টাকা দিলে খালাস না দিলে আসামি by নূরুজ্জামান
শুরু হয়েছে পুলিশের নয়া ধাঁচের বাণিজ্য।
‘অজ্ঞাত’ আসামি গ্রেপ্তার ও মামলায় জড়িয়ে টাকা আদায়ের ফন্দি এটি। রাজনৈতিক ও
নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় এ অজ্ঞাত আসামি হিসেবে ভুক্তভোগী হচ্ছেন
সাধারণ মানুষ।
কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী,
কর্মজীবী মানুষ বাদ যাচ্ছেন না কেউ। রাস্তা থেকে সন্দেহজনকভাবে আটক করে
থানায় নেয়ার পরই শুরু হয় টাকা আদায়ের কৌশল প্রয়োগ। চাহিদামতো টাকা আদায়
হলেই খালাস। আর টাকা না দিলে আদালতে চালান। ‘অজ্ঞাত’ আসামির তালিকায় জড়ানো
হচ্ছে মামলায়। বিরোধী দলের হরতাল অবরোধ এবং জামায়াত-শিবিরের সহিংস রাজনৈতিক
তৎপরতা শুরুর পর থেকে পুলিশের এ গ্রেপ্তার বাণিজ্যে মাত্রা বেড়েছে।
ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল এলাকার অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী এজাজুর রহমান (১৮)। পুলিশের এমনই গ্রেপ্তার বাণিজ্যের শিকার হন তিনি। এ শিক্ষার্থী জানান, আটকের পর তাকে বলা হয়, টাকা দিতে হবে। নইলে নাশকতাকারী হিসেবে চালান দেয়া হবে। আসামি করা হবে বিস্ফোরক ও বোমাবাজির মামলায়। বাড়াবাড়ি করলে পুলিশের ওপর হামলাকারী জঙ্গি গ্রুপের তকমা লাগিয়ে দেয়া হবে। এমন হুমকির পর ৪৫০০ টাকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি। জামায়াত নেতা মাওলানা সাঈদীর রায়-পরবর্তী সহিংসতার পর ঘটে এ ঘটনা। এজাজুর জানান, কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী না হয়েও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছি। পরে ধার-দেনা করে ঘুষ দিয়ে ছাড়া পেয়েছি।
আদালত ও রাজধানীর বিভিন্ন থানা সূত্রে জানা গেছে, সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতার পর সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে গ্রাম, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরির ঘোষণা দেয়া হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকার দলীয় সংগঠনের সহায়তায় পুলিশ নির্বিচার আটক ও গ্রেপ্তার বাণিজ্য শুরু করে। বিভিন্ন থানা পুলিশ সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ টাকার ভাগ পেয়েছেন পুলিশের পাশাপাশি সরকার দলীয় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। কোথাও ভাঙচুর কিংবা গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেই সংশ্লিষ্ট বিরোধী দলের তালিকাভুক্ত নেতাকর্মী ছাড়াও বিত্তশালীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বেশির ভাগ থানায় মামলার এজাহারে নাম উল্লেখের পাশাপাশি ‘অজ্ঞাত’ আসামি করা হয়েছে। ওই ‘অজ্ঞাত’দের ভয় দেখিয়েই ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে আসল অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রামে জামায়াত নেতাকে আটকের পর আওয়ামী লীগের এক নেতার সুপারিশে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। বিনিময়ে লেনদেন হয়েছে বড় অঙ্কের টাকার। এছাড়া বিভিন্ন থানা এলাকায় সরকার দলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের সরবরাহ করা তালিকা নিয়ে অভিযানে বের হচ্ছে পুলিশ। আটক করে থানায় আনার পর ওই নেতারাই টাকা নিয়ে দরকষাকষি করে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছেন। আবার উল্টো ঘটনাও ঘটছে। ব্যক্তিগত শত্রুতা, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ লোকজনকে ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি মাওলানা হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর থেকে বগুড়া, চট্টগ্রামের দুই উপজেলা সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া, রাজশাহী, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ৮৭টি মামলায় প্রায় দু’লাখ মানুষকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে