বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং by মামুন রশীদ
কথা হচ্ছিল, বাংলাদেশের বাইরে আমাদের একজন সার্বভৌম ঝুঁকি ব্যবস্থাপনায় জড়িত ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সঙ্গে। বাংলাদেশের সার্বভৌম ঝুঁকি রেটিং বিষয়ে কিছু কথা বলার পরই তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশ ডাজ নট ডু এ গুড পি আর’ অর্থাত্ বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের জনসংযোগ ভালো নয়। আমাদের অনেকের একটি সাধারণ দুঃখবোধ রয়েছে যে আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশের সত্যিকারের ভাবমূর্তি যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়নি। এখনো বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ যেন বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও দুর্নীতিগ্রস্ততাসহ নানা ধরনের নেতিবাচক ভাবমূর্তির একটি দেশ।
আমাদের দেশের অনুসরণযোগ্য বেশ কিছু কার্যক্রমসহ অনেক ইতিবাচক দিক বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে অজ্ঞাতই থেকে গেছে। যে কারণে বাংলাদেশ বৈশ্বিক নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই দেশটাকে শুধু নেতিবাচক বিষয়গুলোর মাপকাঠিতেই বিচার করা হয়। আমাদের জনগণের অসাধারণ ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, অমিত সাহস, অদম্য মানসিকতা, প্রত্যয়-প্রতিশ্রুতি ও অফুরন্ত উদ্ভাবনী শক্তি এবং সফল সব কর্মকাণ্ডসহ ইতিবাচক দিকগুলো আশ্চর্যজনকভাবে বিশ্বের সামনে সেভাবে প্রতিফলিত হয়নি। কয়েক দশক ধরে বেশ কিছু খাতে বাংলাদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করলেও সেসব স্বীকার করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কেন জানি ইতস্তত বোধ করে। অথচ বাংলাদেশের এসব অর্জনগাঁথা বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে শুধু বেশিই নয়, বরং অনেকের জন্য অনুকরণীয়ও বটে। বাংলাদেশকে এখনো ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারাই হয়তো এর প্রধান কারণ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সচরাচর একটি সাধারণ প্রবণতা দেখা যায় যে তারা বাংলাদেশকে বেশির ভাগ সময়ই আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিশৃঙ্খল দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে থাকে। এমনকি বাংলাদেশকে বিভিন্ন অকার্যকর দেশগুলোর কাতারেও ফেলেন কেউ কেউ। তবে বাংলাদেশ সম্পর্কে এহেন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের জন্য শুধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দোষারোপ করলে সেটা হবে ‘ক্রন্দনরত’ শিশুর মতো আচরণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে। কারণ আমরাও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে দেশের জনগণের সত্যিকারের চেতনা ও দেশের ভাবমূর্তি সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি। এই অক্ষমতার কারণেই আমাদের আর দেরি না করে বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
সামপ্রতিককালে স্থানীয় একটি সংগঠন ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ বা বাংলাদেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে ঢাকায় একটি সেমিনারের আয়োজন করে। যদিও ওই সেমিনারে ব্র্যান্ডিং-সংক্রান্ত মৌলিক ধারণার বাইরেও কিছু অপ্রাসঙ্গিক বা বিভ্রান্তিকর আলোচনাও হয়েছিল, তবে সেমিনারটি সন্দেহাতীতভাবেই সময়োপযোগী ছিল বলে আমি আয়োজক সংগঠনটিকে অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন আলোচনার চেয়ে একটি কার্যকর কৌশল নেওয়াই হবে উত্তম কাজ। এ ক্ষেত্রে বিপণন-ব্যবস্থাপনার মৌলিক নীতিমালা মেনে তবেই মাঠে নামা উচিত হবে।
আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘বাংলাদেশ’-এর ব্র্যান্ড ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অবশ্যই ‘ব্র্যান্ড’ শব্দটির সত্যিকারের মানেটা বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে, ব্র্যান্ডের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা মূলত বিপণন ব্যবস্থাপনারই একটি প্রক্রিয়াবিশেষ, যেখানে একজন বিক্রেতা গুণগত মানের ওপর জোর দিয়ে কিংবা প্রতিযোগীদের চেয়ে আলাদা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে তাঁর পণ্য বাজারজাতকরণের চেষ্টা করেন। ‘বিপণন গুরু’খ্যাত ফিলিপ কোটলার ব্র্যান্ডকে গোটা পাঁচেক শব্দের সমষ্টিগত রূপ হিসেবেই সংজ্ঞায়িত করেছেন। তাঁর মতে, ‘একটি নাম (নেইম), শর্ত বা কার্যকাল (টার্ম), প্রতীক বা চিহ্ন (সাইন), নমুনা (সিম্বল) এবং রূপরেখা বা পরিকল্পনা (ডিজাইন) অনুযায়ী অথবা এসব শব্দের সমষ্টিগত ব্যঞ্জনায় কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অন্যদের চেয়ে স্বতন্ত্র ধরনের পণ্য বা সেবা বিক্রি করলে সেটাকেই ব্র্যান্ড বলে।’ বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ব্র্যান্ড হচ্ছে মূলত সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির ব্যাপারে ক্রেতার কাছে বিক্রেতার প্রতিশ্রুতি বিশেষ। এর মধ্যে সেটিকেই সবচেয়ে ভালো ব্র্যান্ড বলা যাবে, যেটির মধ্যে সর্বোচ্চ গুণগত মানের নিশ্চয়তা থাকে।’
পণ্য বা সেবা যেটাই হোক, সেটাকে বৈশ্বিক বাজারে সুনাম ও সাফল্যের সঙ্গে তা বাজারজাত করাটাই হলো ‘ব্র্যান্ডবিষয়ক ভাবমূর্তি’র বহিঃপ্রকাশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে সচরাচর জাতীয় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকারি পর্যায়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্র্যান্ডিংয়ের ধারণায় উজ্জীবিত হয়ে আজকাল স্বল্পোন্নত দেশগুলোও এদিকে ঝুঁকছে। কোনো দেশ বা জাতির নামে ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে তা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পাশাপাশি পর্যটনের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে আকৃষ্ট করে। এতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং রাজনৈতিক সম্পর্কও জোরদার হয়।
ব্র্যান্ডিংয়ের নমুনা হিসেবে প্রায়ই বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের চিত্তাকর্ষক কিছু স্লোগানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছে। যেমন—‘মালয়েশিয়া: সত্যিকারের এশিয়া’ (মালয়েশিয়া, ট্রুলি এশিয়া); ‘দুবাই: মরুভূমিতে রত্নপাথর’ (দুবাই: দ্য জুয়েল ইন দ্য ডেজার্ট); ‘চীন: বিশ্বে উত্পাদনের কারখানা (চায়না: দ্য ফ্যাক্টরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড) এবং ‘শ্রীলঙ্কা: ভারত মহাসাগরের মুক্তা’ (শ্রীলঙ্কা: দ্য পার্ল অব ইন্ডিয়ান ওশান) ইত্যাদি। আমরা যখন নিউজ উইক, টাইম বা দ্য ইকনোমিস্টের মতো বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিনগুলোর পাতা উল্টাই তখন দেখতে পাই যে ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশও এখন নিজেদের ব্র্যান্ডিংয়ের ব্যাপারে বেশ মনোযোগী হয়েছে।
আমাদের প্রতিবেশী ভারতও ব্র্যান্ড পরিচিতি নিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। দেশটি এরই মধ্যে অব্যাহত প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, মানসম্পন্ন শিক্ষার বিকাশ, শিল্প খাতে নিত্যনতুন উদ্ভাবন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপ্লব সাধন এবং ‘ইন্ডিয়ান নলেজ ব্যাংক’ বা ‘ভারতীয় জ্ঞানভাণ্ডার’-এর বদৌলতে বিশ্বের কাঙ্ক্ষিত বাজারগুলোতে ঢুকে পড়েছে।
