সালমা সোবহান স্মরণে -শ্রদ্ধাঞ্জলি by ইলা চন্দ
সালমা সোবহানের ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী আজ। অনেক গুণের অধিকারিণী ছিলেন সালমা সোবহান। তিনি ছিলেন একজন গবেষক, একজন শিক্ষক, বাংলাদেশের প্রথম নারী ব্যারিস্টার, সমাজসেবী, জনদরদি অথচ ছিলেন ভীষণভাবে একজন নিভৃতচারী মানুষ। কোনো কাজ করে তার প্রচার একদম পছন্দ করতেন না। তাঁর সঙ্গে দীর্ঘ বছর কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। এ সম্পর্কে দু-চারটা কথাই এখানে লিখছি।
১৯৯০ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) কাজে আমি যখন যোগ দিই, অফিসে তখন ফোন ছিল না। সালমা সোবহান চলে যেতেন অফিসের চারতলা থেকে নেমে রাস্তার পাশের একটি হোটেল থেকে ফোন করতে। নিজেই শুধু যেতেন না, আমাদেরও অনুরোধ করে পাঠাতেন। তখন খুবই বিরক্ত হতাম। সবে ছাত্রজীবন, ছাত্ররাজনীতি শেষ করে চাকরি করতে এসেছি, এ ধরনের কাজ ভালো লাগত না সব সময়। আজ মনে হয়, কত বিশাল একজন মানুষ ছিলেন তিনি, কত বড় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন; তাই রাস্তার পাশের হোটেলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ফোন করতে তাঁর অসুবিধা হয়নি। বিভিন্ন বস্তিতে গিয়ে সালমা সোবহান, হামিদা হোসেন (আসকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য) নারীদের নিয়ে আলোচনায় বসতেন। সেখানে তখন আজকের মতো না বসার সুব্যবস্থা ছিল, না ছিল কথা বলার মতো কোনো পরিবেশ। পিঁড়িতে বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। যার ফসল আজকের আইন ও সালিশ কেন্দ্র—দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা কেন্দ্র, যার কিনা রয়েছে ১৭টি ইউনিট। আইনি সহায়তা, আইনগত সচেতনতা, গবেষণা, প্রকাশনা, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে গিয়ে আইনগত সহায়তা দেওয়া, পথশিশুদের নিয়ে কাজ করাসহ মানবাধিকার-সম্পর্কিত অনেক কাজ।
সবাইকে আইনগত সহযোগিতা দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না, কিন্তু মানুষের দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণার কথা শুনে, সান্ত্বনা দিয়ে পাশে বসিয়ে আপনজনের মতো করে কথা বলে ও শুনে কিছু সময়ের জন্য হলেও তাদের কষ্ট লাঘব করা যায়—এ কথা সালমা সোবহান সব সময় বলতেন। কোনো মক্কেলের সঙ্গে যেন কেউ খারাপ ব্যবহার না করে, উচ্চ স্বরে কথা না বলে, এদিকটায় তিনি খুবই খেয়াল রাখতেন। কোনো আইনজীবীর জোরে কথা শুনলে আস্তে গিয়ে পাশে বসতেন বা বলতেন, কোনো জটিল সমস্যা! অর্থাত্ তাঁর উপস্থিতিতে আইনজীবীরা বুঝে যেতেন, কেন তিনি এসেছেন। শুধু তা-ই নয়, আসকের প্রথম দিকে যখন তেমন কোনো ফান্ড ছিল না—আপাদের বাসার আসবাব, বই ও পেপার নিয়ে এসে কাজ শুরু হয়, তখন আপা তাঁর দুপুরের খাবারও অনেক সময় মক্কেলদের সঙ্গে ভাগ করে খেতেন। কোনো গরিব মক্কেল দুপুরের খাবারের সময় থাকলে সালমা আপা বলতেন, তাঁর সঙ্গে আমাদের খাবার একটু শেয়ার করি। পরে যখন আসকের ক্যান্টিন হলো, তখন প্রতিদিন কয়েকজন মক্কেলের খাবারের ব্যবস্থা করেন, যা কিনা আজও চালু আছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার সালমা সোবহান ১৯৮৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। পুরো সময় ছো্ট্ট একটি কক্ষে বসে কাজ করে গেছেন নীরবে। মাত্র ৬৬ বছর বয়সে ২০০৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সালমা সোবহান শুধু আমাদেরই পথপ্রদর্শক ছিলেন না, ছিলেন এ দেশের মানবাধিকার আন্দোলনের পথিকৃত্ এবং বিরল মানবিক গুণসম্পন্ন, অনুসরণযোগ্য একজন মানুষ। বাংলাদেশের মানবাধিকার আন্দোলনে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা অটুট থাকুক—আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।
