স্বাধীন বাংলাদেশের ৪৩ বছর
‘‘অবিনাশী আগুনে পোড়ে হায়রে শোকার্ত
স্বদেশ/ দুখিনী মায়ের অশ্রু জমা হয় নিভৃত পাঁজরে/ যে যাবে যুদ্ধে এখনি সে
উঠুক উঠুক ঝলসে/ যে যাবে যুদ্ধে সবকিছু ভাঙুক ভাঙুক সে...।”
ভয়াল ‘কালরাত্রি’র পর রক্তে রাঙা নতুন সূর্য উঠেছিল ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ। এসেছে স্বাধীনতা। এদিন বাংলাদেশের জন্মদিন।
স্বাধীনতা
মানে বঙ্গবন্ধু, রবি ঠাকুরের `ফাগুনদিনের বকুলচাঁপা, শ্রাবণদিনের কেয়া`।
স্বাধীনতা কবি নজরুলের `অসঙ্কোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস`, শামসুর রাহমানের
অবিনাশী কবিতা-`পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।` স্বাধীনতা তো ভোরের
পাখি, অরুণআলোর খেয়া, `পাতায় পাতায় টুপুর টুপুর নূপুর মধুর বাজে`।
স্বাধীনতা মানে ইচ্ছার স্বাধীনতা, রাজনীতির স্বাধীনতা এবং অবশ্যই উন্নত-সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক পরিবেশে শ্রেণী-পেশা-ধর্ম নির্বিশেষে সবার আরও ভালো থাকার জন্য নিশ্চিত অধিকার। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছিলেন, `এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।` অশেষ আত্মত্যাগের বিনিময়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি। মুক্তির সংগ্রামে বিজয়ী হওয়াই নবতর প্রেক্ষাপটের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
মঙ্গলবার ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালী জাতির জীবনে সূচনা ঘটবে আরও একটি ঝলমল উৎসব দিনের। রক্ত, অশ্রুস্নাত বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন ২৬ মার্চ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহার্ঘ স্বাধীনতার ৪৩তম বার্ষিকী। এ ভূ-ভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন, বাঙালীর সহস্র বছরের জীবন কাঁপানো ইতিহাস মহান স্বাধীনতা। অসংখ্য শহীদের রক্তে ভেজা, জাতির বীরসেনানীদের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনা দিন। বাঙালীর স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিন। গৌরব ও স্বজন হারানোর বেদনার এই দিনে বীর বাঙালী সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল। তাই আজ গৌরব ও অহঙ্কারের দিন।
এবারে সত্যিই এক ভিন্ন আবহে, প্রেক্ষাপটে জাতির সামনে এসেছে স্বাধীনতা দিবস। যে দলের নেতৃত্বে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা, সেই বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ গত তিন বছর ধরে মহাবিজয় নিয়ে ক্ষমতায়। দীর্ঘ চার দশকের দাবি পূরণে যুদ্ধাপরাধীদের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। একাত্তরের স্বীকৃত নরঘাতক শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম-নিজামী-মুজাহিদ-সাঈদী গং এখন জেলখানায়। দৃষ্টান্তমূলক বিচারের অপেক্ষায় গুনছে মৃত্যুর প্রহর। তাই বাঙালী জাতি নতুন উদ্দীপনায়, মুক্তিযুদ্ধের প্রখর চেতনায় প্রগতিবিরোধী শক্তি জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিহত ও বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারে প্রাণিত। চারদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার দেশের মানুষ।
স্বাধীনতার প্রায় ৪১ বছর পর গণহত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণকারী মানবতা ও স্বাধীনতার শত্রু দেশদ্রোহী যুদ্ধাপরাধীদের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে বিচারিক আদালতে। ইতিমধ্যে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল। একই দলের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ায় দেশপ্রেমিক জনতা মেনে না নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। শাহবাগ গণজাগরণের এ আন্দোলন সারাবিশ্বব্যাপী নাড়া দেয়। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে জ্বলে ওঠে তারুণ্য। ফাঁসির দাবিতে এ আন্দোলন এখনও চলমান।
দেশব্যাপী সৃষ্ট গণজাগরণে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র রাজাকার-আলবদর-আলশামসরা তাই আজ শঙ্কিত, তটস্থ। জাতির ওই দুঃসময়ে এসব বিশ্বাসঘাতক সহযোগিতা করেছিল পাকিস্তানী বাহিনীকে। তারা উল্টো অস্ত্র ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অংশ নেয় গণহত্যায়। সেই হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে স্বাধীনতার ৪২ বছর পর বাংলাদেশ জেগেছে। জেগেছে বাঙালি। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া আজ কেবলই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি।
স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালী জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে এক সাগর রক্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে পুরো বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালী। ১৯৪৮, ’৫২ পেরিয়ে ’৫৪, ’৬২, ’৬৬-এর পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে জেনারেল আইয়ুবের শাসন। জনতার সাগরে উন্মাতাল স্রোতধারা। ‘জাগো জাগো বাঙালী জাগো,’ ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা,’ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় গ্রাম-শহর- জনপদ।
শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাঙালীর হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালী হত্যাযজ্ঞে। তবে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় দিকনির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালীর হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ছবি।
কিন্তু বাঙালীর আবেগ, সংগ্রাম ও মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নির্মূল করতে অস্ত্র হাতে নামে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী। শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা। সেই কালরাত থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদের পৈশাচিক বর্বরতা।
সেই রাতে হানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে বাংলাদেশের নেতাকে। গ্রেফতারের আগে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ঘোষণা করেন : `আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।` স্বাধীনতা ঘোষণার পর শুরু হয় মুক্তির যুদ্ধ। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপঅধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে নতুন রূপ নেয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। বাঙালির নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ বিংশ শতকে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। নয় মাস যুদ্ধের পর বিজয় আসে বাংলাদেশের।
স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে ১২টা ১ মিনিটে রাজধানীতে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় নেতারাসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে জাতীয় স্মৃতি সৌধের বেদিমূল। সারা দেশে নানা আয়োজনে শ্রদ্ধা জানানো হবে স্বাধীনতার শহীদদের, কৃতজ্ঞতা জানানো হবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণীতে শহীদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা।
২৬ মার্চ উপলক্ষে মঙ্গলবার সারাদেশে সরকারি ছুটি। এদিন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্ট, সিপিবি, জাসদ,বাসদসহ বিভিন্ন দল নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
স্বাধীনতা মানে ইচ্ছার স্বাধীনতা, রাজনীতির স্বাধীনতা এবং অবশ্যই উন্নত-সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক পরিবেশে শ্রেণী-পেশা-ধর্ম নির্বিশেষে সবার আরও ভালো থাকার জন্য নিশ্চিত অধিকার। বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছিলেন, `এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।` অশেষ আত্মত্যাগের বিনিময়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি। মুক্তির সংগ্রামে বিজয়ী হওয়াই নবতর প্রেক্ষাপটের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
মঙ্গলবার ভোরের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই বাঙালী জাতির জীবনে সূচনা ঘটবে আরও একটি ঝলমল উৎসব দিনের। রক্ত, অশ্রুস্নাত বিক্ষুব্ধ বিদ্রোহের দিন ২৬ মার্চ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত মহার্ঘ স্বাধীনতার ৪৩তম বার্ষিকী। এ ভূ-ভাগের সবচেয়ে বড় অর্জন, বাঙালীর সহস্র বছরের জীবন কাঁপানো ইতিহাস মহান স্বাধীনতা। অসংখ্য শহীদের রক্তে ভেজা, জাতির বীরসেনানীদের রক্তস্নাত মুক্তিযুদ্ধের সূচনা দিন। বাঙালীর স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিন। গৌরব ও স্বজন হারানোর বেদনার এই দিনে বীর বাঙালী সশস্ত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করেছিল। তাই আজ গৌরব ও অহঙ্কারের দিন।
এবারে সত্যিই এক ভিন্ন আবহে, প্রেক্ষাপটে জাতির সামনে এসেছে স্বাধীনতা দিবস। যে দলের নেতৃত্বে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে এনেছে স্বাধীনতা, সেই বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া দল আওয়ামী লীগ গত তিন বছর ধরে মহাবিজয় নিয়ে ক্ষমতায়। দীর্ঘ চার দশকের দাবি পূরণে যুদ্ধাপরাধীদের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে। একাত্তরের স্বীকৃত নরঘাতক শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম-নিজামী-মুজাহিদ-সাঈদী গং এখন জেলখানায়। দৃষ্টান্তমূলক বিচারের অপেক্ষায় গুনছে মৃত্যুর প্রহর। তাই বাঙালী জাতি নতুন উদ্দীপনায়, মুক্তিযুদ্ধের প্রখর চেতনায় প্রগতিবিরোধী শক্তি জঙ্গীবাদ, মৌলবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিহত ও বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকারে প্রাণিত। চারদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সোচ্চার দেশের মানুষ।
