ইরানের পাথুরে গুহাময় ঐতিহাসিক গ্রাম কান্দোভন
কান্দোভন গ্রামে রয়েছে জীবনের সকল আয়োজন |
ইরানের পূর্ব আজারবাইজানের ওস্কু উপশহরের একটি
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবহুল ও ঐতিহাসিক গ্রামের নাম কান্দোভন। তাব্রিয শহর থেকে
পঞ্চাশ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, ওস্কু শহর থেকে ২২ কিলোমিটার
দক্ষিণ-পূর্বে সাহান্দ পর্বতের পাদদেশে এটি অবস্থিত। সাহান্দ পর্বতের
আগ্নেয়গিরির প্রভাব এবং চমৎকার আবহাওয়াময় এই এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
গ্রামটির শোভা আরো বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
বিশ্বের
প্রস্তরময় বা পাথুরে গুহাময় তিনটি বিখ্যাত গ্রামের একটি হলো কান্দোভন। এ
বিষয়টি কান্দোভনকে নজিরবিহীন সৌন্দর্যে ভূষিত করেছে। কান্দোভনের আরেকটি
ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্য হলো- এখানে মানুষজন বসবাস করে অর্থাৎ এখানে জীবনের
সকল আয়োজন রয়েছে।
ইরানের
কান্দোভন পল্লীতে জীবনের সাড়া আছে বহুকাল আগে থেকেই। পুরাতাত্ত্বিকগণ এই
গ্রামটিকে ইসলাম-পূর্ব যুগ থেকেই মানব বাস উপযোগী ছিল বলে মনে করেন। এখানে
রয়েছে বড় বড় টিলা। এসব টিলার কোনো কোনোটির উচ্চতা চল্লিশ মিটারের মতো।
এগুলোর বুক চিরে তৈরি করা হয়েছে গোয়ালঘর, গুদাম এবং ছোটো ছোটো কামরা। দেখতে
খুবই সুন্দর এগুলো। আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থার পর্যটকগণ এই গ্রামটি দেখে
এটিকে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলোর তালিকাভুক্ত করেছেন।
কান্দোভনের গ্রামগুলোতে মসজিদ, হাম্মাম,
মাদ্রাসা, যাঁতাকলসহ সকল প্রয়োজনীয় সুবিধাদি রয়েছে। যে গুহাটিতে মসজিদ আছে
ওই গুহাটি এখানকার সবচেয়ে বড় গুহা বা গহ্বর।
কান্দোভন গ্রামে ইরানের শীতপ্রধান
পার্বত্য এলাকাগুলোর মতো কোথাও কোথাও মূল কক্ষেও তন্দুর রুটি তৈরির চুল্লি
রয়েছে। তবে কান্দোভনের অধিকাংশ পরিবার সাধারণত ঘরের বাইরেই তন্দুর তৈরির
চুল্লি ব্যবহার করে।
কান্দোভনের উপত্যকাগুলো বিশেষ করে উত্তর
এবং দক্ষিণের শ্যামল উপত্যকাগুলো ইরানের পার্বত্য অঞ্চলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে
ভালো আবহাওয়াময় অঞ্চল বলে মনে করা হয়। এ উপত্যকায় মোটামুটি বড় একটা নদী এবং
অনেকগুলো ঝর্ণাধারা বহমান। এই ঝর্ণাগুলো বিশুদ্ধ পানির উৎস। কান্দোভনের
ঝর্নার খনিজ পানির কিছু ব্যতিক্রমধর্মী বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বলা হয়ে থাকে
কিডনির পাথর দূর করার ক্ষেত্রে এই ঝর্ণার পানি খুবই কার্যকর। কান্দোভনের
আশেপাশের উপত্যকাগুলো পশুপালনের জন্যে খুবই উপযোগী।
মধু এবং
দুগ্ধজাত পণ্যাদির জন্যে কান্দোভনের ব্যাপক সুখ্যাতি রয়েছে। এখানকার
স্থাপত্যগুলোও বেশ আকর্ষণীয়। ইরানের জাতীয় ঐতিহ্যের তালিকায় কান্দোভনের নাম
বহু আগেই স্থান পেয়েছে।
No comments