খালেদা জিয়ার মন্তব্য
৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর প্রথম জনসভায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সরকারের প্রতি দ্রুত সংলাপ ও নির্বাচনের যে আহ্বান জানিয়েছেন, তার পক্ষে যথেষ্ট যুক্তি আছে। কেননা, এই নির্বাচনে যেমন দেশের গরিষ্ঠসংখ্যক মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি, তেমনি বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দলের বর্জন ও প্রতিরোধের মুখে যে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়, তাতে ভোটারের উপস্থিতিও ছিল খুব কম। সরকারের পক্ষ থেকেও এটিকে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার নির্বাচন বলে অভিহিত করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রশ্ন তোলা এবং সবার অংশগ্রহণে দ্রুততম সময়ে আরেকটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু এই সমাবেশেই খালেদা জিয়া নির্বাচনের আগে ও পরে বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সহিংসতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড দমনে পরিচালিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান সম্পর্কে যেসব মন্তব্য করেছেন, তা একেবারে অনাকাঙ্ক্ষিত, অনভিপ্রেত ও উসকানিমূলক। সাতক্ষীরায় যৌথ বাহিনীর অভিযান সম্পর্কে খালেদা জিয়া বলেছেন, ‘আপনারা দেখেছেন, কীভাবে মানুষকে নির্যাতন করেছে। আদৌ যৌথ বাহিনী ছিল কি না, সেটা নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ আছে।’ একই সন্দেহ তিনি করেছেন গাইবান্ধার অভিযান সম্পর্কেও। বিএনপির নেত্রীর এই সন্দেহের পেছনে কি কোনো যুক্তিসংগত কারণ আছে? তাঁর হাতে কি তথ্য-প্রমাণ আছে?
যদি না থাকে ‘কানে চিল নিয়ে গেছে’ বলে মানুষকে উসকে দেওয়ার অপচেষ্টা কেন? খালেদা জিয়া কেবল একটি দলের প্রধান নন, তিনি দুবার বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং দুবার জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা ছিলেন। তথ্য-প্রমাণ ব্যতিরেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উড়ো খবর দিয়ে একজন দায়িত্বশীল নেতা এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা বলতে পারেন না। এর আগে তিনি তাঁর বাড়ির ফটকে উপস্থিত সাংবাদিক, পুলিশ ও অন্যদের সামনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সিকিমের সাবেক নেতা লেন্দুপ দর্জির সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। যেখানে সরকারের বিরুদ্ধে বলার মতো যখন হাজারটা বিষয় দৃশ্যমান, তখন অদৃশ্য বা গায়েবি বিষয় সামনে এনে রাজনৈতিক বৈরিতা বাড়ানোর কী কারণ থাকতে পারে? এ ধরনের উসকানিমূলক ও বিদ্বেষপ্রসূত কথাবার্তা দুই দলের মধ্যকার আলোচনার পরিবেশই কেবল নষ্ট করে না, প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে সম্পর্কও ঝুঁকিতে ফেলে দিতে পারে। অতএব, রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীদের বক্তব্য-বিবৃতিতে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি। কোনো দলের কোনো নেতা বা নেত্রীই যেন না ভাবেন যে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার সোল এজেন্সি জনগণ তাঁকে দিয়েছে এবং তিনি বা তাঁর দলের বাইরে সবাই অ-দেশপ্রেমী। তাই যা খুশি বলে পার পাওয়া যাবে। দেশপ্রেমের পরীক্ষা একবারই হয়েছে, একাত্তরে। ভবিষ্যতে সে ধরনের পরিস্থিতি হলেও দেশের ১৬ কোটি মানুষই এক কাতারে দাঁড়াবে, কারও হাওয়াই অভিযোগের অপেক্ষায় থাকবে না।
No comments