লেবাননে ইসরায়েলি আগ্রাসন: হিজবুল্লাহর রয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস

হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ মৃত্যুর খবর গত শনিবার নিশ্চিত করেছে সংগঠনটি। শুক্রবার বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তিনি নিহত হন। তাঁর মৃত্যু মধ্যপ্রাচ্যের সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি বড় ঘটনা হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু এর দীর্ঘমেয়াদি পরিণতি অনিশ্চিত। তাঁর মৃত্যু গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন সামনে এনেছে আর তা হচ্ছে, হিজবুল্লাহ নেতাদের এভাবে হত্যা করে কি সংগঠনটিকে দমিয়ে রাখা যাবে? এর সংক্ষিপ্ত উত্তর হচ্ছে, তাদের একেবারে নিশ্চিহ্ন করা যাবে না। তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস রয়েছে।

ইসরায়েলের নিজস্ব ইতিহাস থেকে জানা উচিত যে এ ধরনের হামলা সব সময় একটি সশস্ত্র গোষ্ঠীকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করতে পারে না। এর আগে ২০০৮ সালে ইসরায়েল হিজবুল্লাহর সামরিক নেতা ইমাদ মুগনিয়াকে সিরিয়ার দামেস্কে হত্যা করে। তাঁকে হত্যার পর থেকে সংগঠনটি আরও শক্তিশালী হয়েছে। চার বছর আগে ইসরায়েল হামাসের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমেদ ইয়াসিনকে হত্যা করে। তাতেও হামাসকে দমানো যায়নি। দুই দশক পর তারা ইসরায়েলে বড় ধরনের হামলা করেছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামলায় ১ দিনে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যা করেছে হামাস।

গত জুলাই মাসে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হন হামাসের সামরিক শাখার প্রধান মোহাম্মদ দেইফ। তারপরও গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তারা।

যুক্তরাষ্ট্রের এভাবে সশস্ত্র সংগঠনের নেতাদের হত্যার ইতিহাস রয়েছে। ২০০৬ সালে ইরাকে আল-কায়েদা নেতা আবু মুসাব আল-জারকায়িকে হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। একে তারা বড় সাফল্য হিসেবে দেখেছিল। কিন্তু আট বছর পর ইরাকে আল-কায়েদা আইসিস–রূপে আবির্ভূত হয়। এরপর পশ্চিমাদের ত্রাস হয়ে ওঠে।

২০১৬ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা পাকিস্তানে হামলা করে তালেবান নেতা মোল্লা আখতার মোহাম্মদ মনসুরকে হত্যা করেন। কিন্তু এখনো তালেবান আফগানিস্তানে ক্ষমতায়।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাগদাদে হামলা করে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডসের কুদস ফোর্সের প্রধান কাশেম সোলাইমানিকে হত্যা করেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যু ইরানের আঞ্চলিক শক্তি ও উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে দমাতে পারেনি। এরপরও হিজবুল্লাহ, হামাস ও ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েল ও ইরাকে মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র তালেবান, হুতি, হামাস, আইসিস ও হিজবুল্লাহকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তকমা দিয়েছে।
সশস্ত্র গোষ্ঠীকে কীভাবে নিষ্ক্রিয় করা যায়

কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠীকে নিষ্ক্রিয় করতে হলে যতটা সম্ভব এর নেতা ও মধ্যসারির ব্যবস্থাপকদের টেকসই অভিযানের মাধ্যমে সরিয়ে দিতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিউ আমেরিকার তথ্য অনুযায়ী, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ২০০৮ সালে আফগানিস্তান সীমান্তে আল-কায়েদার অনেক নেতাকে এভাবে হত্যা করেছিল।

পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে ওসামা বিন লাদেনকে হত্যায় অংশ নেওয়া মার্কিন নেভি সিলের উদ্ধার করা নথি অনুযায়ী, আল-কায়েদার নেতারা নিয়মিত তাঁদের অনুসারীদের বার্তা দিতেন যাতে তাঁরা মার্কিন ড্রোন থেকে দূরে থাকেন। যেসব মেঘলা দিনে ড্রোনের কার্যকারিতা কম থাকে, সেসব দিনেই কেবল তাঁরা চলাফেরা করতেন। ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু জঙ্গিদের প্রতি আল-কায়েদার আবেদন ও হামলা চালানোর ক্ষমতা কমাতে উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছে।

ওসামার উত্তরসূরি আয়মান আল-জাওয়াহিরির আল-কায়েদাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য ক্যারিশমা বা সাংগঠনিক দক্ষতা ছিল না।

নাসরুল্লাহর হত্যাকে ইসরায়েলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পুরস্কার বলা যায়। হিজবুল্লাহর ওপর দফায় দফায় হামলা, সংগঠনটির সদস্যদের পেজার ও ওয়াকিটকিতে বিস্ফোরণ, ব্যাপক বিমান হামলা চালিয়ে হিজবুল্লাহর অবকাঠামো ধ্বংসের মতো সাফল্য পাওয়া দাবি করেছে ইসরায়েল। নেতা হারিয়ে হিজবুল্লাহ এখন বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়লেও এত দ্রুত এর সশস্ত্র গোষ্ঠীটির শেষ লেখা যাবে না। ইতিহাস বলে, হিজবুল্লাহ আবার ঘুরে দাঁড়াবে এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের দীর্ঘ লড়াই চালু রাখতে অন্য নেতাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেবে।

হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন মজলিশ ওয়াহদাত-ই-মুসলিমিন নামের একটি শিয়া রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থকেরা। পাকিস্তানের লাহোরে, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসরুল্লাহর হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন মজলিশ ওয়াহদাত-ই-মুসলিমিন নামের একটি শিয়া রাজনৈতিক দলের কর্মী ও সমর্থকেরা। পাকিস্তানের লাহোরে, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ছবি: এএফপি

No comments

Powered by Blogger.