এইচএসসি’র ফল: পাসে মেয়েরা জিপিএ-৫ এ ছেলেরা এগিয়ে
উচ্চমাধ্যমিক
সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল।
এবার ১০টি বোর্ডের (৮টি সাধারণ বোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড)
পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ শিক্ষার্থী।
এবার সাধারণ আট বোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের
হার ৮৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২ হাজার ২৪৩ শিক্ষার্থী। কারিগরি
বোর্ডে পাসের হার ৮২ দশমিক ৬২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ২৩৬ জন।
পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে ছেলেরা। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই ফলাফল তুলে ধরেন। এর আগে সকাল ১০টার দিকে সব বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন।
ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ফলাফলের প্রশংসা করে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, শিক্ষার্থীরা আরো মনোযোগী হলে ভবিষ্যতে তারা আরো ভালো ফল করতে পারবে। তিনি বলেন, ৭৩ দশমিক ৯৩ ভাগ পাস করেছে। এটা যথেষ্ট ভাল এবং গ্রহণযোগ্য ফল। আমি মনে করি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীরা আরো মনোযোগী হলে তারা আরো ভালো ফল করতে পারবে, সেটা আমার বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী এ সময় মাত্র ৫৫ দিনে ফল প্রকাশ করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। ছাত্রীদের পাসের হার বেশি হওয়ায় জেন্ডার সমতার কথাটি স্মরণ করিয়ে ছাত্রদেরও পাসের হার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ছাত্রদের পাসের হারটা বাড়তে হবে, যাতে জেন্ডার সমতাটা এসে যায়।
গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৯ হাজার ২৬২ শিক্ষার্থী। সে হিসেবে এবার পাসের হার বেড়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৮ হাজার ২৪ জন। গত ১লা এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। প্রকাশিত ফলাফলের তথ্যমতে, এবার ১০টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। ১০ বোর্ডের গড় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত বছর ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ২৬২ জন। গত বছরের চেয়ে জিপিএ-৫ বেড়েছে ১৮ হাজার ২৪ জন। ৯০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৪০০টি। ৪১টি প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থী পাস করেনি। গেলো বছর এই সংখ্যা ছিল ৫৫টি। ৮টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে এবার ১১ লাখ ২৬ হাজার ১২৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। এরমধ্যে ৮ লাখ ৯ হাজার ১৪৯ জন পাস করেছে। পাসের হার ৭১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছর ছিল ৬৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী বেশি পাস করেছে।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসে হারে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম পাস করেছে চট্টগ্রাম বোর্ডে। এ বোর্ডে পাসের হার ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ। ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৭৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৬৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ও দিনাজপুর বোর্ডে ৭১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডে এবার ৮৬ হাজার ১৩৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৭৬ হাজার ২৮১ জন। এ বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ বছর মাদ্রাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৪৩ জন। গত বছর ছিল ১ হাজার ২৪৪ জন। জিপিএ-৫ বেড়েছে ৯৯৯ জন। কারিগরি বোর্ডে এক লাখ ২৪ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে এক লাখ ২ হাজার ৭১৫ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত বছর ছিল ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ২৩৬ জন। গত বছর ছিল ২ হাজার ৪৫৬ জন। গত বছরের চেয়ে জিপিএ-৫ বেড়েছে ৭৮০ জন। ঢাকা বোর্ডের অধীনে বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ২৭০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৫৪ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক শূন্য ৭ ভাগ। ২৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে বিভাগ ভিত্তিক পাসের শীর্ষ রয়েছে বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৩ হাজার ১৯২ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৫১ ভাগ। এ বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৯৯০ জন। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৬৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এ বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৬২৫ জন। পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ছেলেরা এগিয়ে রয়েছে। এ বছর ৭ লাখ ৩ হাজার ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৮২৮ জন। পাসের হার ৭১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪ হাজার ৫৭৬ জন। অন্যদিকে ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬২৯ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৪৪ জন। ছাত্রীদের পাসের হার ৭৬ শতাংশ ৪৪ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২ হাজার ৭১০ জন। ছাত্রদের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ ছাত্রী বেশি পাস করেছে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, শিক্ষার্থীদের ভালো প্রস্তুতি ও নকলমুক্ত পরিবেশে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় পাশের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। আবার