আমাদের দেশের নিজস্ব ব্র্যান্ড পরিচিতির জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। বাংলাদেশকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করতে হলে আমাদের প্রথমেই কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করতে হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে—আমাদের অভিজ্ঞতা, স্বাতন্ত্র্যবোধ বা অসাধারণত্ব, জনগণের আচরণ ও ঐতিহ্যগত গুণাবলি এবং বাধা-বিপত্তিসমূহ ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সবগুলো ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকও বিবেচনায় রাখা জরুরি। আমাদের ভালো-মন্দ যে অভিজ্ঞতাই থাকুক না কেন, সেটাকে পুঁজি করে ব্যাপকভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করাই হবে দেশের ব্র্যান্ড পরিচিতির অন্যতম নিয়ামক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অবারিত প্রতিশ্রুতি আর সাহসের সঙ্গে আমাদের জনগণ যেভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আসছে এবং দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে, তা কাজে লাগানো যেতে পারে।
বিশ্বে আমরাই প্রথম নিজেদের দারিদ্র্য বিমোচনের উপায় হিসেবে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি উদ্ভাবন করেছি, যা এখন আমরা বিশ্বকে শেখাতে পারি। তৈরি পোশাকশিল্প নিয়েও আমরা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছি। বদৌলতে প্রতিবছরই বিশ্ববাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে। জাতি হিসেবেও আমরা নিপীড়িত ও বঞ্চিতদের ভাগ্য বদলের লক্ষ্যে সহনশীলতা প্রদর্শনসহ সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। আমাদের পূর্বসূরিদেরও অনেকেই তাঁদের জীবন উত্সর্গ করে গেছেন, যাতে উত্তরসূরিরা সব ধরনের মানবিক সুযোগ-সুবিধাগুলো উপভোগ করতে পারে। আমাদের অব্যাহতভাবেই নানা ধরনের বাধা-বিপত্তির মুখে পড়তে হলেও আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগোনোর পথ থেকে বিচ্যুত্ হইনি। হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সভ্যতা আমাদের জনগণকে বিনয়-ভদ্রতা, নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়, স্বাভাবিক কর্মোদ্যম এবং স্বপ্ন দেখার মতো মানবীয় বিষয়গুলোসহ শত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র শিখিয়েছে।
আমাদের বাংলাদেশ ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিকভাবেই একটি ‘জাতি-রাষ্ট্র’ বিশেষ। যেখানে ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ধর্মীয় সহনশীলতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও চেতনা অভিন্ন রকমের। সে জন্য বাংলাদেশকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে কোনো রকম মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার দরকার নেই, যা আমাদের নেই বা যা আমরা করতে বা দেখাতে পারব না তা নিয়ে কথার ফুলঝুরি ছড়ানোরও প্রয়োজন নেই। বিদ্যমান বাধা-বিপত্তি, দুর্বলতা ও পশ্চাত্পদতা ইত্যাদি সাবলীলভাবে স্বীকার করেও আমরা নিজেদের যেসব অর্জন ও ভালো দিক আছে সেগুলো নিয়েও বাংলাদেশকে একটি ব্র্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
তবে এ কথাও ঠিক যে কোনো বাণিজ্যিক পণ্য বাজারজাত করার চেয়ে বিশ্বের দরবারে দেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করে তোলার কাজটি অনেক বড় এবং বেশ কঠিনও বইকি। বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি জোরদারের যে প্রচেষ্টা চলছে তাতে জনগণের অগাধ আস্থা-বিশ্বাস ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। তা না হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের দেশের ব্র্যান্ড পরিচিতি অর্থহীন হয়ে পড়বে।
