উচ্চশিক্ষার ফেরিওয়ালাদের রুখবে কে? by ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করা
শিক্ষার্থীদের তুলনায় দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আসন সংখ্যা যে অনেক
কম, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এ অবস্থা অনেকদিন ধরেই চলে আসছে। এ
পরিপ্রেক্ষিতে এবং দেশে মানসম্মত শিক্ষার সম্প্রসারণে ১৯৯২ সালে দেশে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়ন করা হয়। সর্বশেষ ২০১০ সালে আগের আইনের
স্থলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ প্রণয়ন করা হয়। উচ্চশিক্ষার জন্য
বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি দেশে বর্তমানে রয়েছে ৭১টি
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও সরকার
অনুমোদিত ৭১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও রয়েছে অনেক বেসরকারি
বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাসসহ অনুমোদনহীন ও অবৈধভাবে গড়ে ওঠা
বিশ্ববিদ্যালয়। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনেকে প্রতারিত হচ্ছেন। এর
পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর জন্য দেশে রয়েছে অসংখ্য
স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি ফার্ম, যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়তই
প্রতারিত হচ্ছেন। তাই প্রশ্ন হচ্ছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার
উদ্দেশ্য কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে? আর বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর নামে
লাগামহীন প্রতারণার মাধ্যমে বাণিজ্য করে যাওয়া স্টুডেন্ট কনসালটেন্সি
ফার্মগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কি কেউ নেই?
দেশের ৭১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর শর্ত পূরণ না করেই চলছে। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই নেই স্থায়ীভাবে নিযুক্ত ভিসি, প্রোভিসি, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ। তাছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেই রয়েছে শিক্ষার মান বজায় না রাখা, নিয়মিত সিন্ডিকেট সভা আহ্বান না করা, স্থায়ী বা নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকা বা নিজস্ব ক্যাম্পাসের জমি না থাকা, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত শর্ত ভঙ্গসহ নানা অভিযোগ। আবার ব্যাঙের ছাতার মতো দেশের যত্রতত্র ক্যাম্পাস স্থাপনকারী একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের মতো গুরুতর অভিযোগ। বস্তুত এসব ক্যাম্পাসের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার ফেরিওয়ালারা ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, দেশের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে জঙ্গিসংক্রান্ত গুরুতর অভিযোগসহ মালিকানা নিয়ে চরম দ্বন্দ্ব। মূলত দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই বিভিন্ন সময়ে দলীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনাসহ বিশেষ ক্ষমতার জোরে অনুমোদন পাওয়ায় সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার করুণ দশা বিরাজ করছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ঢাকার বারিধারার নর্দ্দার ক্যাম্পাস ছাড়া অবৈধভাবে পরিচালিত বাকি ক্যাম্পাসগুলো এবং রাজশাহীর বাগমারায় অবস্থিত অর্জুনপাড়া মদিনাতুল উলুম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ ও উচ্ছেদ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটিসহ ১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্ছেদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইউজিসি কর্তৃক দ্রুত চিঠি দেয়ার কথা রয়েছে। এগুলো ছাড়াও গত জানুয়ারি মাসে আরও ছয়টি অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস উচ্ছেদের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়।
একশ্রেণীর অসাধু লোক উচ্চশিক্ষা নিয়ে ফেরিওয়ালার মতো দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য করে চলেছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সরকার বা ইউজিসির অনুমোদন না নিয়েই এবং কোনো রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দেশের আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো শাখা ক্যাম্পাস খুলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে টাকার বিনিময়ে সরাসরি সার্টিফিকেট বাণিজ্যসহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অথচ সরকার এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর ৩৮ ধারায় সরকার কর্তৃক একটি জাতীয়, স্বতন্ত্র ও স্বাধীন অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের কথা স্পষ্টভাবে বলা থাকলেও দীর্ঘদিনেও তা গঠন করা হয়নি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভালো-মন্দ সব ধরনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যে প্রশ্নবিদ্ধ হবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আবার উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর নামে দেশের ভেতরে অবস্থিত প্রায় পাঁচশ স্টুডেন্টস কনসালটেন্সি ফার্ম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লাগামহীনভাবে প্রতারণা করে চলেছে। অথচ দেখার যেন কেউ নেই। