আত্মসমর্পণের পর কারাগারে মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমানের সাজা স্থগিত

আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুল হক তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এই আদেশ দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমান আত্মসমর্পণ করলে এই আদেশ দেয়া হয়।

ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখবো: এদিন সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে এ মামলায় আত্মসমর্পণ করতে বিশাল মিছিল নিয়ে আদালতে আসেন মাহমুদুর রহমান। তবে সেনাবাহিনী ও পুলিশের বাধায় মিছিল আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকতে পারেনি। এজলাসে যাওয়ার আগে মাহমুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশের আইনে যেটা আছে, সেই আইন অনুযায়ী আমি আত্মসমর্পণ করবো। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমার লড়াই অব্যাহত রাখবো। যদিও এই মামলা সর্ব মিথ্যা এবং একটা উদ্ভট ব্যাপার। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে নিজেদের মেরুদণ্ড সোজা রাখতে হবে। মেরুদণ্ড সোজা রাখার জন্য আমি এসেছি।

মাহমুদুর রহমানের পক্ষে  শুনানি করেন আইনজীবী এডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ও জয়নুল আবেদীন মেসবাহ। তারা আদালতকে জানান, সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মাহমুদুর রহমানকে সাজা দেয়া হয়েছে। তিনি একজন বিপ্লবী সাংবাদিক নেতা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বুয়েট থেকে পড়াশোনা করেছেন। একসময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ছিলেন, বিনিয়োগ বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানও ছিলেন। তিনি প্রতিজ্ঞা করেছিলেন ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আদালতে জামিন নেবেন না। দেশে এখন ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন হয়েছে। তিনি দেশে এসেই আত্মসমর্পণ করলেন। আমরা কারাগারে তার ডিভিশন চাই। শুনানি শেষে আদালত মাহমুদুর রহমানকে কারাগারে ও আইনানুযায়ী ডিভিশন দেয়ার আদেশ দেন।  এরপর বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে তাকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে প্রিজন ভ্যানে করে কারাগারে নেয়া হয়।

আসামিপক্ষের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন মেসবাহ সাংবাদিকদের বলেন, এ মামলার কথিত ভিকটিম জয়ের সঙ্গে রায় প্রদানকারী বিচারকের ছবিই প্রমাণ করে এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া ছিল ষড়যন্ত্রের অংশ। মাহমুদুর রহমানকে দমানোর জন্য কাল্পনিক অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাজা দেয়া হয়। আমরা কারাগারে যাওয়ার আদেশের পূর্ণাঙ্গ কপি পেলেই মহানগর দায়রা জজ আদালতে আপিল করবো। আশা করছি শিগগিরই তিনি কারামুক্ত হবেন। গত ২৭শে সেপ্টেম্বর সকালে তুরস্ক থেকে দেশে ফেরেন মাহমুদুর রহমান।

একই মামলায় শফিক রেহমানের সাজা স্থগিত: একই মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। রোববার শফিক রেহমানের আইনজীবী শেখ সাকিল আহমেদ রিপন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মতামতের আলোকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে শফিক রেহমানের সাজা স্থগিতের কথা জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সাজা স্থগিতের বিষয়ে দাখিল করা আবেদন এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের মতামতের আলোকে দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউরের ধারা ৪০১(১)- এ দেয়া ক্ষমতাবলে ওই মামলায় তাদের দণ্ডাদেশ আদালতে আত্মসমর্পণপূর্বক আপিল দায়েরের শর্তে এক বছরের জন্য স্থগিত করা হলো।

মামলা সূত্রে জানা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় গত বছরের ১৭ই আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ ৫ জনের পৃথক দুই ধারায় ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।

আসামিদের দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) ৫ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরও এক মাসের কারাভোগ করতে হবে। এ ছাড়া একই আইনে ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) ২ বছরের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.