নাসরুল্লাহ হত্যা, টান টান উত্তেনা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নাসরুল্লাহকে হত্যার ঘটনাকে ‘ন্যায়বিচারের একটি পদক্ষেপ’ বলে স্বাগত জানিয়েছেন। ইরানের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেছেন, নাসরুল্লাহ’র মৃত্যু তাদের ধ্বংস ডেকে আনবে। ইরানের আইএসএনএ বার্তা সংস্থা তাকে উদ্ধৃত করে এসব জানিয়েছে। হিজবুল্লাহকে আর্থিক এবং সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে ইরান। মুখপাত্র নাসের কানানি এক্স-এ এক পোস্টে বলেছেন, নাসরুল্লাহ’র কাজ তার মৃত্যুর পরেও অব্যাহত থাকবে। তার পবিত্র লক্ষ্য কুদ্স (জেরুজালেমের) মুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হবে। বার্তা সংস্থা এএফপি যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের নেতৃবৃন্দের প্রতিক্রিয়া উল্লেখ করেছে।
জো বাইডেন বলেছেন, নাসরুল্লাহ’র মৃত্যু ছিল ‘হাজার হাজার আমেরিকান, ইসরাইলি ও লেবাননের বেসামরিক নাগরিকদের জন্য ‘ন্যায়বিচারের একটি পদক্ষেপ’। ওয়াশিংটন ইরান সমর্থিত যোদ্ধাগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ইসরাইলের অধিকারকে সমর্থন করে এবং বাইডেন তার বিবৃতিতে আরও বলেন, এই অঞ্চলে প্রতিরক্ষা দৃষ্টিভঙ্গি আরও উন্নত করা হবে। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, নাসরুল্লাহ একজন ‘সন্ত্রাসী’ যার হাতে আমেরিকান রক্ত লেগেছে। এ ছাড়া কমালা ইরান সমর্থিত যোদ্ধাগোষ্ঠী যেমন হিজবুল্লাহ, হামাস ও হুতিদের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার জন্য ইসরাইলের অধিকারকে সর্বদা সমর্থন করার কথা জানিয়েছেন। রিপাবলিকানরাও নাসরুল্লাহ’র বিপরীতে ইসরাইলের প্রতি তাদের সমর্থন জানিয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, আমরা ইসরাইলের সর্বশেষ রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাই এবং লেবাননে অবিলম্বে সামরিক পদক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে যোগ করেছে, এই হত্যাকাণ্ডের ফলে এই অঞ্চলে যে ‘দুঃখজনক’ পরিণতি হতে পারে তার জন্য ইসরাইল সম্পূর্ণ দায় বহন করবে।
জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবক বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড সমগ্র লেবাননের জন্য অস্থিতিশীলতার হুমকি, যা ইসরাইলের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনোভাবেই কাম্য নয়।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো নাসরুল্লাহকে একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি মনে করেন নাসরুল্লাহ’র কারণে সেখানে নিরপরাধ বেসামরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যা করেছে ইসরাইল। সমগ্র অঞ্চল জুড়ে যে ব্যাপক দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে তার জন্য হিজবুল্লাহকে দায়ী করেছেন তিনি। তবে তিনি সংঘাতে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য আরও কিছু করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, আমরা এই সংকটময় সময়ে শান্ত ও সংযমের আহ্বান জানাই।
বৃটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি এক্স-এর একটি পোস্টে বলেন, তিনি লেবাননের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলেন, আমরা রক্তপাতের অবসান ঘটাতে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছি। লেবানন ও ইসরাইলি জনগণের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনার একমাত্র উপায় কূটনৈতিক সমাধান।
ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাঁ-নোয়েল ব্যারোট ইসরাইলকে অবিলম্বে লেবাননে তাদের হামলা বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেছেন, তার দেশ যেকোনো স্থল অভিযানের বিরোধিতা করছে। ফ্রান্স অন্যান্য দল বা দেশ, বিশেষ করে হিজবুল্লাহ ও ইরানকে অতিরিক্ত অস্থিতিশীলতা এবং আঞ্চলিক উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুঁতেরা এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় বৈরুতে নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাওয়া ঘটনা নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল ডিয়াজ-ক্যানেল তার এক্স বার্তায় এই হত্যাকাণ্ডকে কাপুরুষোচিত টার্গেট কিলিং বলে অভিহিত করেছেন। এতে আঞ্চলিক ও বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তাকে মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে ফেলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই এক্স-এ এই হত্যাকে স্বাগত জানিয়ে পোস্ট করা তার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ডেভিড এপস্টেইনের একটি বার্তা পুনরায় পোস্ট করেছেন। যেখানে বলা হয়, ইসরাইল সমসাময়িক সর্বশ্রেষ্ঠ খুনিদের একজনকে নির্মূল করেছে। এতে আরও বলা হয়, ‘আজ পৃথিবী একটু স্বাধীন’।
সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ জাতিসংঘে বলেছেন, এই উত্তেজনা পুরো অঞ্চলের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। আমরা এই অঞ্চলে একটি সত্যিকারের যুদ্ধ এড়াতে সকল পক্ষকে প্রজ্ঞা ও সংযম দেখানোর আহ্বান জানাই।
ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো নাসরুল্লাহ ও লেবাননের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, তারা এটাকে ন্যায্যতা দিতে চায়, কিন্তু তাকে হত্যা করার জন্য তারা বিল্ডিং, হাউজিং এস্টেটে হামলা করেছে এবং শত শত মানুষকে হত্যা করেছে। এর জন্য যে শব্দ আছে তা হচ্ছে অপরাধ।
নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের আহ্বান ইরানের: নাসরুল্লাহ’র হত্যার প্রতিবাদে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে জরুরি বৈঠকের আহ্বান জানিয়েছেন ইরানের রাষ্ট্রদূত আমির ইরাভানি। এতে তিনি তার দেশের কূটনৈতিক প্রাঙ্গণ এবং প্রতিনিধিদের ওপর যেকোনো হামলার বিরুদ্ধে সতর্ক বার্তা দিয়েছেন। সংস্থাটির ১৫ সদস্যের কাছে দেয়া চিঠিতে তিনি বলেছেন, তেহরান কোনোভাবেই এমন আগ্রাসন সহ্য করবে না। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, লেবাননে হামলাকারী দেশকে উদ্দেশ্য করে চিঠিতে ইরানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন- ইরান তার গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ও নিরাপত্তার স্বার্থে প্রতিরক্ষার প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে তার অন্তর্নিহিত অধিকার প্রয়োগ করতে দ্বিধা করবে না। নিরাপত্তা পরিষদকে ইসরাইলের বিরুদ্ধে নির্ধারিত পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আমির ইরাভানি। তিনি বলেছেন, অঞ্চলটিতে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে লেবাননের হিজবুল্লাহ যোদ্ধাগোষ্ঠীকে আর্থিক এবং সামরিক সহায়তা করে আসছে ইরান। এর আগে ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, নাসরুল্লাহ’র হত্যা প্রতিশোধ ছাড়া থাকবে না। শনিবার ইসরাইলের হামলায় নিহত হয়েছেন হিজবুল্লাহ’র প্রধান হাসান নাসরুল্লাহ। ইসরাইলের দাবির পর দলটির পক্ষ থেকেও এর সত্যতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
No comments