বিএনপি-জামায়াতকে ঘন ঘন হরতাল দিয়ে সহিংসতার আশ্রয় নিতে হচ্ছে কেন? by বদরুদ্দীন উমর
বাংলাদেশের
শাসক শ্রেণীর প্রধান দুই দলের পারস্পরিক দ্বন্দ্ব ও শত্র“তামূলক রাজনৈতিক
সম্পর্কের কারণে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হরতাল এখন জনগণের জীবনে এক
অভিশাপের মতো নেমে এসেছে। এ অভিশপ্ত হরতালের কারণে জনগণের জীবনে কত রকম
বিপদ ঘটছে, জনগণের জীবন কতভাবে বিপর্যস্ত হচ্ছে, তার বিবরণ দেয়ার প্রয়োজন
এখানে নেই। এটা সবারই জানা। হরতাল আমাদের দেশের রাজনীতিতে আন্দোলনের এক
পরিচিত কৌশল। এর ব্যবহার প্রাক-বাংলাদেশ বা পাকিস্তানি আমলে তেমন বেশি না
হলেও আশির দশক থেকে হরতালের ব্যবহার নতুনভাবে শুরু হয়ে নব্বইয়ের দশক থেকে
দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এরশাদের শাসন শেষ হওয়ার পর ১৯৯১ সালে সংসদীয় ব্যবস্থা
চালু হওয়ার কিছুদিন পর থেকেই আওয়ামী লীগ কর্তৃক বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে
সংসদ বর্জনসহ হরতালের ব্যবহার বেশ ঘন ঘন হতে থাকে। এই প্রক্রিয়ার
ধারাবাহিকতায় হরতাল এখন যে বিরোধী দলের সরকারবিরোধী আন্দোলনের প্রায়
একমাত্র কৌশলে পরিণত হয়েছে তা-ই নয়, এর চরিত্রেরও গুরুতর পরিবর্তন ঘটেছে।
এই পরিবর্তন শাসক শ্রেণীর সংকট ঘনীভূত হতে থাকা এবং তাদের শ্রেণীগত অবস্থান
ভেঙে পড়তে থাকার সঙ্গেই সম্পর্কিত। শাসক শ্রেণীর সংকট ভারত, পাকিস্তান,
নেপাল ইত্যাদি দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোতেও আছে। কিন্তু এ দেশগুলোতে
বাংলাদেশের মতো এত বেশি হরতালের ব্যবহার দেখা যায় না। ভারত, বিশেষত
পশ্চিমবঙ্গে এবং নেপালে বন্ধ নামে পরিচিত হরতাল মাঝে মাঝে দেখা যায়।
পাকিস্তানে হরতাল দেখাই যায় না। কিন্তু এসব দেশে রাজনৈতিক আন্দোলন নেই বা
কম আছে এমন নয়। শ্রেণীগত অবস্থানের চরম দুর্বলতা এবং দেউলিয়াপনার জন্যই
বাংলাদেশে হরতালের ব্যবহার এখন অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক ছাড়িয়ে গেছে।
শুধু এর ব্যাপকতা বৃদ্ধি পেয়েছে তা-ই নয়, হরতালের ধরন ও চরিত্রের মধ্যেও
এমন পরিবর্তন এসেছে যাকে ভয়াবহ ছাড়া আর কিছু বলা যায় না।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন অর্থাৎ প্রায় ৬ মাস হরতাল দিয়েছিল। ২০০৬ সালে হরতালের সময় লগিবৈঠা ইত্যাদি নিয়ে তারা রাস্তায় নেমে তাণ্ডব করেছিল এবং প্রকাশ্য দিবালোকে পল্টন এলাকায় খুনখারাবি করেছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট এখন আওয়ামী লীগ জোট সরকারের বিরুদ্ধে হরতালের পর হরতাল দিচ্ছে এবং রাস্তায় এমনভাবে সহিংসতা করছে যার কোনো উদাহরণ এদেশে নেই। বস্তুতপক্ষে অন্য কোনো দেশেও এর কাছাকাছি কিছু নেই। কোনো দেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটা এক অদৃষ্টপূর্ব ব্যাপার।
এখন হরতালের চরিত্রের মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তাতে এগুলো কার বিরুদ্ধে এটা বোঝা মুশকিল। আগে হরতালের সময় ক্ষেত্রবিশেষে পিকেটিং হতো, কিন্তু এখন যেভাবে সহিংসতা দেখা যায় তার কোনো কিছুই তখন দেখা যেত না। এখনকার হরতালের দিকে তাকালে স্পষ্টই বোঝা যাবে যে, এগুলোর ঘোষিত উদ্দেশ্য সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা হলেও বস্তুত এর শিকার হচ্ছেন সাধারণ লোক।
