সংসারের অন্তরাল থেকে অনন্ত অন্তরালে
আমরা যে সুচিত্রা সেনকে চিনি, তাঁর বয়স ৪৫ থেকে ৪৬। তাঁর জীবনের অবসান ঘটেছে ৩৫ বছর আগে। পঞ্জিকার হিসাবে প্রায় ৮৩ বছর বয়সে ১৭ জানুয়ারি সকালে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অন্য এক সুচিত্রা সেন। প্রায় ৩৫ বছর সংসারের অন্তরাল থেকে অনন্ত অন্তরালে চলে গেলেন। সুচিত্রা সেনের মৃত্যুতে দুই বাংলার মিডিয়া ও সংস্কৃতিকর্মীদের কথা ও লেখায় প্রাধান্য পেল তাঁর রূপ। তাঁর অভিনয়-নৈপুণ্যের কথাও আছে, তবে বিশ্লেষণ কম। বঙ্গীয় সমাজে যাঁর বাজারদর বা জনপ্রিয়তা আছে, তাঁকে নিয়ে প্রথাগতরা অনেক কিছুই করে। প্রথাগত ভাষায় বাংলাদেশ ও ভারতের রাজনৈতিক নেতারা তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও শোক বাণী দিয়েছেন। এ ধরনের জনপ্রিয় মানুষকে নিয়ে যে দুই বাংলায় মৃদু রাজনীতি হবে না, অর্থাৎ রাজনৈতিকভাবে তাঁর নাম ব্যবহূত হবে না, তা-ও নয়। অধিকাংশ লেখা ও বক্তব্য থেকে একালের পাঠক ও দর্শক-শ্রোতার মনে হবে, সুচিত্রা সেন ছিলেন কোনো ধু ধু প্রান্তরে এক অপরূপ ফুল। মনে হবে, তিনি একা, তাঁর চারপাশে বিশেষ কেউ নেই। তাঁর মৃত্যুতে অনেকের মতো আমি শোক অনুভব করিনি, কোনো শূন্যতাও নয়।
সকালে নাশতা খাওয়ার সময় টিভিতে তাঁর মৃত্যুর সংবাদটি শোনার পর আমি একধরনের অতীত স্মৃতিবিধুরতায় আক্রান্ত হই। ফিরে যাই আমাদের তরুণ বয়সে। আমাদের সময়ে। পঞ্চাশের শেষ থেকে ষাটের দশকটি ছিল আমাদের সময়। উপনিবেশ-পরবর্তী উপমহাদেশে—ভারত, পাকিস্তান ও পূর্ব বাংলায়—পঞ্চাশের দশকটি ছিল প্রস্তুতির সময়। বাঙালির সৃষ্টিশীলতার সর্বোচ্চ প্রকাশ ঘটেছিল ষাটের দশকে। বাঙালি বলতে আমি দুই বাংলার বাঙালিকেই বোঝাচ্ছি। সাহিত্য ও শিল্পকলায়, সংগীত ও চলচ্চিত্রে এবং জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে ষাটের দশকটি ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতির ক্ষেত্রেও ষাটের দশকটি ছিল খুবই সৃষ্টিশীল। আমাদের কারও স্বপ্ন ছিল সংসদীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, কারও কাছে সমাজতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই পেয়েছিল প্রাধান্য। ষাটের দশক মানুষ তৈরি করেছিল বলেই আমরা একাত্তর করতে পেরেছিলাম। মধ্য-পঞ্চাশ থেকে মধ্য-সত্তর ছিল বাংলা চলচ্চিত্রের স্বর্ণকাল। সেই স্বর্ণকালের, রবীন্দ্রনাথের ভাষায় বলতে পারি, ‘অনন্তযৌবনা উর্বশী’ ছিলেন সুচিত্রা সেন। তাঁর সম্পর্কেই শুধু বলা যায়, তিনি ছিলেন ‘যৌবনে-গঠিতা’ এবং ‘নহ মাতা, নহ কন্যা, নহ বধূ, সুন্দরী রূপসী’। পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে ভারত ও পাকিস্তানে সুন্দরী নায়িকার অভাব ছিল না। সত্তর ও আশির দশকেও অভাব নেই। বৈজয়ন্তী মালা, আশা পারেখ, সায়েরা বানু, শ্রীদেবী, ওয়াহিদা রেহমান থেকে মাধুরী দীক্ষিত। তারপর প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, শিল্পা শেঠি, কারিনা কাপুর, ক্যাটরিনা কাইফ হিন্দি ছবির কত সুন্দর মুখ।
লাহোরের নায়িকারাও ছিলেন অসামান্য সুন্দরী। কিছুটা মেদবহুল হলেও নীলো, সাবিহা, নায়ার সুলতানা, মোশাররাত নাজির, নাদিরা, রানী, জেবা, রোজিনা প্রমুখের গ্ল্যামার অল্প ছিল না। আমাদের সেই কালের বিশ্বনন্দিতা এলিজাবেথ টেলর, মেরিলিন মনরো, ব্রিজিত বার্দোত, সোফিয়া লরেন প্রমুখ ছিলেন। কলকাতার টালিউডেই ছিলেন অনেক সুন্দরী। অনুভা গুপ্তা, সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, মালা সিনহা, সুপ্রিয়া, মাধবী—কেউই কম সুন্দরী নন। তবু কেন আমাদের মতো যুবকেরা পাগল হয়েছিল সুচিত্রা সেনকে নিয়ে? অন্যদের কথা বলতে পারব না। আমি শুধু আমার নিজেরটাই জানি। তাঁর আগেও মেয়েদের দেখেছি; কিন্তু সুচিত্রা সেনের মধ্যেই প্রথম দেখলাম নারীর রূপ। সুচিত্রা সেনের মধ্যে সমাবেশ ঘটেছিল নানা গুণের। সৌন্দর্যের সঙ্গে তাঁর অভিনয়-নৈপুণ্য। আচরণের মাধুর্য। অসামান্য ব্যক্তিত্ব। চারিত্রিক সংগতি ও দৃঢ়তা। আত্মমর্যাদাবান, তবে কিছুটা জেদি। বঙ্গীয় সমাজে এত গুণের সমাবেশ একজনের মধ্যে বিরল। শুনেছি তিনি নাকি প্রযোজকদের বলতেন, ছবির বিজ্ঞাপনে তাঁর নাম আগে দিতে অর্থাৎ উত্তম-সুচিত্রা নয়, সুচিত্রা-উত্তম অভিনীত। পরবর্তী প্রজন্মের যাঁরা তাঁর রূপ উপভোগ করেননি, যাঁরা তাঁর সৌন্দর্যের সুধা আমাদের মতো আকণ্ঠ পান করেননি রুপালি পর্দায়, তাঁরাও দেখলাম তাঁর রূপের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত। তাঁর রূপের বাইরে তাঁর দার্শনিক ও ধার্মিক সত্তার কথা কেউ বললেন না—না-কলকাতার, না-বাংলাদেশের। রূপসীও ছিলেন বটে!
