বিশ্বে সর্বপ্রথম তেল খনির সন্ধান দিয়েছিলেন এক বেদুঈন মুসলিম
৮০
বছরেরও বেশি সময় আগে ১৯৩৮ সালের মার্চ মাসে সৌদি আরবে প্রথম তেল খনির
সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল। আর এই খনির সন্ধান দিয়েছিলেন খামিস বিন রিমছান নামে
এক বেদুইন। মূলত তিনিই আমেরিকান ভূ-তত্ত্ববিদ ম্যাক্স স্টেইনেক’কে সৌদিতে
বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনযোগ্য তেল খনির খোঁজ পেতে সাহায্য করেন। রিমছানের
আবিষ্কৃত প্রথম খনির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘দাম্মাম নং ৭’। এখান থেকে তেল
উত্তোলন শুরু করার পর বদলে যেতে থাকে মরুভূমির চেহারা।
ছেলেবেলা থেকেই মরুভূমিতে বসবাস করা বেদুইন খামিসকে মরুভূমির বিশেষজ্ঞ বলা হলেও ভুল হবে না। মরুভূমিতে দিন নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। আকাশে তারার অবস্থানের মাধ্যমে তিনি দিক চিহ্নিত করতেন। আর সবচেয়ে বড় যে বৈশিষ্ট্যটির জন্য তিনি ইতিহাসে ঠাঁই করে নিলেন, তা হলো তিনি বুঝতে পারতেন কোথায় সবচেয়ে বেশি তেল আছে। হয়তো, মরুভূমির বালু থেকেই তিনি এ সম্পর্কিত ধারণা পেতেন।
১৯৩৩ সালে তেল অনুসন্ধানের কাজ শুরুর পর মার্কিন কোম্পানি ‘স্ট্যান্ডার্ড ওয়েল অব ক্যালিফোর্নিয়ার পক্ষ থেকে তৎকালীন সৌদির পূর্বাঞ্চলীয় আমির আবদুল্লাহ আল জালাবির কাছে একজন মরুবিশেষজ্ঞ গাইড চাওয়া হয়। তখন আমির রিমছানকে তাদের সঙ্গে দেন।
মার্কিনিরা রিমছানের মেধা ও কাজে মুগ্ধ হয়েছিলেন। মার্কিন আরেক ভূ-তত্ত্ববিদ থমাস বার্গার ‘আউট ইন দ্য ব্লু’ বইতে রিমছানের ব্যাপারে তার মুগ্ধতার কথা লিখে গেছেন।
হাজার বছর আগেও পৃথিবীতে তেল ব্যবহার করত মানুষ। মূলত মিসর ও চীনে সে সময় তেলের ব্যবহার হতো চিকিৎসাকাজে। এই তেল তারা সংগ্রহ করত মাটির ওপর থেকেই। ভূগর্ভস্থ তেল অনেক সময় মাটি থেকে উপচে ওপরে চলে আসত। চিকিৎসক ছাড়া এই তেল কারও আগ্রহের মধ্যে ছিল না। চীন দেশেই প্রথম মাটিতে ছিদ্র করে পাইপের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ তেল বের করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেই যন্ত্রের সাহায্যে ভূগর্ভের বেশি নিচে যাওয়া যায়নি। সঠিক কারিগরি এবং ড্রিলিং যন্ত্রের সাহায্যে প্রথম তেল উত্তোলন করেন ফায়দোর সিমিয়োনত নামে এক প্রযুক্তিবিদ। সেটা ছিল ১৮৪৬ সাল। আজারবাইজানের বাকু শহরের কাছে এই ড্রিলিং যন্ত্রটি বসানো হয়েছিল। প্রথম তেল উত্তোলনের ড্রিল মেশিনটির নিচে প্রায় ৯০ ফুট পর্যন্ত ছিদ্র করে তেল বের করা হয়েছিল। পরে ১৮৫৮ সালে উত্তর আমেরিকায় আরও বড় তেল কূপ খনন করা হয়। প্রথম দিকে তেলের ব্যবহার হতো শুধু বাতি জ্বালানোর কাজে। কিন্তু পরে গাড়ি, জাহাজ বা অন্যান্য ইঞ্জিন চালানোর জন্যও তেলের ব্যবহার শুরু হয়। ধীরে ধীরে এটি বিশে^র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানিতে পরিণত হয়। এই আবিষ্কারের ফলে তিমি মাছের তেল বা রেড়ির তেলের ব্যবহার কমে যায় বিশ^ব্যাপী। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর কোথায় তেল আছে তা আয়ত্তে এনে তেল তোলার ব্যাপক খননকার্য শুরু হয়, যা এখনো চলছে।
