গদ্যকার্টুন বাজেট-কৌতুক by আনিসুল হক
বাজেট জিনিসটা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা মতামত দিন,
এর ভালোমন্দ নিয়ে জ্ঞানগর্ভ আলোচনা করুন, তাতে নিশ্চয়ই অনেক কিছু
আসবে-যাবে। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, তাদের কোনো কথাতেই কোনো কিছু যায়-আসে
না।
কাজেই আমরা বাজেট নিয়ে পণ্ডিতি করব না, কৌতুক করব।
তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে যা পেশ করেছেন, সেটা যে
বাজেট, তাতে আমাদের সন্দেহ নেই। এটা আমরা শিখেছি প্রেসিডেন্ট বুশের কাছ
থেকে। তিনি বলেছেন, এটা নিশ্চয়ই একটা সত্যিকারের বাজেট, কারণ এতে অনেক
সংখ্যা দেখা যাচ্ছে।
বাজেট যাঁরা প্রণয়ন করেন, তাঁদের নিয়ে একটা কৌতুক প্রচলিত আছে আমেরিকায়।
একজন মেষপালক তাঁর গড্ডলিকাপ্রবাহের পাশে হাঁটছেন। গড্ডল মানে ভেড়া। মানে একজন ভেড়ার রাখাল তাঁর ভেড়ার পাল চরাচ্ছেন। এই সময় কোট-প্যান্ট-টাই পরা এক ভদ্রলোক সেখানে গেলেন। ভদ্রলোক বললেন, ওহে, এসো, একটা বাজি খেলি। তোমার ভেড়ার পালে ঠিক ঠিক কতটা ভেড়া আছে, আমি বলব এক সেকেন্ডেই। যদি সঠিকভাবে বলতে পারি, তুমি কি তোমার পাল থেকে একটা ভেড়া আমাকে দেবে?
মেষপালক ভেবে দেখলেন, তাঁর ভেড়ার পালটা এত বড় যে, কটা ভেড়া আছে, তা চট করে বলে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি বললেন, আচ্ছা, আমি রাজি। আপনি বলেন।
ভদ্রলোক বললেন, ৯৩৭টা।
মেষপালক বিস্মিত। কী করে পারল লোকটা। যাই হোক, তিনি বললেন, আপনি বাজিতে জিতেছেন। আপনি একটা ভেড়া নিয়ে যেতে পারেন।
কোট-প্যান্ট পরা ভদ্রলোক হাত বাড়ালেন। তখন মেষপালক বললেন, আপনি কী কাজ করেন, সেটা আমি বলতে পারব। তাহলে কি আপনি আমার ভেড়া ফেরত দেবেন?
হ্যাঁ। দেব। বলো দেখি, আমি কী করি।
আপনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। আপনি বাজেট প্রণয়ন করেন।
কী করে বুঝলে?
আপনি ভেড়ার বদলে আমার কুকুরটাকে কোলে তুলে নিয়েছেন—মেষপালক বললেন।
একজন গণিতবিদ, একজন হিসাবরক্ষক, আরেকজন অর্থনীতিবিদ আবেদন করেছেন একটা পদের জন্য। তাঁরা একে একে হাজির হলেন ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে।
দুই আর দুই যোগ করলে কত হয়? প্রশ্নকর্তা গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করছেন।
গণিতবিদ বললেন, দুই আর দুইয়ে চার হয়।
হিসাবরক্ষক বললেন, দুই আর দুই যোগ করলে গড়ে চার আসবে। তবে টেন পারসেন্ট এদিক-ওদিক হতে পারে।
আর অর্থনীতিবিদ ঝুঁকে বসলেন প্রশ্নকর্তার দিকে। স্যার, আপনিই বলুন, দুই আর দুইয়ে ঠিক কত হলে আপনার চলবে। আমি মিলিয়ে দিচ্ছি।
তিনজন অর্থনীতিবিদ শিকারে বেরিয়েছেন। প্রথম জন গুলি করলেন একটা হরিণকে। পাঁচ গজ বাঁ দিক দিয়ে গুলি চলে গেল। দ্বিতীয়জন গুলি করলেন একই হরিণকে। পাঁচ গজ ডান দিক দিয়ে গুলি চলে গেল। তৃতীয়জন লাফাতে শুরু করলেন, আমরা হরিণটাকে মারতে পেরেছি।
একজন গণিতবিদ, একজন তাত্ত্বিক অর্থনীতিক, আরেকজন বাজেট-বিশেষজ্ঞকে আলাদা আলাদাভাবে একটা অন্ধকার ঘরে পাঠানো হলো। বলা হলো, ঘরে একটা কালো বিড়াল আছে, এটা খুঁজে বের করতে হবে। আসলে ঘরে কোনো বিড়ালই ছিল না।