১৯৯০ সালে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) কাজে আমি যখন যোগ দিই, অফিসে তখন ফোন ছিল না। সালমা সোবহান চলে যেতেন অফিসের চারতলা থেকে নেমে রাস্তার পাশের একটি হোটেল থেকে ফোন করতে। নিজেই শুধু যেতেন না, আমাদেরও অনুরোধ করে পাঠাতেন। তখন খুবই বিরক্ত হতাম। সবে ছাত্রজীবন, ছাত্ররাজনীতি শেষ করে চাকরি করতে এসেছি, এ ধরনের কাজ ভালো লাগত না সব সময়। আজ মনে হয়, কত বিশাল একজন মানুষ ছিলেন তিনি, কত বড় নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন; তাই রাস্তার পাশের হোটেলে গিয়ে প্রয়োজনীয় ফোন করতে তাঁর অসুবিধা হয়নি। বিভিন্ন বস্তিতে গিয়ে সালমা সোবহান, হামিদা হোসেন (আসকের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য) নারীদের নিয়ে আলোচনায় বসতেন। সেখানে তখন আজকের মতো না বসার সুব্যবস্থা ছিল, না ছিল কথা বলার মতো কোনো পরিবেশ। পিঁড়িতে বসে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতেন। যার ফসল আজকের আইন ও সালিশ কেন্দ্র—দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা কেন্দ্র, যার কিনা রয়েছে ১৭টি ইউনিট। আইনি সহায়তা, আইনগত সচেতনতা, গবেষণা, প্রকাশনা, সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে গিয়ে আইনগত সহায়তা দেওয়া, পথশিশুদের নিয়ে কাজ করাসহ মানবাধিকার-সম্পর্কিত অনেক কাজ।
সবাইকে আইনগত সহযোগিতা দেওয়া হয়তো সম্ভব হবে না, কিন্তু মানুষের দুঃখ-কষ্ট, যন্ত্রণার কথা শুনে, সান্ত্বনা দিয়ে পাশে বসিয়ে আপনজনের মতো করে কথা বলে ও শুনে কিছু সময়ের জন্য হলেও তাদের কষ্ট লাঘব করা যায়—এ কথা সালমা সোবহান সব সময় বলতেন। কোনো মক্কেলের সঙ্গে যেন কেউ খারাপ ব্যবহার না করে, উচ্চ স্বরে কথা না বলে, এদিকটায় তিনি খুবই খেয়াল রাখতেন। কোনো আইনজীবীর জোরে কথা শুনলে আস্তে গিয়ে পাশে বসতেন বা বলতেন, কোনো জটিল সমস্যা! অর্থাত্ তাঁর উপস্থিতিতে আইনজীবীরা বুঝে যেতেন, কেন তিনি এসেছেন। শুধু তা-ই নয়, আসকের প্রথম দিকে যখন তেমন কোনো ফান্ড ছিল না—আপাদের বাসার আসবাব, বই ও পেপার নিয়ে এসে কাজ শুরু হয়, তখন আপা তাঁর দুপুরের খাবারও অনেক সময় মক্কেলদের সঙ্গে ভাগ করে খেতেন। কোনো গরিব মক্কেল দুপুরের খাবারের সময় থাকলে সালমা আপা বলতেন, তাঁর সঙ্গে আমাদের খাবার একটু শেয়ার করি। পরে যখন আসকের ক্যান্টিন হলো, তখন প্রতিদিন কয়েকজন মক্কেলের খাবারের ব্যবস্থা করেন, যা কিনা আজও চালু আছে।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ব্যারিস্টার সালমা সোবহান ১৯৮৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত বিনা পারিশ্রমিকে নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। পুরো সময় ছো্ট্ট একটি কক্ষে বসে কাজ করে গেছেন নীরবে। মাত্র ৬৬ বছর বয়সে ২০০৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। সালমা সোবহান শুধু আমাদেরই পথপ্রদর্শক ছিলেন না, ছিলেন এ দেশের মানবাধিকার আন্দোলনের পথিকৃত্ এবং বিরল মানবিক গুণসম্পন্ন, অনুসরণযোগ্য একজন মানুষ। বাংলাদেশের মানবাধিকার আন্দোলনে তিনি যে অবদান রেখে গেছেন, তা অটুট থাকুক—আজ তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীতে এটাই আমাদের সবার প্রত্যাশা।
No comments