বিশ্বের কাছে আমাদের বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সরকারের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, বেসরকারি খাত, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, কৃষক-শ্রমিক, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সবাইকে এবং বিশেষ করে গণমাধ্যমকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমস্বরে সোচ্চার হতে হবে।
বাংলাদেশের মতো অর্থনৈতিক উত্তরণের পর্যায়ে থাকা একটি দেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের কথাও ভাবতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিবেশী এবং সমজাতীয় দেশগুলো কীভাবে ব্র্যান্ডিং করে ওপরে উঠেছে, সেটিও অনুসরণ করা যেতে পারে।
তবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড পরিচিতি অর্জনের পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা যেন আমাদের মূল সংগ্রামের পথ থেকে ছিটকে না পড়ি, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। আবার একটি গতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে আমরা যেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন সান্ত্বনার জ্বরে না ভুগি, সেটাও খেয়ালে রাখতে হবে। পাশাপাশি দুর্নীতি রোধ, দারিদ্র্য বিমোচন, ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করার ব্যাপারে জোর দিতে হবে।
আমাদের এখন আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের কাছে এমন একটি বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে আমরা সত্যিকার অর্থেই ব্র্যান্ডের পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বোঝাতে হবে, আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার বদল হয়। আর সরকার বদল হলেও মৌলিক নীতিমালায় ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। বিদেশি সাহায্য পাওয়ার জন্য এখানে যতটা না ‘নাই নাই’ প্রচেষ্টা অব্যাহত, তার চেয়েও বেশি দেদীপ্যমান দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টা। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো জোরদার করার ব্যাপারেও নিরন্তর লড়াই করে চলেছি। বাংলাদেশকে একটি গতিশীল ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের প্রচেষ্টা হতে হবে অব্যাহত ।
মামুন রশীদ: ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ।
আমাদের দেশের অনুসরণযোগ্য বেশ কিছু কার্যক্রমসহ অনেক ইতিবাচক দিক বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে অজ্ঞাতই থেকে গেছে। যে কারণে বাংলাদেশ বৈশ্বিক নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই দেশটাকে শুধু নেতিবাচক বিষয়গুলোর মাপকাঠিতেই বিচার করা হয়। আমাদের জনগণের অসাধারণ ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষা, অমিত সাহস, অদম্য মানসিকতা, প্রত্যয়-প্রতিশ্রুতি ও অফুরন্ত উদ্ভাবনী শক্তি এবং সফল সব কর্মকাণ্ডসহ ইতিবাচক দিকগুলো আশ্চর্যজনকভাবে বিশ্বের সামনে সেভাবে প্রতিফলিত হয়নি। কয়েক দশক ধরে বেশ কিছু খাতে বাংলাদেশ যথেষ্ট অগ্রগতি সাধন করলেও সেসব স্বীকার করার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও কেন জানি ইতস্তত বোধ করে। অথচ বাংলাদেশের এসব অর্জনগাঁথা বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে শুধু বেশিই নয়, বরং অনেকের জন্য অনুকরণীয়ও বটে। বাংলাদেশকে এখনো ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারাই হয়তো এর প্রধান কারণ।