সুচিত্রা সেনের ঝিনুকের মতো চোখ, কালো ভ্রমরের মতো ভ্রু, কিঞ্চিৎ কোঁকড়া কেশ, সে চুল কখনো খোলা। কখনো আলগা চুল পিঠে ছড়ানো। কখনো এক পাশে সিঁথি। তাঁর চুল বাঁধাটাই অন্য রকম। আলগা খোঁপা ঘাড়ের ওপর। কখনো চুল টেনে পনিটেইল বাঁধা। কখনো মাঝখানে সিঁথি। কত নারীর খোঁপায় ফুল দেখেছি। সুচিত্রা সেনের চুলে গোঁজা ফুল দেখে মনে হয়েছে, ওই ফুলই যেন নতুন জীবন পেল—সুন্দর ফুল হলো সুন্দরতর সুচিত্রার চুলের ছোঁয়া পেয়ে। তাঁর নিখুঁত দাঁতের উজ্জ্বলতা ভোলার নয়। তাঁর সূক্ষ্ম হাসি? সুচিত্রার শাড়ি পরার ঢং, তাঁর ব্লাউজ—সবই অনন্য। থ্রি-কোয়ার্টার ব্লাউজে তাকে যা মানাত, অন্য কোনো নারীকে তেমনটি দেখিনি। উচ্চবিত্ত ঘরের কত যুবতীকে সেকালে দেখেছি তাঁকে অনুকরণ করতে। আমি কোনো সিনেমাপ্রেমিক যুবক ছিলাম না। আমার বাবা সিনেমা খুব দেখতেন। তাঁর সঙ্গে হলে গিয়েই দেখি সম্ভবত সুচিত্রা সেনের প্রথম যে ছবিটি তা হলো অগ্নিপরীক্ষা। ওই ছবিতে তাঁর ঠোঁট মেলানো সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে ‘গানে মোর ইন্দ্রধনু’ শুনে কে না মুগ্ধ হয়েছে। হারানো সুর-এর সেই গান, ‘তুমি যে আমার ওগো তুমি যে আমার’ যত দিন বাংলা ভাষা আছে তত দিন থাকবে। পথে হলো দেরীতে ‘এ লগনে দুটি পাখি’ সন্ধ্যার কণ্ঠে অপূর্ব। কত যে রোমান্টিক দৃশ্য তাঁর অভিনীত ছবিতে। মনে পড়ে, উত্তমকুমারের কোল ঘেঁষে বসা সুচিত্রা সেন। উত্তমের ঠোঁটে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে: ‘সূর্য ডোবার পালা আসে যদি আসুক—বেশ তো, বেশ তো...’।
বুক ভরে যায়। সপ্তপদীতে উত্তমের মোটরসাইকেলের পেছনে বসে গ্রামের সড়কে যাচ্ছেন সুচিত্রা। পাখি উড়ছে আকাশে। উত্তমের ঘাড়ের মধ্যে সুচিত্রার মুখ। একালে মোটরসাইকেলে মেয়েদের পেছনে চলাচল হচ্ছে, সেকালে তা ছিল বিরল রোমান্টিক ব্যাপার। ব্যতিক্রমী দৃশ্য। হেমন্তের কণ্ঠে উত্তম গাইছেন, ‘এই পথ যদি না শেষ হয়, তবে কেমন হতো তুমি বলো তো’। জীবনে মোটরসাইকেলই চালাতে শিখলাম না। পেছনে বসাব কাকে? সেকালে ভাবতাম, এভাবে যদি কাউকে পেছনে বসিয়ে মোটরসাইকেল চালাতাম! শুনেছি, সপ্তপদী শুটিংয়ের সময় নাকি কোনো কারণে উত্তম-সুচিত্রার মান-অভিমানে কথাবার্তা বন্ধ ছিল। কিন্তু অভিনয় দেখে তা বোঝার উপায় আছে? কী অন্তরঙ্গ ও স্বতঃস্ফূর্ত আচরণ পরস্পরের। তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাহিনি সপ্তপদী। উত্তম-সুচিত্রা জুটি। কৃষ্ণেন্দু (উত্তম) হিন্দু। রিনা ব্রাউন (সুচিত্রা) নেটিভ খ্রিষ্টান। উভয়ের সে কী প্রাণবন্ত অভিনয়। কী এক হালকা মুহূর্তে রিনা কৃষ্ণেন্দুকে ঠাট্টা করে বলেছে ‘ব্লাকি’। উত্তরে কৃষ্ণেন্দু বলছে, ‘আমরা মা কালীর সন্তান।’ কৃষ্ণেন্দুর জন্মদাতা বাবা হলেন ছবি বিশ্বাস—বাংলা ছবির আরেক সম্রাট। কিন্তু এ ছবির ছবি বিশ্বাস জলসা ঘর-এর জমিদার বিশ্বম্ভর রায় নন—একজন মধ্যবিত্ত। ছেলে মেডিকেলে পড়ে। তাকে দেখতে গেছেন হোস্টেলে। কৃষ্ণেন্দু গেছে খেলতে। ছবি বিশ্বাসের ছোট্ট সংলাপ: ‘পড়াশোনা