গণিতবিদ এক ঘণ্টা চেষ্টা করে বেরিয়ে এসে বললেন, আমি কোনো বিড়াল খুঁজে পেলাম না। বিড়াল যদি থাকবেই সে গেল কোথায়? তাঁকে মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হলো।
তাত্ত্বিক অর্থনীতিক এক ঘণ্টা চেষ্টা শেষে বেরিয়ে এসে বললেন, আমি প্রায় ধরেই ফেলেছিলাম বিড়ালটাকে। আমাকে সময় দিলে আমি একটা বিড়ালের মডেল বানিয়ে দিচ্ছি। যেটা বিড়ালটার বাস্তব অবস্থা আপনাদের নিপুণভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে।
আর বাজেট প্রণেতা একটা ঘণ্টা পর ঘর থেকে বের না হয়ে বললেন, আমি বিড়ালটার ঘাড়ে ধরে ফেলেছি।
(এই কালো বিড়ালের সঙ্গে রেলের কালো বিড়ালের কোনো সম্পর্ক নেই।)
একদিন আলাদিন বসে ছিল এক সমুদ্রের ধারে। হঠাৎ বালুর মধ্যে সে পেয়ে গেল একটা চেরাগ। সেটা ঘষতেই বেরিয়ে এল এক দৈত্য।
আলাদিন বলল দৈত্যকে, তুমি কত দিন ধরে আছ এই চেরাগের মধ্যে।
দৈত্য বলল, ৫০০ সেকেন্ড।
আলাদিন বলল, তা কী করে হয়। আমি নিজেই তো এখানে বসা আধা ঘণ্টার বেশি সময়। দৈত্য বলল, আমার সেকেন্ড তো তোমার সেকেন্ডের মতো নয়। আমার এক সেকেন্ড মানে এক হাজার বছর।
ও আচ্ছা। তা তোমার টাকার মূল্য কত? এক টাকায় কত ডলার।
দৈত্য বলল, এক পয়সায় ১০ হাজার কোটি ডলার।
আলাদিন বলল, তোমার ৫টা পয়সা আমাকে দাও।
দৈত্য বলল, একটা মিনিট দেরি করো।
অর্থমন্ত্রী কেন বলেছিলেন, তিন হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না, যেকোনো বাসনকোসন ভাঙারির দোকানি ব্যাংকের তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে নিতে পারে, সেটা এখন বোঝা যাচ্ছে। ১৯৭২-৭৩ সালে দেশের প্রথম বাজেট তাজউদ্দীন আহমদ পেশ করেছিলেন ৭৮৬ কোটি টাকার, আর এই অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেট দুই লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার। তিন হাজার কোটি টাকা তাঁদের কাছে তো তাই নস্যি।
তেমনি সময়ও তাঁদের কাছে তেমন কোনো ব্যাপার নয়।
আমরা নাকি পদ্মা সেতু পেয়ে যাচ্ছি। শুধু সামনের বছরের বাজেটটা এই সরকারকে করতে দিতে হবে। আমি একটা গল্প শুনেছিলাম। একজন খুবই ক্ষমতাবান ব্যক্তি একবার একজন প্রকৌশলীর সঙ্গে রাগারাগি করছিলেন। ক্ষমতাবান একটা ফাইল ছুড়ে মেরেছিলেন প্রকৌশলীর মুখে। প্রকৌশলী বেরিয়ে এসে দুঃখ করেছিলেন, কী বলব ভাই, এই প্রকল্পে আসলে খরচ হবে পাঁচ কোটি টাকা। আমি বাজেট করেছি ৫০ কোটি টাকার।
ও, তাই বুঝি তিনি রেগে গেছেন।
হ্যাঁ, তাই তিনি রেগে গেছেন। বললেন, তুমি একটা অকর্মার ধাড়ি। যাও এটাকে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প বানিয়ে নিয়ে এসো।
বাজেট করতে সরকারের টাকার অভাব হয় না। ক্ষমতাসীনেরা অল্প বাজেটের প্রকল্প পছন্দ করেন না। কিন্তু যাদের আয় সীমিত ও নির্দিষ্ট, তাদের নানা হিসাব-নিকাশ করে মাস চলতে হয়। তেমনি এক গৃহকর্ত্রী বাজার থেকে হেঁটে এলেন। রিকশাভাড়া বাঁচল কুড়ি টাকা। তিনি গৃহকর্তাকে বললেন, আমরা এখন আগের চেয়ে বড়লোক। আজ আমি কুড়ি টাকা তোমার বাজেটে যোগ করতে সক্ষম হয়েছি।
কী করে?
