জাহাজভাঙা: আবার বিভীষিকা- দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিন
গত শনিবার সীতাকুণ্ডের একটি জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে এক পুরোনো জাহাজ ভাঙার সময় প্রচণ্ড বিস্ফোরণে চারজন শ্রমিকের তাত্ক্ষণিক মৃত্যু ও ২৬ জনের আহত হওয়ার যে বিবরণ সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে, তা এককথায় রোমহর্ষক। বিস্ফোরণের জায়গা থেকে ২৫-৩০ ফুট দূরে ছিটকে পড়েছে শ্রমিকদের দেহ; অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হয়েছে ছিন্নভিন্ন।
নতুন ঘটনা নয় এটি। গত তিন মাসে মারা গেছে ১৩ জন, এ নিয়ে চলতি বছরে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২২। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ, ভারত ও সুইজারল্যান্ড থেকে একযোগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০ বছরে সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা-শিল্পে দুর্ঘটনায় মারা গেছে এক হাজার শ্রমিক। হাইকোর্টের এক আদেশে অবশ্য এ সময়ে মৃতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৪০০। গ্রিনপিস ও ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস নামের দুটি সংস্থার জরিপ বলছে, সীতাকুণ্ডে গড়ে প্রতিদিন একজন করে শ্রমিক আহত হয়, মারা যায় সপ্তাহে একজন।
এ বছরের মার্চে বাংলাদেশের হাইকোর্ট পরিবেশ আইনবিদ সমিতির এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে আদেশ দেন দুই সপ্তাহের মধ্যে সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা ইয়ার্ড বন্ধ করতে। কারণ, সেগুলোর কোনোটিই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর আদালতকে জানিয়েছিল, জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলোর একটিও কখনো পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি। অথচ আইনত এই ছাড়পত্র ছাড়া কোনো জাহাজভাঙা ইয়ার্ড স্থাপন করা যায় না। জাহাজভাঙা ইয়ার্ড-মালিকদের সমিতি আপিল করার পর থেকে বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। আর শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে, গ্লাস-হেলমেট, গ্লাভস ইত্যাদি সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়াই ইয়ার্ড-মালিকেরা বিষাক্ত ও বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থসমেত পুরোনো জাহাজভাঙার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ও প্রাণশক্তি দ্রুত হারাচ্ছে দরিদ্র শ্রমিকেরা, কখনো বা এ ধরনের ভয়াবহ বিস্ফোরণে হারাচ্ছে প্রাণ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। এই শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি এক ডলারেরও কম, তাদের মধ্যে শিশু-কিশোরও আছে।
হাইকোর্ট মার্চের আদেশে সরকারের প্রতি যে নয়টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেগুলোর কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি আপিলের ফলে স্থগিতাবস্থার কারণে। কিন্তু এক মার্চ পেরিয়ে আরেক মার্চ এগিয়ে আসছে, সরকারপক্ষ সেই মামলার ব্যাপারে কেন নিষ্ক্রিয় রয়েছে, কেন এর নিষ্পত্তি করে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলোকে সংশ্লিষ্ট আইনকানুন, বিধি-বিধান মানতে বাধ্য করার উদ্যোগ নিচ্ছে না?
