‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ -জাতীয়সংগীত by জামিল চৌধুরী
সেদিন (১৬ ভাদ্র ১৪১৬) সকালে প্রথম আলোর কলাম-১-এর প্রথম খবরটি পড়ে মন ভরে গেল। মনে হলো, আবার যেন ফিরে গিয়েছি সেই দেশে, যে দেশকে পাকিস্তানের দখলমুক্ত করতে সমগ্র বাঙালি জাতি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, যে দেশের মুক্তির জন্য লাখ লাখ বাঙালি প্রাণ উত্সর্গ করেছিল। খবরের শিরোনাম ‘জাতীয় সংগীতে ১০’। খবরের বিবরণে বলা হয়েছে, ঠিক করে জাতীয় সংগীত গাইতে পারার জন্য গোয়াইনহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য বছরের তিনটি পরীক্ষার প্রতিটিতে আলাদাভাবে ১০ নম্বর করে রাখা হয়েছে। অভিনন্দন গোয়াইনহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়। অভিনন্দন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
কেবল গোয়াইনহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন, বাংলাদেশের প্রতিটি বিদ্যালয়েই তো এমন হওয়া উচিত ছিল, এমনকি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতেও। প্রতিটি বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রম আরম্ভের আগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। এমনও শুনেছি, রাজধানী ঢাকার কোনো কোনো স্কুলে জাতীয় সংগীতের বদলে ছাত্রছাত্রীদের অন্য গান গাইতে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশের সব বিদ্যালয়ে জাতীয় সংগীত শেখা এবং গাওয়া বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। আশা করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এখানে মনে রাখা উচিত, ঠিক করে জাতীয় সংগীত গাইতে পারার অর্থ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত সুরে জাতীয় সংগীত গাইতে পারা। কিন্তু অনুমোদিত সুর কোথায় পাবে বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা, বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে জাতীয় সংগীত নির্বাসিত। অনেকে হয়তো জানেনই না যে ১৯৭৬ সালের মে মাস থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন বাণীসহ জাতীয় সংগীতের প্রচার বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ বেতার তার বেশ কিছুকাল আগে থেকেই জাতীয় সংগীতের বাণী প্রচার বন্ধ করে দেয়। কেন বা কার নির্দেশে তারাই জানে। তথ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাই অধিবেশনের শেষে প্রতিদিন প্রতিটি সরকারি এবং বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেল থেকে বাণীসহ সরকার অনুমোদিত সুরে জাতীয় সংগীতের প্রচার বাধ্যতামূলক করতে। একই সঙ্গে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে জাতীয় সংগীত প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আর বাংলাদেশের যেসব জেলায় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের শাখা রয়েছে, সেসব জেলায় বেসরকারি পর্যায়ে সম্মিলন পরিষদ এই অঞ্চলের স্কুলগুলোর সহযোগিতায় বিনা পারিশ্রমিকে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে।
এখানে জাতীয় সংগীতের অনুমোদিত সুর সম্পর্কে দু-একটি বিষয়ের উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুই দিন পর শান্তিদেব ঘোষ তাঁর নিজের গাওয়া ‘আমার সোনার বাংলা’ গানের একটি ক্যাসেট আমার হাতে দিয়ে বলেন, গানটি জাতীয় সংগীতরূপে নির্বাচিত হলে যেন এই সুরে গাওয়া হয়। অনেকের মতো তিনিও ধরে নিয়েছিলেন ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিই হয়তো বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচিত হবে। তার কিছুদিন পর ওই সুরের একটি স্বরলিপি ছাপিয়ে বিশ্বভারতীর কর্মসচিব অমিয় সেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠিয়ে দেন।
জাতীয় সংগীতরূপে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির নির্বাচন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং ৬৯-এর গণ-আন্দোলনের সময় থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাঠে-ময়দানে সর্বত্র এই গানটি শোনা যেত। সে সময়কার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জনসভায় বঙ্গবন্ধু প্রায়ই জাহিদুর রহিমকে ডেকে পাঠাতেন সভা আরম্ভ হওয়ার আগে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাওয়ার জন্য। একবার একটি অনুষ্ঠানে সন্জীদা খাতুন গাইবেন জেনে বঙ্গবন্ধু একজনকে দিয়ে বলে পাঠান তিনি যেন ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি পরিবেশন করেন। ১৯৭০-৭১ সালে গানটি এমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে ঢাকার রাস্তায় রিকশাচালককেও ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইতে শুনেছি। মুক্তযুদ্ধ চলাকালে প্রায় প্রতিটি প্রশিক্ষণ শিবিরে রোজ এই গানটি গাওয়া হতো। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বরে ভারত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পর কলকাতার বাংলাদেশ মিশনে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। কলকাতা বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হোসেন আলী কর্তৃক সেই পতাকা উত্তোলনের দৃশ্য বিশ্বের সমগ্র টেলিভিশন-সংবাদচিত্রে দেখানো হয় এবং পরদিন তাঁর আলোকচিত্র প্রায় সব কাগজে ছাপা হয়।