আমি রিকশায় না এসে হেঁটে বাড়ি এলাম। বাঁচল কুড়ি টাকা।
গৃহকর্তা বললেন, তুমি রিকশার কথা না ভেবে ট্যাক্সির কথা কেন ভাবলে না? তাহলে তো বাঁচত ২০০ টাকা।
একজন অর্থনীতিবিদ খুব মুশকিলে পড়েছেন। তিনি বিয়ে করবেন। সম্ভাব্য পাত্রী তিনজন। এর মধ্যে কাকে তিনি বিয়ে করবেন? তিনি এক কাজ করলেন। প্রত্যেক সম্ভাব্য পাত্রীকে ২০ হাজার করে টাকা দিলেন। তারপর বললেন, খরচ করো। এরপর আমি ঠিক করব, কাকে বিয়ে করব।
প্রথম সম্ভাব্য পাত্রী ২০ হাজার টাকা নিয়ে জামা-কাপড় কিনল। ফিরে এসে বলল, ডারলিং, আই লাভ ইউ, তাই আমাকে যাতে সুন্দর দেখায় সে জন্য সুন্দর পোশাক কিনলাম।
দ্বিতীয়জন অর্থনীতিবিদের জন্য সুন্দর শার্ট, সিডি, বই ইত্যাদি কিনে আনল। বলল, আই লাভ ইউ। তাই তোমার দেওয়া টাকা দিয়ে তোমার জন্যই উপহার কিনেছি।
তৃতীয়জন টাকাটা জমা রাখল ব্যাংকে। সুদে-আসলে বাড়ুক। বলল, আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনটা সুন্দর করবে এই জমানো টাকা।
এখন প্রশ্ন হলো, অর্থনীতিবিদ কাকে বিয়ে করেছিলেন।
সঠিক উত্তর হলো, তিনজনের মধ্যে যিনি ছিলেন সবচেয়ে সুন্দরী, তাকেই।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
বাজেট যাঁরা প্রণয়ন করেন, তাঁদের নিয়ে একটা কৌতুক প্রচলিত আছে আমেরিকায়।
একজন মেষপালক তাঁর গড্ডলিকাপ্রবাহের পাশে হাঁটছেন। গড্ডল মানে ভেড়া। মানে একজন ভেড়ার রাখাল তাঁর ভেড়ার পাল চরাচ্ছেন। এই সময় কোট-প্যান্ট-টাই পরা এক ভদ্রলোক সেখানে গেলেন। ভদ্রলোক বললেন, ওহে, এসো, একটা বাজি খেলি। তোমার ভেড়ার পালে ঠিক ঠিক কতটা ভেড়া আছে, আমি বলব এক সেকেন্ডেই। যদি সঠিকভাবে বলতে পারি, তুমি কি তোমার পাল থেকে একটা ভেড়া আমাকে দেবে?
মেষপালক ভেবে দেখলেন, তাঁর ভেড়ার পালটা এত বড় যে, কটা ভেড়া আছে, তা চট করে বলে ফেলা সম্ভব নয়। তিনি বললেন, আচ্ছা, আমি রাজি। আপনি বলেন।
ভদ্রলোক বললেন, ৯৩৭টা।
মেষপালক বিস্মিত। কী করে পারল লোকটা। যাই হোক, তিনি বললেন, আপনি বাজিতে জিতেছেন। আপনি একটা ভেড়া নিয়ে যেতে পারেন।
কোট-প্যান্ট পরা ভদ্রলোক হাত বাড়ালেন। তখন মেষপালক বললেন, আপনি কী কাজ করেন, সেটা আমি বলতে পারব। তাহলে কি আপনি আমার ভেড়া ফেরত দেবেন?
হ্যাঁ। দেব। বলো দেখি, আমি কী করি।
আপনি অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাজ করেন। আপনি বাজেট প্রণয়ন করেন।
কী করে বুঝলে?