বিএনপি-জামায়াতের দ্বারা পরিচালিত এ হরতালের সহিংসতা এখন শুধু হরতালের দিনগুলোতেই হচ্ছে না। এটা শুরু হচ্ছে হরতালের আগের দিন থেকেই। বাস, স্কুটার, প্রাইভেট গাড়ি, এমনকি রিকশার ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এগুলোতে ককটেল মেরে বা পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে শুধু জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে তা-ই নয়, নিরীহ যাত্রীদেরও হত্যা করা হচ্ছে। তারা প্রাণে মারা পড়ছেন, তাদের শরীর আগুনে ঝলসে গিয়ে তারা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হচ্ছেন, তাদের পারিবারিক জীবন ধ্বংস হচ্ছে। একটানা হরতালের সময় কাজের অভাবে দিন আনা দিন খাওয়া লোকরা সপরিবারে উপোষ করছেন। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব রকম জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি হয়ে চোর, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ছাড়া অন্য সবার জীবনকেই বিপর্যস্ত করছে। সব কিছু ছাড়িয়ে সহিংসতাই হরতালের সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে জনজীবনের জন্য সব থেকে বিপজ্জনক ব্যাপার।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে হরতাল নয়, হরতালের সময় এ ধরনের বেপরোয়া সহিংসতার আশ্রয় বিএনপি-জামায়াত জোট কেন নিচ্ছে? এর ফলে জনজীবনে যে বিপর্যয় ঘটছে এ নিয়ে সাধারণভাবে জনগণের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে, মানবাধিকার সংস্থা ইত্যাদিতে দেখা যাচ্ছে। নিহত-আহতদের ওপর রিপোর্ট সংবাদপত্র ও টিভিতে প্রচার হচ্ছে। বিদেশেও এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। কিন্তু এসবের কোনো কিছুর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে কেন নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিএনপি-জামায়াত এভাবে হরতালের ডাক দিয়ে ব্যাপক আকারে সহিংসতা ও নৃশংসতা করছে? হরতাল তারা করতে পারে। একটানা হরতালও তারা করতে পারে। কিন্তু হরতালে এ সহিংস আচরণ কেন করতে হচ্ছে? হরতাল দিয়ে সাধারণ নিরীহ মানুষের ওপর কেন এভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে? লক্ষ্য করার বিষয় যে, হরতালের সময় এভাবে যে সহিংসতা হচ্ছে, যে নির্মম কাণ্ডকারখানা চলছে তার বিরুদ্ধে হরতাল দেনেওয়ালা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে, তাদের নেতৃত্বের থেকে একটি বাক্যও শোনা যাচ্ছে না! এর অর্থ কি এই নয় যে, হরতালের সময় এ সহিংসতায় তাদের সমর্থন আছে? শুধু তা-ই নয়, এটা বলা কি অতিরিক্ত বা অসঙ্গত হবে যে, ইচ্ছাকৃতভাবেই এই নৃশংসতা করা হচ্ছে? যেভাবে হরতালের সময়কার সহিংসতা ও নৃশংসতা সম্পর্কে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্ব নীরব থাকছে এবং তা বন্ধ করার কোনো চেষ্টাই করছে না, তার থেকে এই সিদ্ধান্ত কি অযৌক্তিক? তারা কি এজন্য এ ব্যাপারে নিশ্চুপ যে, রাস্তায় যারা হরতালের সময় সহিংস তাণ্ডব করছে, তাদের ওপর এই দুই দলের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই? এর সপক্ষে যুক্তি খাড়া করার মতো কিছু নেই। সেটা থাকত যদি এই দুই দলের নেতৃত্ব এ সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতেন, এটা বন্ধের জন্য নিজেদের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাতেন। সে রকম কিছুই হচ্ছে না। উপরন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তারা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই এ কাজ করছেন এবং রাস্তায় তাণ্ডবকারীদের হাতে অস্ত্রশস্ত্রের জোগান দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি ধনিক শ্রেণীর রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমিতির সময় টাকা-পয়সা দিয়ে লোক ভাড়া করে নিজেদের সভা-সমাবেশে জড়ো করে। এখন কি তাহলে এভাবে হরতালের সময় ভাড়া করা লোক দিয়ে রাস্তায় সন্ত্রাস করা হচ্ছে? যেভাবে এবং যেসব লক্ষ্যবস্তুর ওপর ককটেল ছোড়া হচ্ছে, গাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে, সাধারণ পথচারীর ওপর বোমা মারা হচ্ছে তার থেকে বোঝা যায়, যারা এ কাজ করছে তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মী নয়। তারা ভাড়া করা লোক। এই ভাড়া করা লোক দিয়েই এখন হরতাল ‘সফল’ করার চেষ্টা হচ্ছে!!
