বিজেপির সব পদ থেকে আদভানির পদত্যাগ
নরেন্দ্র মোদিকে আটকাতে ব্যর্থ বিজেপির ‘লৌহ পুরুষ’ লালকৃষ্ণ আদভানি দলের সব গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন। সেই সঙ্গে দলকে ঠেলে দিলেন এক নতুন সংকটের মুখে। গতকাল সোমবার দুপুরে দলের সভাপতি রাজনাথ সিংকে সংক্ষিপ্ত একটি চিঠি লিখে তিনি তাঁর এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেন। আদভানি ইস্তফা দিয়েছেন দলের সংসদীয় বোর্ড, জাতীয় কর্মসমিতি ও নির্বাচন কমিটির সদস্য পদ থেকে। তাঁর ইস্তফা অবশ্য গৃহীত হয়নি। তা যাতে গ্রহণ করা না হয়, সে জন্য মুরলি মনোহর যোশিসহ একাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতা রাজনাথকে অনুরোধও করেছেন। দলের আদভানি-ঘনিষ্ঠরা তাঁর সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন। সভাপতির বাড়িতেও বসে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বৈঠক। যদিও গতকাল রাত পর্যন্ত আদভানি ছিলেন অটল। গোয়ায় মোদি-বরণ ঠেকাতে আদভানি চেষ্টার ত্রুটি রাখেননি। চাপ সৃষ্টির জন্য অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি গোয়াযাত্রা বাতিলও করেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও দলের প্রচারাভিযানের প্রধানের পদপ্রার্থী মোদিকে তিনি ঠেকাতে পারেননি। এই অবস্থায় দলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে সরে এসে আদভানি বোঝাতে চাইলেন যে তিনি গোয়ার সিদ্ধান্তের শরিক হতে নারাজ। মোদিকে দল ও জোটের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবেও মেনে নিতে তিনি নারাজ। আদভানি অবশ্য এনডিএর চেয়ারপারসন পদ থেকে ইস্তফা দেননি। ফলে এটা নিশ্চিত যে জোট জিতলে মোদির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথে তিনি প্রবল বাধা হয়ে দাঁড়াবেন এবং সেখানে সহযোগী পেতে তাঁর অসুবিধা হবে না। রাজনাথকে পাঠানো চিঠিতে আদভানি লিখেছেন, জনসংঘ ও বিজেপির একজন কর্মী হিসেবে আজীবন কাজ করে তিনি গর্বিত ও অশেষ সন্তুষ্ট। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে দল যেভাবে চলছে, তা মেনে নেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভবপর হচ্ছে না। সিদ্ধান্তের সঙ্গে একেবারেই সহমত হতে পারছেন না। অথচ এই দলটি সৃষ্টি করেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, দীনদয়াল উপাধ্যায়, নানাজি দেশমুখ বা অটল বিহারি বাজপেয়ির মতো নেতারা; দেশ ও দশের মঙ্গলই ছিল যাঁদের একমাত্র ধ্যানজ্ঞান। আজ যাঁরা নেতা, তাঁদের অধিকাংশই নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। তাই তিনি দলের তিন গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। দলের সভাপতিকে আদভানি লিখেছেন, এই চিঠিটিই তাঁর ইস্তফাপত্র হিসেবে গণ্য করা হোক। দুপুরে খবর জানাজানি হওয়ার পরই চঞ্চল হয়ে ওঠে জাতীয় রাজনীতি। দলে আদভানি ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত বেঙ্কাইয়া নাইডু, অনন্ত কুমার, সুষমা স্বরাজেরা একে একে হাজির হন আদভানির বাড়িতে। চেষ্টা হয় তাঁকে বোঝানোর। প্রবীণ নেতা মুরলি মনোহর জোশি ফোন করেন রাজনাথকে। বলেন, কোনো অবস্থাতেই যেন ইস্তফাপত্র গ্রহণ না করা হয়। বিব্রত রাজনাথ জানিয়ে দেন, ইস্তফাপত্র তিনি খারিজ করে দিয়েছেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও আদভানি তাঁর সংকল্পে অটল থাকেন। সন্দেহ নেই, মোদিকে ঘিরে যে বিতর্ক দানা বেঁধেছে, আদভানির এই ইস্তফা তাতে এক নতুন মাত্রা যোগ করল।
No comments