ্বের কোন প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপের কারণ থাকবে না।
তিনি নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা প্রসঙ্গে বলেন, যারা সাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করে, তারা বাংলাদেশে বিশ্বাসী না। কারণ, অসাম্প্রদায়িকতা রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের একটি স্তম্ভ; গণতন্ত্র যেমন, ন্যায়বিচার যেমন। দেশে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হওয়া উচিত যাতে রাজনীতির নিরিখে বা অন্য কোন মাপকাঠিতে কোন একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সংখ্যালঘু বলে বিবেচনা করা হবে না। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সমতা রইবে। কোন একটি গোষ্ঠী নিজেকে সংখ্যাগুরু বলে বিবেচনা করবে না। তা ভাষাভিত্তিক হোক, ধর্মভিত্তিক হোক, সমাজভিত্তিক হোক। কারণ যখনই সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিতে আমরা বাংলাদেশকে দেখি তখনই আমরা বাংলাদেশকে দুর্বল করে ফেলি।
No comments