নাম উল্লেখ আছে প্রায় ৪৫০০ জনের। আটক দেখানো হয়েছে ৩৪০ জনকে। কিন্তু মাঠের চিত্র ভিন্ন। আওয়ামী লীগের নেতাদের পাশাপাশি পুলিশের সোর্স নামধারী চক্র, থানা কেন্দ্রিক দালালরা আসামি আটকের ভয় দেখিয়ে দেদারসে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, আসামি করার হুমকি দিয়ে তারা টাকা আদায় করছে। আবার টাকা না পেলে আসামির তালিকায় নাম দিয়ে দিচ্ছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার শংকরপুর গ্রামের জামায়াতের সাবেক আমির মোয়াজ্জেম হোসেন, মোকামতলা ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি তোফাজ্জল হোসেন, দক্ষিণ লক্ষ্মীকোলা গ্রামের জামায়াতের সমর্থক আবু মুছা ও মোকামতলা বন্দরের শামীম হোসেনকে সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলায় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্দ্বের জের ধরে নিরপরাধ শিক্ষকদের আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর মামলার আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া একই জেলার পৌর এলাকায় পুলিশের হাতে আটক হন রিকশাচালক হাফিজুর রহমান ও কাঠ ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন। তাদের স্বজনদের অভিযোগ আটকের পরপরই পুলিশের সোর্স পরিচয়ে তাদের ছেড়ে দিতে ২০ হাজার করে টাকা দাবি করেছিল। একই ঘটনায় নন্দীগ্রাম উপজেলার সিংজানি গ্রাম থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে দু’ভাই আবদুল আজিজ ও আবদুল মজিদকে। পরে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাদের স্বজনরা। ১৬ই মার্চ রাতে নামুইট গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দিনমজুর নায়েব আলী (৪০)-কে। তার পরিবারের কাছেও টাকা দাবি করেছিল পুলিশ। ওই টাকা যোগাড় করতে না পারায় সহিংসতা মামলার আসামি করা হয়। সূত্র জানায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ২৮টি মামলায় ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১২০০ জনের নাম উল্লেখ আছে এবং গ্রেপ্তার মাত্র ৩৩ জন। এর মধ্যেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে বলাকা বাজারের পরিবহন ব্যবসায়ী আনিছুর রহমানকে কাপড়ের দোকান ভাঙচুরের একটি মামলায় আসামি করা হয়। কিন্তু তিনি কোন দলের লোক নন। গত ২২শে মার্চ রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলায় আসামি করা হয় এনামুল হককে। এনামুল বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলাম। ওই ঘটনা পুঁজি করে রাজপাড়া থানার সেকেন্ড অফিসার শরিফুল হক আমাকে জামায়াত-কর্মী আখ্যা দিয়ে মামলার আসামি করেন। গত ১২ই মার্চ ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলাকালে রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে সুমন, লিখন ও সজীব নামের তিনজনকে আটক করেন গাবতলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আনসার আলী ও এএসআই সবুর। পরিবারের সদস্যদের খবর দিয়ে রাত সাড়ে ৮টায় পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে তাদের ছাড়া হয় বলে দু’জনের পরিবার অভিযোগ করেন। ১১ই মার্চ হরতালের আগের রাতে তারেক নামের এক যুবককে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ আটক করে লালমাটিয়ার ডি ব্লক থেকে। আটকের পর তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে পুলিশ। পরে ১০ হাজার টাকায় রাত ১২টার দিতে মুক্তি মেলে তার। গত দু’মাসে হরতালে নাশকতায় পল্লবী থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। একইভাবে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অর্ধশতাধিক মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার বাদী পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। আসামি করা হয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক লোকজনকে। যাদের কাউকে আটক করে টাকার বিনিময়ে থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, মামলা ও আসামির সংখ্যা বেশি হওয়ায় দু-একটি ক্ষেত্রে ভুল হতেই পারে। তবে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