বিশ্বভারতীর পাঠানো স্বরলিপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠকে গৃহীত হয়নি। আমাদের মুক্তিসংগ্রাম চলাকালে যে সুরে গানটি গাওয়া হতো, সেই সুরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের রেকর্ড করা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানের একটি টেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই সভায় বাজিয়ে শোনানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সেই রেকর্ডে গাওয়া গানের সুর ও বাণীকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতরূপে অনুমোদন করে। ছায়ানটের অধ্যক্ষ সন্জীদা খাতুনের নির্দেশনায় গানটি আগেই ঢাকা টেলিভিশনকেন্দ্রের ডিআইটি (বর্তমান রাজউক) স্টুডিওতে রেকর্ড করা হয়েছিল। জাতীয় সংগীতের বিষয়টি পর্যালোচনাকালে ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটির কথাও আলোচনায় উঠে আসে। বিস্তৃত আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি হবে জাতীয় সংগীত (National Anthem) এবং ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটি হবে জাতীয় গীতি (National song)। জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি জাতীয় গীতি হিসেবে দ্বিতীয় একটি গানের নির্বাচন কোনো অভিনব ব্যাপার নয়। অন্য অনেক দেশের মতো প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ গানটি গাওয়া হয় National Anthem রূপে এবং ‘বন্দে মাতরম্’ গাওয়া হয় National song হিসেবে।
১৯৭৯ সালে ‘শ্রোতার আসর’-এর উদ্যোগে একটি ব্যাপ্তবাদনের (extended play disc) প্রথম পিঠে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত সুরে ‘আমার সোনার বাংলা’ (জাতীয় সংগীত) এবং দ্বিতীয় পিঠে ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ (জাতীয় গীতি) রেকর্ড করে প্রকাশ করা হয়। এরপর ১৪০০ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখে আনন্দধারার উদ্যোগে সরকারের অনুমোদিত সুরে জাতীয় সংগীতের একটি সিডিও প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্বাধীনতার প্রায় চার দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বাংলাদেশ সরকার জাতীয় সংগীত বা জাতীয় গীতির কোনো রেকর্ড বা সিডি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়নি।
জামিল চৌধুরী: জাতীয়রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ ও ছায়ানটের সাবেক সভাপতি।
কেবল গোয়াইনহাট প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন, বাংলাদেশের প্রতিটি বিদ্যালয়েই তো এমন হওয়া উচিত ছিল, এমনকি মাদ্রাসা ও ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলগুলোতেও। প্রতিটি বিদ্যালয়ের দৈনন্দিন কার্যক্রম আরম্ভের আগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার সরকারি নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে তা মানা হয় না। এমনও শুনেছি, রাজধানী ঢাকার কোনো কোনো স্কুলে জাতীয় সংগীতের বদলে ছাত্রছাত্রীদের অন্য গান গাইতে বাধ্য করা হয়। বাংলাদেশের সব বিদ্যালয়ে জাতীয় সংগীত শেখা এবং গাওয়া বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত। আশা করি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এখানে মনে রাখা উচিত, ঠিক করে জাতীয় সংগীত গাইতে পারার অর্থ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত সুরে জাতীয় সংগীত গাইতে পারা। কিন্তু অনুমোদিত সুর কোথায় পাবে বিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েরা, বিশেষ করে যখন বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে জাতীয় সংগীত নির্বাসিত। অনেকে হয়তো জানেনই না যে ১৯৭৬ সালের মে মাস থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশন বাণীসহ জাতীয় সংগীতের প্রচার বন্ধ করে দেয়। বাংলাদেশ বেতার তার বেশ কিছুকাল আগে থেকেই জাতীয় সংগীতের বাণী প্রচার বন্ধ করে দেয়। কেন বা কার নির্দেশে তারাই জানে। তথ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাই অধিবেশনের শেষে প্রতিদিন প্রতিটি সরকারি এবং বেসরকারি বেতার ও টেলিভিশন চ্যানেল থেকে বাণীসহ সরকার অনুমোদিত সুরে জাতীয় সংগীতের প্রচার বাধ্যতামূলক করতে। একই সঙ্গে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন থেকে জাতীয় সংগীত প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া উচিত। আর বাংলাদেশের যেসব জেলায় জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদের শাখা রয়েছে, সেসব জেলায় বেসরকারি পর্যায়ে সম্মিলন পরিষদ এই অঞ্চলের স্কুলগুলোর সহযোগিতায় বিনা পারিশ্রমিকে বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে।
