কঠিন চ্যালেঞ্জে ‘সাকিবের শেষ ইচ্ছা’ by ইশতিয়াক পারভেজ

জীবনের কঠিন সময় পার করছে সাকিব আল হাসান। নিজের দেশে ফিরতে পারছেন না। এরই মধ্যে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। নিজের ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলতে চেয়েছেন দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। তবে পরিস্থিতি যেমন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে নিরাপত্তা চেয়েছিলেন সাকিব। কিন্তু বিসিবি’র সভাপতি ফারুক আহমেদ স্পষ্ট জানিয়েছেন, বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার ফিরে এলে নিরাপত্তার দায়িত্ব নিতে পারবেন না। তাহলে কি কানপুরেই সাকিব ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলছেন! তার দেশে ফিরতে না পারার দু’টি কারণ স্পষ্ট, এরই মধ্যে তিনি খুনের মামলার আসামি আর গণআন্দোলনে ছাত্রদের পক্ষে অবস্থান না নিয়ে তিনি ছিলেন নীরব। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্যও ছিলেন সাকিব। যে কারণে জনরোষ তার বিপক্ষে ফুঁসে উঠতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে। এখানেই তার নিরাপত্তার মূল হুমকি। আবার ফিরে এসে সহজেই দেশের বাইরে চলে যেতে পারবেন সেটিও নয়। মামলার কারণে তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া স্পষ্ট করেছেন কারণটাও। গতকাল ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন- ‘এখন খেলোয়াড় হিসেবে আমাদের একজনকে যতটুকু নিরাপত্তা দেয়া দরকার, দেয়ার দায়িত্ব দেশে এলে আমরা দেবো। কিন্তু উনার রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে জনগণের মধ্যে যদি ক্ষোভ থাকে, তাহলে...!’

অন্যদিকে শেষ পর্যন্ত সাকিব দেশে এসে খেললেও তার ফিরে যাওয়া নিয়ে আছে বিস্তর জটিলতা। তার বিরুদ্ধে যে খুনের মামলা তাতে তিনি গ্রেপ্তার হবেন না এমন কোনো নিশ্চয়তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, একটি সূত্র জানায়- সরকারি গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, সাকিব দেশে ফিরলে জনরোষে পড়তে পারেন। ক্ষতি হতে পারে তার। তাকে ঘিরে হতে পারে ষড়যন্ত্রও। যা ক্ষুণ্ন করবে দেশের ভাবমূর্তি। অন্যদিকে প্রশ্ন উঠেছে সাকিবের নিরাপত্তা দিতে না পারলে বিসিবি দক্ষিণ আফ্রিকা দলের নিরাপত্তা দেবে কীভাবে! এ বিষয়ে একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, ‘আসলে সাকিব ও দক্ষিণ আফ্রিকার নিরাপত্তা ইস্যু এক নয়। কারণ, সফরকারী দলের ক্রিকেটারদের ওপর দেশের জনগণের কোনো ক্ষোভ নেই। কিন্তু সাকিবের ওপর আছে ভীষণ ভাবে। নানা সূত্রে খবর আছে দেশে ফিরলে তিনি জনরোষের মুখে পড়তে পারেন। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোও সরকারকে এই বিষয়ে সতর্ক করেছে। সেটি হলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হতে পারে। এই মুহূর্তে সাকিবের নিরাপত্তার বিষয়টি শুধু বিসিবিই নয় রাষ্ট্রের জন্যও কঠিন হবে। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কেউ কি তাকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, তিনি দেশে ফিরলে গ্রেপ্তার হবেন না! তাহলে তার ফিরে যাওয়া নিয়েও জটিলতা আছে।’ ক্রীড়া উপদেষ্টার কথাতেও তা স্পষ্ট। তিনি জানিয়েছেন- সাকিবকে তার রাজনৈতিক পরিচয়ও স্পষ্ট করতে হবে। আসিফ মাহমুদ বলেন, ‘মনে করেন আমার নিরাপত্তায় পাঁচজন পুলিশ কনস্টেবল থাকে, একজন গানম্যান থাকে। আমার ওপরে যদি দেশের ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে দশ কোটি জনগণের ক্ষোভ থাকে, তাহলে এই পাঁচ/ছয়জন আমাকে কী নিরাপত্তা দেবে? আমারও সেই ক্ষেত্রে নিরাপদ থাকার সুযোগ নেই।’
কানপুর টেস্টের আগের দিন আকস্মিক এক সিদ্ধান্তে টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকে বিদায়ের ঘোষণা দেন সাকিব আল হাসান। বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার জানিয়েছেন সর্বশেষ বিশ্বকাপেই তার শেষ টি-টোয়েন্টি খেলা হয়ে গেছে। ঘরের মাঠে আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ দিয়ে টেস্টকে বিদায় জানানোর কথা বলেছেন তিনি। তবে সেটি সম্ভব হবে যদি তিনি সরকার ও বিসিবি থেকে দেশে ফেরার নিরাপত্তা পান। তিনি দেশের হয়ে ৭১টি টেস্ট খেলেছেন। ব্যাট হাতে ৫ সেঞ্চুরি ও ৩১ ফিফটিতে ৩৮.৩৩ গড়ে করেছেন ৪৬০০ রান। বল হাতে শিকার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ২৪২ উইকেট। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ২১টি টেস্ট ম্যাচ জিতেছে, এর ১৫টিতেই ছিলেন সাকিব। সেখানে অধিনায়ক হিসেবে ৪ জয়ে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। অন্যদিকে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৪৩৮ ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন- এর মধ্যে জয় পেয়েছেন ১৬৯ ম্যাচে। এখানেও ১১৭ ম্যাচে দলের হয়ে ভূমিকা রেখেছেন তিনি। যার মধ্যে ২৭টি জয় এনে দিয়েছেন অধিনায়ক হিসেবে। অন্যদিকে ১৭৬ টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্যে বাংলাদেশের জয়ের সংখ্যা ৬৮টি। এর মধ্যে ৫৮টি জয়ে সাকিব খেলেছেন দলের হয়ে। তার নেতৃত্বে ১৬টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয় পায় টাইগাররা। বিশ্বের এক নম্বর অলরাউন্ডার হয়ে দেশের গর্বও তিনি। তবে মাঠে যতটা উজ্জ্বল সাকিব- বাইরে ততোটাই বিতর্কিত। সবশেষ রাজনীতিতে অংশ নেয়া, এমপি হওয়া ও জনগণের পাশে না থাকার মতো কাজও করেছেন তিনি। এরপরও তার ভক্তকুলের আশা ব্যক্তি সাকিব নয়, দেশের অন্যতম সেরা ক্রিকেটারকে সম্মান নিয়ে মাঠ থেকে বিদায়ের সুযোগ করে দেয়া উচিত বিসিবি’র। কিন্তু বাস্তবতা বলছে- তার শেষ ইচ্ছাটি পূরণ এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখেই! 

mzamin

No comments

Powered by Blogger.