বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো বড় শক্তির হস্তক্ষেপ কাম্য নয় by মইনুল হোসেন
আমাদের
দেশপ্রেম, আমাদের শাসন করার যোগ্যতা, আমাদের সততা- সব কিছু নিয়েই
সংশয়-এটাই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের কথা। কিন্তু এটা তো হওয়ার কথা ছিল না।
নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে শাসক আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের
বিজয়ী হওয়ার যে সম্ভাবনা নেই, সেটা দেশের ভেতর ও বাইরের সব জনমত জরিপে
পরিষ্কার হয়ে গেছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সেই পরাজয়
স্বীকার করে নিতে প্রস্তুত নয়। আমাদের দলীয় রাজনীতিতে নির্বাচনে জয়লাভ করার
ক্ষেত্রে সরকার পরিচালনায় সততা কিংবা সুশাসনের ভালো গুণাবলী কোনো বিবেচ্য
বিষয় নয়। ক্ষমতায় এসে সুশাসনের নজির স্থাপন করে আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি
কোনো দলই নির্বাচনে বিজয় অর্জন করতে পারেনি। তাই জনগণের জনপ্রিয় ইচ্ছার
বিরুদ্ধে একতরফা ও পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন করে বিজয়ী হওয়ার আস্থা আওয়ামী লীগ
কোথা থেকে পাচ্ছে, তা নিয়ে জনমনে কৌতূহলের অন্ত নেই। এই অগণতান্ত্রিক ও
গণবিরোধী পরিকল্পনার পেছনে অবশ্যই বাইরের বড় দাদাদের হাত থাকার ব্যাপারে
সন্দেহ বাড়ছে। সরকারি প্রশাসনের সমর্থন আদায়ের জন্য সব রকম সুযোগ-সুবিধা
প্রদান করা হয়েছে। বেতন-ভাতা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। দুর্নীতি দমন আইন সংশোধন
করে তাদের দুর্নীতিমূলক কর্মকাণ্ডের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। সরকারের
কাছ থেকে অনুমতি না নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কোনো সরকারি কর্মচারীর
বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে না। জামায়াতে ইসলামীর নির্বাচনে অংশগ্রহণের
সুযোগ বাতিল করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ
দেয়া হয়নি দলটিকে।
এটা স্পষ্ট যে, ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ সামনে এগিয়ে যাবেই, কোনো বাধার তোয়াক্কা দলটি করবে না। একদলীয় নির্বাচনের পরিকল্পনা যারা করছেন, তাদের জন্য ব্যাপক জনমত বিরুদ্ধে থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ তারা নির্বাচন করছেন নিজেরাই ক্ষমতাসীন থেকে। নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে না হলে যে একতরফা নির্বাচনী ‘বিজয়’ হবে, যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না, সরকারকে নির্বাচনে বিজয়ী করার কারিগররা এ দিকটা বিবেচনায় নিতেও প্রস্তুত নন।
এ ধরনের নির্বাচন যে কোথাও বৈধতা পাবে না, এটা তারা উপলব্ধি করতে পারছে না, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এতটা বেপরোয়া, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। দেশের ভেতরে যেমন সরকার নিরন্তর জনগণের বিরোধিতার সম্মুখীন হবে, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিপাকে পড়বে। তারপরও সরকার শান্তিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান অসম্ভব করে তুলছে।
নিকটতম প্রতিবেশিতা ও ঘনিষ্ঠতার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আওয়ামী লীগ যে জনমতের তোয়াক্কা করছে না, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চাচ্ছে না, বিশেষ করে যখন দেশকে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের আবর্তে ঠেলে দেয়া হচ্ছে তখন ধারণা করা শুরু হয়েছে বাইরের কোনো শক্তি আওয়ামী লীগকে সাহায্য করতে উদগ্রীব।
কয়েক দিন আগে যারা ইটিভি টেলিভিশন চ্যানেলে টকশো দেখেছেন, তারা ঠিকই ধারণা করতে পেরেছেন যে সন্দেহের তীর ভারতের দিকেই রয়েছে এবং ভারতের বলেই আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে এই দুঃসাহসিক অভিযানে নেমেছে। সেদিনের টকশোর আলোচনায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একজন অধ্যাপক শ্রোতাদের বিশ্বাস করানোর জন্য জোরালো বক্তব্য দিলেন যে, ভারত প্রবলভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং আওয়ামী লীগ যা কিছু করছে তা ভারতের নির্দেশেই করছে। অধ্যাপক এতদূর পর্যন্ত বললেন যে, প্রধানমন্ত্রী নিজের ইচ্ছায় পদত্যাগ করতেও পারেন না। সেই সিদ্ধান্তের জন্য ভারতের মনোভাবের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