এখানে বলা দরকার যে, কোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য, কোনো গণতান্ত্রিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য হরতাল দিলে তাতে জনগণের সমর্থন থাকার কথা। জনগণের সমর্থন থাকলে হরতাল সফল করার জন্য রাস্তায় সহিংস তাণ্ডবের প্রয়োজন হয় না। সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে হরতাল ‘সফল’ করার জন্য জনগণকে বাধ্য করার প্রশ্ন ওঠে না। তারা নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতালে অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে আসেন, অতীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে যেভাবে দেখা গেছে। এখন মূলত দেখা যাচ্ছে যে, জনগণের মধ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে, তাদের চুরি, ঘুষখোরী, দুর্নীতি, শোষণ, নির্যাতন ইত্যাদির বিরুদ্ধে ব্যাপক ও গভীর ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে বিএনপির-জামায়াত জোট যেভাবে আন্দোলন করছে তার প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই। তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চান, কিন্তু এ ধরনের আন্দোলন তারা চান না। এটাই মূল কারণ যে জন্য হরতাল সফল করার লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াত জোটকে রাস্তায় সহিংসতার আশ্রয় নিতে হচ্ছে।
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন অর্থাৎ প্রায় ৬ মাস হরতাল দিয়েছিল। ২০০৬ সালে হরতালের সময় লগিবৈঠা ইত্যাদি নিয়ে তারা রাস্তায় নেমে তাণ্ডব করেছিল এবং প্রকাশ্য দিবালোকে পল্টন এলাকায় খুনখারাবি করেছিল। বিএনপি-জামায়াত জোট এখন আওয়ামী লীগ জোট সরকারের বিরুদ্ধে হরতালের পর হরতাল দিচ্ছে এবং রাস্তায় এমনভাবে সহিংসতা করছে যার কোনো উদাহরণ এদেশে নেই। বস্তুতপক্ষে অন্য কোনো দেশেও এর কাছাকাছি কিছু নেই। কোনো দেশে রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এটা এক অদৃষ্টপূর্ব ব্যাপার।
এখন হরতালের চরিত্রের মধ্যে যে পরিবর্তন ঘটেছে, তাতে এগুলো কার বিরুদ্ধে এটা বোঝা মুশকিল। আগে হরতালের সময় ক্ষেত্রবিশেষে পিকেটিং হতো, কিন্তু এখন যেভাবে সহিংসতা দেখা যায় তার কোনো কিছুই তখন দেখা যেত না। এখনকার হরতালের দিকে তাকালে স্পষ্টই বোঝা যাবে যে, এগুলোর ঘোষিত উদ্দেশ্য সরকারের নীতি ও কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা হলেও বস্তুত এর শিকার হচ্ছেন সাধারণ লোক।
বিএনপি-জামায়াতের দ্বারা পরিচালিত এ হরতালের সহিংসতা এখন শুধু হরতালের দিনগুলোতেই হচ্ছে না। এটা শুরু হচ্ছে হরতালের আগের দিন থেকেই। বাস, স্কুটার, প্রাইভেট গাড়ি, এমনকি রিকশার ওপর আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এগুলোতে ককটেল মেরে বা পেট্রল ঢেলে আগুন দিয়ে শুধু জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে তা-ই নয়, নিরীহ যাত্রীদেরও হত্যা করা হচ্ছে। তারা প্রাণে মারা পড়ছেন, তাদের শরীর আগুনে ঝলসে গিয়ে তারা সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হচ্ছেন, তাদের পারিবারিক জীবন ধ্বংস হচ্ছে। একটানা হরতালের সময় কাজের অভাবে দিন আনা দিন খাওয়া লোকরা সপরিবারে উপোষ করছেন। খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব রকম জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি হয়ে চোর, ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ ছাড়া অন্য সবার জীবনকেই বিপর্যস্ত করছে। সব কিছু ছাড়িয়ে সহিংসতাই হরতালের সময় হয়ে দাঁড়িয়েছে জনজীবনের জন্য সব থেকে বিপজ্জনক ব্যাপার।