গত কুড়ি বছরের প্রতিটি দিন আমি নিজ দেশে ফেরার চেষ্টা করেছি- তসলিমা নাসরিন
গতকাল ছিল আলোচিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের
জন্মদিন। ১৯৯৪ সালের আগস্ট মাস থেকে তিনি নির্বাসিত জীবনযাপন করছেন বিশ্বের
বিভিন্ন দেশে। জন্মদিন উপলক্ষে চ্যানেল আইতে গতকাল সমপ্রচার হয় তার
সাক্ষাৎকার।
মুঠোফোনে নেয়া এ সাক্ষাৎকারে প্রতিবেদক সঞ্জয়
চাকীর সঙ্গে কথায় কথায় উঠে এসেছে তার দেশে ফেরার আকুতি এবং দেশে ঢুকতে না
পারার ক্ষোভ। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত মানবজমিন পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো
: জন্মদিনের শুভেচ্ছা আপনাকে।
- অনেক ধন্যবাদ।
: জন্মদিনে আপনি কি বলবেন পাঠকদের জন্য।
- দেশের মানুষের জন্য, পাঠকের জন্য তেমন কোন বক্তব্য নেই। আমি এমন বক্তব্য কখনও দেই না। আমার যা বলার সবটাই বইতে লেখার চেষ্টা করি। জানি না দেশে আমার বই বের হয় কিনা। আমি জানি পাঠক এখনও আছেন, কিন্তু বই প্রকাশ হচ্ছে না। কারণ, আমার বই প্রকাশ করতে প্রকাশকরা ভয় পান। ফলে পাইরেটেড/নকল এডিশনের ওপর মানুষকে নির্ভর করতে হয়।
: জন্মদিন উপলক্ষে আজ আপনার শুভাকাঙক্ষী-পাঠকরা ঢাকায় মানববন্ধন করছেন, আপনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
- দেশটা আমাকে ভুলেই গেছে বলে জানতাম। আজ প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেছে আমি দেশে নেই। কিন্তু এ নিয়ে খুব বেশি প্রতিবাদ তো হয়নি কখনও। আমাকে দেশ থেকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়া হলো, ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আজ এতোকাল পর কিছু মানুষের বোধোদয় হয়েছে, প্রতিবাদ করছে। আমাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছে। ভাবতে ভালই লাগছে। হয়তো একটু দেরিতে হলেও মানুষের বোধোদয় হয়েছে। আমি ভেবেছি ওই দেশে (বাংলাদেশ) কখনও প্রতিবাদ হয় না। কেউ প্রতিবাদ করে না। আমার জন্য নয়, যে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ কেউ করে বলে মনে হয় না। সেই অবস্থান থেকে আজ খুব ভাল লাগছে, এমন দিনে আমার ফেলে আসা শহরে আমার জন্য কেউ কেউ মানববন্ধন করছেন, আমাকে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানাচ্ছেন। সত্যি সত্যি ভাল লাগছে।
: এখনও এই দেশে আপনার পাঠকের সংখ্যা অনেক। কিন্তু আপনার বইতো সে অর্থে প্রকাশ পাচ্ছে না।
- পাঠক আছেন, সেটা অনুভব করতে পারি। তবে সেই পাঠকরা সত্যিকারের আমার বই পড়তে পারেন কিনা, এ ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। অনেক বইয়ের নাম শুনি, যেটা আমার বই নয়। অন্যের বই, অথচ আমার নাম দিয়ে বিক্রি হচ্ছে। বিচ্ছিরি কিছু বই বিচ্ছিরি কিছু নামের বই বিক্রি হচ্ছে আমার নামে। এসব দেখে-শুনে খুব কষ্ট পাই। ফলে আমার সত্যিকারের বই সত্যিকারের পাঠকদের হাতে যাচ্ছে কিনা, যথেষ্ট সন্দেহ আছে। একবার নিউ ইয়র্কের এক বইয়ের দোকানে গিয়ে দেখেছি আমার নামে বই। উল্টে দেখি লেখাটা আমার নয়। শুধু নামটা আমার। এমনটা হরহামেশা বাংলাদেশে হচ্ছে। অথচ এসবের প্রতিবাদ করার মানুষ নেই। এসব নিয়ে