পৃথিবীতে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি তেল পাওয়া যায় সেগুলো হলো, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, নাইজেরিয়া, ভেনিজুয়েলা, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কানাডা। এই দেশগুলোয় অসংখ্য তেলের খনি আছে। মাটি খনন করে আমরা যে কালো তেল পাই, সেটাকে বলে ক্রুড তেল বা অপরিশোধিত তেল। সরাসরি ব্যবহার করা যায় না এটি। এর মধ্যে নানা উপসামগ্রী আছে, যেগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। অপরিশোধিত তেলকে পাইপলাইনের সাহায্যে অথবা জাহাজে করে তৈল শোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
অপরিশোধিত তেলের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই থাকে পেট্রল, ১৮ শতাংশ ডিজেল, ১২ শতাংশ ডিজেলের জ্বালানি পাওয়া যায়। বাকি ২০ শতাংশ থেকে রাস্তার নির্মাণসামগ্রী, প্লাস্টিক, লুব্রিক্যান্ট বা মোবিল তৈরি হয়।
সর্বশেষ একটি জরিপকে কেন্দ্র করে আবার আলোচনায় সৌদি আরবের তেল। গত বুধবার মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিগলইয়ার অ্যান্ড ম্যাকনটন এক নিরীক্ষা শেষে জানায়, সৌদি আরবে তেল অবশিষ্ট আছে অন্তত ২৬৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ব্যারেল। এই পরিসংখ্যানটি সৌদি আরবের পূর্ব ধারণাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে দেশটির জাতীয় তেল কোম্পানি ‘আরামকো’ ২৬৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ব্যারেল তেল অবশিষ্ট আছে বলে তথ্য দিয়েছিল। তবে, এই তথ্য নিয়ে বিদেশিরা যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করেছিলেন। ভাবা হচ্ছিল সৌদি আরবের তেল একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। আর তাই তেলনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে যেতে বড় বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন দেশটির যুবরাজ মুহম্মদ বিন সালমান। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তেল রিজার্ভের নতুন পরিসংখ্যানটি যুবরাজের আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। তেল রাজনীতিতে আরও দীর্ঘদিন আধিপত্য বজায় রাখবে সৌদি আরব।
ছেলেবেলা থেকেই মরুভূমিতে বসবাস করা বেদুইন খামিসকে মরুভূমির বিশেষজ্ঞ বলা হলেও ভুল হবে না। মরুভূমিতে দিন নির্ধারণের ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্ত। আকাশে তারার অবস্থানের মাধ্যমে তিনি দিক চিহ্নিত করতেন। আর সবচেয়ে বড় যে বৈশিষ্ট্যটির জন্য তিনি ইতিহাসে ঠাঁই করে নিলেন, তা হলো তিনি বুঝতে পারতেন কোথায় সবচেয়ে বেশি তেল আছে। হয়তো, মরুভূমির বালু থেকেই তিনি এ সম্পর্কিত ধারণা পেতেন।
১৯৩৩ সালে তেল অনুসন্ধানের কাজ শুরুর পর মার্কিন কোম্পানি ‘স্ট্যান্ডার্ড ওয়েল অব ক্যালিফোর্নিয়ার পক্ষ থেকে তৎকালীন সৌদির পূর্বাঞ্চলীয় আমির আবদুল্লাহ আল জালাবির কাছে একজন মরুবিশেষজ্ঞ গাইড চাওয়া হয়। তখন আমির রিমছানকে তাদের সঙ্গে দেন।
মার্কিনিরা রিমছানের মেধা ও কাজে মুগ্ধ হয়েছিলেন। মার্কিন আরেক ভূ-তত্ত্ববিদ থমাস বার্গার ‘আউট ইন দ্য ব্লু’ বইতে রিমছানের ব্যাপারে তার মুগ্ধতার কথা লিখে গেছেন।