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে সচরাচর একটি সাধারণ প্রবণতা দেখা যায় যে তারা বাংলাদেশকে বেশির ভাগ সময়ই আফ্রিকার দারিদ্র্যপীড়িত, দুর্নীতিগ্রস্ত ও বিশৃঙ্খল দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করে থাকে। এমনকি বাংলাদেশকে বিভিন্ন অকার্যকর দেশগুলোর কাতারেও ফেলেন কেউ কেউ। তবে বাংলাদেশ সম্পর্কে এহেন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণের জন্য শুধু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দোষারোপ করলে সেটা হবে ‘ক্রন্দনরত’ শিশুর মতো আচরণ। এ ক্ষেত্রে আমাদের নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করতে হবে। কারণ আমরাও বিশ্ব সম্প্রদায়ের সামনে দেশের জনগণের সত্যিকারের চেতনা ও দেশের ভাবমূর্তি সেভাবে তুলে ধরতে পারিনি। এই অক্ষমতার কারণেই আমাদের আর দেরি না করে বহির্বিশ্বে ভাবমূর্তি জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে।
সামপ্রতিককালে স্থানীয় একটি সংগঠন ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ বা বাংলাদেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার বিষয়ে ঢাকায় একটি সেমিনারের আয়োজন করে। যদিও ওই সেমিনারে ব্র্যান্ডিং-সংক্রান্ত মৌলিক ধারণার বাইরেও কিছু অপ্রাসঙ্গিক বা বিভ্রান্তিকর আলোচনাও হয়েছিল, তবে সেমিনারটি সন্দেহাতীতভাবেই সময়োপযোগী ছিল বলে আমি আয়োজক সংগঠনটিকে অভিনন্দন জানাই। বাংলাদেশকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে ইতস্তত বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন আলোচনার চেয়ে একটি কার্যকর কৌশল নেওয়াই হবে উত্তম কাজ। এ ক্ষেত্রে বিপণন-ব্যবস্থাপনার মৌলিক নীতিমালা মেনে তবেই মাঠে নামা উচিত হবে।
আন্তর্জাতিক ফোরামে ‘বাংলাদেশ’-এর ব্র্যান্ড ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠিত করতে হলে অবশ্যই ‘ব্র্যান্ড’ শব্দটির সত্যিকারের মানেটা বুঝতে হবে। মনে রাখতে হবে, ব্র্যান্ডের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনা মূলত বিপণন ব্যবস্থাপনারই একটি প্রক্রিয়াবিশেষ, যেখানে একজন বিক্রেতা গুণগত মানের ওপর জোর দিয়ে কিংবা প্রতিযোগীদের চেয়ে আলাদা ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের কথা তুলে ধরার মাধ্যমে তাঁর পণ্য বাজারজাতকরণের চেষ্টা করেন। ‘বিপণন গুরু’খ্যাত ফিলিপ কোটলার ব্র্যান্ডকে গোটা পাঁচেক শব্দের সমষ্টিগত রূপ হিসেবেই সংজ্ঞায়িত করেছেন। তাঁর মতে, ‘একটি নাম (নেইম), শর্ত বা কার্যকাল (টার্ম), প্রতীক বা চিহ্ন (সাইন), নমুনা (সিম্বল) এবং রূপরেখা বা পরিকল্পনা (ডিজাইন) অনুযায়ী অথবা এসব শব্দের সমষ্টিগত ব্যঞ্জনায় কোনো একক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অন্যদের চেয়ে স্বতন্ত্র ধরনের পণ্য বা সেবা বিক্রি করলে সেটাকেই ব্র্যান্ড বলে।’ বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘ব্র্যান্ড হচ্ছে মূলত সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন কোনো পণ্য বা সেবা বিক্রির ব্যাপারে ক্রেতার কাছে বিক্রেতার প্রতিশ্রুতি বিশেষ। এর মধ্যে সেটিকেই সবচেয়ে ভালো ব্র্যান্ড বলা যাবে, যেটির মধ্যে সর্বোচ্চ গুণগত মানের নিশ্চয়তা থাকে।’
পণ্য বা সেবা যেটাই হোক, সেটাকে বৈশ্বিক বাজারে সুনাম ও সাফল্যের সঙ্গে তা বাজারজাত করাটাই হলো ‘ব্র্যান্ডবিষয়ক ভাবমূর্তি’র বহিঃপ্রকাশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা দেশগুলোতে সচরাচর জাতীয় ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকারি পর্যায়ে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। ব্র্যান্ডিংয়ের ধারণায় উজ্জীবিত হয়ে আজকাল স্বল্পোন্নত দেশগুলোও এদিকে ঝুঁকছে। কোনো দেশ বা জাতির নামে ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হলে তা সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পাশাপাশি পর্যটনের ক্ষেত্রেও আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে আকৃষ্ট করে। এতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য এবং রাজনৈতিক সম্পর্কও জোরদার হয়।