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে যাওয়ার নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতি ভালোভাবে জানা না থাকায় এবং বিদেশী একটি ডিগ্রি আর নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর আশায় ভিটেমাটি ও সহায়-সম্বল বিক্রি করে দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব স্টুডেন্টস কনসালটেন্সি ফার্মের দ্বারস্থ হয়। এগুলোর বেশির ভাগই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আর শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে জুটছে প্রতারণা। পুলিশের এক হিসাবে দেখা গেছে, গত বছর পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী এভাবে স্টুডেন্টস কনসালটেন্সি ফার্মগুলোর মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এসব স্টুডেন্টস কনসালটেন্সি ফার্ম কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়। এরা শুধু একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষার এসব ফেরিওয়ালা তথা এসব প্রতারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দেশে স্পষ্ট তথা সুনির্দিষ্ট কোনো আইনও নেই। তাই প্রতারিত হওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার তেমন কোনো জায়গা থাকে না। অনেক সময় এসব প্রতারককে ধরা গেলেও এক্ষেত্রে আইন না থাকায় প্রতারণার বাইরে পুলিশ বা ভুক্তভোগী তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা করতে পারেন না।
শিক্ষাকে বলা হয়ে থাকে জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই যদি প্রকৃত অবস্থা হয়ে থাকে, তাহলে তো সেই মেরুদণ্ড দিয়ে ভালোভাবে দাঁড়ানোই সম্ভব হবে না। সেই শিক্ষা দিয়ে কিভাবে একটি দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব? বিষয়টি সরকারসহ সবারই ভালোভাবে অনুধাবন করা উচিত। দেশ-জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই সরকারের উচিত হবে, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততা, সার্টিফিকেট বাণিজ্য করা, লেখাপড়ার মান সঠিকভাবে বজায় না রাখাসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। অন্যথায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর নামে স্টুডেন্টস কনসালটেন্সি ফার্মগুলোর লাগামহীন প্রতারণা ও বাণিজ্য বন্ধে প্রয়োজন কঠোর আইন প্রণয়ন করে তার যথাযথ বাস্তবায়ন। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দেশ-বিদেশে ভর্তিসহ সামগ্রিক বিষয়ে দ্রুত ক্রস বর্ডার হায়ার এডুকেশন (সিবিএইচই) শীর্ষক একটি বিধিমালা প্রণয়নও অপরিহার্য।
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু : বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, ইউআইটিএস; অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য
দেশের ৭১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর শর্ত পূরণ না করেই চলছে। অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই নেই স্থায়ীভাবে নিযুক্ত ভিসি, প্রোভিসি, রেজিস্ট্রার ও কোষাধ্যক্ষ। তাছাড়া অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেই রয়েছে শিক্ষার মান বজায় না রাখা, নিয়মিত সিন্ডিকেট সভা আহ্বান না করা, স্থায়ী বা নিজস্ব ক্যাম্পাস না থাকা বা নিজস্ব ক্যাম্পাসের জমি না থাকা, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত শর্ত ভঙ্গসহ নানা অভিযোগ। আবার ব্যাঙের ছাতার মতো দেশের যত্রতত্র ক্যাম্পাস স্থাপনকারী একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের মতো গুরুতর অভিযোগ। বস্তুত এসব ক্যাম্পাসের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার ফেরিওয়ালারা ভুয়া সার্টিফিকেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, দেশের প্রথম সারির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে জঙ্গিসংক্রান্ত গুরুতর অভিযোগসহ মালিকানা নিয়ে চরম দ্বন্দ্ব। মূলত দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ই বিভিন্ন সময়ে দলীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনাসহ বিশেষ ক্ষমতার জোরে অনুমোদন পাওয়ায় সেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উচ্চশিক্ষার করুণ দশা বিরাজ করছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির ঢাকার বারিধারার নর্দ্দার ক্যাম্পাস ছাড়া অবৈধভাবে পরিচালিত বাকি ক্যাম্পাসগুলো এবং রাজশাহীর বাগমারায় অবস্থিত অর্জুনপাড়া মদিনাতুল উলুম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থায়ীভাবে বন্ধ ও উচ্ছেদ করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সম্প্রতি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাছাড়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, নর্দান ইউনিভার্সিটি, প্রাইম ইউনিভার্সিটি, ইবাইস ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর ইউনিভার্সিটিসহ ১০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্ছেদের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইউজিসি কর্তৃক দ্রুত চিঠি দেয়ার কথা রয়েছে। এগুলো ছাড়াও গত জানুয়ারি মাসে আরও ছয়টি অবৈধ বিশ্ববিদ্যালয় ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাস উচ্ছেদের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়া হয়।
