দিল্লি-কেন্দ্রীয় সরকার মুখোমুখি
ক্ষমতার অধিকার ও তার পরিধিকে কেন্দ্র করে দিল্লির নবনির্বাচিত আম আদমি পার্টির (এএপি) সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্ব এমন অবস্থায় পৌঁছাল, যা অদৃষ্টপূর্ব। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যরা পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তার সাময়িক বরখাস্তের দাবিতে গতকাল সোমবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে ধরনায় বসতে গেলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়।
জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। সমর্থকদের রুখতে ওই এলাকার অন্তত পাঁচটি মেট্রো স্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে একটু দূরে রেল ভবনের সামনে ধরনা শুরু করেন কেজরিওয়ালসহ দিল্লির সব মন্ত্রী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে অস্বীকার করেন। কেজরিওয়ালও আগামী ১০ দিন ধরনাস্থল থেকে সরকার চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেজরিওয়ালের সরকার অভিযোগ করেছে, দিল্লির পুলিশ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অসৎ। তাই পুলিশের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে তিনি নারাজ। দ্বন্দ্বের সূত্রপাত চার দিন আগে। দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতী গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে খিড়কি এলাকায় বেশ কিছু বাড়িতে তল্লাশি চালাতে পুলিশকে চাপ দেন। তাঁর অভিযোগ, ওই এলাকায় আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশের লোকজন মাদক ও দেহব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। বাসিন্দারা তাদের আচরণে অতিষ্ঠ। দিল্লির মন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও পুলিশ কোনো ধরনের ওয়ারেন্ট ছাড়া তল্লাশি চালাতে অস্বীকার করে।
ক্ষুব্ধ মন্ত্রী সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। পুলিশও মন্ত্রীর বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ দাখিল করে। একই রাতে নারীকল্যাণমন্ত্রী রাখী বিড়লা নারী নির্যাতনের অভিযোগে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দেন। সেখানেও পুলিশ অসহযোগিতা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। দিল্লির উপরাজ্যপাল নাজিব জং ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে তদন্ত শেষ হওয়ার আগে পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রাজি নন। এর পরই দিল্লিবাসী গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে এক অদ্ভুত দৃশ্য দেখল। মুখ্যমন্ত্রীসহ পুরো মন্ত্রিসভা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে ধরনার দাবিতে অনড়। কিন্তু পুলিশও তাদের সেখানে যেতে দেবে না। পরে কেজরিওয়াল ও তাঁর সমর্থকেরা পাশের পার্কে ধরনায় বসলেন, ভাষণ দিলেন এবং আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা জানালেন। পাঁচ দিন পর প্রজাতন্ত্র দিবস। প্যারেড এখানেই। কেজরিওয়ালদের ধরনা তাই সরকারের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। এই লড়াইয়ের তিনটি দিক রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে, দিল্লি পুলিশের অধিকার কোন সরকারের কাছে থাকবে—কেন্দ্র, না রাজ্য? এটি দীর্ঘদিনের এক বিতর্ক।
দিল্লি দেশের রাজধানী বলে এখানকার পুলিশ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে। সিন্ধে সোমবার জানিয়ে দিয়েছেন, এই অধিকার তাঁরা ছাড়বেন না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে, মন্ত্রীর নির্দেশ অগ্রাহ্য করায় পুলিশের অভিযুক্ত কর্তাদের এখনই শাস্তি দেওয়া। এ ক্ষেত্রেও তদন্ত শেষ না হলে ব্যবস্থা নেওয়ার বিপক্ষে সিন্ধে। এএপি জানতে চায়, দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দেওয়ার অধিকার নির্বাচিত সরকারের আছে কি না। তৃতীয়টি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক আঙ্গিক। আফ্রিকার বেশ কিছু দেশের কিছু নাগরিকের বিরুদ্ধে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন আগে মাদকের সঙ্গে যুক্ত এক নাইজেরীয় যুবককে গোয়ায় পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় ভারত-নাইজেরিয়া কূটনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল। এবারও তেমন এক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিবৃতিও দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে দিল্লির সরকারের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের দ্বন্দ্ব এক অন্য মাত্রা পেয়েছে। দিল্লির আইনমন্ত্রী সোমনাথ ভারতী ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল কুমারকে ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ বলে সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন। কেজরিওয়ালও জানান, ১০ দিন রেল ভবনের পাশের পার্কে ধরনাস্থল থেকেই তাঁরা দিল্লির সরকার চালাবেন।
No comments