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে হরতাল নয়, হরতালের সময় এ ধরনের বেপরোয়া সহিংসতার আশ্রয় বিএনপি-জামায়াত জোট কেন নিচ্ছে? এর ফলে জনজীবনে যে বিপর্যয় ঘটছে এ নিয়ে সাধারণভাবে জনগণের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক মহলে, মানবাধিকার সংস্থা ইত্যাদিতে দেখা যাচ্ছে। নিহত-আহতদের ওপর রিপোর্ট সংবাদপত্র ও টিভিতে প্রচার হচ্ছে। বিদেশেও এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হচ্ছে। কিন্তু এসবের কোনো কিছুর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে কেন নিজেদের রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিএনপি-জামায়াত এভাবে হরতালের ডাক দিয়ে ব্যাপক আকারে সহিংসতা ও নৃশংসতা করছে? হরতাল তারা করতে পারে। একটানা হরতালও তারা করতে পারে। কিন্তু হরতালে এ সহিংস আচরণ কেন করতে হচ্ছে? হরতাল দিয়ে সাধারণ নিরীহ মানুষের ওপর কেন এভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে? লক্ষ্য করার বিষয় যে, হরতালের সময় এভাবে যে সহিংসতা হচ্ছে, যে নির্মম কাণ্ডকারখানা চলছে তার বিরুদ্ধে হরতাল দেনেওয়ালা বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে, তাদের নেতৃত্বের থেকে একটি বাক্যও শোনা যাচ্ছে না! এর অর্থ কি এই নয় যে, হরতালের সময় এ সহিংসতায় তাদের সমর্থন আছে? শুধু তা-ই নয়, এটা বলা কি অতিরিক্ত বা অসঙ্গত হবে যে, ইচ্ছাকৃতভাবেই এই নৃশংসতা করা হচ্ছে? যেভাবে হরতালের সময়কার সহিংসতা ও নৃশংসতা সম্পর্কে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্ব নীরব থাকছে এবং তা বন্ধ করার কোনো চেষ্টাই করছে না, তার থেকে এই সিদ্ধান্ত কি অযৌক্তিক? তারা কি এজন্য এ ব্যাপারে নিশ্চুপ যে, রাস্তায় যারা হরতালের সময় সহিংস তাণ্ডব করছে, তাদের ওপর এই দুই দলের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই? এর সপক্ষে যুক্তি খাড়া করার মতো কিছু নেই। সেটা থাকত যদি এই দুই দলের নেতৃত্ব এ সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলতেন, এটা বন্ধের জন্য নিজেদের কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানাতেন। সে রকম কিছুই হচ্ছে না। উপরন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, তারা তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ইচ্ছাকৃতভাবেই এ কাজ করছেন এবং রাস্তায় তাণ্ডবকারীদের হাতে অস্ত্রশস্ত্রের জোগান দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি ইত্যাদি ধনিক শ্রেণীর রাজনৈতিক দলগুলো সভা-সমিতির সময় টাকা-পয়সা দিয়ে লোক ভাড়া করে নিজেদের সভা-সমাবেশে জড়ো করে। এখন কি তাহলে এভাবে হরতালের সময় ভাড়া করা লোক দিয়ে রাস্তায় সন্ত্রাস করা হচ্ছে? যেভাবে এবং যেসব লক্ষ্যবস্তুর ওপর ককটেল ছোড়া হচ্ছে, গাড়িতে আগুন দেয়া হচ্ছে, সাধারণ পথচারীর ওপর বোমা মারা হচ্ছে তার থেকে বোঝা যায়, যারা এ কাজ করছে তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মী নয়। তারা ভাড়া করা লোক। এই ভাড়া করা লোক দিয়েই এখন হরতাল ‘সফল’ করার চেষ্টা হচ্ছে!!
এখানে বলা দরকার যে, কোনো গণতান্ত্রিক কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য, কোনো গণতান্ত্রিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য হরতাল দিলে তাতে জনগণের সমর্থন থাকার কথা। জনগণের সমর্থন থাকলে হরতাল সফল করার জন্য রাস্তায় সহিংস তাণ্ডবের প্রয়োজন হয় না। সহিংসতার আশ্রয় নিয়ে হরতাল ‘সফল’ করার জন্য জনগণকে বাধ্য করার প্রশ্ন ওঠে না। তারা নিজেরাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে হরতালে অংশগ্রহণ করতে এগিয়ে আসেন, অতীতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে যেভাবে দেখা গেছে। এখন মূলত দেখা যাচ্ছে যে, জনগণের মধ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে, তাদের চুরি, ঘুষখোরী, দুর্নীতি, শোষণ, নির্যাতন ইত্যাদির বিরুদ্ধে ব্যাপক ও গভীর ক্ষোভ থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে বিএনপির-জামায়াত জোট যেভাবে আন্দোলন করছে তার প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই। তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন চান, কিন্তু এ ধরনের আন্দোলন তারা চান না। এটাই মূল কারণ যে জন্য হরতাল সফল করার লক্ষ্যে বিএনপি-জামায়াত জোটকে রাস্তায় সহিংসতার আশ্রয় নিতে হচ্ছে।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
No comments