এখানে জাতীয় সংগীতের অনুমোদিত সুর সম্পর্কে দু-একটি বিষয়ের উল্লেখ অপ্রাসঙ্গিক হবে না। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে ঢাকায় পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের দুই দিন পর শান্তিদেব ঘোষ তাঁর নিজের গাওয়া ‘আমার সোনার বাংলা’ গানের একটি ক্যাসেট আমার হাতে দিয়ে বলেন, গানটি জাতীয় সংগীতরূপে নির্বাচিত হলে যেন এই সুরে গাওয়া হয়। অনেকের মতো তিনিও ধরে নিয়েছিলেন ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটিই হয়তো বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত হিসেবে নির্বাচিত হবে। তার কিছুদিন পর ওই সুরের একটি স্বরলিপি ছাপিয়ে বিশ্বভারতীর কর্মসচিব অমিয় সেন বাংলাদেশ সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে পাঠিয়ে দেন।
জাতীয় সংগীতরূপে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটির নির্বাচন কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং ৬৯-এর গণ-আন্দোলনের সময় থেকেই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাঠে-ময়দানে সর্বত্র এই গানটি শোনা যেত। সে সময়কার আওয়ামী লীগের বিভিন্ন জনসভায় বঙ্গবন্ধু প্রায়ই জাহিদুর রহিমকে ডেকে পাঠাতেন সভা আরম্ভ হওয়ার আগে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি গাওয়ার জন্য। একবার একটি অনুষ্ঠানে সন্জীদা খাতুন গাইবেন জেনে বঙ্গবন্ধু একজনকে দিয়ে বলে পাঠান তিনি যেন ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি পরিবেশন করেন। ১৯৭০-৭১ সালে গানটি এমন জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে ঢাকার রাস্তায় রিকশাচালককেও ‘আমার সোনার বাংলা’ গাইতে শুনেছি। মুক্তযুদ্ধ চলাকালে প্রায় প্রতিটি প্রশিক্ষণ শিবিরে রোজ এই গানটি গাওয়া হতো। ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বরে ভারত বাংলাদেশকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়ার পর কলকাতার বাংলাদেশ মিশনে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গেয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করা হয়। কলকাতা বাংলাদেশ মিশনের প্রধান হোসেন আলী কর্তৃক সেই পতাকা উত্তোলনের দৃশ্য বিশ্বের সমগ্র টেলিভিশন-সংবাদচিত্রে দেখানো হয় এবং পরদিন তাঁর আলোকচিত্র প্রায় সব কাগজে ছাপা হয়।
বিশ্বভারতীর পাঠানো স্বরলিপি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের বৈঠকে গৃহীত হয়নি। আমাদের মুক্তিসংগ্রাম চলাকালে যে সুরে গানটি গাওয়া হতো, সেই সুরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের রেকর্ড করা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানের একটি টেপ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওই সভায় বাজিয়ে শোনানো হয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সেই রেকর্ডে গাওয়া গানের সুর ও বাণীকে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতরূপে অনুমোদন করে। ছায়ানটের অধ্যক্ষ সন্জীদা খাতুনের নির্দেশনায় গানটি আগেই ঢাকা টেলিভিশনকেন্দ্রের ডিআইটি (বর্তমান রাজউক) স্টুডিওতে রেকর্ড করা হয়েছিল। জাতীয় সংগীতের বিষয়টি পর্যালোচনাকালে ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটির কথাও আলোচনায় উঠে আসে। বিস্তৃত আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হয় যে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি হবে জাতীয় সংগীত (National Anthem) এবং ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ গানটি হবে জাতীয় গীতি (National song)। জাতীয় সংগীতের পাশাপাশি জাতীয় গীতি হিসেবে দ্বিতীয় একটি গানের নির্বাচন কোনো অভিনব ব্যাপার নয়। অন্য অনেক দেশের মতো প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ গানটি গাওয়া হয় National Anthem রূপে এবং ‘বন্দে মাতরম্’ গাওয়া হয় National song হিসেবে।
১৯৭৯ সালে ‘শ্রোতার আসর’-এর উদ্যোগে একটি ব্যাপ্তবাদনের (extended play disc) প্রথম পিঠে বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত সুরে ‘আমার সোনার বাংলা’ (জাতীয় সংগীত) এবং দ্বিতীয় পিঠে ‘ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’ (জাতীয় গীতি) রেকর্ড করে প্রকাশ করা হয়। এরপর ১৪০০ বঙ্গাব্দের পয়লা বৈশাখে আনন্দধারার উদ্যোগে সরকারের অনুমোদিত সুরে জাতীয় সংগীতের একটি সিডিও প্রকাশিত হয়। কিন্তু স্বাধীনতার প্রায় চার দশক অতিক্রান্ত হওয়ার পরও বাংলাদেশ সরকার জাতীয় সংগীত বা জাতীয় গীতির কোনো রেকর্ড বা সিডি প্রকাশের উদ্যোগ নেয়নি।
জামিল চৌধুরী: জাতীয়রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ ও ছায়ানটের সাবেক সভাপতি।
No comments