শুধু যে আলোচ্য প্রফেসর সাহেবই ভারতের ব্যাপারে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন তা নয়। কোনো কোনো কলামিস্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব সম্পর্কেও দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা রয়েছে এর সপক্ষে যে কেউ তাৎক্ষণিকভাবে লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক ইকনোমিস্টের লেখার উদাহরণ হাজির করেও বলতে পারেন। ভারতের ‘র’ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কী ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে, তার বিশদ বিবরণ কিছুদিন আগে সাপ্তাহিক পত্রিকাটি ছেপেছিল।
ভারতের একজন কলামিস্ট বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতকে সামরিক হস্তক্ষেপ করার পরামর্শ দিতেও আপত্তিকর মনে করেননি।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা কতটা নিবিড়ভাবে এখানে ও অন্যত্র বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অবলোকন করছেন, আমি এ লেখায় সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। বাংলাদেশে যা-কিছু ভুল-ভ্রান্তি করা হচ্ছে তার সব কিছুর জন্য আমি ভারতকে দোষারোপ করতে প্রস্তুত নই।
আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস তার অবস্থান পরিষ্কার ব্যাখ্যা করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের সহায়তা করেছে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে আমরা যাতে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারি সেটাই ভারত কামনা করে। অন্যান্য বন্ধু দেশের কাছ থেকেও প্রয়োজনে আমরা অনুরূপ সাহায্য-সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। আমাদের বিদেশী বন্ধুরা যদি কোনো পক্ষাবলম্বন না করেন, আমাদের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে আমাদের রাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহ ও সম্পৃক্ততা অনুভব করেন, তবে আমি তার মধ্যে দোষের কিছু দেখি না। তবে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছাই যাতে সর্বাধিক গুরুত্ব পায়, সেটা সুস্পষ্টভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
গত ১১ নভেম্বর সোমবার ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রে রিপোর্ট বেরিয়েছে, ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শান্তিপূর্ণভাবে সংলাপের মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসন করাই সর্বোত্তম উপায়।’ মুখপাত্র আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করবেন। ভারত বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সমর্থন করে।’
ইতিমধ্যে এক অবাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে গেছে। শেখ হাসিনা আলেম-ওলামাদের এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব চান না, তিনি শান্তি চান, জনগণের নিরাপত্তা চান। হরতাল চলাকালে সহিংস ঘটনায় জীবনহানির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এ বক্তব্য দেন।
এখন সবাই গভীর আগ্রহ নিয়ে দেখতে চান তিনি কতটা আন্তরিকভাবে এ কথা বলেছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি থেকে যথেষ্ট ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে তারা হরতাল করবে না। বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তার নিজের ঘোষণা অনুসারে পদত্যাগ করলে বর্তমান সংকট কেটে যাবে, সমঝোতা সম্ভব হবে।
পরবর্তী সময়ে বিরোধীদলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া আরও পরিষ্কারভাবে জোর দিয়ে বলেছেন, যে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন সেই মুহূর্তে হরতাল প্রত্যাহার করা হবে। একশ্রেণীর পত্রিকায় এসেছে, দু’জন রাজনৈতিক নেতা- বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও মেজর (অব.) মান্নান সোমবার রাতে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের এ কথা তিনি জোর দিয়ে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার কথা রেখে পদত্যাগ করলে বিরোধী দল সহিংস রাজনীতি পরিহার করতে বাধ্য হবে। সমঝোতা ও রাজনীতির শান্তিপূর্ণ যাত্রা শুরু হওয়ার পথে বড় ধরনের বাধা থাকবে না। শান্তির জন্যই তো প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়ার কথা বলেছেন। ধ্বংসের রাজনীতি থেকে দেশকে রক্ষার রাজনৈতিক দায়িত্ব রাজনীতিকদের পালন করতে হবে।