যারা খারাপ পরীক্ষা দিয়েছে তারা এ দুটিতে পিছিয়ে গেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র সহজ বা কঠিন করায় পাশের হারে প্রভাব পড়েনি। যারা ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তারা ভালো করেছে, আর যাদের প্রস্তুতি দুর্বল ছিল তারা ভালো ফল পায়নি। তবে যে সকল বোর্ড ভালো করছে তারা আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের ভালো ফলের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে আমরা কাজ শুরু করেছি। এটি গুচ্ছ পদ্ধতিতে অথবা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার আদলে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা চান তাদের নিজেদের মতো করে শিক্ষার্থী নির্বাচন করে ভর্তি করাতে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ার আওতাভুক্ত হতে সম্মতি রয়েছে। তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও চরম পর্যায়ে। একজন শিক্ষার্থী প্রায় ৪ থেকে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। এ জন্য অনেকে রাস্তায় বা মসজিদেও গিয়ে রাতে ঘুমাতে হয়। কিন্তু মেয়েদের কোথাও গিয়ে থাকার স্থান থাকে না। এসব সহজিকরণে আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়ন করছি। আগামী বছর থেকে এ কার্যক্রম অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন করা হতে পারে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ৪ স্কেলে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আগামী জেএসসি এই পদ্ধতি হওয়ার ইঙ্গিত দেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, বর্তমানে ১৭ ভাগ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় পড়ালেখা করলেও সরকার এটিকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৩০ ভাগে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতিমধ্যে স্কুল ও মাদ্রাসায় দুটি করে ট্রেড কোর্স চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ফল পুনঃনিরীক্ষা: রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক থেকে আজ থেকে ২৪শে জুলাই পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনালে আইডেন্টিফিকেশন নম্বর-চওঘ) দেয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতি পত্রের জন্য দেড়শ’ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যে সব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সকল বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ৩০০ টাকা ফি কাটা হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।
পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে এগিয়ে ছেলেরা। গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এই ফলাফল তুলে ধরেন। এর আগে সকাল ১০টার দিকে সব বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন।
ফলাফল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ফলাফলের প্রশংসা করে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, শিক্ষার্থীরা আরো মনোযোগী হলে ভবিষ্যতে তারা আরো ভালো ফল করতে পারবে। তিনি বলেন, ৭৩ দশমিক ৯৩ ভাগ পাস করেছে। এটা যথেষ্ট ভাল এবং গ্রহণযোগ্য ফল। আমি মনে করি শিক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীরা আরো মনোযোগী হলে তারা আরো ভালো ফল করতে পারবে, সেটা আমার বিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী এ সময় মাত্র ৫৫ দিনে ফল প্রকাশ করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। ছাত্রীদের পাসের হার বেশি হওয়ায় জেন্ডার সমতার কথাটি স্মরণ করিয়ে ছাত্রদেরও পাসের হার বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ছাত্রদের পাসের হারটা বাড়তে হবে, যাতে জেন্ডার সমতাটা এসে যায়।
গত বছর এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২৯ হাজার ২৬২ শিক্ষার্থী। সে হিসেবে এবার পাসের হার বেড়েছে ৭ দশমিক ২৯ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৮ হাজার ২৪ জন। গত ১লা এপ্রিল থেকে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়। প্রকাশিত ফলাফলের তথ্যমতে, এবার ১০টি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৩৬ হাজার ৬২৯ জন অংশ নিয়ে পাস করেছে ৯ লাখ ৮৮ হাজার ১৭২ জন। ১০ বোর্ডের গড় পাসের হার ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ। গত বছর ছিল ৬৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এবার মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৭ হাজার ২৮৬ জন। গতবার এই সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ২৬২ জন। গত বছরের চেয়ে জিপিএ-৫ বেড়েছে ১৮ হাজার ২৪ জন। ৯০৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ৪০০টি। ৪১টি প্রতিষ্ঠানের কোন শিক্ষার্থী পাস করেনি। গেলো বছর এই সংখ্যা ছিল ৫৫টি। ৮টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে এবার ১১ লাখ ২৬ হাজার ১২৬ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করে। এরমধ্যে ৮ লাখ ৯ হাজার ১৪৯ জন পাস করেছে। পাসের হার ৭১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছর ছিল ৬৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী বেশি পাস করেছে।