সমাধান রাজপথে নয়, বিচার বিভাগকে প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে by কাজল ঘোষ
চরমপন্থি আর মূলধারাপন্থি দু’ধারার
দ্বন্দ্বে রাজনীতিতে জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। যুদ্ধাপরাধ বিচারের
দাবি নিয়ে অতিকথন বিচার ব্যবস্থার জন্যই বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান রাজপথে নয়, স্বচ্ছ বিচার
ব্যবস্থাই এর সমাধান।
মানবজমিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সাবেক
উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিচার বিভাগকেই
প্রজ্ঞার পরিচয় দিতে হবে। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু না হয় তবে চরমপন্থি দল
নিষিদ্ধ করেও চলমান সঙ্কটের নিরসন হবে না। আর আগামী দিনের রাজনীতির
গতি-প্রকৃতি কি হবে তা নির্ভর করছে বড় দু’দলের রণকৌশলের ওপর। ওয়ান ইলেভেনে
ইয়াজউদ্দিন সরকারের উপদেষ্টা পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশজুড়ে আলোচনায় আসা ড.
আকবর আলি খান বর্তমান সঙ্কট থেকে উত্তরণ, সংলাপ, জামায়াত নিষিদ্ধকরণ ও
সাধারণ নির্বাচন প্রশ্নে খোলামেলা কথা বলেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, দু’দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের দু’টি বিবদমান জোটের সংঘর্ষের রাজনীতি চলছে। কখনও কখনও বিরতি দেখা দিলেও এ সংঘর্ষ দীর্ঘদিন ধরেই অব্যাহত রয়েছে। গত ৪ বছর ধরে এই সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে এবং বর্তমানে এই সংঘর্ষে দু’টি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হওয়ার কারণ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক। আরেকটি কারণ, বর্তমান সরকার কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অবলুপ্তি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দু’টি ধারা আছে- একটি চরমপন্থি বনাম মূলধারাপন্থিদের দ্বন্দ্ব। আর অন্যটি- মূলধারাপন্থিদের মধ্যেই বিতর্ক। বর্তমানে এই দু’টি দ্বন্দ্বই প্রকট হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই দ্বন্দ্বগুলো আরও জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। এই বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়ে উঠেছে।
যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে এক প্রশ্নে আকবর আলি খান বলেন, যুদ্ধাপরাধের ফৌজদারি অপরাধ কখনও তামাদি হয় না। ৪২ বছর পরে বিচার হলে তাতে ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দেয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সেই অজুহাতে যারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে তাদেরকে ক্ষমা করা যাবে না। যুদ্ধাপরাধের বিচার হতেই হবে। কাজেই বিচার সম্বন্ধে তেমন কোন বিতর্ক নেই। অন্তত মুখে সব রাজনৈতিক দলই এই বিচারের গুরুত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। এখন যে বিতর্ক রয়েছে- তা হলো বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে। এই স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় বিচার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা। এই সমস্যার সমাধান রাজপথে নয়। এর সমাধান করতে হবে স্বচ্ছ বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে। এ নিয়ে রাজপথের আন্দোলন ও নানামুখী বিতর্কে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বিচার ব্যবস্থার জন্য। আমরা আশা করি যে, বিচার ব্যবস্থা তাদের প্রজ্ঞার মাধ্যমে এ সঙ্কটের একটি সমাধান খুঁজে পাবেন।
জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে কি হবে না এমন আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান আইন অনুসারে সামপ্রদায়িক সংগঠন এবং সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ করার বিধান রয়েছে। আমি কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার জন্য নতুন আইনের বিপক্ষে। প্রচলিত আইনে যদি কেউ নিষিদ্ধ হওয়ার যোগ্য হন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের অবশ্যকর্তব্য। তবে এই ব্যবস্থা আইন অনুসারেই নিতে হবে। বর্তমান আইনে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে- এ ধরনের সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আগে তাদেরকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হবে। এবং তাদের বক্তব্য বিবেচনা করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি মনে করি যে, সাম্প্রদায়িকতা সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর কুফল আমরা পাকিস্তানে এখন দেখতে পাচ্ছি। হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা নিয়ে যে সামপ্রদায়িকতার সূচনা হয়েছিল- তা এখন শুধু মুসলমানদের মধ্যেই শুরু হয়েছে। পাকিস্তানে নিরাপদে মসজিদে নামাজ পড়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মসজিদেও হানাহানি হচ্ছে। বাংলাদেশে সকল ধরনের সামপ্রদায়িকতা রুখতে হবে। সন্ত্রাসের ব্যাপারেও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে প্রবাসে শ্রমিকদের ভিসা পাওয়া এবং যাতায়াত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি হবে। সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অগণতান্ত্রিক। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অনেক সরকার চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিজেরাই চরমপন্থার আশ্রয় নেয়। এ ধরনের ব্যবস্থা বাংলাদেশে যেন সৃষ্টি না হয় সেজন্য অবশ্যই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা যদি আগামী নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না করতে পারি তাহলে চরমপন্থি দল নিষিদ্ধ করেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন সম্ভব হবে না। কাজেই এক্ষেত্রে দু’ধরনের নীতি গ্রহণ করতে হবে। একটি হলো চরমপন্থিদের বিপক্ষে দৃঢ় অবস্থান; অন্যটি গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ও আদর্শের প্রতি অবিচল থাকা। এ দুটোর সমন্বয় অবশ্যই শক্ত। কিন্তু এই শক্ত কাজটি না করতে পারলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাজমান সঙ্কটের সমাধান খোঁজা সম্ভব নয়।
সমপ্রতি সংলাপ নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন- এর কতটা লোক দেখানো আর কতটা আন্তরিক তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলো এখনও সংলাপের গুরুত্ব নিয়ে সম্পূর্ণরূপে উপলদ্ধি করতে পারছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিশ্চিন্ত না হবেন সংলাপে তাদের লাভ হবে- ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সংলাপে বসবেন না। আর সমঝোতা হতে হলে কিছু দিতে হবে এবং কিছু নিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই দেয়া-নেয়ার মনোবৃত্তি না তৈরি হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অর্থবহ সমঝোতা সম্ভব হবে না।
এখন পর্যন্ত দু’পক্ষ থেকেই যে ধরনের বক্তব্য এসেছে তাতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে। সমঝোতার প্রথম পদক্ষেপ একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও নিন্দা থেকে বিরত থাকতে হবে। কমপক্ষে পারস্পরিক গালিগালাজ কমাতে হবে। সেটা না হলে সংলাপ অর্থবহ হবে না।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে ড. আকবর আলি বলেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী অত্যন্ত শক্ত। তবে সঙ্কটের সমাধান না হলে সঙ্কট আরও গভীর হবে। আর দেশ আগামীতে কোন দিকে যাচ্ছে তা দুই জোটের রণকৌশলের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের রণকৌশল হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি আলোচনার বাইরে রাখা আর বিরোধী দলের রণকৌশল হবে এ বিষয়টিকে কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা। কার রণকৌশল সফল হবে তার ওপরই ফল নির্ভর করে। দেশে বর্তমানে যে সংঘর্ষের রাজনীতি বিরাজ করছে তাতে কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যক্তিকে বাইরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সংঘর্ষের রাজনীতিতে এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হবে- এটাই স্বাভাবিক। রাজনীতিবিদরাই সমস্যার সৃষ্টি করেছেন, একমাত্র তারাই এ পরিস্থিতির সমাধান করতে পারেন। বাইরের কোন শক্তি অথবা দেশের ভেতরের রাজনীতিবহির্ভূত কোন শক্তি এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। আমরা আশা করবো সমস্যাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে তারাই ব্যবস্থা নেবেন।
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অত্যন্ত উদ্বেগজনক উল্লেখ করে তিনি বলেন, দু’দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের দু’টি বিবদমান জোটের সংঘর্ষের রাজনীতি চলছে। কখনও কখনও বিরতি দেখা দিলেও এ সংঘর্ষ দীর্ঘদিন ধরেই অব্যাহত রয়েছে। গত ৪ বছর ধরে এই সংঘর্ষ বেড়েই চলেছে এবং বর্তমানে এই সংঘর্ষে দু’টি নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে। একটি নতুন মাত্রা যুক্ত হওয়ার কারণ, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্ক। আরেকটি কারণ, বর্তমান সরকার কর্তৃক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অবলুপ্তি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দু’টি ধারা আছে- একটি চরমপন্থি বনাম মূলধারাপন্থিদের দ্বন্দ্ব। আর অন্যটি- মূলধারাপন্থিদের মধ্যেই বিতর্ক। বর্তমানে এই দু’টি দ্বন্দ্বই প্রকট হয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে এই দ্বন্দ্বগুলো আরও জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। এই বিস্ফোরণোন্মুখ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিপন্ন হয়ে উঠেছে।
যুদ্ধাপরাধ বিচারের প্রক্রিয়া নিয়ে এক প্রশ্নে আকবর আলি খান বলেন, যুদ্ধাপরাধের ফৌজদারি অপরাধ কখনও তামাদি হয় না। ৪২ বছর পরে বিচার হলে তাতে ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দেয়া স্বাভাবিক। কিন্তু সেই অজুহাতে যারা ফৌজদারি অপরাধ করেছে তাদেরকে ক্ষমা করা যাবে না। যুদ্ধাপরাধের বিচার হতেই হবে। কাজেই বিচার সম্বন্ধে তেমন কোন বিতর্ক নেই। অন্তত মুখে সব রাজনৈতিক দলই এই বিচারের গুরুত্ব স্বীকার করে নিয়েছে। এখন যে বিতর্ক রয়েছে- তা হলো বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে। এই স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠার একমাত্র উপায় বিচার ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করা। এই সমস্যার সমাধান রাজপথে নয়। এর সমাধান করতে হবে স্বচ্ছ বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে। এ নিয়ে রাজপথের আন্দোলন ও নানামুখী বিতর্কে বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বিচার ব্যবস্থার জন্য। আমরা আশা করি যে, বিচার ব্যবস্থা তাদের প্রজ্ঞার মাধ্যমে এ সঙ্কটের একটি সমাধান খুঁজে পাবেন।
জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে কি হবে না এমন আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমান আইন অনুসারে সামপ্রদায়িক সংগঠন এবং সন্ত্রাসী সংগঠন নিষিদ্ধ করার বিধান রয়েছে। আমি কোন রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার জন্য নতুন আইনের বিপক্ষে। প্রচলিত আইনে যদি কেউ নিষিদ্ধ হওয়ার যোগ্য হন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের অবশ্যকর্তব্য। তবে এই ব্যবস্থা আইন অনুসারেই নিতে হবে। বর্তমান আইনে সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে- এ ধরনের সংগঠনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আগে তাদেরকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হবে। এবং তাদের বক্তব্য বিবেচনা করে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমি মনে করি যে, সাম্প্রদায়িকতা সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। এর কুফল আমরা পাকিস্তানে