এখন জাতি দুই নেত্রীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে এটা দেখার জন্য যে, কে বেশি আন্তরিক জনজীবনের শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যাপারে, কে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় এবং কে তার অঙ্গীকার রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীকে প্রমাণ করতে হবে, তার অভিযাত্রা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নয়।
ইসলামী জঙ্গিবাদের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। পশ্চিমী দুনিয়ায় পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিচিতি মধ্যপন্থী মুসলিম দেশ হিসেবে। মালয়েশিয়ার তুলনায় আমরা অধিকতর মধ্যপন্থী। আমাদের দেশে মৌলবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের এখানকার রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতা লালন করে চলেছে প্রধান দুটি দল- যার কোনোটিই ইসলামী দল নয়।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন : আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
এটা স্পষ্ট যে, ক্ষমতায় থাকার জন্য আওয়ামী লীগ সামনে এগিয়ে যাবেই, কোনো বাধার তোয়াক্কা দলটি করবে না। একদলীয় নির্বাচনের পরিকল্পনা যারা করছেন, তাদের জন্য ব্যাপক জনমত বিরুদ্ধে থাকার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়, কারণ তারা নির্বাচন করছেন নিজেরাই ক্ষমতাসীন থেকে। নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে না হলে যে একতরফা নির্বাচনী ‘বিজয়’ হবে, যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা থাকবে না, সরকারকে নির্বাচনে বিজয়ী করার কারিগররা এ দিকটা বিবেচনায় নিতেও প্রস্তুত নন।
এ ধরনের নির্বাচন যে কোথাও বৈধতা পাবে না, এটা তারা উপলব্ধি করতে পারছে না, আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব এতটা বেপরোয়া, এটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। দেশের ভেতরে যেমন সরকার নিরন্তর জনগণের বিরোধিতার সম্মুখীন হবে, তেমনি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও বিপাকে পড়বে। তারপরও সরকার শান্তিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান অসম্ভব করে তুলছে।
নিকটতম প্রতিবেশিতা ও ঘনিষ্ঠতার কারণে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক অত্যন্ত স্পর্শকাতর। আওয়ামী লীগ যে জনমতের তোয়াক্কা করছে না, বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে চাচ্ছে না, বিশেষ করে যখন দেশকে দীর্ঘমেয়াদি সংঘাতের আবর্তে ঠেলে দেয়া হচ্ছে তখন ধারণা করা শুরু হয়েছে বাইরের কোনো শক্তি আওয়ামী লীগকে সাহায্য করতে উদগ্রীব।
কয়েক দিন আগে যারা ইটিভি টেলিভিশন চ্যানেলে টকশো দেখেছেন, তারা ঠিকই ধারণা করতে পেরেছেন যে সন্দেহের তীর ভারতের দিকেই রয়েছে এবং ভারতের বলেই আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিয়ে এই দুঃসাহসিক অভিযানে নেমেছে। সেদিনের টকশোর আলোচনায় আন্তর্জাতিক সম্পর্কের একজন অধ্যাপক শ্রোতাদের বিশ্বাস করানোর জন্য জোরালো বক্তব্য দিলেন যে, ভারত প্রবলভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং আওয়ামী লীগ যা কিছু করছে তা ভারতের নির্দেশেই করছে। অধ্যাপক এতদূর পর্যন্ত বললেন যে, প্রধানমন্ত্রী নিজের ইচ্ছায় পদত্যাগ করতেও পারেন না। সেই সিদ্ধান্তের জন্য ভারতের মনোভাবের জন্য অপেক্ষা করতে হয়।
শুধু যে আলোচ্য প্রফেসর সাহেবই ভারতের ব্যাপারে এ ধরনের মন্তব্য করেছেন তা নয়। কোনো কোনো কলামিস্ট বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব সম্পর্কেও দুশ্চিন্তা ব্যক্ত করেছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা রয়েছে এর সপক্ষে যে কেউ তাৎক্ষণিকভাবে লন্ডনভিত্তিক সাপ্তাহিক ইকনোমিস্টের লেখার উদাহরণ হাজির করেও বলতে পারেন। ভারতের ‘র’ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কী ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে, তার বিশদ বিবরণ কিছুদিন আগে সাপ্তাহিক পত্রিকাটি ছেপেছিল।