একশ্রেণীর অসাধু লোক উচ্চশিক্ষা নিয়ে ফেরিওয়ালার মতো দীর্ঘদিন ধরে বাণিজ্য করে চলেছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় সরকার বা ইউজিসির অনুমোদন না নিয়েই এবং কোনো রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই দেশের আনাচে-কানাচে ব্যাঙের ছাতার মতো শাখা ক্যাম্পাস খুলে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে টাকার বিনিময়ে সরাসরি সার্টিফিকেট বাণিজ্যসহ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অথচ সরকার এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আবার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০-এর ৩৮ ধারায় সরকার কর্তৃক একটি জাতীয়, স্বতন্ত্র ও স্বাধীন অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিল গঠনের কথা স্পষ্টভাবে বলা থাকলেও দীর্ঘদিনেও তা গঠন করা হয়নি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ভালো-মন্দ সব ধরনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান যে প্রশ্নবিদ্ধ হবে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
আবার উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর নামে দেশের ভেতরে অবস্থিত প্রায় পাঁচশ স্টুডেন্টস কনসালটেন্সি ফার্ম শিক্ষার্থীদের সঙ্গে লাগামহীনভাবে প্রতারণা করে চলেছে। অথচ দেখার যেন কেউ নেই। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করতে যাওয়ার নিয়ম-কানুন ও পদ্ধতি ভালোভাবে জানা না থাকায় এবং বিদেশী একটি ডিগ্রি আর নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরানোর আশায় ভিটেমাটি ও সহায়-সম্বল বিক্রি করে দেশের অসংখ্য শিক্ষার্থী ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা এসব স্টুডেন্টস কনসালটেন্সি ফার্মের দ্বারস্থ হয়। এগুলোর বেশির ভাগই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। আর শেষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ভাগ্যে জুটছে প্রতারণা। পুলিশের এক হিসাবে দেখা গেছে, গত বছর পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী এভাবে স্টুডেন্টস কনসালটেন্সি ফার্মগুলোর মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এসব স্টুডেন্টস কনসালটেন্সি ফার্ম কোনো মন্ত্রণালয়ের অধীনে নয়। এরা শুধু একটি ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে কোটি কোটি টাকার ব্যবসা করে যাচ্ছে। উচ্চশিক্ষার এসব ফেরিওয়ালা তথা এসব প্রতারকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দেশে স্পষ্ট তথা সুনির্দিষ্ট কোনো আইনও নেই। তাই প্রতারিত হওয়ার পরও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ার তেমন কোনো জায়গা থাকে না। অনেক সময় এসব প্রতারককে ধরা গেলেও এক্ষেত্রে আইন না থাকায় প্রতারণার বাইরে পুলিশ বা ভুক্তভোগী তাদের বিরুদ্ধে আর কোনো মামলা করতে পারেন না।
শিক্ষাকে বলা হয়ে থাকে জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু দেশে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এই যদি প্রকৃত অবস্থা হয়ে থাকে, তাহলে তো সেই মেরুদণ্ড দিয়ে ভালোভাবে দাঁড়ানোই সম্ভব হবে না। সেই শিক্ষা দিয়ে কিভাবে একটি দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নেয়া সম্ভব? বিষয়টি সরকারসহ সবারই ভালোভাবে অনুধাবন করা উচিত। দেশ-জাতির বৃহত্তর স্বার্থেই সরকারের উচিত হবে, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে জঙ্গি সম্পৃক্ততা, সার্টিফিকেট বাণিজ্য করা, লেখাপড়ার মান সঠিকভাবে বজায় না রাখাসহ নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত করে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া। অন্যথায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রণয়নের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হওয়ার পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মানও নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর বিদেশে শিক্ষার্থী পাঠানোর নামে স্টুডেন্টস কনসালটেন্সি ফার্মগুলোর লাগামহীন প্রতারণা ও বাণিজ্য বন্ধে প্রয়োজন কঠোর আইন প্রণয়ন করে তার যথাযথ বাস্তবায়ন। এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের দেশ-বিদেশে ভর্তিসহ সামগ্রিক বিষয়ে দ্রুত ক্রস বর্ডার হায়ার এডুকেশন (সিবিএইচই) শীর্ষক একটি বিধিমালা প্রণয়নও অপরিহার্য।
ড. কুদরাত-ই-খুদা বাবু : বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, ইউআইটিএস; অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সদস্য
No comments