ব্র্যান্ডিংয়ের নমুনা হিসেবে প্রায়ই বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন ধরনের চিত্তাকর্ষক কিছু স্লোগানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছে। যেমন—‘মালয়েশিয়া: সত্যিকারের এশিয়া’ (মালয়েশিয়া, ট্রুলি এশিয়া); ‘দুবাই: মরুভূমিতে রত্নপাথর’ (দুবাই: দ্য জুয়েল ইন দ্য ডেজার্ট); ‘চীন: বিশ্বে উত্পাদনের কারখানা (চায়না: দ্য ফ্যাক্টরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড) এবং ‘শ্রীলঙ্কা: ভারত মহাসাগরের মুক্তা’ (শ্রীলঙ্কা: দ্য পার্ল অব ইন্ডিয়ান ওশান) ইত্যাদি। আমরা যখন নিউজ উইক, টাইম বা দ্য ইকনোমিস্টের মতো বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিনগুলোর পাতা উল্টাই তখন দেখতে পাই যে ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশও এখন নিজেদের ব্র্যান্ডিংয়ের ব্যাপারে বেশ মনোযোগী হয়েছে।
আমাদের প্রতিবেশী ভারতও ব্র্যান্ড পরিচিতি নিয়ে উদ্ভাসিত হয়ে উঠেছে। দেশটি এরই মধ্যে অব্যাহত প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, মানসম্পন্ন শিক্ষার বিকাশ, শিল্প খাতে নিত্যনতুন উদ্ভাবন, তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিপ্লব সাধন এবং ‘ইন্ডিয়ান নলেজ ব্যাংক’ বা ‘ভারতীয় জ্ঞানভাণ্ডার’-এর বদৌলতে বিশ্বের কাঙ্ক্ষিত বাজারগুলোতে ঢুকে পড়েছে।
আমাদের দেশের নিজস্ব ব্র্যান্ড পরিচিতির জন্য কী কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে ভাবতে হবে। বাংলাদেশকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করতে হলে আমাদের প্রথমেই কয়েকটি বিষয় চিহ্নিত করতে হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে—আমাদের অভিজ্ঞতা, স্বাতন্ত্র্যবোধ বা অসাধারণত্ব, জনগণের আচরণ ও ঐতিহ্যগত গুণাবলি এবং বাধা-বিপত্তিসমূহ ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই সবগুলো ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিকও বিবেচনায় রাখা জরুরি। আমাদের ভালো-মন্দ যে অভিজ্ঞতাই থাকুক না কেন, সেটাকে পুঁজি করে ব্যাপকভাবে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করাই হবে দেশের ব্র্যান্ড পরিচিতির অন্যতম নিয়ামক। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, অবারিত প্রতিশ্রুতি আর সাহসের সঙ্গে আমাদের জনগণ যেভাবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ধ্বংসাত্মক পরিস্থিতি মোকাবিলা করে আসছে এবং দেশের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে, তা কাজে লাগানো যেতে পারে।
বিশ্বে আমরাই প্রথম নিজেদের দারিদ্র্য বিমোচনের উপায় হিসেবে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি উদ্ভাবন করেছি, যা এখন আমরা বিশ্বকে শেখাতে পারি। তৈরি পোশাকশিল্প নিয়েও আমরা বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছি। বদৌলতে প্রতিবছরই বিশ্ববাজারে আমাদের তৈরি পোশাকের রপ্তানি বাড়ছে। জাতি হিসেবেও আমরা নিপীড়িত ও বঞ্চিতদের ভাগ্য বদলের লক্ষ্যে সহনশীলতা প্রদর্শনসহ সকল নাগরিকের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে সামনের দিকে এগোচ্ছি। আমাদের পূর্বসূরিদেরও অনেকেই তাঁদের জীবন উত্সর্গ করে গেছেন, যাতে উত্তরসূরিরা সব ধরনের মানবিক সুযোগ-সুবিধাগুলো উপভোগ করতে পারে। আমাদের অব্যাহতভাবেই নানা ধরনের বাধা-বিপত্তির মুখে পড়তে হলেও আমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যের দিকে এগোনোর পথ থেকে বিচ্যুত্ হইনি। হাজার বছরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও সভ্যতা আমাদের জনগণকে বিনয়-ভদ্রতা, নিরবচ্ছিন্ন অধ্যবসায়, স্বাভাবিক কর্মোদ্যম এবং স্বপ্ন দেখার মতো মানবীয় বিষয়গুলোসহ শত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র শিখিয়েছে।
