সার্ক পুনরুজ্জীবিত করতে বাংলাদেশ-পাকিস্তানের যৌথ প্রয়াস by আব্দুল কাইয়ুম

ভারত ও পাকিস্তানের দ্বন্দ্বের ফলে ২০১৬ সাল থেকে প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়া দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা সার্ক পুনরুজ্জীবিত করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। জাতিসংঘের সর্বশেষ সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে দুই দেশের সরকার প্রধানদের সাক্ষাতের সময় এ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং শফিকুল আলম তুর্কি গণমাধ্যম টিআরটি ওয়ার্ল্ডকে বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় ড. ইউনূস সার্ক-কে পুনরুজ্জীবিত করার বিষয়ে আলোচনা করেছেন যা প্রায় এক দশক ধরে অকার্যকর রয়েছে।

শফিকুল আলম আরও বলেন, সার্ক আঞ্চলিক সহযোগিতার জন্য একটি সত্যিকারের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় বসবাসকারী প্রায় দুই বিলিয়ন মানুষের জন্য কাজ করতে পারে বলে মনে করেন ড. ইউনূস। দক্ষিণ এশিয়ার ৮টি দেশ নিয়ে গঠিত এই সংস্থাটিকে পুনরায় সক্রিয় করতে পাকিস্তানের প্রতি যৌথ উদ্যোগে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। উভয় দেশের জনগণের অগ্রগতি ও উন্নয়নের লক্ষ্যে দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং বহুপাক্ষিক স্তরে কাজ করা প্রয়োজন বলে পাকিস্তানের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। এক্ষেত্রে সার্ক-কে পুনরায় সক্রিয় করতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের উভয় নেতাই একমত হয়েছেন।

আগস্টে ছাত্র নেতৃত্বাধীন বিপ্লবের মাধ্যমে শেখ হাসিনার লৌহ-মুষ্টি শাসনের অবসানের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন এই অঞ্চলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য অংশীদার ছিল ভারত। দেশটির সাথে হাসিনা ঘনিষ্ঠ সখ্যতা গড়ে তুলেছিলেন। প্রতিদান হিসেবে গণঅভ্যুত্থানের পর হাসিনার শেষ রক্ষায় ভারতই এগিয়ে এসেছে। দিল্লি তাকে আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে দিল্লির সম্পর্ক শুধু হাসিনা কেন্দ্রিক হওয়ায় এদেশের মানুষের সাথে তাদের বৈরতা গত ১৫ বছরে বেড়েছে বহুগুন। যা নিয়ে বেশ চিন্তায় পড়েছে দিল্লি। এছাড়া ইতিমধ্যেই ভারতের কাছে হাসিনাকে হস্তান্তরের আবেদন করেছে বাংলাদেশ।
ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর হাসিনা তার ক্ষমতা হারানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করেছেন বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।

কিন্তু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ওয়াশিংটনের হস্তক্ষেপের অভিযোগকে ‘শুধুই মিথ্যা’ বলে অভিহিত করে যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তার ক্ষমতা হারানোয় তাদের কোনো ভূমিকা নেই। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নোবেলজয়ী ড. ইউনূসের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা স্বত্বেও তিনি সার্কের মতো আঞ্চলিক উদ্যোগকে শক্তিশালী করার জন্য জোরালো তৎপরতা শুরু করেছেন। শফিকুল আলম বলেছেন, দক্ষিণ এশিয়ার সকল দেশের সঙ্গেই সার্কের বিষয়ে কথা বলেছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেছেন, এটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটি দুর্দান্ত আঞ্চলিক সহযোগি সংস্থা হতে পারে। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের কথা উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেছেন,  জার্মানি এবং ফ্রান্স (ইইউ সদস্য) একে অপরের সাথে যুদ্ধ করছিল। আমি মনে করি আমরা শান্তি ও স্থিতিশীলতার পরিবেশও তৈরি করতে পারি। সার্কের বিষয়ে ড. ইউনূস ভারতের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানিয়েছেন শফিকুল আলম।

সার্কভুক্ত সদস্যদের মধ্যে উত্তেজনা

হাসিনার শাসনামলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সম্পর্ক টানটান ছিল। কিন্তু নতুন সরকার ছিন্নভিন্ন বন্ধনে নতুনভাবে প্রাণ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ এক সময় পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান নামে একটি একক দেশ ছিল। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয় এবং তাদের সম্পর্ক ভেঙে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে ড. ইউনূস বাংলাদেশের নতুন সরকারের প্রধান নির্বাচিত হওয়ার সাথে সাথে উভয় পক্ষই সম্পর্কের স্বাভাবিককরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। তবে ড. ইউনূসের সার্ককে পুনরুজ্জীবিত করার প্রচেষ্টায় বহু বাধা রয়েছে। পাকিস্তান এবং ভারত-শাসিত কাশ্মীরে বিভক্ত থাকা কাশ্মীর অঞ্চলে তাদের বিরোধের কারণে প্রাথমিকভাবে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই উত্তেজিত থাকে।

 ইসলামাবাদ চায় সার্ক বৈঠকে আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিনিধিত্ব করুক একজন তালেবান কর্মকর্তা। কিন্তু সার্কভুক্ত দেশগুলোর কোনোটিই এখন পর্যন্ত কাবুলের তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়নি। এ বছর নিয়ে টানা পঞ্চম বারের মতো জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে সার্কের মন্ত্রী পরিষদের কোনো বৈঠক হয়নি। সার্কভুক্ত সদস্য দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে ড. ইউনূসের জন্য পুনরায় সংস্থাটি সক্রিয় করা খুব একটা সহজ কাজ হবে না বলে মনে করছেন রাজনৈতিক গবেষকরা। 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.