আপনি ভেড়ার বদলে আমার কুকুরটাকে কোলে তুলে নিয়েছেন—মেষপালক বললেন।
একজন গণিতবিদ, একজন হিসাবরক্ষক, আরেকজন অর্থনীতিবিদ আবেদন করেছেন একটা পদের জন্য। তাঁরা একে একে হাজির হলেন ইন্টারভিউ বোর্ডের সামনে।
দুই আর দুই যোগ করলে কত হয়? প্রশ্নকর্তা গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করছেন।
গণিতবিদ বললেন, দুই আর দুইয়ে চার হয়।
হিসাবরক্ষক বললেন, দুই আর দুই যোগ করলে গড়ে চার আসবে। তবে টেন পারসেন্ট এদিক-ওদিক হতে পারে।
আর অর্থনীতিবিদ ঝুঁকে বসলেন প্রশ্নকর্তার দিকে। স্যার, আপনিই বলুন, দুই আর দুইয়ে ঠিক কত হলে আপনার চলবে। আমি মিলিয়ে দিচ্ছি।
তিনজন অর্থনীতিবিদ শিকারে বেরিয়েছেন। প্রথম জন গুলি করলেন একটা হরিণকে। পাঁচ গজ বাঁ দিক দিয়ে গুলি চলে গেল। দ্বিতীয়জন গুলি করলেন একই হরিণকে। পাঁচ গজ ডান দিক দিয়ে গুলি চলে গেল। তৃতীয়জন লাফাতে শুরু করলেন, আমরা হরিণটাকে মারতে পেরেছি।
একজন গণিতবিদ, একজন তাত্ত্বিক অর্থনীতিক, আরেকজন বাজেট-বিশেষজ্ঞকে আলাদা আলাদাভাবে একটা অন্ধকার ঘরে পাঠানো হলো। বলা হলো, ঘরে একটা কালো বিড়াল আছে, এটা খুঁজে বের করতে হবে। আসলে ঘরে কোনো বিড়ালই ছিল না।
গণিতবিদ এক ঘণ্টা চেষ্টা করে বেরিয়ে এসে বললেন, আমি কোনো বিড়াল খুঁজে পেলাম না। বিড়াল যদি থাকবেই সে গেল কোথায়? তাঁকে মানসিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হলো।
তাত্ত্বিক অর্থনীতিক এক ঘণ্টা চেষ্টা শেষে বেরিয়ে এসে বললেন, আমি প্রায় ধরেই ফেলেছিলাম বিড়ালটাকে। আমাকে সময় দিলে আমি একটা বিড়ালের মডেল বানিয়ে দিচ্ছি। যেটা বিড়ালটার বাস্তব অবস্থা আপনাদের নিপুণভাবে ব্যাখ্যা করতে পারবে।
আর বাজেট প্রণেতা একটা ঘণ্টা পর ঘর থেকে বের না হয়ে বললেন, আমি বিড়ালটার ঘাড়ে ধরে ফেলেছি।
(এই কালো বিড়ালের সঙ্গে রেলের কালো বিড়ালের কোনো সম্পর্ক নেই।)
একদিন আলাদিন বসে ছিল এক সমুদ্রের ধারে। হঠাৎ বালুর মধ্যে সে পেয়ে গেল একটা চেরাগ। সেটা ঘষতেই বেরিয়ে এল এক দৈত্য।
আলাদিন বলল দৈত্যকে, তুমি কত দিন ধরে আছ এই চেরাগের মধ্যে।
দৈত্য বলল, ৫০০ সেকেন্ড।
আলাদিন বলল, তা কী করে হয়। আমি নিজেই তো এখানে বসা আধা ঘণ্টার বেশি সময়। দৈত্য বলল, আমার সেকেন্ড তো তোমার সেকেন্ডের মতো নয়। আমার এক সেকেন্ড মানে এক হাজার বছর।
ও আচ্ছা। তা তোমার টাকার মূল্য কত? এক টাকায় কত ডলার।
দৈত্য বলল, এক পয়সায় ১০ হাজার কোটি ডলার।
আলাদিন বলল, তোমার ৫টা পয়সা আমাকে দাও।
দৈত্য বলল, একটা মিনিট দেরি করো।