ছেড়ে দিয়ে খেলে বেড়াচ্ছে বুঝি?’ প্রেমে কৃষ্ণেন্দু-রিনা হাবুডুবু। ‘বাবা মত দেবেন না’—জানায় কৃষ্ণেন্দু। ওই মুহূর্তে ‘জানি না’ বলে বুকে জড়িয়ে ধরেন উত্তমকে সুচিত্রা। ওই আলিঙ্গনে কোনো অশ্লীলতা নেই। এক স্বর্গীয় আবেগের প্রকাশ। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত গান ‘মোর বীণা ওঠে কোন সুরে বাজি কোন নব চঞ্চল ছন্দে’ হাজারবার শুনেছি। সব সময়ই ভালো লাগে। কিন্তু শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দত্তা ছবিতে এই গানটি যখন শুনি, তখন অন্য রকম আবেদন সৃষ্টি হয়। এ যেন চিরচেনা রবীন্দ্রসংগীত নয়—অন্য গান। দত্তায় সুচিত্রাকে অত ভালো লাগেনি। কিন্তু এই গানটির কারণে তাঁর অভিনয় হূদয় ছুঁয়ে যায়। ঘরে পায়চারি করতে করতে গানটি গাইছেন একাকী। কখনো বিছানায় শুয়ে পড়ে গাইছেন। তখন তাঁকে লাগে অন্য রকম। গানটিও অন্য রকম মাত্রা পায়। কত ছবিতে কত রকম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন সুচিত্রা সেন। কখনো উচ্চবিত্ত পরিবারের উচ্ছল তরুণী। কখনো নিম্ন-মধ্য শ্রেণীর নারী। চন্দ্রনাথ-এ কাজের মেয়ের ভূমিকায়। তাঁর আনন্দের মুহূর্তের অভিব্যক্তি এক রকম। অভিমানের দৃশ্য, দুঃখ-বেদনার দৃশ্য, বিস্ময়ের অভিব্যক্তি, শোক ও বিষাদের ছায়া চোখে-মুখে—সবকিছুই যেন অনন্য। হারানো সুর কতবার দেখেছি। তবু মনে হয় আবার দেখি।
ইন্দ্রনীল ছবিতে নায়কের গলায় হেমন্তের গাওয়া ‘নীড় ছোট, ক্ষতি নেই, আকাশ তো বড়’ হূদয় ছুঁয়ে যায়। ওই মুহূর্তে সুচিত্রার প্রশান্ত হাসি। মনে আছে, একবার সবার উপরে হলে বসে দেখছি। সামনে বা পেছনের কোনো মাঝবয়সী নারী ডুকরে কেঁদে উঠলেন। দীপ জ্বেলে যাই প্রথম দেখি হলে। কতবার দেখেছি, তার হিসাব নেই। ম্যাটিনি দেখে আবার রাতের শো দেখেছি। অসামান্য অভিনয় মানসিক হাসপাতালের সুপার পাহাড়ি সান্যালের। নার্স সুচিত্রা (রমা)। নতুন রোগী এসেছে বসন্ত চৌধুরী স্মৃতি হারিয়ে। সুপার বলছে, রমা, এই কেসটা তোমাকে টেক-আপ করতে হবে। কী অভিনয়! যেন বাস্তবের হাসপাতালে রোগী ও নার্স। ওই ছবির গান ‘এই রাত তোমার আমার, এই চাঁদ তোমার আমার’। ভালোবাসার অভিনয় করতে করতে রমা রোগী বসন্ত চৌধুরীকে ভালোই বেসে ফেলে। রোগী ভালো হয়। বাড়ির লোক আসে তাকে নিতে। তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। হাসপাতালের নার্সকে তো বাবা-মা বউ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে না। বিদায়ের মুহূর্তে সুচিত্রার যে অভিব্যক্তি। প্রথমবার আমি হলের মধ্যেই শব্দ করে কেঁদে দিয়েছিলাম। লজ্জার কথা। কিন্তু আমি একা নই। হলের প্রায় সব নারীই