স্বাধীনতার প্রায় ৪১ বছর পর গণহত্যা, লুণ্ঠন ও ধর্ষণকারী মানবতা ও স্বাধীনতার শত্রু দেশদ্রোহী যুদ্ধাপরাধীদের আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে বিচারিক আদালতে। ইতিমধ্যে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর ফাঁসির রায় দিয়েছে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল। একই দলের যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়ায় দেশপ্রেমিক জনতা মেনে না নিয়ে আন্দোলন শুরু করে। শাহবাগ গণজাগরণের এ আন্দোলন সারাবিশ্বব্যাপী নাড়া দেয়। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে জ্বলে ওঠে তারুণ্য। ফাঁসির দাবিতে এ আন্দোলন এখনও চলমান।
দেশব্যাপী সৃষ্ট গণজাগরণে স্বাধীনতাবিরোধী চক্র রাজাকার-আলবদর-আলশামসরা তাই আজ শঙ্কিত, তটস্থ। জাতির ওই দুঃসময়ে এসব বিশ্বাসঘাতক সহযোগিতা করেছিল পাকিস্তানী বাহিনীকে। তারা উল্টো অস্ত্র ধরে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে অংশ নেয় গণহত্যায়। সেই হত্যাকারীদের বিচারের দাবিতে স্বাধীনতার ৪২ বছর পর বাংলাদেশ জেগেছে। জেগেছে বাঙালি। টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া আজ কেবলই যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি।
স্বাধীনতা অর্জন করতে বাঙালী জাতিকে করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রাম, দিতে হয়েছে এক সাগর রক্ত। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধাপে ধাপে পুরো বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতার প্রশ্নে ঐক্যবদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের অব্যবহিত পরেই ভাষার প্রশ্নে একাত্ম হয় বাঙালী। ১৯৪৮, ’৫২ পেরিয়ে ’৫৪, ’৬২, ’৬৬-এর পথ বেয়ে আসে ১৯৬৯। ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানে কেঁপে ওঠে জেনারেল আইয়ুবের শাসন। জনতার সাগরে উন্মাতাল স্রোতধারা। ‘জাগো জাগো বাঙালী জাগো,’ ‘তোমার আমার ঠিকানা- পদ্মা মেঘনা যমুনা,’ ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় গ্রাম-শহর- জনপদ।
শত ষড়যন্ত্র ও সামরিক জান্তার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সত্তরের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। কিন্তু বাঙালীর হাতে শাসনভার দেয়ার বদলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আলোচনার নামে করতে থাকেন কালক্ষেপণ। প্রস্তুত হয় হিংস্র কায়দায় বাঙালী হত্যাযজ্ঞে। তবে ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণেই পাওয়া যায় দিকনির্দেশনা। আক্ষরিক অর্থেই তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রশাসন চলছিল বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। সেই প্রবল প্রদীপ্ত আন্দোলনের জোয়ারে ধীরে ধীরে বাঙালীর হৃদয়ে আঁকা হয় একটি লাল সবুজ পতাকা, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশের ছবি।
কিন্তু বাঙালীর আবেগ, সংগ্রাম ও মুক্তির আকাক্সক্ষাকে নির্মূল করতে অস্ত্র হাতে নামে হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী। শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষাকে রক্তের বন্যায় ডুবিয়ে দিতে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে শুরু করে নিষ্ঠুর গণহত্যা। সেই কালরাত থেকেই শুরু হয় মৃত্যু, ধ্বংস, আগুন আর আর্তনাদের পৈশাচিক বর্বরতা।
সেই রাতে হানাদার বাহিনী গ্রেফতার করে বাংলাদেশের নেতাকে। গ্রেফতারের আগে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের বাসভবন থেকে ঘোষণা করেন : `আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।` স্বাধীনতা ঘোষণার পর শুরু হয় মুক্তির যুদ্ধ। ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের উপঅধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে নতুন রূপ নেয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। বাঙালির নয় মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধ বিংশ শতকে বিশ্বের মুক্তিকামী মানুষের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। নয় মাস যুদ্ধের পর বিজয় আসে বাংলাদেশের।
স্বাধীনতা দিবসের প্রথম প্রহরে ১২টা ১ মিনিটে রাজধানীতে একত্রিশবার তোপধ্বনির মাধ্যমে শুরু হয়েছে আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি। অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় নেতারাসহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ফুলে ফুলে ছেয়ে যাবে জাতীয় স্মৃতি সৌধের বেদিমূল। সারা দেশে নানা আয়োজনে শ্রদ্ধা জানানো হবে স্বাধীনতার শহীদদের, কৃতজ্ঞতা জানানো হবে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পৃথক বাণীতে শহীদের অমর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধী দলের নেতা।
২৬ মার্চ উপলক্ষে মঙ্গলবার সারাদেশে সরকারি ছুটি। এদিন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্ট, সিপিবি, জাসদ,বাসদসহ বিভিন্ন দল নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
No comments