পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা
পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)
দেশের প্রেসিডেন্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরকে দেয়া বার্ষিক
প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করে।
৯ই জানুয়ারি ইউজিসির চেয়ারম্যান
অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরীর নেতৃত্বে ওই প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। প্রচলিত
ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার পর ইউজিসি এ ধরনের সুপারিশ
করল। বর্তমান পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্রে ভুল ও প্রশ্নফাঁস হওয়ার মতো ঘটনাও
ঘটেছে। এমনকি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে ঘটনার জের ধরে একটি পাবলিক
বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন জনপ্রিয় শিক্ষক পদত্যাগও করেছিলেন। বর্তমান পরীক্ষা
পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য একপ্রকার যুদ্ধ করতে
হয়। কেউ কেউ ১০টি বা তার অধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিয়েও চান্স পান না।
কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য দ্বিতীয়বার পরীক্ষা দিতে হয়। তাতেও
চান্স না পেলে দু’টি বছর পিছিয়ে যেতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তির জন্য বিভিন্ন জায়গায় যেতে হয়। এক্ষেত্রে অর্থ ও শ্রম দু’টোই যায়।
সমপ্রতি গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আলোচনায় এলেও বড়
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিরোধিতার কারণে তা আলোর মুখ দেখেনি। এছাড়া এই পদ্ধতির
ভর্তি পরীক্ষার জের ধরে সমপ্রতি অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক
ইয়াসমিন হক শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেন।
পরে আলোচনা সাপেক্ষে বিষয়টি নিয়ে সমঝোতা করা হয়। আলোচনার পর তারা
বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রণালয়ও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা
করে। ইউজিসির প্রতিবেদনে বলা হয়- বর্তমানে দেশের উচ্চশিক্ষা
প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রথম বর্ষে ভর্তির প্রক্রিয়া পর্যালোচনার উপর কমিশন
গুরুত্ব আরোপ করে। ভর্তিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের জন্য চলমান প্রক্রিয়া অত্যন্ত
ব্যয়বহুল। ভর্তি পরীক্ষাসমূহ কেবলমাত্র বোর্ড পরীক্ষার একটি অতি সংক্ষিপ্ত
রূপ এবং এ পরীক্ষার গুণগতমান বর্তমানে প্রশ্নবিদ্ধ। একাধিক ক্ষেত্রে ভর্তি
পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে ভুল ধরা পড়েছে। এছাড়া প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার অভিযোগ
রয়েছে। বোর্ড পরীক্ষায় ভাল ফল অর্জনকারী শিক্ষার্থীরা এক ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত
পরীক্ষায় কোন কারণে ব্যর্থ হলে তারা কাঙ্ক্ষিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে
ব্যর্থ হয়। যা তাদের প্রতি অবিচার বলে কমিশন মনে করে। এছাড়া বর্তমান
পদ্ধতিতে বেশির ভাগ শিক্ষার্থীকে ৬-১০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায়
অংশ নিতে হয় এবং দীর্ঘসময় তাদের কোচিং সেন্টারের শরণাপন্ন হতে হয়। মানসিক
চাপ ও একই বিষয়বস্তু নিয়ে দীর্ঘকাল অধ্যয়নরত থাকার ফলে তাদের সৃজনশীলতা
বহুলাংশে হ্রাস পায়। এছাড়া ভর্তি পরীক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের যে সময় ব্যয় হয় তার পরিমাণও
উল্লেখযোগ্য। এই সময়টুকু শিক্ষকরা বিভিন্ন শিক্ষা কার্যক্রমের সঙ্গে
নিজেদের সম্পৃক্ত করতে পারেন। ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষা
প্রতিষ্ঠাসমূহের এবং সংশ্লিষ্ট শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অতিরিক্ত
আয়ের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয় বটে, তবে এই আয়ের নৈতিক বৈধতা প্রশ্নসাপেক্ষ।
কমিশন প্রচলিত ভর্তি পরীক্ষার বিকল্প উদ্ভাবন করে ভর্তি প্রক্রিয়ার আমূল
সংস্কারের সুপারিশ করছে ইউজিসি। তবে ইউজিসির এ সুপারিশ নিয়ে আপত্তি তুলেছে
শীর্ষ স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান
অনুষদের ডিন ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন,
ইউজিসির এ ধরনের সুপারিশ কাল্পনিক। পৃথিবীর কোথাও এ ধরনের পদ্ধতি নেই। তিনি
বলেন, প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা আলাদা স্বাতন্ত্র্য আছে। অধ্যাপক ফরিদ
উদ্দিন বলেন, বোর্ড পরীক্ষার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কোন
যৌক্তিকতা নেই। কেননা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের
সিলেবাস রয়েছে। অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন বলেন, অর্থ ব্যয়ের বিষয়ে কেন কথা বলা
হচ্ছে? আমরা একজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে একমাসে মাত্র ১২ টাকা বেতন নিই।
সেখানে প্রাইভেট বিশ্বদ্যিালয়ে বিভিন্ন নামে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা
নেয়। সেখানে ইউজিসি কোথায় থাকে। অনামিকা ভট্টাচার্য এ বছর ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে চান্স পেয়েছেন। তিনি এর আগে জগন্নাথ
বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং চট্টগ্রাম
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। তিনি প্রচলিত পদ্ধতিকেই
সমর্থন করেন। অনামিকা বলেন, একেকটা বিশ্ববিদ্যালয় একেকভাবে পরীক্ষা নেয়।
এতে শিক্ষার্থীদের মেধার বিকাশ হয়। একটা পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিয়ে মেধা
বিকাশের সুযোগ থাকবে না। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন,
বর্তমানে দেশে ৩৪টি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। কোন শিক্ষার্থী তার পছন্দ বিষয়ে
পড়তে চাইলে তার ১০-১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হয়। এতে
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হয়রানির শিকার হতে হয়। তাদের টাকা ব্যয় হয়। শ্রম ও
সময় ব্যয় হয়। এটা না করে গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করলে এতো সময় ও
অর্থ ব্যয় হবে না। তিনি বলেন, মানবিকের জন্য একটি, সামাজিক বিজ্ঞানের জন্য
একটি, বিজ্ঞানের জন্য একটি পরীক্ষা নিলেই হয়। অধ্যাপক চৌধুরী বলেন,
আমেরিকার বিশ্বদ্যিালয়গুলোতে এ ধরনের পদ্ধতি চালু রয়েছে। কোন শিক্ষার্থী
গ্র্যাজুয়েট রেকর্ড এক্সামিনেশনে (জিআরই) অংশ নিয়ে যে নম্বর পায় তা দিয়ে যে
কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারে।
No comments