হাজার বছর আগেও পৃথিবীতে তেল ব্যবহার করত মানুষ। মূলত মিসর ও চীনে সে সময় তেলের ব্যবহার হতো চিকিৎসাকাজে। এই তেল তারা সংগ্রহ করত মাটির ওপর থেকেই। ভূগর্ভস্থ তেল অনেক সময় মাটি থেকে উপচে ওপরে চলে আসত। চিকিৎসক ছাড়া এই তেল কারও আগ্রহের মধ্যে ছিল না। চীন দেশেই প্রথম মাটিতে ছিদ্র করে পাইপের সাহায্যে ভূগর্ভস্থ তেল বের করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেই যন্ত্রের সাহায্যে ভূগর্ভের বেশি নিচে যাওয়া যায়নি। সঠিক কারিগরি এবং ড্রিলিং যন্ত্রের সাহায্যে প্রথম তেল উত্তোলন করেন ফায়দোর সিমিয়োনত নামে এক প্রযুক্তিবিদ। সেটা ছিল ১৮৪৬ সাল। আজারবাইজানের বাকু শহরের কাছে এই ড্রিলিং যন্ত্রটি বসানো হয়েছিল। প্রথম তেল উত্তোলনের ড্রিল মেশিনটির নিচে প্রায় ৯০ ফুট পর্যন্ত ছিদ্র করে তেল বের করা হয়েছিল। পরে ১৮৫৮ সালে উত্তর আমেরিকায় আরও বড় তেল কূপ খনন করা হয়। প্রথম দিকে তেলের ব্যবহার হতো শুধু বাতি জ্বালানোর কাজে। কিন্তু পরে গাড়ি, জাহাজ বা অন্যান্য ইঞ্জিন চালানোর জন্যও তেলের ব্যবহার শুরু হয়। ধীরে ধীরে এটি বিশে^র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানিতে পরিণত হয়। এই আবিষ্কারের ফলে তিমি মাছের তেল বা রেড়ির তেলের ব্যবহার কমে যায় বিশ^ব্যাপী। প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীর কোথায় তেল আছে তা আয়ত্তে এনে তেল তোলার ব্যাপক খননকার্য শুরু হয়, যা এখনো চলছে।
পৃথিবীতে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি তেল পাওয়া যায় সেগুলো হলো, সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, নাইজেরিয়া, ভেনিজুয়েলা, রাশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কানাডা। এই দেশগুলোয় অসংখ্য তেলের খনি আছে। মাটি খনন করে আমরা যে কালো তেল পাই, সেটাকে বলে ক্রুড তেল বা অপরিশোধিত তেল। সরাসরি ব্যবহার করা যায় না এটি। এর মধ্যে নানা উপসামগ্রী আছে, যেগুলো বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়। অপরিশোধিত তেলকে পাইপলাইনের সাহায্যে অথবা জাহাজে করে তৈল শোধনাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
অপরিশোধিত তেলের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশই থাকে পেট্রল, ১৮ শতাংশ ডিজেল, ১২ শতাংশ ডিজেলের জ্বালানি পাওয়া যায়। বাকি ২০ শতাংশ থেকে রাস্তার নির্মাণসামগ্রী, প্লাস্টিক, লুব্রিক্যান্ট বা মোবিল তৈরি হয়।
সর্বশেষ একটি জরিপকে কেন্দ্র করে আবার আলোচনায় সৌদি আরবের তেল। গত বুধবার মার্কিন পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ডিগলইয়ার অ্যান্ড ম্যাকনটন এক নিরীক্ষা শেষে জানায়, সৌদি আরবে তেল অবশিষ্ট আছে অন্তত ২৬৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ব্যারেল। এই পরিসংখ্যানটি সৌদি আরবের পূর্ব ধারণাকেও ছাড়িয়ে গেছে। এর আগে দেশটির জাতীয় তেল কোম্পানি ‘আরামকো’ ২৬৬ দশমিক ৩ বিলিয়ন ব্যারেল তেল অবশিষ্ট আছে বলে তথ্য দিয়েছিল। তবে, এই তথ্য নিয়ে বিদেশিরা যথেষ্ট সন্দেহ পোষণ করেছিলেন। ভাবা হচ্ছিল সৌদি আরবের তেল একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে। আর তাই তেলনির্ভরতা থেকে বেরিয়ে যেতে বড় বড় সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন দেশটির যুবরাজ মুহম্মদ বিন সালমান। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তেল রিজার্ভের নতুন পরিসংখ্যানটি যুবরাজের আত্মবিশ্বাসকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। তেল রাজনীতিতে আরও দীর্ঘদিন আধিপত্য বজায় রাখবে সৌদি আরব।
No comments