ঠাকুরগাঁও জেলার রাণীশংকৈল এলাকার অনার্স পড়ুয়া শিক্ষার্থী এজাজুর রহমান (১৮)। পুলিশের এমনই গ্রেপ্তার বাণিজ্যের শিকার হন তিনি। এ শিক্ষার্থী জানান, আটকের পর তাকে বলা হয়, টাকা দিতে হবে। নইলে নাশকতাকারী হিসেবে চালান দেয়া হবে। আসামি করা হবে বিস্ফোরক ও বোমাবাজির মামলায়। বাড়াবাড়ি করলে পুলিশের ওপর হামলাকারী জঙ্গি গ্রুপের তকমা লাগিয়ে দেয়া হবে। এমন হুমকির পর ৪৫০০ টাকা দিয়ে ছাড়া পান তিনি। জামায়াত নেতা মাওলানা সাঈদীর রায়-পরবর্তী সহিংসতার পর ঘটে এ ঘটনা। এজাজুর জানান, কোন রাজনৈতিক দলের কর্মী না হয়েও পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছি। পরে ধার-দেনা করে ঘুষ দিয়ে ছাড়া পেয়েছি।
আদালত ও রাজধানীর বিভিন্ন থানা সূত্রে জানা গেছে, সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার পর সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় সহিংসতার পর সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে গ্রাম, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড ভিত্তিক বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের তালিকা তৈরির ঘোষণা দেয়া হয়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সরকার দলীয় সংগঠনের সহায়তায় পুলিশ নির্বিচার আটক ও গ্রেপ্তার বাণিজ্য শুরু করে। বিভিন্ন থানা পুলিশ সাধারণ মানুষকে গ্রেপ্তার করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ টাকার ভাগ পেয়েছেন পুলিশের পাশাপাশি সরকার দলীয় সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। কোথাও ভাঙচুর কিংবা গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটলেই সংশ্লিষ্ট বিরোধী দলের তালিকাভুক্ত নেতাকর্মী ছাড়াও বিত্তশালীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। বেশির ভাগ থানায় মামলার এজাহারে নাম উল্লেখের পাশাপাশি ‘অজ্ঞাত’ আসামি করা হয়েছে। ওই ‘অজ্ঞাত’দের ভয় দেখিয়েই ধনাঢ্য ব্যক্তিদের টার্গেট করে টাকা আদায় করা হচ্ছে। এতে আসল অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। অভিযোগ উঠেছে, চট্টগ্রামে জামায়াত নেতাকে আটকের পর আওয়ামী লীগের এক নেতার সুপারিশে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। বিনিময়ে লেনদেন হয়েছে বড় অঙ্কের টাকার। এছাড়া বিভিন্ন থানা এলাকায় সরকার দলীয় সংগঠনের নেতাকর্মীদের সরবরাহ করা তালিকা নিয়ে অভিযানে বের হচ্ছে পুলিশ। আটক করে থানায় আনার পর ওই নেতারাই টাকা নিয়ে দরকষাকষি করে ছেড়ে দেয়ার ব্যবস্থা করছেন। আবার উল্টো ঘটনাও ঘটছে। ব্যক্তিগত শত্রুতা, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে প্রতিপক্ষ লোকজনকে ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারি মাওলানা হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায়ের পর থেকে বগুড়া, চট্টগ্রামের দুই উপজেলা সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া, রাজশাহী, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ৮৭টি মামলায় প্রায় দু’লাখ মানুষকে আসামি করা হয়। এর মধ্যে নাম উল্লেখ আছে প্রায় ৪৫০০ জনের। আটক দেখানো হয়েছে ৩৪০ জনকে। কিন্তু মাঠের চিত্র ভিন্ন। আওয়ামী লীগের নেতাদের পাশাপাশি পুলিশের সোর্স নামধারী চক্র, থানা কেন্দ্রিক দালালরা আসামি আটকের ভয় দেখিয়ে দেদারসে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, আসামি করার হুমকি দিয়ে তারা টাকা আদায় করছে। আবার টাকা না পেলে আসামির তালিকায় নাম দিয়ে দিচ্ছে। বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার শংকরপুর গ্রামের জামায়াতের সাবেক আমির মোয়াজ্জেম হোসেন, মোকামতলা ইউনিয়ন জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি তোফাজ্জল হোসেন, দক্ষিণ লক্ষ্মীকোলা গ্রামের জামায়াতের সমর্থক আবু মুছা ও মোকামতলা বন্দরের শামীম হোসেনকে সহিংসতা ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তারের পর মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলায় স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির দ্বন্দ্বের জের ধরে নিরপরাধ শিক্ষকদের আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর মামলার আসামি করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া একই জেলার পৌর এলাকায় পুলিশের হাতে আটক হন রিকশাচালক হাফিজুর রহমান ও কাঠ ব্যবসায়ী শাহাদত হোসেন। তাদের স্বজনদের অভিযোগ আটকের পরপরই পুলিশের সোর্স পরিচয়ে তাদের ছেড়ে দিতে ২০ হাজার করে টাকা দাবি করেছিল। একই ঘটনায় নন্দীগ্রাম উপজেলার সিংজানি গ্রাম থেকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে দু’ভাই আবদুল আজিজ ও আবদুল মজিদকে। পরে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাদের স্বজনরা। ১৬ই মার্চ রাতে নামুইট গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করা হয় দিনমজুর নায়েব আলী (৪০)-কে। তার পরিবারের কাছেও টাকা দাবি করেছিল পুলিশ। ওই টাকা যোগাড় করতে না পারায় সহিংসতা মামলার আসামি করা হয়। সূত্র জানায়, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ২৮টি মামলায় ১৮ হাজার থেকে ২০ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১২০০ জনের নাম উল্লেখ আছে এবং গ্রেপ্তার মাত্র ৩৩ জন। এর মধ্যেও রয়েছে অনিয়মের অভিযোগ। থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, ব্যবসায়িক বিরোধের জের ধরে বলাকা বাজারের পরিবহন ব্যবসায়ী আনিছুর রহমানকে কাপড়ের দোকান ভাঙচুরের একটি মামলায় আসামি করা হয়। কিন্তু তিনি কোন দলের লোক নন। গত ২২শে মার্চ রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের সংঘর্ষের ঘটনায় নগরীর রাজপাড়া থানায় মামলায় আসামি করা হয় এনামুল হককে। এনামুল বলেন, পারিবারিক দ্বন্দ্বের জের ধরে স্ত্রীকে তালাক দিয়েছিলাম। ওই ঘটনা পুঁজি করে রাজপাড়া থানার সেকেন্ড অফিসার শরিফুল হক আমাকে জামায়াত-কর্মী আখ্যা দিয়ে মামলার আসামি করেন। গত ১২ই মার্চ ১৮ দলীয় জোটের হরতাল চলাকালে রাজধানীর দারুস সালাম থানা এলাকা থেকে সুমন, লিখন ও সজীব নামের তিনজনকে আটক করেন গাবতলী পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আনসার আলী ও এএসআই সবুর। পরিবারের সদস্যদের খবর দিয়ে রাত সাড়ে ৮টায় পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে তাদের ছাড়া হয় বলে দু’জনের পরিবার অভিযোগ করেন। ১১ই মার্চ হরতালের আগের রাতে তারেক নামের এক যুবককে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ আটক করে লালমাটিয়ার ডি ব্লক থেকে। আটকের পর তার পরিবারের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে পুলিশ। পরে ১০ হাজার টাকায় রাত ১২টার দিতে মুক্তি মেলে তার। গত দু’মাসে হরতালে নাশকতায় পল্লবী থানায় বেশ কয়েকটি মামলা হয়। একইভাবে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, সবুজবাগ ও খিলগাঁও থানাসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় অর্ধশতাধিক মামলা করা হয়েছে। এসব মামলার বাদী পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। আসামি করা হয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক লোকজনকে। যাদের কাউকে আটক করে টাকার বিনিময়ে থানা থেকে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (মিডিয়া) মো. মাসুদুর রহমান বলেন, মামলা ও আসামির সংখ্যা বেশি হওয়ায় দু-একটি ক্ষেত্রে ভুল হতেই পারে। তবে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কেউ লিখিত অভিযোগ করলে সংশ্লিষ্ট পুলিশের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
No comments