৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ- পরাগকে ফিরে পেল পরিবার

৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পর ছাড়া পেল অপহূত ছয় বছরের শিশু পরাগ মণ্ডল। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজার মিল এলাকায় তাকে ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা। এরপর শিশুটির বাবা বিমল মণ্ডল তাকে উদ্ধার করে রাতেই রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে আসেন। হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, পরাগ সুস্থ আছে।


র‌্যাব গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর একজন শীর্ষ সন্ত্রাসী এ অপহরণের সঙ্গে জড়িত। কিছুদিন আগে সে জেল থেকে ছাড়া পায়। টাকার জন্য সে শিশুটিকে অপহরণ করে। এ চক্রে ছয়-সাতজন জড়িত। অপহরণকারীরা শিশুটির বাবার কাছে প্রথম দুই কোটি টাকা দাবি করে। পরে এটা কমিয়ে তারা এক কোটি টাকা চায়। সর্বশেষ গতকাল রাতে ৫০ লাখ টাকায় রফা হয়।
র‌্যাব ও পুলিশ জানায়, অপহরণকারী দলটিকে তারা শনাক্ত করেছে। এরা পেশাদার সন্ত্রাসী।
র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখা থেকে আরও জানা যায়, সন্ত্রাসীদের কথামতো রাতেই ৫০ লাখ টাকা নিয়ে শিশুটির বাবা প্রথমে আমিনবাজার পার হয়ে তুরাগ সেতুর কাছে যান। সেখান থেকে তাঁকে মুগরার বাজারের আওয়াল মার্কেটের কাছে যেতে বলা হয়। ওই সময় তিনি একটি ব্যাগে করে টাকা নিয়ে একটি কাঁচা রাস্তায় ঢুকে পড়েন। এরপর রাস্তায় মোবাইলের আলো ফেলে কিছুদূর যাওয়ার পর দুজন সন্ত্রাসী এসে পেছন থেকে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে টাকাভর্তি ব্যাগটি নিয়ে যায়। এর ২০-২৫ মিনিট পরে বিমলকে ফোন করে বছিলা সেতু পার হয়ে আঁটিবাজারে যেতে বলে অপহরণকারীরা।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, অপহরণকারীরা রাত ১২টার দিকে শিশুটিকে রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। এরপর আঁটিবাজার মিল এলাকার একজন নিরাপত্তাকর্মী ছেলেটির খোঁজ পান। তিনি শিশুটিকে বসিয়ে রাখেন। এরপর শিশুটির বাবাসহ পরিবারের লোকজন গিয়ে তাকে নিয়ে আসেন।
র‌্যাব কর্মকর্তারা জানান, কিছুদিন ধরে সন্ত্রাসীরা এ পরিবারের কাউকে অপহরণের চেষ্টা করে আসছিল। তারা পরাগকে অপহরণের পরিকল্পনার পর থেকে সেখানে কালাচান নামের এক ব্যক্তিকে নিয়োগ করে। এ জন্য তাকে চার লাখ টাকা দেওয়া হয়। শিশুটি কীভাবে, কখন তার মায়ের সঙ্গে স্কুলে যাতায়াত করত, এসব তথ্য কালাচান সন্ত্রাসীদের জানিয়ে দেয়। তবে শিশুটি অপহূত হওয়ার পর থেকে কালাচানের আর খোঁজ নেই।
রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার ছানোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে সম্ভবত ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তার দুই চোখ ঢুলুঢুলু। স্কয়ার হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পরীক্ষার পর জানান, সে ভালো আছে, ঘুমাচ্ছে।
গত রোববার সকালে স্কুলে যাওয়ার সময় কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা পশ্চিমপাড়ার বাসার অন্তত ৫০ গজ দূরে গলির মুখে বোন পিনাকি মণ্ডলের পায়ে ও মা লিপি মণ্ডলের বুকে গুলি করে দুর্বৃত্তরা ছিনিয়ে নিয়ে যায় ছোট্ট পরাগকে। পিনাকি চিকিৎসা শেষে বাসায় ফিরেছে। আর মহাখালীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা লিপির অবস্থার উন্নতি হয়েছে। পরাগ সদরঘাটের হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে কেজি ওয়ানের ছাত্র। পিনাকিও ওই স্কুলে পড়ে।
মানববন্ধন: গতকাল সকালে সদরঘাটে হিড ইন্টারন্যশনাল স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য মানববন্ধন করে। এ সময় পরাগের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চোখ ভিজে যায়।
এদিকে শিশু পরাগকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধারের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন একজন আইনজীবী।

No comments

Powered by Blogger.