বেলারুশ প্রধানমন্ত্রীর সফর-অর্থনীতির জন্য নতুন সম্ভাবনা
বেলারুশ এক সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল, এখন স্বাধীন দেশ। লোকসংখ্যা এক কোটির কাছাকাছি, কিন্তু আয়তনে বাংলাদেশের প্রায় দেড় গুণ। প্রতিবেশী রাশিয়ার সঙ্গে রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যপদ গ্রহণের পক্ষেও রয়েছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অধিবাসী। সোভিয়েত ইউনিয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ থাকাকালেই সেখানে শিল্পায়ন ঘটেছিল।
রাজধানী মিনস্কের 'বেলারুশ ট্রাক্টরের' চাহিদা ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতিটি প্রজাতন্ত্রে এবং একই সঙ্গে অন্য দেশেও। সাম্প্রতিক সংস্কারের কারণে আধুনিক কৃষির অপরিহার্য এ উপকরণের মান এখন যথার্থই আন্তর্জাতিক। আনন্দের সংবাদ যে, বাংলাদেশে একটি ট্রাক্টর সংযোজনের কারখানা স্থাপনের বিষয়ে সম্মতির কথা জানিয়েছেন ঢাকা সফর করে যাওয়া বেলারুশ প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিয়াসিনকোভিচ। সোমবার ঢাকা আসার পরপরই তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তাকে বাংলাদেশে একটি মোটর গাড়ি সংযোজন এবং ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেওয়া হয় এবং তিনি সে প্রস্তাবে স্বাগত জানান। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেলারুশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপুল অগ্রগতি সাধন করেছে এবং দুই দেশ এ বিষয়ে সহযোগিতা বাড়াতেও সম্মত হয়েছে। বেলারুশ প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রথম দিনে ১২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে এবং এতে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশকে মেধাস্বত্ব অধিকার আইনের সুযোগ প্রদান। এর আওতায় দুই দেশের যৌথ বিনিয়োগে কোনো প্রডাক্ট উদ্ভাবন হলে সেটা 'মেড ইন বেলারুশ' হিসেবে গণ্য হবে এবং তার অধিকার বাংলাদেশও ভোগ করবে। বাংলাদেশ তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে এবং এ জন্য উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে উৎসাহী। বেলারুশ এ ক্ষেত্রে এগিয়ে আসায় অন্যান্য উন্নত দেশেও তার প্রভাব পড়বে। এখন এ পণ্যের রফতানি বাজার পেতেও সুবিধা হবে। আমরা আশা করব, বাংলাদেশের বিনিয়োগকারীরা, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সৃজনশীল উদ্যোক্তারা এ সুযোগ কাজে লাগাতে তৎপর হবেন, যা রফতানি আয় অনেক বাড়িয়ে দেবে। আমাদের রফতানি পণ্যের তালিকা সীমিত। তথ্যপ্রযুক্তি খাতের প্রোডাক্ট বাড়াতে তৎপর রয়েছে বেশ কিছু কোম্পানি। বেলারুশের সঙ্গে নতুন সহযোগিতার সম্পর্ক তাদের কাজে সহায়ক হবে। ইতিপূর্বে বাংলাদেশের দুটি শীর্ষস্থানীয় ওষুধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান স্কয়ার ও ইনসেপ্টা বেলারুশে কারখানা স্থাপনের চুক্তি সই করেছে। তাদের লক্ষ্য দুটি_ বেলারুশের বাজার এবং একই সঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের বৃহত্তর বাজার। 'মেড ইন বেলারুশ' ব্র্যান্ড তাদের ব্যবসা প্রসারে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। এভাবে দুটি দেশ যেন পারস্পরিক বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগাতে পারে সে জন্য পরস্পরের পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা এবং ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের অনঅ্যারাইভাল ভিসা প্রদানের মতো যেসব প্রস্তাব রয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নে উভয় তরফে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ প্রত্যাশিত। ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশি পণ্যের জন্য প্রবেশাধিকার বহু বছর ধরেই যথেষ্ট সহজ। বেলারুশের বাজারে একই ধরনের সুবিধা বাংলাদেশ প্রত্যাশা করতেই পারে। বাংলাদেশ তৈরি পোশাক, পাটজাত পণ্য, ওষুধসহ যেসব পণ্য সে দেশে পাঠাবে, তাতে তাদের শিল্পোদ্যোক্তাদের নিজস্ব বাজার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা আদৌ নেই। কিন্তু এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশ যথেষ্ট লাভবান হবে এবং দুই দেশের সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করার যে সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, তার পালে লাগবে জোর হাওয়া। বেলারুশ প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে আলোচনা ও চুক্তিতে অগ্রগতি উৎসাহব্যঞ্জক। এখন তা বাস্তবায়নের পালা। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টরা দ্রুত উদ্যোগী হবেন, এটাই প্রত্যাশা।
No comments