আমাদের বাংলাদেশ ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিকভাবেই একটি ‘জাতি-রাষ্ট্র’ বিশেষ। যেখানে ভাষা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ধর্মীয় সহনশীলতা, সামাজিক মূল্যবোধ ও চেতনা অভিন্ন রকমের। সে জন্য বাংলাদেশকে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে কোনো রকম মিথ্যার আশ্রয় নেওয়ার দরকার নেই, যা আমাদের নেই বা যা আমরা করতে বা দেখাতে পারব না তা নিয়ে কথার ফুলঝুরি ছড়ানোরও প্রয়োজন নেই। বিদ্যমান বাধা-বিপত্তি, দুর্বলতা ও পশ্চাত্পদতা ইত্যাদি সাবলীলভাবে স্বীকার করেও আমরা নিজেদের যেসব অর্জন ও ভালো দিক আছে সেগুলো নিয়েও বাংলাদেশকে একটি ব্র্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
তবে এ কথাও ঠিক যে কোনো বাণিজ্যিক পণ্য বাজারজাত করার চেয়ে বিশ্বের দরবারে দেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করে তোলার কাজটি অনেক বড় এবং বেশ কঠিনও বইকি। বহির্বিশ্বে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি জোরদারের যে প্রচেষ্টা চলছে তাতে জনগণের অগাধ আস্থা-বিশ্বাস ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন থাকতে হবে। তা না হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আমাদের দেশের ব্র্যান্ড পরিচিতি অর্থহীন হয়ে পড়বে।
বিশ্বের কাছে আমাদের বাংলাদেশকে একটি শক্তিশালী ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে হলে সরকারের পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, বেসরকারি খাত, সাংস্কৃতিক অঙ্গন, কৃষক-শ্রমিক, শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সবাইকে এবং বিশেষ করে গণমাধ্যমকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সমস্বরে সোচ্চার হতে হবে।
বাংলাদেশের মতো অর্থনৈতিক উত্তরণের পর্যায়ে থাকা একটি দেশকে ব্র্যান্ড হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে হলে নিজেদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যের কথাও ভাবতে হবে। প্রয়োজনে প্রতিবেশী এবং সমজাতীয় দেশগুলো কীভাবে ব্র্যান্ডিং করে ওপরে উঠেছে, সেটিও অনুসরণ করা যেতে পারে।
তবে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড পরিচিতি অর্জনের পেছনে ছুটতে গিয়ে আমরা যেন আমাদের মূল সংগ্রামের পথ থেকে ছিটকে না পড়ি, সে ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। আবার একটি গতিশীল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে গিয়ে আমরা যেন সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন সান্ত্বনার জ্বরে না ভুগি, সেটাও খেয়ালে রাখতে হবে। পাশাপাশি দুর্নীতি রোধ, দারিদ্র্য বিমোচন, ব্যাপক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সৃষ্টি করার ব্যাপারে জোর দিতে হবে।
আমাদের এখন আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের কাছে এমন একটি বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে আমরা সত্যিকার অর্থেই ব্র্যান্ডের পরিচিতি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। বোঝাতে হবে, আমাদের দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার বদল হয়। আর সরকার বদল হলেও মৌলিক নীতিমালায় ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। বিদেশি সাহায্য পাওয়ার জন্য এখানে যতটা না ‘নাই নাই’ প্রচেষ্টা অব্যাহত, তার চেয়েও বেশি দেদীপ্যমান দারিদ্র্য বিমোচনের চেষ্টা। আমরা প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো জোরদার করার ব্যাপারেও নিরন্তর লড়াই করে চলেছি। বাংলাদেশকে একটি গতিশীল ব্র্যান্ড হিসেবে গড়ে তুলতে আমাদের প্রচেষ্টা হতে হবে অব্যাহত ।
মামুন রশীদ: ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক ।
No comments