এবার ‘বন্দুকযুদ্ধ’
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কি নতুন মাত্রা পেল? ‘ক্রসফায়ার’, ‘এনকাউন্টার’-এর পর এবার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে নতুন পরিভাষা ব্যবহারের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে, যার নাম ‘বন্দুকযুদ্ধ’। গত দুই সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘গুলিবিনিময়’ বা ‘গুলিবিদ্ধ’ হয়ে নয়জন নিহত হওয়ার খবর গণমাধ্যমে এসেছে। এর মধ্যে পাঁচজন নিহত হন পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর অভিযানের সময় সরকারি দাবি অনুযায়ী ‘বন্দুকযুদ্ধ’ বা ‘গুলিবিনিময়ে’। অপর চারজনের লাশ মিলছে গুলিবিদ্ধ অবস্থায়। এসব হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সরকারি ভাষ্য যথেষ্ট সন্দেহের চোখে দেখছে ভুক্তভোগীর পরিবার ও এলাকাবাসী। নীলফামারীতে সাম্প্রদায়িক শক্তির নির্বাচনপূর্ব বর্বরোচিত হামলায় চারটি প্রাণ নিভে গিয়েছিল। এরপর রাষ্ট্রের কাছে সর্বজনীন প্রত্যাশা ছিল প্রকৃত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করে আইনের কাছে সোপর্দ করা এবং দ্রুততার সঙ্গে শাস্তি নিশ্চিত করা। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ওই মামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আসামিদের মধ্যে দুজন অল্প সময়ের ব্যবধানে নিহত হলেন। এর ফলে দুই সন্দেহভাজন আসামি ও হামলায় নিহত ব্যক্তিদের শোকার্ত পরিবারের সদস্যরা কার্যত একই সমতলে এসে দাঁড়াতে পারেন। আর সেটা হলো ন্যায়বিচার না লাভ করার বোধ। এখন রাষ্ট্রের দিকে সন্দেহের তির।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছ থেকে এখনো সদুত্তর মেলেনি। বিএনপির নেতা গোলাম রাব্বানী ও ছাত্রদলের নেতা আতিকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। কে বা কারা হত্যা করেছে, সে বিষয়ে পুলিশের ভাষ্য নেই। অথচ এই দুই সন্দেহভাজনের মায়েরা অভিন্ন আক্ষেপ করে বলেছেন, তাঁদের ছেলেরা অপরাধ করে থাকলে বিচার তাঁদের প্রাপ্য ছিল। ‘বন্দুকযুদ্ধের’ খবর অন্তত একটি যুক্তিসংগত ধারণা সৃষ্টি করে। মেহেরপুরে জামায়াতের নেতা সাইফুল ইসলামের নিহত হওয়ার বিষয়ে পুলিশের কথিত ‘বন্দুকযুদ্ধের’ বয়ান মিলেছে। কিন্তু এর চেয়েও ভয়ানক হচ্ছে, কেউ উধাও হওয়ার পর তাঁর গুলিবিদ্ধ লাশের সন্ধান পাওয়া। নীলফামারীতে পুলিশ কেবলই দুজনের লাশ পেয়েছে। এর চেয়ে বেশি কিছু তাদের জানা নেই। পুলিশ প্রশাসন কোনো বিবৃতিও দেয়নি। তবে এভাবে নিহত ব্যক্তিদের বিষয়ে তাঁদের অতীত অপরাধের বৃত্তান্ত প্রকাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো আগের মতোই উৎসাহী। অন্যদিকে নির্জীব মানবাধিকার কমিশনও নীরব। সম্ভাব্য বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম বৃদ্ধির আশঙ্কায় আমরা উদ্বিগ্ন এবং এর পুনরাবৃত্তি রোধের দাবি জানাই।
No comments