নকশার মানুষ মোহাম্মদ ইদ্রিস by রাশেদুর রহমান
১৯৭২ সাল। সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশ। ফলে অনেক কিছুই তাঁকে শুরু করতে হয় নতুন করে। একদিকে চলে ধ্বংসপ্রাপ্ত অবকাঠামোর পুনর্গঠন, অন্যদিকে মুদ্রা, চিঠির খাম, ডাকটিকিট, জাতীয় প্রতীক, বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মনোগ্রামসহ নানা কিছুর পরিবর্তনের প্রয়াস। শিল্পী হিসেবে এসব কাজের সঙ্গে যুক্ত থেকে মোহাম্মদ ইদ্রিসও হয়ে গেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ।
সে সময় বাংলাদেশ সরকার ডাক বিভাগের খাম ও ডাকটিকিটের জন্য নকশা আহ্বান করে। শিল্পী মোহাম্মদ ইদ্রিস তাতে সাড়া দিয়ে নকশা পাঠান। ডাক বিভাগ তাঁর পাঠানো চিঠির খামের নকশাটি নির্বাচন করে। তাঁর করা শাপলা ফুলের নকশার সেই প্রথম চিঠির খাম এখনো ব্যবহার করতে দেখা যায়। ডাকটিকিটের জন্য তিনি যে নকশা পাঠিয়েছিলেন, তাতে ব্যবহার করেছিলেন আবহমান বাংলার নকশিকাঁথার মোটিফ।
আত্মপ্রচারবিমুখ শিল্পী মোহাম্মদ ইদ্রিস তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেছেন গ্রামবাংলার নানা রকম হস্তজাত শিল্পের উৎকর্ষসাধন ও তার প্রসারে। জামদানি, চামড়াজাত হস্তশিল্প ও লুপ্তপ্রায় শতরঞ্জিশিল্পের পুনরুজ্জীবনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর আমাদের জামদানিশিল্পে শুরু হয়েছিল এক গভীর সংকট। জামদানি শাড়ি তৈরি করতেন সাধারণ মুসলমান তাঁতিরা। আর তা ব্যবহার করতেন মূলত উচ্চ ও মধ্যবিত্ত হিন্দু মহিলারা। সে সময় বেশির ভাগ হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যাওয়ায় জামদানি শাড়ির ক্রেতার অভাব দেখা দেয়। ১৯৬৩-৬৪ সালের দিকে বেশির ভাগ জামদানি তাঁতি বেকার হয়ে পড়েন। তখন শিল্পী মোহাম্মদ ইদ্রিস তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। পটুয়া কামরুল হাসানের সহায়তায় তিনি জামদানি তাঁতিদের জন্য ন্যায্যমূল্যে সুতার ব্যবস্থা করে দেন। এঁকে দেন বিভিন্ন ধরনের নকশা। বিপণনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এরপর জামদানিশিল্প ক্রমেই প্রাণ ফিরে পেতে থাকে। এই কারুশিল্পটি যে এখনো সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে শিল্পী মোহাম্মদ ইদ্রিসের অবদান অপরিসীম।
১৯৭২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে এলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে একটি জামদানি শাড়ি উপহার দেন। সেই শাড়িটির নকশা করেছিলেন মোহাম্মদ ইদ্রিস। তাতে ছিল ময়ূরের নকশা।
আজ ২৭ বৈশাখ মোহাম্মদ ইদ্রিস ৮০ বছরে পা দিলেন। বাংলা ১৩৩৮ সনের এই দিনে রংপুরের মুন্সীপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা নাসিরউদ্দীন, মা আছিয়া বেগম। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
মোহাম্মদ ইদ্রিস ছিলেন শিল্পী জয়নুল আবেদিন প্রতিষ্ঠিত আর্ট কলেজের তৃতীয় ব্যাচের ছাত্র। ১৯৫০ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে পাস করে তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে পাস করে তিনি যোগ দেন তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভার-এ। একই সময় তিনি যুক্ত ছিলেন ‘রূপায়ণ’ নামের একটি হস্তজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান। সে সময় রূপায়ণের ছাপা শাড়ি বাজারে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিষ্ঠানটির ছাপা শাড়ি এখনকার উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সমাজে বেশ সমাদৃত হয়।
১৯৬০ সালে কামরুল হাসানের আহ্বানে মোহাম্মদ ইদ্রিস যোগ দেন তখনকার ডিজাইন সেন্টারে। এই সংস্থা পরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থার (বিসিক) সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে সেখান থেকে উপপ্রধান ডিজাইনার হিসেবে তিনি অবসর নেন।
মোহাম্মদ ইদ্রিস ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬১ সালের রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজনে এবং ছায়ানটের প্রতিষ্ঠালগ্নেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। অনেক বইয়ের প্রচ্ছদও তিনি এঁকেছেন। তাঁর আঁকা উল্লেখযোগ্য প্রচ্ছদ পল্লীকবি জসিমউদ্দীনের বাংগালীর হাসির গল্প, কাজী মোহাম্মদ ইদরিসের পীত নদীর বাঁকে, হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে ফেব্রুয়ারী (দ্বিতীয় সংস্করণ) ও আলাউদ্দিন আল আজাদের তেইশ নম্বর তৈলচিত্র।