আদালতের অন্যতম নির্দেশনা ছিল বিষাক্ত ও বিপজ্জনক পদার্থসমেত কোনো জাহাজ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারবে না—এটা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। গত শনিবার তেলের যে ট্যাংকারে বিস্ফোরণ ঘটে এতগুলো মানুষ হতাহত হলেন, সেই জাহাজটি কী করে বাংলাদেশে এল? বিস্ফোরক অধিদপ্তরের যে কর্মকর্তা জাহাজটি কাটার আগে দেখতে গিয়েছিলেন বলে খবরে প্রকাশ, তিনি কী পরীক্ষা করে জাহাজটির একাংশ কাটার অনুমতি মৌখিকভাবে (সনদ দেননি) দিয়েছিলেন? পুরো বিষয়টি তদন্ত করে এসব প্রাণহানির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। দুর্ঘটনাকবলিত ইয়ার্ডটির মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে, কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না কেন? মালিকপক্ষ হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিত্সার ব্যবস্থা করছে—এটাও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে, বিষাক্ত পদার্থসহ আরও অনেক পুরোনো জাহাজ আনার উদ্যোগ চলছে। সেগুলো বেআইনিভাবে বা ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে যাতে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করা দরকার। সরকার তত্পর হলে সেটা অবশ্যই সম্ভব।
নতুন ঘটনা নয় এটি। গত তিন মাসে মারা গেছে ১৩ জন, এ নিয়ে চলতি বছরে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২২। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ, ভারত ও সুইজারল্যান্ড থেকে একযোগে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০ বছরে সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা-শিল্পে দুর্ঘটনায় মারা গেছে এক হাজার শ্রমিক। হাইকোর্টের এক আদেশে অবশ্য এ সময়ে মৃতের সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে ৪০০। গ্রিনপিস ও ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস নামের দুটি সংস্থার জরিপ বলছে, সীতাকুণ্ডে গড়ে প্রতিদিন একজন করে শ্রমিক আহত হয়, মারা যায় সপ্তাহে একজন।
এ বছরের মার্চে বাংলাদেশের হাইকোর্ট পরিবেশ আইনবিদ সমিতির এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে আদেশ দেন দুই সপ্তাহের মধ্যে সীতাকুণ্ডের জাহাজভাঙা ইয়ার্ড বন্ধ করতে। কারণ, সেগুলোর কোনোটিই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেয়নি। পরিবেশ অধিদপ্তর আদালতকে জানিয়েছিল, জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলোর একটিও কখনো পরিবেশ ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেনি। অথচ আইনত এই ছাড়পত্র ছাড়া কোনো জাহাজভাঙা ইয়ার্ড স্থাপন করা যায় না। জাহাজভাঙা ইয়ার্ড-মালিকদের সমিতি আপিল করার পর থেকে বিষয়টি ঝুলে রয়েছে। আর শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে, পরিবেশ ছাড়পত্র না নিয়ে, গ্লাস-হেলমেট, গ্লাভস ইত্যাদি সুরক্ষামূলক সরঞ্জাম ছাড়াই ইয়ার্ড-মালিকেরা বিষাক্ত ও বিপজ্জনক রাসায়নিক পদার্থসমেত পুরোনো জাহাজভাঙার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য ও প্রাণশক্তি দ্রুত হারাচ্ছে দরিদ্র শ্রমিকেরা, কখনো বা এ ধরনের ভয়াবহ বিস্ফোরণে হারাচ্ছে প্রাণ ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। এই শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি এক ডলারেরও কম, তাদের মধ্যে শিশু-কিশোরও আছে।
হাইকোর্ট মার্চের আদেশে সরকারের প্রতি যে নয়টি নির্দেশনা দিয়েছিলেন, সেগুলোর কোনোটিই বাস্তবায়িত হয়নি আপিলের ফলে স্থগিতাবস্থার কারণে। কিন্তু এক মার্চ পেরিয়ে আরেক মার্চ এগিয়ে আসছে, সরকারপক্ষ সেই মামলার ব্যাপারে কেন নিষ্ক্রিয় রয়েছে, কেন এর নিষ্পত্তি করে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী জাহাজভাঙা ইয়ার্ডগুলোকে সংশ্লিষ্ট আইনকানুন, বিধি-বিধান মানতে বাধ্য করার উদ্যোগ নিচ্ছে না?
আদালতের অন্যতম নির্দেশনা ছিল বিষাক্ত ও বিপজ্জনক পদার্থসমেত কোনো জাহাজ বাংলাদেশের ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারবে না—এটা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে। গত শনিবার তেলের যে ট্যাংকারে বিস্ফোরণ ঘটে এতগুলো মানুষ হতাহত হলেন, সেই জাহাজটি কী করে বাংলাদেশে এল? বিস্ফোরক অধিদপ্তরের যে কর্মকর্তা জাহাজটি কাটার আগে দেখতে গিয়েছিলেন বলে খবরে প্রকাশ, তিনি কী পরীক্ষা করে জাহাজটির একাংশ কাটার অনুমতি মৌখিকভাবে (সনদ দেননি) দিয়েছিলেন? পুরো বিষয়টি তদন্ত করে এসব প্রাণহানির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। দুর্ঘটনাকবলিত ইয়ার্ডটির মালিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা করেছে, কিন্তু কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না কেন? মালিকপক্ষ হতাহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণ ও সুচিকিত্সার ব্যবস্থা করছে—এটাও সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।
এরই মধ্যে খবর বেরিয়েছে, বিষাক্ত পদার্থসহ আরও অনেক পুরোনো জাহাজ আনার উদ্যোগ চলছে। সেগুলো বেআইনিভাবে বা ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে যাতে বাংলাদেশের জলসীমায় ঢুকতে না পারে, তা নিশ্চিত করা দরকার। সরকার তত্পর হলে সেটা অবশ্যই সম্ভব।
No comments