ফোঁস ফোঁস করে কাঁদেন। বহুকাল থেকে এবং মৃত্যুর পরে আরও বেশি শুধু সুচিত্রার রূপের প্রশংসাই করা হচ্ছে। আমরা বলছি না তাঁর অভিনীত ছবিগুলোর কাহিনিকার, পরিচালক, প্রযোজক, সংগীত পরিচালক, গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পীদের কথা। চলচ্চিত্রের মতো একটি মাধ্যমে একা কেউ সফল হতে পারেন না। লচ্চিত্রের মতো একটি শিল্পকর্মে নায়িকার রূপই সব নয়। চলচ্চিত্র একটি যৌথ শিল্পমাধ্যম। সুচিত্রা সেনের মতো সুন্দরী নায়িকাকে আক্কেল আলি বেপারী পরিচালিত ‘তোরে খামু’ জাতীয় ছবিতে অভিনয় করতে দিলে সেটা শিল্পকর্ম হবে না। চাই চমৎকার কাহিনি,
অনবদ্য অভিনয়, মনমাতানো গান, কারিগরি কুশলতা। বাংলা ছায়াছবির সৌভাগ্য, তা পেয়েছিল সুচিত্রা সেনের মতো ব্যক্তিত্বসম্পন্ন অভিনেত্রীকে এবং প্রতিভাবান সব পরিচালক, কাহিনিকার, সংগীত পরিচালক, গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী। সেকালে ছিলেন গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, বিমল ঘোষদের মতো গীতিকার। সুচিত্রা সেনের ঠোঁটে কণ্ঠ দিয়েছেন সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, গীতা দত্ত, আরতী মুখোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর। তাঁর নায়কদের গানে গলা হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, শ্যামল মুখোপাধ্যায়ের মতো জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পীদের। সুচিত্রা-উত্তমের অভিনীত ছবিগুলোয় বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন ছবি বিশ্বাস, পাহাড়ি সান্যাল, বিকাশ রায়, জহর গাঙ্গুলি, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়—সবাই নমস্য অভিনেতা। সবার সম্মিলিত উপহার সুচিত্রা সেন। সুচিত্রা সেনের অন্তরালে চলে যাওয়া নিয়ে অনেকে হাহাকার করেন। আমার বিবেচনায় তিনি সঠিক কাজটি করেছেন। কোটি কোটি মানুষকে যিনি আনন্দ দিয়েছেন, তাঁর নিজের জীবন কি ছিল পরিপূর্ণ আনন্দময় ও সুখের? তিনি নিজে ছিলেন সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে। তাঁর স্বামী দিবানাথ সেন ছিলেন বনেদি বংশের সন্তান। তিনি স্ত্রীর ক্যারিয়ার নির্মাণে অনেক অবদান রেখেছেন। কিন্তু একসময় তাঁদের বিচ্ছেদ ঘটে। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে সুচিত্রা জীবনের বিচিত্র প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে থাকতে পারেন। তার ফলে গড়ে ওঠে তাঁর নিজস্ব জীবনদর্শন। জীবনের শেষ ৩৫ বছর তিনি সমর্পিত ছিলেন ঈশ্বরের সাধনায়। এ কাজটি একজন উঁচু আদর্শবান মানুষ ছাড়া কারও পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁর আত্মা শান্তি পাক—এই প্রার্থনা করি।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।
No comments