অশীতিতম জন্মবর্ষে শিল্পী মোহাম্মদ ইদ্রিসকে শুভেচ্ছা।
সে সময় বাংলাদেশ সরকার ডাক বিভাগের খাম ও ডাকটিকিটের জন্য নকশা আহ্বান করে। শিল্পী মোহাম্মদ ইদ্রিস তাতে সাড়া দিয়ে নকশা পাঠান। ডাক বিভাগ তাঁর পাঠানো চিঠির খামের নকশাটি নির্বাচন করে। তাঁর করা শাপলা ফুলের নকশার সেই প্রথম চিঠির খাম এখনো ব্যবহার করতে দেখা যায়। ডাকটিকিটের জন্য তিনি যে নকশা পাঠিয়েছিলেন, তাতে ব্যবহার করেছিলেন আবহমান বাংলার নকশিকাঁথার মোটিফ।
আত্মপ্রচারবিমুখ শিল্পী মোহাম্মদ ইদ্রিস তাঁর জীবনের বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেছেন গ্রামবাংলার নানা রকম হস্তজাত শিল্পের উৎকর্ষসাধন ও তার প্রসারে। জামদানি, চামড়াজাত হস্তশিল্প ও লুপ্তপ্রায় শতরঞ্জিশিল্পের পুনরুজ্জীবনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। ১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর আমাদের জামদানিশিল্পে শুরু হয়েছিল এক গভীর সংকট। জামদানি শাড়ি তৈরি করতেন সাধারণ মুসলমান তাঁতিরা। আর তা ব্যবহার করতেন মূলত উচ্চ ও মধ্যবিত্ত হিন্দু মহিলারা। সে সময় বেশির ভাগ হিন্দু পরিবার ভারতে চলে যাওয়ায় জামদানি শাড়ির ক্রেতার অভাব দেখা দেয়। ১৯৬৩-৬৪ সালের দিকে বেশির ভাগ জামদানি তাঁতি বেকার হয়ে পড়েন। তখন শিল্পী মোহাম্মদ ইদ্রিস তাঁদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। পটুয়া কামরুল হাসানের সহায়তায় তিনি জামদানি তাঁতিদের জন্য ন্যায্যমূল্যে সুতার ব্যবস্থা করে দেন। এঁকে দেন বিভিন্ন ধরনের নকশা। বিপণনেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এরপর জামদানিশিল্প ক্রমেই প্রাণ ফিরে পেতে থাকে। এই কারুশিল্পটি যে এখনো সগৌরবে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে শিল্পী মোহাম্মদ ইদ্রিসের অবদান অপরিসীম।
১৯৭২ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ সফরে এলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তাঁকে একটি জামদানি শাড়ি উপহার দেন। সেই শাড়িটির নকশা করেছিলেন মোহাম্মদ ইদ্রিস। তাতে ছিল ময়ূরের নকশা।
আজ ২৭ বৈশাখ মোহাম্মদ ইদ্রিস ৮০ বছরে পা দিলেন। বাংলা ১৩৩৮ সনের এই দিনে রংপুরের মুন্সীপাড়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তাঁর বাবা নাসিরউদ্দীন, মা আছিয়া বেগম। চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়।
মোহাম্মদ ইদ্রিস ছিলেন শিল্পী জয়নুল আবেদিন প্রতিষ্ঠিত আর্ট কলেজের তৃতীয় ব্যাচের ছাত্র। ১৯৫০ সালে রংপুর জিলা স্কুল থেকে পাস করে তিনি আর্ট কলেজে ভর্তি হন। এই কলেজ থেকে পাস করে তিনি যোগ দেন তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভার-এ। একই সময় তিনি যুক্ত ছিলেন ‘রূপায়ণ’ নামের একটি হস্তজাত শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এর পৃষ্ঠপোষক ছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান। সে সময় রূপায়ণের ছাপা শাড়ি বাজারে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রতিষ্ঠানটির ছাপা শাড়ি এখনকার উচ্চ ও মধ্যবিত্ত সমাজে বেশ সমাদৃত হয়।
১৯৬০ সালে কামরুল হাসানের আহ্বানে মোহাম্মদ ইদ্রিস যোগ দেন তখনকার ডিজাইন সেন্টারে। এই সংস্থা পরে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প সংস্থার (বিসিক) সঙ্গে একীভূত হয়ে যায়। ১৯৯১ সালে সেখান থেকে উপপ্রধান ডিজাইনার হিসেবে তিনি অবসর নেন।
মোহাম্মদ ইদ্রিস ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৬১ সালের রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠান আয়োজনে এবং ছায়ানটের প্রতিষ্ঠালগ্নেও প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছেন। অনেক বইয়ের প্রচ্ছদও তিনি এঁকেছেন। তাঁর আঁকা উল্লেখযোগ্য প্রচ্ছদ পল্লীকবি জসিমউদ্দীনের বাংগালীর হাসির গল্প, কাজী মোহাম্মদ ইদরিসের পীত নদীর বাঁকে, হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত একুশে ফেব্রুয়ারী (দ্বিতীয় সংস্করণ) ও আলাউদ্দিন আল আজাদের তেইশ নম্বর তৈলচিত্র।
অশীতিতম জন্মবর্ষে শিল্পী মোহাম্মদ ইদ্রিসকে শুভেচ্ছা।
No comments