নির্লোভ রাজনীতিক জিল্লুর রহমান by নূরনবী সিদ্দিক সুইন, আশিস বিশ্বাস

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ছিলেন রাজনীতি ও রাজনীতির বাইরে এক অনন্য মানুষ। ১৯২৯ সালের ৯ মার্চ কিশোরগঞ্জের ভৈরবে জন্ম নেওয়া এ মানুষটি আমৃত্যু কাজ করে গেছেন দেশের জন্য। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত যুক্ত ছিলেন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে।
আওয়ামী লীগের দলীয় লোক হিসেবে প্রেসিডেন্ট মনোনয়ন দেওয়া হলেও সবাই যেনো তাকে অভিবাবকই ভাবতেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তার কোনো শত্রু ছিল বা তার সমালোচনা হয়েছে এমনটা চোখে পড়েনা।
আর বর্ষীয়ান এ রাজনীতিবিদই বুধবার(২০ মার্চ) চলে গেলেন না ফেরার দেশে। তার শোকে স্তব্ধ পুরো দেশ জাতি। দল মত নির্বিশেষে সব শ্রেণি পেশার মানুষ শোক জানাচ্ছেন। তার মৃত্যুতে অনেকটা ভেঙে পড়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের চলমান সহিংসতার রাজনীতির এই দু:সময়ে তার চলে যাওয়াতেই দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী শোকাহত। তেমনি বিরোধী শিবিরের অনেকেই একটু হলেও মনে করছেন শেষ সময়ে তার মধ্যস্থতায় হয়তো একটা সমাধানে পৌঁছানো যেতো।

রাজপথের সঙ্গী স্ত্রী আইভি রহমান, এক ছেলে ও দুই মেয়ে নিয়ে জিল্লুর রহমান যখন সুখের জীবন পার করছিলেন তখন ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আবার বড় আঘাত আসে তাঁর জীবনে।

শেখ হাসিনার জনসভায় ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী আইভি রহমান মারা যান। স্ত্রীকে হারিয়ে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন জিল্লুর রহমান।

জিল্লুর রহমান ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীকার আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ করলে ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি দেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

বঙ্গভবনে তাকে শপথ বাক্য পাঠ করান সে সময়কার প্রধান বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন।

জিল্লুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে মাস্টার্স করেন। এখান থেকেই তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

স্বাধীনতার পর তিনি আওয়ামী লীগের প্রথম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তিনি গ্রেপ্তার হয়ে চার বছর কারাগারে থাকেন।

রাজনীতি-আন্দোলন:
১৯৭০ সালের জিল্লুর রহমান পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। তিনি কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ দলের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৮ সালের জাতীয় সংসদসহ ৭৩, ৮৬, ৯৬ এবং ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জের কুলিয়াচর-ভৈরত আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে জিল্লুর রহমান এলজিইআরডিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

২০০৬ সালের ১১ জানুয়ারি দেশে ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করলে জিল্লুর রহমান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ:
২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট বিপুল ভোটে জয়লাভ করলে জিল্লুর রহমান সংসদ উপনেতা হিসেবে নির্বাচিত হন।

এর পর তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দিতায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ১৯-তম রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত হন এবং ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ শপথ গ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গত ৯ মার্চ ছিল তার ৮৫তম জন্মদিন। অবশ্য এ দিনটিতেই তাকে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে সিঙ্গাপুরে নিয়ে যাওয়া হয়।

বাংলাদেশের ১৭-তম রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের মেয়াদ ছিল ২০০৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নবম সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ায় তার মেয়াদও দীর্ঘায়িত হয়।

No comments

Powered by Blogger.