অর্থমন্ত্রী কেন বলেছিলেন, তিন হাজার কোটি টাকা কোনো টাকাই না, যেকোনো বাসনকোসন ভাঙারির দোকানি ব্যাংকের তিন হাজার কোটি টাকা নিয়ে নিতে পারে, সেটা এখন বোঝা যাচ্ছে। ১৯৭২-৭৩ সালে দেশের প্রথম বাজেট তাজউদ্দীন আহমদ পেশ করেছিলেন ৭৮৬ কোটি টাকার, আর এই অর্থমন্ত্রীর এবারের বাজেট দুই লাখ ২২ হাজার কোটি টাকার। তিন হাজার কোটি টাকা তাঁদের কাছে তো তাই নস্যি।
তেমনি সময়ও তাঁদের কাছে তেমন কোনো ব্যাপার নয়।
আমরা নাকি পদ্মা সেতু পেয়ে যাচ্ছি। শুধু সামনের বছরের বাজেটটা এই সরকারকে করতে দিতে হবে। আমি একটা গল্প শুনেছিলাম। একজন খুবই ক্ষমতাবান ব্যক্তি একবার একজন প্রকৌশলীর সঙ্গে রাগারাগি করছিলেন। ক্ষমতাবান একটা ফাইল ছুড়ে মেরেছিলেন প্রকৌশলীর মুখে। প্রকৌশলী বেরিয়ে এসে দুঃখ করেছিলেন, কী বলব ভাই, এই প্রকল্পে আসলে খরচ হবে পাঁচ কোটি টাকা। আমি বাজেট করেছি ৫০ কোটি টাকার।
ও, তাই বুঝি তিনি রেগে গেছেন।
হ্যাঁ, তাই তিনি রেগে গেছেন। বললেন, তুমি একটা অকর্মার ধাড়ি। যাও এটাকে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্প বানিয়ে নিয়ে এসো।
বাজেট করতে সরকারের টাকার অভাব হয় না। ক্ষমতাসীনেরা অল্প বাজেটের প্রকল্প পছন্দ করেন না। কিন্তু যাদের আয় সীমিত ও নির্দিষ্ট, তাদের নানা হিসাব-নিকাশ করে মাস চলতে হয়। তেমনি এক গৃহকর্ত্রী বাজার থেকে হেঁটে এলেন। রিকশাভাড়া বাঁচল কুড়ি টাকা। তিনি গৃহকর্তাকে বললেন, আমরা এখন আগের চেয়ে বড়লোক। আজ আমি কুড়ি টাকা তোমার বাজেটে যোগ করতে সক্ষম হয়েছি।
কী করে?
আমি রিকশায় না এসে হেঁটে বাড়ি এলাম। বাঁচল কুড়ি টাকা।
গৃহকর্তা বললেন, তুমি রিকশার কথা না ভেবে ট্যাক্সির কথা কেন ভাবলে না? তাহলে তো বাঁচত ২০০ টাকা।
একজন অর্থনীতিবিদ খুব মুশকিলে পড়েছেন। তিনি বিয়ে করবেন। সম্ভাব্য পাত্রী তিনজন। এর মধ্যে কাকে তিনি বিয়ে করবেন? তিনি এক কাজ করলেন। প্রত্যেক সম্ভাব্য পাত্রীকে ২০ হাজার করে টাকা দিলেন। তারপর বললেন, খরচ করো। এরপর আমি ঠিক করব, কাকে বিয়ে করব।
প্রথম সম্ভাব্য পাত্রী ২০ হাজার টাকা নিয়ে জামা-কাপড় কিনল। ফিরে এসে বলল, ডারলিং, আই লাভ ইউ, তাই আমাকে যাতে সুন্দর দেখায় সে জন্য সুন্দর পোশাক কিনলাম।
দ্বিতীয়জন অর্থনীতিবিদের জন্য সুন্দর শার্ট, সিডি, বই ইত্যাদি কিনে আনল। বলল, আই লাভ ইউ। তাই তোমার দেওয়া টাকা দিয়ে তোমার জন্যই উপহার কিনেছি।
তৃতীয়জন টাকাটা জমা রাখল ব্যাংকে। সুদে-আসলে বাড়ুক। বলল, আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনটা সুন্দর করবে এই জমানো টাকা।
এখন প্রশ্ন হলো, অর্থনীতিবিদ কাকে বিয়ে করেছিলেন।
সঠিক উত্তর হলো, তিনজনের মধ্যে যিনি ছিলেন সবচেয়ে সুন্দরী, তাকেই।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
No comments