ভারতগামী ফ্লাইট বাসে খরা by শুভ্র দেব

বাংলাদেশি যাত্রীদের সীমিত পরিসরে ভিসা প্রদান করায় ভারতের সঙ্গে আকাশ ও সড়ক পথে যাত্রী সংকট দেখা দিয়েছে চরমে। যাত্রী সংকটের কারণে ভারতে বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট পরিচালনা কমিয়ে দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে ফ্লাইট কমিয়েও যাত্রী মিলছে না। বেসরকারি নভোএয়ার  যাত্রী সংকটের কারণে ১৬ই সেপ্টেম্বর পুরোপুরি ফ্লাইট বন্ধ করে দিয়েছে। যাত্রী সংকটের কারণে বন্ধ থাকা রেল যোগাযোগও চালু হচ্ছে না। এ ছাড়া সড়ক পথেও যাত্রী সংকট অর্ধেকের নিচে নেমেছে। এভিয়েশন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের পর থেকে এই অচলাবস্থা বিরাজ করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভারত বাংলাদেশে ভিসা কার্যক্রম সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। পরে সীমিত পরিসরে মেডিকেল ভিসা ইস্যু করে। তবুও যাত্রী সংকট কাটছেই না; বরং প্রতিদিনই যাত্রী কমছে। আবার যাদের আগে থেকে ভিসা আছে তারা ভ্রমণ করছেন না।

বিমানবন্দর সূত্র বলছে, বাংলাদেশ থেকে ভারতের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স, নভোএয়ার, ভারতের ভিস্তারা এয়ারলাইন্স, এয়ার ইন্ডিয়া ও ইন্ডিগো। এসব এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে ভারতের কলকাতা, দিল্লি, চেন্নাই ও মুম্বাই রুটে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে তারা ধারণক্ষমতার ৫০ শতাংশও যাত্রী পাচ্ছে না। এজন্য সব প্রতিষ্ঠানই ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে। নতুন করেও কমানোর চিন্তা করছে। ঢাকা থেকে কলকাতা, চেন্নাই ও দিল্লি রুটে ধারণক্ষমতার গড়ে ৫০ শতাংশ যাত্রী মিলছে। বাকি সিটগুলো ফাঁকা থাকছে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ভ্রমণ, চিকিৎসা, শিক্ষা ও ব্যবসার কাজে লাখ লাখ মানুষ ভারতে ভ্রমণ করেন। বাংলাদেশিদের ভিসা প্রদান করার জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার আবেদনকারী ভিসা সেন্টারে যেতেন। আবেদনকারীদের প্রায় সবাইকে ভিসা দিতো ভারত। সেই হিসাবে ভিসা প্রাপ্তির পর কম খরচে পার্শ্ববর্তী এই দেশটিতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ ভ্রমণ করতে পারতেন। বিশেষ করে ভারতের কলকাতার প্রতিটি অলিগলি, রেস্তরাঁ, হোটেল ও শপিংমলে বাংলাদেশিদের দেখা যেত। চিকিৎসার জন্য কলকাতা, চেন্নাইসহ বিভিন্ন রাজ্যে বাংলাদেশিরা অবস্থান করতেন। সবমিলিয়ে দুই দেশের মানুষ ও ব্যবসায়ীরা সুবিধাভোগী ছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগের একদিন পর বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা সেন্টারগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। ১১ই আগস্ট সীমিত আকারে ভিসা সেন্টার খুললেও আগের আবেদনের ভিসা বা পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছিল। এখন শুধু মেডিকেল ভিসার আবেদন জমা নিচ্ছে। অর্থাৎ, কেউ চিকিৎসার জন্য ভারত যেতে চাইলে তাকে আগে চিকিৎসার সব কাগজপত্র ভিসা সেন্টারে জমা দিতে হবে। ভিসা সেন্টারের লোকজন কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে। পরে ভিসা দেয়ার সিদ্ধান্ত হলে পাসপোর্টের জন্য আবেদন করতে বলে।
এদিকে, ঢাকা থেকে কলকাতা রুটে এটিআর ৭২-৫০০ এয়ারক্রাফট দিয়ে সপ্তাহে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করতো নভোএয়ার। এ এয়ারক্রাফটের ধারণক্ষমতা ৭০ জন। ৫ই আগস্টের পর ক্রমেই যাত্রী কমতে থাকে। একপর্যায়ে অর্ধেক সিট ফাঁকা রেখেই ফ্লাইট চালায়। পরে পরিচালন ব্যয় তুলতে না পারায় গত ১৬ই সেপ্টেম্বর থেকে সাময়িকভাবে ফ্লাইট বন্ধ রেখেছে নভোএয়ার।
বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিদর্শক (ইমিগ্রেশন) আজহারুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আগে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার যাত্রী আসা-যাওয়া করতো। এখন সেটি কমে ২৫০০ থেকে ৩০০০ হাজারে নেমেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) বোশরা ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, আগে কলকাতায় প্রতিদিন ২টা করে  সপ্তাহে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হতো। যাত্রী সংকটে এখন অর্ধেক কমানো হয়েছে। প্রতিদিন এখন ৭টি করে ফ্লাইট চালানো হয়। একইভাবে দিল্লি রুটে সপ্তাহে ৭টি ফ্লাইট চালানো হতো এখন ৪টি কমিয়ে তিনটি চালানো হয়। চেন্নাইয়েও একই অবস্থা। ৭টি ফ্লাইট থেকে কমিয়ে এখন ৩টি ফ্লাইট চালানো হয়।
ইউএস-বাংলার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, ঢাকা থেকে কলকাতায় আগে ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হতো। এখন কমিয়ে ৬টি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম থেকে কলকাতার ৭টি ফ্লাইটই যাত্রী সংকটে বন্ধ। ঢাকা থেকে চেন্নাইগামী ১১টি ফ্লাইটের মধ্যে এখন ৬টি চালু আছে। তিনি বলেন, গড়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ফ্লাইট চলছে। ভিসা সংক্রান্ত জটিলতার যদি নিরসন না হয় তবে ফ্লাইট আরও কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভিসা জটিলতা না কাটলে বিভিন্ন দিক দিয়ে দুই দেশে এবং এভিয়েশন ও ট্যুরিজম খাত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এসোসিয়েশন অব ট্র্যাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ মানবজমিনকে বলেন, ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ ভারতগামী যাত্রী কমে গেছে। সব এয়ারলাইন্সগুলো ফ্লাইট কমিয়ে দিয়েছে। মূলত ভারতের ভিসা বন্ধ থাকায় এ অবস্থা হয়েছে। এখনো সীমিত পরিসরে ভিসা ইস্যু হচ্ছে। যাদের ভিসা আছে তারাও এখনো ট্র্যাভেল করার সাহস পাচ্ছে না। তারা মনে করছে, এরকম পরিস্থিতিতে ট্র্যাভেল করা কতোটা রিস্ক। ইমিগ্রেশনেও বেশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সবার মধ্যেই একটা অস্থিরতা আছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.