ভারতের একজন কলামিস্ট বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতকে সামরিক হস্তক্ষেপ করার পরামর্শ দিতেও আপত্তিকর মনে করেননি।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে ভারতের সম্পৃক্ততা কতটা নিবিড়ভাবে এখানে ও অন্যত্র বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অবলোকন করছেন, আমি এ লেখায় সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। বাংলাদেশে যা-কিছু ভুল-ভ্রান্তি করা হচ্ছে তার সব কিছুর জন্য আমি ভারতকে দোষারোপ করতে প্রস্তুত নই।
আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশের ভারতীয় দূতাবাস তার অবস্থান পরিষ্কার ব্যাখ্যা করে দিয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারত আমাদের সহায়তা করেছে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে আমরা যাতে শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে পারি সেটাই ভারত কামনা করে। অন্যান্য বন্ধু দেশের কাছ থেকেও প্রয়োজনে আমরা অনুরূপ সাহায্য-সহযোগিতা প্রত্যাশা করি। আমাদের বিদেশী বন্ধুরা যদি কোনো পক্ষাবলম্বন না করেন, আমাদের উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে আমাদের রাজনীতির ব্যাপারে আগ্রহ ও সম্পৃক্ততা অনুভব করেন, তবে আমি তার মধ্যে দোষের কিছু দেখি না। তবে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছাই যাতে সর্বাধিক গুরুত্ব পায়, সেটা সুস্পষ্টভাবে নিশ্চিত করতে হবে।
গত ১১ নভেম্বর সোমবার ঢাকাস্থ ভারতীয় দূতাবাসের মুখপাত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদপত্রে রিপোর্ট বেরিয়েছে, ‘বাংলাদেশে বিদ্যমান বহুদলীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শান্তিপূর্ণভাবে সংলাপের মাধ্যমে মতপার্থক্য নিরসন করাই সর্বোত্তম উপায়।’ মুখপাত্র আরও ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই নির্ধারণ করবেন। ভারত বাংলাদেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠান সমর্থন করে।’
ইতিমধ্যে এক অবাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটে গেছে। শেখ হাসিনা আলেম-ওলামাদের এক সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রিত্ব চান না, তিনি শান্তি চান, জনগণের নিরাপত্তা চান। হরতাল চলাকালে সহিংস ঘটনায় জীবনহানির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এ বক্তব্য দেন।
এখন সবাই গভীর আগ্রহ নিয়ে দেখতে চান তিনি কতটা আন্তরিকভাবে এ কথা বলেছেন। প্রধান বিরোধী দল বিএনপি থেকে যথেষ্ট ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করলে তারা হরতাল করবে না। বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তার নিজের ঘোষণা অনুসারে পদত্যাগ করলে বর্তমান সংকট কেটে যাবে, সমঝোতা সম্ভব হবে।
পরবর্তী সময়ে বিরোধীদলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া আরও পরিষ্কারভাবে জোর দিয়ে বলেছেন, যে মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন সেই মুহূর্তে হরতাল প্রত্যাহার করা হবে। একশ্রেণীর পত্রিকায় এসেছে, দু’জন রাজনৈতিক নেতা- বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ও মেজর (অব.) মান্নান সোমবার রাতে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তাদের এ কথা তিনি জোর দিয়ে বলেন।
প্রধানমন্ত্রী তার কথা রেখে পদত্যাগ করলে বিরোধী দল সহিংস রাজনীতি পরিহার করতে বাধ্য হবে। সমঝোতা ও রাজনীতির শান্তিপূর্ণ যাত্রা শুরু হওয়ার পথে বড় ধরনের বাধা থাকবে না। শান্তির জন্যই তো প্রধানমন্ত্রী পদ ছাড়ার কথা বলেছেন। ধ্বংসের রাজনীতি থেকে দেশকে রক্ষার রাজনৈতিক দায়িত্ব রাজনীতিকদের পালন করতে হবে।
এখন জাতি দুই নেত্রীর দিকে তাকিয়ে রয়েছে এটা দেখার জন্য যে, কে বেশি আন্তরিক জনজীবনের শান্তি ও নিরাপত্তার ব্যাপারে, কে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় এবং কে তার অঙ্গীকার রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রীকে প্রমাণ করতে হবে, তার অভিযাত্রা ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার জন্য নয়।
ইসলামী জঙ্গিবাদের ভয় দেখিয়ে লাভ হবে না। পশ্চিমী দুনিয়ায় পর্যন্ত বাংলাদেশের পরিচিতি মধ্যপন্থী মুসলিম দেশ হিসেবে। মালয়েশিয়ার তুলনায় আমরা অধিকতর মধ্যপন্থী। আমাদের দেশে মৌলবাদ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমাদের এখানকার রাজনৈতিক নিষ্ঠুরতা লালন করে চলেছে প্রধান দুটি দল- যার কোনোটিই ইসলামী দল নয়।
ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন : আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
No comments