কারও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। একবার কলকাতায় আমার একটা বই ব্যান্ড (নিষিদ্ধ) হয়েছে। এরপর একটা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য মামলা করেছে। সেই বই হাইকোর্ট মুক্তি দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে এমন কিছু হলো না আজও। বাংলাদেশের দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সবই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
: প্রায় ২০ বছর আপনি দেশের বাইরে নির্বাসিত। আপনি কি তেমন কোন উদ্যোগ নিয়েছেন দেশে ফেরার জন্য? এখন কোথায় কি অবস্থায় আছেন।
- বাংলাদেশের কোন এম্বেসি আমাকে ভিসা দেয় না। কারণ, গভর্নমেন্টের নিষেধ আছে। আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউ করছি না আজ কুড়ি বছর ধরে। আমি বিশ্বের এমন কোন বাংলাদেশী এম্বেসি নেই, যেখানে যাইনি। আমেরিকা, জার্মান, ভারত, ফ্রান্স, সুইডেন, আমেরিকাসহ বিশ্বের সব বাংলাদেশী এম্বেসিতে অনুনয়-বিনয় করেছি আমাকে ভিসা দেয়ার জন্য। তারা সবাই বিনয়ের সঙ্গে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সবাই বলেছেন, ‘সরকার চায় না আপনি দেশে যান’। আমি বলেছি একথাটি আপনারা আমাকে লিখে দিন। তারা সেটাও দিচ্ছে না। গেল কুড়িটা বছর আমি দেখেছি খালেদা সরকার, হাসিনা সরকার, এমনকি অন্তর্বর্তীকালীন জরুরি সরকারও চায় না আমি দেশে ফিরে যাই। বাংলাদেশ আমার নিজের দেশ। অথচ সরকারের কথা শুনলে মনে হয় বাংলাদেশ ওদের বাপের সম্পত্তির মতো। আসলে এসব নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।
: এই নির্বাসিত জীবন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আপনি কি পাঠকদের কাছে নতুন করে কোন আবেদন জানাবেন?
- পাঠকরা সবই জানেন। নতুন করে কি আর আবেদন করবো। আমি সব সময় দেশে আসতে চাই। আমাকে ’৯৪ সালের আগস্টে জোর করে ঘাড় ধরে বের করে দেয়া হয়েছে। আজকে ২০১৩ সালের আগস্ট। গত এই কুড়ি বছরের প্রতিটি দিন আমি নিজ দেশে ফেরার চেষ্টা করেছি। করছি এখনও। কিন্তু অনুমতি পাচ্ছি না। পাঠকদের কাছে নতুন করে আশা নেই। কারণ, আমি তো ধরেই নিয়েছি বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছে। সেই ধারণা থেকে আজ যখন আমার জন্য ঢাকায় মানববন্ধন করছে কেউ কেউ, তখন বুকে একটু আশা জেগেছে। মনে হয়েছে, সত্যি সত্যি কোন একদিন আমি নিজ দেশে নিজের মাটিতে পা রাখতে পারবো। হোক না সেটা আরও কুড়ি বছর পর। স্বপ্নটা তো বাঁচিয়ে রাখতে পারছি এখনও।
: জন্মদিনের শুভেচ্ছা আপনাকে।
- অনেক ধন্যবাদ।
: জন্মদিনে আপনি কি বলবেন পাঠকদের জন্য।
- দেশের মানুষের জন্য, পাঠকের জন্য তেমন কোন বক্তব্য নেই। আমি এমন বক্তব্য কখনও দেই না। আমার যা বলার সবটাই বইতে লেখার চেষ্টা করি। জানি না দেশে আমার বই বের হয় কিনা। আমি জানি পাঠক এখনও আছেন, কিন্তু বই প্রকাশ হচ্ছে না। কারণ, আমার বই প্রকাশ করতে প্রকাশকরা ভয় পান। ফলে পাইরেটেড/নকল এডিশনের ওপর মানুষকে নির্ভর করতে হয়।
: জন্মদিন উপলক্ষে আজ আপনার শুভাকাঙক্ষী-পাঠকরা ঢাকায় মানববন্ধন করছেন, আপনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?