এখন দেখতে পাচ্ছি। হিন্দু-মুসলমানের দাঙ্গা নিয়ে যে সামপ্রদায়িকতার সূচনা হয়েছিল- তা এখন শুধু মুসলমানদের মধ্যেই শুরু হয়েছে। পাকিস্তানে নিরাপদে মসজিদে নামাজ পড়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ মসজিদেও হানাহানি হচ্ছে। বাংলাদেশে সকল ধরনের সামপ্রদায়িকতা রুখতে হবে। সন্ত্রাসের ব্যাপারেও বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। যদি সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে তাহলে প্রবাসে শ্রমিকদের ভিসা পাওয়া এবং যাতায়াত করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অসুবিধার সৃষ্টি হবে। সন্ত্রাসবাদ সম্পূর্ণ বেআইনি এবং অগণতান্ত্রিক। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। একটি বিষয় মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, অনেক সরকার চরমপন্থিদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিজেরাই চরমপন্থার আশ্রয় নেয়। এ ধরনের ব্যবস্থা বাংলাদেশে যেন সৃষ্টি না হয় সেজন্য অবশ্যই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে। আমরা যদি আগামী নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ না করতে পারি তাহলে চরমপন্থি দল নিষিদ্ধ করেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন সম্ভব হবে না। কাজেই এক্ষেত্রে দু’ধরনের নীতি গ্রহণ করতে হবে। একটি হলো চরমপন্থিদের বিপক্ষে দৃঢ় অবস্থান; অন্যটি গণতন্ত্রের মূল্যবোধ ও আদর্শের প্রতি অবিচল থাকা। এ দুটোর সমন্বয় অবশ্যই শক্ত। কিন্তু এই শক্ত কাজটি না করতে পারলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে বিরাজমান সঙ্কটের সমাধান খোঁজা সম্ভব নয়।
সমপ্রতি সংলাপ নিয়ে অনেকেই কথা বলছেন- এর কতটা লোক দেখানো আর কতটা আন্তরিক তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। আমার মনে হয়, রাজনৈতিক দলগুলো এখনও সংলাপের গুরুত্ব নিয়ে সম্পূর্ণরূপে উপলদ্ধি করতে পারছে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা নিশ্চিন্ত না হবেন সংলাপে তাদের লাভ হবে- ততক্ষণ পর্যন্ত তারা সংলাপে বসবেন না। আর সমঝোতা হতে হলে কিছু দিতে হবে এবং কিছু নিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এই দেয়া-নেয়ার মনোবৃত্তি না তৈরি হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অর্থবহ সমঝোতা সম্ভব হবে না।
এখন পর্যন্ত দু’পক্ষ থেকেই যে ধরনের বক্তব্য এসেছে তাতে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে। সমঝোতার প্রথম পদক্ষেপ একে অপরের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা ও নিন্দা থেকে বিরত থাকতে হবে। কমপক্ষে পারস্পরিক গালিগালাজ কমাতে হবে। সেটা না হলে সংলাপ অর্থবহ হবে না।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ প্রশ্নে ড. আকবর আলি বলেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী অত্যন্ত শক্ত। তবে সঙ্কটের সমাধান না হলে সঙ্কট আরও গভীর হবে। আর দেশ আগামীতে কোন দিকে যাচ্ছে তা দুই জোটের রণকৌশলের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের রণকৌশল হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিষয়টি আলোচনার বাইরে রাখা আর বিরোধী দলের রণকৌশল হবে এ বিষয়টিকে কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসা। কার রণকৌশল সফল হবে তার ওপরই ফল নির্ভর করে। দেশে বর্তমানে যে সংঘর্ষের রাজনীতি বিরাজ করছে তাতে কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন ব্যক্তিকে বাইরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সংঘর্ষের রাজনীতিতে এ ধরনের পরিস্থিতির উদ্ভব হবে- এটাই স্বাভাবিক। রাজনীতিবিদরাই সমস্যার সৃষ্টি করেছেন, একমাত্র তারাই এ পরিস্থিতির সমাধান করতে পারেন। বাইরের কোন শক্তি অথবা দেশের ভেতরের রাজনীতিবহির্ভূত কোন শক্তি এ সমস্যার সমাধান করতে পারবে না। আমরা আশা করবো সমস্যাটির গুরুত্ব অনুধাবন করে তারাই ব্যবস্থা নেবেন।
No comments