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসে হারে শীর্ষে রয়েছে কুমিল্লা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৪ শতাংশ। সবচেয়ে কম পাস করেছে চট্টগ্রাম বোর্ডে। এ বোর্ডে পাসের হার ৬২ দশমিক ১৯ শতাংশ। ঢাকা বোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৭৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৭৫ দশমিক ৬৫ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৭০ দশমিক ৬৫ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৬৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ ও দিনাজপুর বোর্ডে ৭১ দশমিক ৭৮ শতাংশ। মাদ্রাসা বোর্ডে এবার ৮৬ হাজার ১৩৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৭৬ হাজার ২৮১ জন। এ বোর্ডে পাসের হার ৮৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ বছর মাদ্রাসা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ২ হাজার ২৪৩ জন। গত বছর ছিল ১ হাজার ২৪৪ জন। জিপিএ-৫ বেড়েছে ৯৯৯ জন। কারিগরি বোর্ডে এক লাখ ২৪ হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে এক লাখ ২ হাজার ৭১৫ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ৬২ শতাংশ। গত বছর ছিল ৭৫ দশমিক ৫০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ২৩৬ জন। গত বছর ছিল ২ হাজার ৪৫৬ জন। গত বছরের চেয়ে জিপিএ-৫ বেড়েছে ৭৮০ জন। ঢাকা বোর্ডের অধীনে বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ২৭০ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ২৫৪ জন। পাসের হার ৯৪ দশমিক শূন্য ৭ ভাগ। ২৬ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। আটটি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডে বিভাগ ভিত্তিক পাসের শীর্ষ রয়েছে বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৩ হাজার ১৯২ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৭৩ দশমিক ৫১ ভাগ। এ বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩ হাজার ৯৯০ জন। মানবিক বিভাগে পাসের হার ৬৫ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। এ বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৬২৫ জন। পাসের হারে মেয়েরা এগিয়ে থাকলেও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিতে ছেলেরা এগিয়ে রয়েছে। এ বছর ৭ লাখ ৩ হাজার ছাত্র পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৮২৮ জন। পাসের হার ৭১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৪ হাজার ৫৭৬ জন। অন্যদিকে ৬ লাখ ৩৩ হাজার ৬২৯ জন ছাত্রী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৪ লাখ ৮৪ হাজার ৩৪৪ জন। ছাত্রীদের পাসের হার ৭৬ শতাংশ ৪৪ ভাগ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ২২ হাজার ৭১০ জন। ছাত্রদের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ ছাত্রী বেশি পাস করেছে।
এদিকে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানান, শিক্ষার্থীদের ভালো প্রস্তুতি ও নকলমুক্ত পরিবেশে এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ায় পাশের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে। আবার যারা খারাপ পরীক্ষা দিয়েছে তারা এ দুটিতে পিছিয়ে গেছে। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, প্রশ্নপত্র সহজ বা কঠিন করায় পাশের হারে প্রভাব পড়েনি। যারা ভালো প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছে তারা ভালো করেছে, আর যাদের প্রস্তুতি দুর্বল ছিল তারা ভালো ফল পায়নি। তবে যে সকল বোর্ড ভালো করছে তারা আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে, যাতে তাদের ভালো ফলের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে আমরা কাজ শুরু করেছি। এটি গুচ্ছ পদ্ধতিতে অথবা মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষার আদলে করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরা চান তাদের নিজেদের মতো করে শিক্ষার্থী নির্বাচন করে ভর্তি করাতে। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়ার আওতাভুক্ত হতে সম্মতি রয়েছে। তিনি বলেন, একজন শিক্ষার্থীকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। মেয়েদের ক্ষেত্রে এ ভোগান্তি আরও চরম পর্যায়ে। একজন শিক্ষার্থী প্রায় ৪ থেকে ৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে। এ জন্য অনেকে রাস্তায় বা মসজিদেও গিয়ে রাতে ঘুমাতে হয়। কিন্তু মেয়েদের কোথাও গিয়ে থাকার স্থান থাকে না। এসব সহজিকরণে আমরা গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা বাস্তবায়ন করছি। আগামী বছর থেকে এ কার্যক্রম অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবায়ন করা হতে পারে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, জিপিএ-৫ এর পরিবর্তে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ৪ স্কেলে যাওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। আগামী জেএসসি এই পদ্ধতি হওয়ার ইঙ্গিত দেন শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, বর্তমানে ১৭ ভাগ শিক্ষার্থী কারিগরি শিক্ষায় পড়ালেখা করলেও সরকার এটিকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে তা ৩০ ভাগে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে। ইতিমধ্যে স্কুল ও মাদ্রাসায় দুটি করে ট্রেড কোর্স চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সচিব মো. সোহরাব হোসাইনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ফল পুনঃনিরীক্ষা: রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল অপারেটর টেলিটক থেকে আজ থেকে ২৪শে জুলাই পর্যন্ত এইচএসসি ও সমমানের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করতে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনালে আইডেন্টিফিকেশন নম্বর-চওঘ) দেয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। প্রতি পত্রের জন্য দেড়শ’ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যে সব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে যে সকল বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে দুটি পত্রের জন্য মোট ৩০০ টাকা ফি কাটা হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।
No comments