- দেশটা আমাকে ভুলেই গেছে বলে জানতাম। আজ প্রায় কুড়ি বছর হয়ে গেছে আমি দেশে নেই। কিন্তু এ নিয়ে খুব বেশি প্রতিবাদ তো হয়নি কখনও। আমাকে দেশ থেকে এভাবে তাড়িয়ে দেয়া হলো, ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। আজ এতোকাল পর কিছু মানুষের বোধোদয় হয়েছে, প্রতিবাদ করছে। আমাকে দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছে। ভাবতে ভালই লাগছে। হয়তো একটু দেরিতে হলেও মানুষের বোধোদয় হয়েছে। আমি ভেবেছি ওই দেশে (বাংলাদেশ) কখনও প্রতিবাদ হয় না। কেউ প্রতিবাদ করে না। আমার জন্য নয়, যে কোন অন্যায়ের প্রতিবাদ কেউ করে বলে মনে হয় না। সেই অবস্থান থেকে আজ খুব ভাল লাগছে, এমন দিনে আমার ফেলে আসা শহরে আমার জন্য কেউ কেউ মানববন্ধন করছেন, আমাকে ফিরিয়ে আনার আকুতি জানাচ্ছেন। সত্যি সত্যি ভাল লাগছে।
: এখনও এই দেশে আপনার পাঠকের সংখ্যা অনেক। কিন্তু আপনার বইতো সে অর্থে প্রকাশ পাচ্ছে না।
- পাঠক আছেন, সেটা অনুভব করতে পারি। তবে সেই পাঠকরা সত্যিকারের আমার বই পড়তে পারেন কিনা, এ ব্যাপারে আমার সন্দেহ আছে। অনেক বইয়ের নাম শুনি, যেটা আমার বই নয়। অন্যের বই, অথচ আমার নাম দিয়ে বিক্রি হচ্ছে। বিচ্ছিরি কিছু বই বিচ্ছিরি কিছু নামের বই বিক্রি হচ্ছে আমার নামে। এসব দেখে-শুনে খুব কষ্ট পাই। ফলে আমার সত্যিকারের বই সত্যিকারের পাঠকদের হাতে যাচ্ছে কিনা, যথেষ্ট সন্দেহ আছে। একবার নিউ ইয়র্কের এক বইয়ের দোকানে গিয়ে দেখেছি আমার নামে বই। উল্টে দেখি লেখাটা আমার নয়। শুধু নামটা আমার। এমনটা হরহামেশা বাংলাদেশে হচ্ছে। অথচ এসবের প্রতিবাদ করার মানুষ নেই। এসব নিয়ে কারও কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। একবার কলকাতায় আমার একটা বই ব্যান্ড (নিষিদ্ধ) হয়েছে। এরপর একটা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছাপ্রণোদিত হয়ে সেই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য মামলা করেছে। সেই বই হাইকোর্ট মুক্তি দিয়েছে। অথচ বাংলাদেশে এমন কিছু হলো না আজও। বাংলাদেশের দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে সবই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপার।
: প্রায় ২০ বছর আপনি দেশের বাইরে নির্বাসিত। আপনি কি তেমন কোন উদ্যোগ নিয়েছেন দেশে ফেরার জন্য? এখন কোথায় কি অবস্থায় আছেন।
- বাংলাদেশের কোন এম্বেসি আমাকে ভিসা দেয় না। কারণ, গভর্নমেন্টের নিষেধ আছে। আমার বাংলাদেশের পাসপোর্ট রিনিউ করছি না আজ কুড়ি বছর ধরে। আমি বিশ্বের এমন কোন বাংলাদেশী এম্বেসি নেই, যেখানে যাইনি। আমেরিকা, জার্মান, ভারত, ফ্রান্স, সুইডেন, আমেরিকাসহ বিশ্বের সব বাংলাদেশী এম্বেসিতে অনুনয়-বিনয় করেছি আমাকে ভিসা দেয়ার জন্য। তারা সবাই বিনয়ের সঙ্গে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সবাই বলেছেন, ‘সরকার চায় না আপনি দেশে যান’। আমি বলেছি একথাটি আপনারা আমাকে লিখে দিন। তারা সেটাও দিচ্ছে না। গেল কুড়িটা বছর আমি দেখেছি খালেদা সরকার, হাসিনা সরকার, এমনকি অন্তর্বর্তীকালীন জরুরি সরকারও চায় না আমি দেশে ফিরে যাই। বাংলাদেশ আমার নিজের দেশ। অথচ সরকারের কথা শুনলে মনে হয় বাংলাদেশ ওদের বাপের সম্পত্তির মতো। আসলে এসব নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই।
: এই নির্বাসিত জীবন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আপনি কি পাঠকদের কাছে নতুন করে কোন আবেদন জানাবেন?
- পাঠকরা সবই জানেন। নতুন করে কি আর আবেদন করবো। আমি সব সময় দেশে আসতে চাই। আমাকে ’৯৪ সালের আগস্টে জোর করে ঘাড় ধরে বের করে দেয়া হয়েছে। আজকে ২০১৩ সালের আগস্ট। গত এই কুড়ি বছরের প্রতিটি দিন আমি নিজ দেশে ফেরার চেষ্টা করেছি। করছি এখনও। কিন্তু অনুমতি পাচ্ছি না। পাঠকদের কাছে নতুন করে আশা নেই। কারণ, আমি তো ধরেই নিয়েছি বাংলাদেশের মানুষ প্রতিবাদ করতে ভুলে গেছে। সেই ধারণা থেকে আজ যখন আমার জন্য ঢাকায় মানববন্ধন করছে কেউ কেউ, তখন বুকে একটু আশা জেগেছে। মনে হয়েছে, সত্যি সত্যি কোন একদিন আমি নিজ দেশে নিজের মাটিতে পা রাখতে পারবো। হোক না সেটা আরও কুড়ি বছর পর। স্বপ্নটা তো বাঁচিয়ে রাখতে পারছি এখনও।
No comments